পাতা:শ্রীকান্ত (প্রথম পর্ব).djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৫
শ্রীকান্ত

 আধ ঘণ্টা কাটিয়া গেল। সর্ব্বদর্শী ‘বাবা’ আমার প্রতি পরম তুষ্ট হইয়া বলিলেন, হাঁ বেটা, তোমার অনেক গুণ। তুমি আমার চেলা হইবার উপযুক্ত পাত্র।

 আমি পরমানন্দে আর একবার ‘বাবা’র পদধূলি মস্তকে গ্রহণ করিলাম।

 পরদিন প্রাতঃস্নান করিয়া আসিলাম। দেখিলাম, গুরুজীর আশীর্ব্বাদে অভাব কিছুরই নাই। প্রধান চেলা যিনি, তিনি টাট্‌কা একসুট গেরুয়া বস্ত্র, জোড়া-দশেক ছোট-বড় রুদ্রাক্ষমালা এবং একজোড়া পিতলের তাগা বাহির করিয়া দিলেন। যেখানে যেটি মানায়—সাজ-গোজ করিয়া, খানিকটা ধুনির ছাই মাথায়, মুখে মাখিয়া ফেলিলাম। চোখ টিপিয়া কহিলাম, বাবাজী, বলি আয়না-টায়না হ্যায়? মুখখানা যে ভারি একবার দেখ্‌তে ইচ্ছে হচ্চে? দেখিলাম, তাঁহারও রস-বোধ আছে। তথাপি একটুখানি গম্ভীর হইয়া তাচ্ছিল্যভরেই বলিলেন, হ্যায় একঠো।

 তবে লুকিয়ে আনো না একবার।

 মিনিট-দুই পরে আয়না লইয়া একটা গাছের আড়ালে গেলাম। পশ্চিমী নাপিতেরা যেরূপ একখানি আয়না হাতে ধরাইয়া দিয়া ক্ষৌরকর্ম্ম সম্পন্ন করে, সেইরূপ ছোট একটুখানি টিনমোড়া আরসি। তা হোক্ একটুখানি, দেখিলাম, যত্নে এবং সদা ব্যবহারে বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। চেহারা দেখিয়া আর হাসিয়া বাঁচি না। কে বলিবে—আমি সেই শ্রীকান্ত, যিনি কিছুকাল পূর্ব্বেই রাজা-রাজড়ার মজলিসে বসিয়া বাইজীর গান শুনিতেছিলেন! তা যাক্।

 ঘণ্টাখানেক পরে গুরুমাহারাজের সমীপে দীক্ষার জন্য নীত হইলাম। মহারাজ চেহারা দেখিয়া সাতিশয় প্রীত হইয়া বলিলেন, বেটা, মহিনা এক-আধ ঠহ্‌রো।