পাতা:সবুজ পত্র (পঞ্চম বর্ষ) - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ব, চতুর্থ সং ছােট গল্প ২৪১ পূর্বে কখনও এত হাতের গােড়ায়, আর এতক্ষণ ধরে দেখি নি, সুতরাং এই তার খাটি নমুনা কি না বলতে পারি নে। সে ভদ্রলােক পালায় পালায় হাছিল ও কাঁদছিল। হাছিল—বিড় বিড় করে কি বকে, আর কাঁদছিল, পরলােকগত সহধর্ণিণীর গুণ কীৰ্ত্তণ করে। সে যাত্রা গাড়ীতে প্রথমেই মানব-জীবনের এই ট্রাজি-কমেডির পরিচয় লাভ করলুম। আমার পক্ষে এই মাতুলামির অভিনয়টা কিন্তু ঠিক কমেডি বলে’ বােধ হয় নি। দুর্বল শরীরে শীতের রাত্তিরে রাত্রি-জাগরণটা ঠাট্টার কথা নয়, বিশেষত সে জাগরণের অংশীদার যখন এমন লােক যার সর্বাঙ্গ দিয়ে মদের গন্ধ অবিরাম ছুটছে। মানুষ যখন ব্যারাম থেকে সবে সেরে ওঠে তখন তার সকল ইন্দ্রিয় তীক্ষ্ণ হয়, বিশেষত ঘ্রাণেন্দ্রিয়। আমারও তাই হয়েছিল। ফলে জ্বর আসবার মুখে যে রকম গা পাক দেয়, মাথা খােরে আমার ঠিক সেই রকম হয়েছিল। ঘ্রাণে যে অৰ্দ্ধ ভােঙ্গনের ফল হয় এ সত্যের সে রাঙিরে আমি নাকে মুখে প্রমাণ পাই। পরদিন ভােরের বেলায় শীতে হি হি করতে করতে ষ্টীমারে পদ্মা পার হলুম। সারায় গিয়ে এবার যে গাড়ীতে চড়লুম তাতে জনপ্রাণী ছিল না। আগের রাত্তিরের পাপ সেইখানেই বিদেয় হল। মনে মনে বললুম বাঁচলুম। যদিচ বিনা নেশায় মানুষটা কি রকম তা দেখবার ঈষৎ কৌতুহল ছিল। সাদা চোখে হয়ত সে আমার দিকে কটমটিয়ে চাইত। শুনেছি নেশার অনুরাগ খোয়ারিতে রাগে দাড়ায়। সে যাই হােক, গাড়ী চলতে লাগল, কিন্তু সে এমনি ভাবে যে, গম্যস্থানে পোঁছবার জন্য যেন তার কোন তাড়া নেই। ট্রেণ প্রতি ষ্টেশনে থেমে জিরিয়ে, একপেট জল খেয়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ধীরে সুস্থে ঘটর ঘট করে অগ্রসর হতে লাগল। আমি সাহিত্যিক হ'লে, এই