পাতা:সমূহ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
“স্বদেশী সমাজ” প্রবন্ধের পরিশিষ্ট।
৩৫

সবই ভাল, এই ভক্তিতে আমাদিগকে অন্ধ অনুকরণে প্রবৃত্ত করে— তাহাতে আসল ইংরাজত্ব হইতে আমাদিগকে দূরে লইয়া যায়। কারণ, ইংরাজ এরূপ নিরুদ্যম অনুকরণকারী নহে। ইংরাজ স্বাধীন চিন্তা ও চেষ্টার জোরেই বড় হইয়াছে—পরের-গড়া জিনিষ অলসভাবে ভোগ করিয়া তাহারা ইংরাজ হইয়া উঠে নাই। সুতরাং ইংরাজ সাজিতে গেলেই প্রকৃত ইংরাজত্ব আমাদেব পক্ষে দুর্লভ হইবে।

 তেমনি আমাদের পিতামহেরা যে বড় হইয়াছিলেন সে কেবল আমাদের প্রপিতামহদের কোলের উপরে নিশ্চলভাবে শয়ন করিয়া নহে। তাঁহারা ধ্যান করিয়াছেন, বিচার করিয়াছেন, পরীক্ষা করিয়াছেন, পরিবর্ত্তন করিয়াছেন, তাঁহাদের চিত্তবৃত্তি সচেষ্ট ছিল, সেই জন্যই তাঁহারা বড় হইতে পারিয়াছেন। আমাদের চিত্ত যদি তাঁহাদের সেই চিত্তের সহিত যোগযুক্ত না হয়, কেবল তাঁহাদের কৃতকর্ম্মের সহিত আমাদের জড়সম্বন্ধ থাকে, তবে আমাদের আর ঐক্য নাই। পিতামাতার সহিত পুত্রের জীবনের যোগ আছে—তাঁহাদের মৃত্যু হইলেও জীবনক্রিয়া পুত্রের দেহে একই রকমে কাজ কবে। কিন্তু আমাদের পূর্ব্বপুরুষের মানসী শক্তি যেভাবে কাজ করিয়াছে, আমাদের মনে যদি তাহার কোন নিদর্শন না পাই—আমরা যদি কেবল তাঁহাদের অবিকল অনুকরণ করিয়া চলি, তবে বুঝিব আমাদের মধ্যে আমাদের পূর্বপুরুষ আর সজীব নাই। শণের-দাড়ি-পরা যাত্রার নারদ যেমন দেবর্ষি নারদ, আমরাও তেমনি আর্য্য। আমরা একটা বড় রকমের যাত্রাব দল—গ্রাম্যভাষায় এবং কৃত্রিম সাজসরঞ্জামে পূর্ব্বপুরুষ সাজিয়া অভিনয় করিতেছি।

 পূর্ব্বপুরুষদের সেই চিত্তকে আমাদের জড়-সমাজের উপর জাগাইয়া তুলিলে, তবেই আমরা বড় হইব। আমাদের সমস্ত সমাজ যদি প্রাচীন মহৎ-স্মৃতি ও বৃহৎভাবের দ্বারা আদ্যোপান্ত সজীব সচেষ্ট হইয়া উঠে— নিজের সমস্ত অঙ্গে প্রত্যঙ্গে বহুশতাব্দীর জীবনপ্রবাহ অনুভব করিয়া