পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মিসেস ব্রাউনিং, জেন অষ্টেন, চন্দ্রাবতী এবং সেল্‌মা গ্রাৎসিয়া প্রমুখ বহু আধুনিক নারীর রচনায় মানুষের ছোটো খাটো সুখদুঃখ প্রণয়বিরহ আশানিরাশার মনোহর ছবি এঁকে গার্হস্থ্য জীবনের দুঃখকে সহনীয় সুখকে মোহনীয় এবং অবসরকে লোভনীয় করেছে। গৃহকর্মের দায়িত্ব একদিকে যেমন নারীর সাহিত্যসৃষ্টির বাধাস্বরূপ হয়েছে, তেমনি জীবিকা অর্জনের দুশ্চিন্তা এবং দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে মধ্যযুগে, এমন কি বর্তমান যুগেও বহু নারী সাহিত্যসৃষ্টির সুযোগ লাভ করেছেন এবং করছেন, এমন কি ধনী এবং মধ্যবিত্ত ঘরের বহু নারী পুরুষের চেয়ে সাহিত্যচর্চার সুযোগ এবং অবসর বেশী পেয়েছেন এবং পাচ্ছেন, এ কথা অস্বীকার করা যায় না। অনতিকাল পূর্বেও সাহিত্যসৃষ্টিকে জীবিকা অর্জনের উপায়স্বরূপ গ্রহণ করা নারীর পক্ষে অসম্ভব ছিল, তাই একদিকে শাণিতভাষার নৈপুণ্যে যেমন নারী পুরুষের সমকক্ষতা লাভ করতে পারেননি, তেমনি অপরদিকে কৃত্রিমতা, চাটুবাদ প্রভৃতির অভাবে নারীর রচনা সরসতায়, তীক্ষ্ণতায় এবং মাধুর্যে পুরুষের রচনাকে অনেকক্ষেত্রে অতিক্রমও করেছে, ব্যবসাদারী বুদ্ধি তার রচনার সহজ সারল্যকে বিড়ম্বিত করেনি। যেখানেই এর ব্যতিক্রম হয়েছে, অর্থাৎ রাজসম্মান এবং অর্থ যেখানেই নারীর রচনাকে সম্মানিত করেছে, সেখানেই অবশ্যম্ভাবী দোষ এবং গুণ, ভাষানৈপুণ্য এবং ভাবের অসারল্য দেখা দিয়েছে, এ বিষয়ে অতীতে বর্তমানে কোনো প্রভেদ দেখা যায় না।

 পৃথিবীর নারী রচিত সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে বসে একটা কথা প্রথমেই আমাদের স্বীকার করে নিতে হবে, বিভিন্নদেশের লোকসাহিত্যের অজ্ঞাতনাম্নী রচয়িত্রীদের পরিচয় আমরা কিছুই জানি না। যে-সব রচনা ইটে, পাথরে, প্যাপাইরাসে, চামড়া বা কাগজে লিখিত হ’বার সৌভাগ্য লাভ করেছিল, অর্থাৎ সম্ভ্রান্ত সমাজে খ্যাতি লাভ করেছিল, তার অধিকাংশই ধর্মবিপ্লবে, রাষ্ট্রবিপ্লবে, প্রাকৃতিক