পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী
২৮৭

 মর্ম দিয়ে নারীচরিত্রের নিগুঢ়তম বার্তা না বুঝ্‌লে পুরুষকবিদের করুণরসাত্মক এই সব অপূর্ব রচনা বহু শতাব্দী ধরে লক্ষ লক্ষ নর-নারীর চিত্ত বিগলিত করে রাখতে পারত না।

‘জনম অবধি হাম রূপ নেহারিনু, নয়ন না তিরপিত ভেল,
লাখ লাখ যুগ হিয়া পর রাখনু, তবু হিয়া জুড়ন না গেল।”

 বিদ্যাপতির এই পদ অতৃপ্ত মানবাত্মার এবং সর্বস্ব-সমর্পিতা সতীচিত্তের প্রতিধ্বনি।

 প্রেমময়ী রাধা প্রেমাষ্পদের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন, মৃত্যুকে বরণ করতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই। তিনি জানেন প্রেমই নারীর প্রাণ, তাই বলেছেন;—

“বঁধু কি আর বলিব আমি
জীবনে মরণে  জনমে জনমে
প্রাণনাথ হইও তুমি।
তোমার চরণে  আমার পরাণে
বাঁধিলে প্রেমের ফাঁসি
সব সমর্পিয়া এক মন হইয়া
নিশ্চয় হইলাম দাসী।”

 প্রেমের পরাকাষ্ঠা লাভ তখনই হয়, প্রেমিক যখন অন্তর থেকে বলতে পারে;—

“শ্যাম অনুরাগে এ দেহ সঁপিনু তিল তুলসী দিয়া।”

 কৃষ্ণ-বিরহিনী রাধার সমস্ত সংসার শূন্যময়। জীবন যৌবন সমস্তই ব্যর্থ, চোখের সামনে তিনি দেখছেন সমস্তই যেন কৃষ্ণময় হয়ে গেছে;—

‘কৃষ্ণ কাল, তমাল কাল, ভাই তমাল বড় ভালবাসি”—