পাতা:সবুজ পত্র (তৃতীয় বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

So সবুজ পত্র ज्षांषां, »७२७ বকশিষের লোভ দেখালুম। এতে ফল হল। অৰ্দ্ধেক পথে যে গ্রামটিতে আমাদের বিশ্রাম করবার কথা ছিল, সেখানে বেলা সাড়ে দশটায়, অর্থাৎ মেয়াদের আধঘণ্টা আগে গিয়ে পৌছলুম। এই মরুভূমির ভিতর এই গ্রামটি যে ওয়েসিসের একটা খুব নয়নাভিরাম এবং মনোরম উদাহরণ, তা বলতে পারি নে। মধ্যে একটি ডোবা, আর তার তিন পাশে একতলা-সমান উচু পাড়ের উপর খান দশবারো খড়োঘর, আর এক পাশে একটি অশ্বখ গাছ। সেই গাছের নীচে পান্ধি নামিয়ে, বেহােরারা ছুটে গিয়ে সেই ডোবায় ডুব দিয়ে উঠে, ভিজে কাপড়েই চিড়ে-দইয়ের ফলার করতে বসূল। পাল্কি দেখে গ্রাম-বন্ধুরা সব পাড়ের উপরে এসে কাতার দিয়ে দাঁড়াল। এই পল্লীবধুদের সম্বন্ধে কবিতা লেখা কঠিন, কেননা এদের আর যাই থাক,-রূপ ও নেই, যৌবন ও নেই। যদি বা কারও রূপ থাকে ত তা কৃষ্ণবর্ণে ঢাকা পড়েছে, যদি বা কারও যৌবন থাকে ত তা মলিন বসনে চাপা পড়েছে । এদের পরণের কাপড় এত ময়লা যে, তাতে চিমটি কাটলে একতাল মাটি উঠে আসে। যা বিশেষ করে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল, সে হচ্ছে তাদের হাতের পায়ের রূপোর গহন । এক যোড়া চূড় আমার চোখে পড়ল, যার তুল্য সুশ্ৰী গড়ন একালের গহনায় দেখতে পাওয়া যায় না। এই থেকে প্রমাণ পেলুম যে, বাঙ্গলার নিম্নশ্রেণীর স্ত্রীলোকের দেহে সৌন্দৰ্য না থাক, সেই শ্রেণীর পুরুষের হাতে আর্ট আছে। ঘণ্টা আধেক বাদে আমরা আবার রওনা হলুম। পাল্কি আতি ধীরে সুস্থে চলতে লাগল, কেননা ভূরিভোজনের ফলে আমার বাহকদের গতি আপন্নসত্ত্বা স্ত্রীলোকের তুল্য মৃদুমন্থর হয়ে এসেছিল।