পাতা:সতী-দীনেশচন্দ্র সেন.djvu/৪৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
পৌরাণিকী

হয়, তিনি মনে করেন, সতীর পদ-শোভন অলক্তক প্রক্ষালিত করিয়া মন্দা রক্তবর্ণবিশিষ্টা হইয়াছে, অমনই জটা এলাইয়া নদীসলিলে তাহা সিক্ত করেন।

 সতীর অঙ্গজ্যোতিঃ সৌরকিরণে অনুভব করিয়া তিনি অস্তচূড়াবলম্বী সূর্য্যের পার্শ্বে দাঁড়াইয়া থাকেন। সেই কিরণে জটা পিঙ্গল বর্ণ ধারণ করে। মহাদেব ভাবেন, দেবীর অঙ্গপ্রভায় তাঁহার মস্তক জ্যোতিষ্মান্‌ হইয়াছে।

 কখনও কখনও দক্ষের আলয় লক্ষ্য করিয়া ত্রিনেত্র অশ্রুপূর্ণ হয়। ভোলানাথ সকল ভুলিয়াও সতীকে ভুলিতে পারেন নাই। তাঁহার বিহ্বলাবস্থা দর্শনে কৈলাসের শোভা মন্দীভূত হইল; মল্লিকা সুবাস হারাইয়া বসিল; বিল্বদল তরুশাখায় বিশুষ্ক হইল; চম্পক, পাটল ও দেবীর প্রিয় কণিকার পুষ্প স্ব স্ব বিচিত্র বর্ণচ্যুত হইল। সুরধুনী কুলকুল স্বরে বিষাদের গান গাইয়া কৈলাসপুরীকে মুখরিত করিয়া ছুটিতে লাগিল। কখনও বিল্বমুলে কখনও দেবদারু—দ্রুমনিম্নে শিব উন্মত্তের ন্যায় বসিয়া থাকিতেন। এক রাত্রি একদিন চক্ষের পলক পড়ে নাই—ভোলানাথের কেবলই ভুল হইতে লাগিল!

 সহসা সঘন নিশ্বাসপাতে কৈলাসের শৃঙ্গ কম্পিত হইয়া উঠিল। কোন দারুণ মনোবেদনার স্বর কৈলাসের প্রস্তরে প্রস্তরে প্রতিধ্বনিত হইয়া উঠিল! এ কে আসিতেছে—যাহার অসংযত পাদবিক্ষেপে কৈলাসের পুষ্পোদ্যান বিধ্বস্ত হইয়া যাইতেছে? কাহার হস্ত-সঞ্চালনে করকাঘাতের ন্যায় বৃক্ষশাখা ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে? এই অসংযত, সম্ভ্রমহীন, নির্ভীক ব্যক্তি কে যে, রুদ্রের আবাসে এরূপ অসতর্ক, এরূপ উদ্ধতবেশে উপস্থিত হইতে সাহসী? বিল্বমূলাসীন শিব

৪৮