পাতা:সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২০
সাহিত্যে নারী ⦂ স্রষ্ট্রী ও সৃষ্টি - অনুরূপা দেবী

 আবহমানকাল ধরেই নর-সন্তানের অন্তরোৎসারিত এই সকল কামনা বিশ্বজননীর পাদপ্রান্তে পুঞ্জীভূত হতে থাকবেই;—

“রক্ষাংসি যত্রোগ্রবিষাশ্চ নাগা যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র।
দাবানলো যত্র তথাব্ধিমধ্যে তত্র স্থিতা জ্বং পরিপাসি বিশ্বম্॥
বিশ্বেশ্বরী ত্বং পরিপাসি বিশ্বং বিশ্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্‌।”

 এ মন্ত্র যুগযুগান্তর থেকেই বিশ্ববাসীর ভয়ত্রস্ত অন্তরমধ্য থেকে নানা ভাষায় নানা বর্ণে নানা ছলে উত্থিত হয়েছে, হচ্ছে, অনন্তকাল ধরেই হবে। তবে তার মধ্য থেকে কখন কখন কে’ একটা দাম্বাল শিশুর আবির্ভাব হয়ে ছন্দোবদ্ধ গতানুগতিক নিয়ম-নিবদ্ধ এই ভক্তিধারার অব্যাহত গতিকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে, তারা তো মাতৃদ্রোহী নয়, বরং মায়ের কাছে প্রশ্রয় পাওয়া তাঁর গোপাল-ছেলে। এদেশে তাঁদের সংখ্যা বড় কম নয়। মহারাজ, রাজকুমার থেকে আরম্ভ করে উলঙ্গ, অর্দ্ধোলঙ্গসন্নাসী, তান্ত্রিক-সাধক, ঘোরতামসিক বলে দৃষ্ট সংসারী সকল শ্রেণীর মধ্যেই জগতের অদ্বিতীয় মাতৃরূপের রূপসাধনা নানাভাবেই প্রকটিত হয়েছে। ঐহিক সুখসম্পদের অভিলাষ কোথাও কোথাও থাকলেও নিষ্কামতা বা মোক্ষপদ কামনাই অধিকাংশের আত্মাভিব্যক্তিতে সুপ্রকট। যেমন নাটোরের মহারাজ রামকৃষ্ট বলেছিলেন;—

‘‘মন যদি মোর ভুলে,
তবে বালির শয্যায় কালী নাম দিও কর্ণমূলে।”

 আবার আর এক মহারাজা কোচবিহারের হরেন্দ্র নারায়ণ ভূপ সহাস্যে মাকে শুনিয়ে দিলেন;—