পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$లిe পড়া শেষ হইলে নীরব-জিজ্ঞাসায় রাজা কস্তার মুখের দিকে চাহিলেন–কিন্তু জ্যোতিৰ্ম্ময়ী অন্ত সময়ের ন্তায় আবেগভরে মনোভাব প্রকাশ করিল না, ছুই ফোটা অশ্র ধীরে ধীরে তাহার নয়নে সঞ্চিত হইয়া উঠিল, আনত দৃষ্টিতে তাহ নেত্রচাত করিয়া কহিল —“এখন কিছু বলব না ভেবেছিলুম, কিন্তু না ব’লে থাকতে পারছিনে ; এখনও কি কাজ করার সময় হয়নি বাবা ? কবিতাতেই মনের আকুলতা প্রকাশ ক’রে ক্ষণস্ত থাকবে ? যে বেদনায় তাহীর কবিতার ছত্র গুলি রক্তরাঙা হইয়া উঠিয়াছিল, সেই বেদনার জাল স্বরে প্রকাশিত করিয়া অতুলেশ্বর কহিলেন, - “একান্ত নিরুপায় রাণি, নিতান্ত শক্তিহীন । আমাদের এই নিষ্ফল ক্রনন এক দিন কারও মনে, কারও তেজে সফলতা লাভ করবে,—এইরূপ আশা করি ;–কিন্তু—” “বাবা,—তুমিও এ কথা বলছ ?” "সত্য কথা যে রাণি ; সবল চিরদিনই দুৰ্ব্বলকে পীড়ন ক’রে আসছে,—করবেও । এ শক্তিকে রোধ করা স্বেরূপ শক্তির কাজ, সে সামর্থ্য অামার আছে কি রাণি ?” জ্যোতিৰ্ম্ময়ী উত্তেজিত কণ্ঠে কহিল,—“এ কথা আমি মানি না । দুৰ্ব্বল-পীড়ন যে সবলের স্বভাব, তা কখনই নয়। কারও কারও পক্ষে এ কথা ঠিক হতে পারে , কিন্তু সাধারণ নিয়ম বিপবীত বলেই মনে হয় । নইলে পৃথিবীতে ত দুৰ্ব্বল তিষ্ঠোতেই পারত না । আর ইংরাজ জাতের পক্ষে যে এ কথা খাটে না,তাদের শাসন-নীতিই তার স্পষ্ট প্রমাণ । আমরা যে আজ এ ভাবে ভাবতে শিখেছি, তাও ত ইংরাজী শিক্ষার ফল । আজ ব্রাহ্মণের সহিত ধোপা-নাপিতও এক বিদ্যালয়ে একাসনে ব’সে শিক্ষালাভ করছে, ব্রাহ্মণ-পূদ্রে সমভাবে বেদপাঠের অণিকারী ; কায়স্থ রমেশ দত্ত আজ বেদ অনুবাদ ক’রে ব্রাহ্মণের মুখ হেঁট করেছেন, যদিও আমি মনে করি, মুখোজ্জল করেছেন।” “ইংরাজের গুণের পক্ষপাতী তোর চেয়ে আমি কম নই রে—তবে—” —“তবে উদার ইংরাজজাতও সময় সময় দুৰ্ব্বলপীড়ন করে কেন ? এ প্রশ্ন যখনি আমার মনে উদয় হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তরটাও শুনতে পাই ।” রাজা কোন কথা কছিলেন না, নীরব কৌতুকলদৃষ্টিতে তাহার মুখের দিকে চাহিয়া বুলিলেন, বালিকা বলিল—“অবশু কোন জাতের মধ্যে সকলেই মহৎ প্রাণ হয় না—কিন্তু সে কথা ছেড়ে স্বর্ণকুমার দেবার গ্রন্থাবলী দিয়ে, এই পীড়নের আসল অর্থ হচ্ছে,—যেখানে অবমাননাই শিরোভূষণরূপে ধৃত হয়, সেখানে দুৰ্ব্বল-রক্ষার পরিবর্তে দুৰ্ব্বল-পীড়নেই সবল প্রকৃতি ক্রমশঃ অভ্যস্ত হয়ে পড়ে ।” উভয়েট কিছুক্ষণ নীরব হইয়া রছিলেন ; কিছু পরে কন্স। কহিল,—“দেখ বাবা, সে দিন আমার হরিরাম, কেশব পাড়ের পা ধুইয়ে সেই ময়লা জল এক চুমুকে পান ক’রে যেন ধন্য হয়ে গেল, আর পাডেও তাকে এই পুণ্যদান ক’রে আপনার ব্রাহ্মণত্বের গৌরবে গৰ্ব্বস্ফীত হয়ে উঠলো। দেখে আমার যে কি দুঃখ হোল, বলতে পারিনে। কিছু দিন পরে ইংরাজ-হস্তে পীড়নের ফলও এই রকম দাড়াবে! আমি—-আর দেখতে পারিনে বাব!” “কি করব বল ?” “কিছু ক'র না তুমি,—তুমি শুধু আমার সহায় হও । A বাবা, রাজ্যের যত বিদ্যালয় আছে, আমি তাতে ব্যায়ামের ব্যবস্থা করতে চাই—অনুমতি দাও তুমি—” রাজা কন্যার ভাষায় একটু বিস্থিত হইলেন ; “আমি ব্যবস্থা করতে চাই ?” বলিতে ত পরিত— “তুমি ব্যবস্থা কর।” নিজের মনের অজ্ঞাতসারে --রাজ বিচিত্র দেবীর ছবিখানির প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেন। তিনি উঠিয়া দাড়াইয়া কন্যার মস্তকে সাদরচুম্বন করিয়া কহিলেন—“রাণীর আজ্ঞা কি অবহেলা করা যায়— হবে হবে i* জ্যোতিৰ্ম্ময়ী ও উঠিয়া দাড়াইয়া তখন ছোট মেয়ের মত পিতাকে বহু-বেষ্টনে বাধিয়া বলিল,—“না বাবা —“হবে’ বল্পে আর চলবে না, ভমিষ্যৎকে এখন বর্তমানে আগিয়ে নিতে হবে । আমি পণ্ডিত্ত মহাশয়কে তোমার নাম ক’রে হুকুম দিয়েছি—আমাদের পিছনের বড় আমবাগানে কাল থেকে ছেলেরা যেন প্রত্যহ ব্যায়াম শিখতে আসে । আজ থেকে ছমাসের মধ্যে তুমি তাদের পরীক্ষা নিতে চাওএইরূপ জানিয়ে দিয়েছি।” রাজা বলিলেন—“রাণি, তুই যে রাজারও রাজা रुलि * - “না বাবা, আমি রাজার সেনাপতি । অামার ইচ্ছা করে, রাণী বিচিত্রার মত আমি দেশ রক্ষা করি।” এবার উভয়ে নীরব প্রশংসায় বিচিত্রার তৈলচিত্রের প্রতি দৃষ্টি স্থাপিত করিলেন। রাজা মনে মনে জ্যোতিৰ্ম্মীর তেজস্বিতায় গৰ্ব্ব অজুভব করিলেন, কস্তার ইচ্ছা ও উত্তমের প্রশংসা