পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ মাস-থানেক গত হইয়াছে। কেদারবাবু রাজি হইয়াছেন-মহিমের সহিত মচলার বিবাহ আগামী রবিবারে স্থির হইয়া গিয়াছে। সেদিন যে কাণ্ড করিয়া স্বরেশ গিয়াছিল, তাহা সত্যই কেদারবাবুর বুকে বিধিয়াছিল। কিন্তু সেই অপমানের গুরুত্ব ওজন করিয়াই যে তিনি মহিমের প্রতি অবশেষে প্রসন্ন হইয়া সম্মতি দিয়াছেন, তাহা নয় । সুরেশ নিজেই যে কোথায় নিরুদ্দেশ হইয়াছে—এতদিনের মধ্যে তাহার কোন সন্ধান পাওয়া যায় নাই। শুনা যায়, সেই রাত্রেই সে নাকি পশ্চিমে চলিয়া গিয়াছে--কবে ফিরিবে, তাহা কেইই বলিতে পারে না । সেদিন কান্না চাপিতে আচল ঘর ছাড়িয়া যখন চলিয়া গেল, তখন অনেকক্ষণ পৰ্য্যন্ত তিনজনেই মুখ কালি করিয়া বসিয়া রহিলেন। কিন্তু কথা কহিল প্রথমে স্বরেশ নিজে। কেদারবাবুর মুখের প্রতি চাহিয়া কহিল, যদি আপত্তি না থাকে, আমি আপনার সাক্ষাতেই আপনার কন্যাকে গোটা-কয়েক কথা বলতে চাই । কেদারবাবু ব্যস্ত হয়েই কহিলেন, বিলক্ষণ ! তুমি কথা বলবে, তার আবার আপত্তি কি সুরেশ ? যত সব ছেলেমামুষেয়— তাহলে একবার ডেকে পাঠান—আমার সময় বেশি নেই। তাহার মুখের ও কণ্ঠস্বরের অস্বাভাবিক গাম্ভীৰ্য্য লক্ষ্য করিয়া কেদারবাবু মনে মনে শঙ্কা অনুভব করিলেন। কিন্তু জোর করিয়া একটু হাস্ত করিয়া, আবার সেই ধুয়া তুলিয়াই বলিতে লাগিলেন, যত সব ছেলেমানুষের কাও ! কিন্তু একটুখানি সামলাতে না দিলে—বুঝলে না সুরেশ, ও-সব প্লেগ-ফ্লেগের জায়গার নাম করলেই--মেয়েমানুষের মন কি-না। একবার শুনলেই ভয়ে অজ্ঞান—বুঝলে না বাবা— কোনপ্রকার কৈফিয়তের প্রতি মনোযোগ দিবার মত স্বরেশের মনের অবস্থা নয়—সে অধীর হইয়া বলিয়া উঠিল, বাস্তবিক কেদারবাবু, আমার অপেক্ষ করবার সময় নেই। তা ত বটেই। তা ত বটেই। কে আছিস রে ওখানে ? বলিয়া ডাক দিয়া কেদারবাৰু মহিমের প্রতি একটা বক্র কটাক্ষ করিলেন। মহিম উঠিয়া দাড়াইয়া একটা নমস্কার করিয়া নীরবে বাহির হইয়া গেল । কেদারবাবু নিজে গিয়া অচলাকে যখন ডাকিয়া আনিলেন, তখন অপরাহ-স্বর্ঘ্যের রক্তিম-রশ্মি পশ্চিমের জানালা-দরজা দিয়া ঘরময় ছড়াইয়া পড়িয়াছিল। সেই আলোকে উদ্ভাসিত এই তরুণীর ঈষদীর্ঘ কৃশ দেহের পানে চাহিয়া, পলকের জন্য স্বরেশের বিক্ষুব্ধ মনের উপর একটা মোহ ও পুলকের স্পর্শ খেলিয়া গেল, কিন্তু

  • श्रे