পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭২ দেশ-সেবক । আমাদের উভয়ের ইচ্ছা ও সঙ্কল্প একই। এ অবস্থায় আমরা যদি মিলে-মিশে কাম করি, তবেই ত মায়ের মলিন মুখ এক দিন উজ্জ্বল হয়ে ऐ5रत ।” বসন্ত বলিল, “কিন্তু আমাদের মিলনের অtশা নেই—আমাদের পথ একেবারেই স্বতন্ত্র। রক্তপাতে আমরা দেশসেবা করতে পারব না ।” অনাদি বলিল, “কারণ, আমরা অন্তরূপ শপথে অবিদ্ধ।” দলপতি র্তাহার ক্রোধাবেগ চাপিতে মুহূৰ্ত্তকাল সময় গ্রহণ করিয়া বলিলেন, “কিন্তু ইতিপূৰ্ব্বেত তোমাদের মুখে এ রকম কথা শুনি নাই। আমার কথায় তখন তোমরা ত পুর্ণভাবেই সার দিয়ে গেছ ?” বসন্ত বলিল, “আপনার উত্তেজনায় আমরা জ্ঞানহার হয়ে পড়েছিলুম।” অনাদি যলিল, “গুরুর কৃপায় আমরা পুনরায় চেতনালাভ করেছি। তিনি আমাদের সাবধান ক’রে দিয়েছেম ।” প্রশ্ন হইল—“কে তোমাদের গুরু!” একটু ইতস্ততঃ করিয়া অনাদি বলিল, “রাজকুমারী ” দলপতি গম্ভীর হইৰা গেলেন, কিছু পরে বললেন, "স্থ্য, শুনেছি তিনি স্বদেশ-ত্রত গ্রহণ করেছেন। আচ্ছ, আমি যদি তার মত পরিবর্তন ক'রে দিতে পারি ?” অনাদি কছিল, “তা হ’লে আমাদেরও মত পরিঘৰ্ত্তন হ’তে পারে, আমরা তারই শিস্য ।” ধলপতি অল্পক্ষণ নীরব হুইয়া রহিলেন, পরে গম্ভীর ভাবে বলিলেন, "একটি কড়ারে তোমরা মুক্তি লাভ করতে পার। উভয়ে একই সঙ্গে সোৎস্নক কণ্ঠে প্রশ্ন করিয়া উঠিল—“কি কড়ার ?” “রাজকুমারীর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে –এই শপথে তোমাদের অব্যাহতি দিতে পারি।” অনাদির মনের বিপদ-পাষাণ মুহূর্বে যেন তুলার স্তার হালকা হইয়া গেল। সে উচ্ছ্বাসভরে বলিয়া উঠিল, “সে ত সহজেই হতে পারে। আগামী কনফারেন্স দিনে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব।” ” দলপতি যলিলেন, "না, আমি নিরিবিলি একলা উীর দর্শন পেতে চাই, নইলে কথা কবার সুবিধা হবে মা ।” অনেক দিন হইতে দলপতির মনে যে ইচ্ছা জাগিয়া উঠিয়াছে, হঠাৎ তাহ পূর্ণ করিবার সুযোগ তিনি দেখিতে পাইলেন । স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী অনাদি বলিল, “আচ্ছা, বেশ তাই হবে।” আলাদে দলপতির শুiমলবর্ণে লালের অভি, ফুটিল। তিনি শুমমুন্দর হইয়া সহস্তে কহিলেন— “কড়ার ভঙ্গের শাস্তি কিন্তু ভয়ানক ; এ কথা আগে থেকে ব’লে রাখছি। অার এক কথা, চ'লে যাপার আগে মায়ের নামে শপথ করতে হবে যে, এখানকার কোন কথাই কোন দিন তোমরা প্রকাশ করবে না ।” g বালক জুই জন শপথ করিয়া বিদায় হইয়া গেলে সন্তোষ দলপতির নিকট আসিয়া দাড়াইল । দলপতি তাহাকে বলিলেন, “এখানে এদের নিয়ে এসে বড়ই বুদ্ধির কাজ করেছিলে । নইলে একেবারেই এর আমাদের হাতছাড়া হয়ে যেত। দলবৃদ্ধি করতে ন। পারলে, আমাদের উদ্বেগু সাধিত হবে না । যা হ’কৃ ছোকৃর দুটোর উপর চোখ রেখো—যদি তেমন তেমন বোঝে!—তবে বুঝলে ত সন্তোষ ?” “আজ্ঞে হ' বুঝেছি ; আর বেশী বলতে হবে না।” অতঃপর নীরবে তাহার ভিতরে প্রবেশ করিলেন । এদিকে বসন্ত ও অনাদি মুক্তিলাভ করিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে ছুটিল, পশ্চাতে একবার চাহিয়া দেখিতেও তাহাদের সাহসে কুলাইল না। প্রেতরাজ্য ছাড়াইয়া একেবারে ক্রেশিখানেক পথ দুরে আসিয়। তবে যেন একবার ছাপ ফেলিবার তাহারা অবসর পাইল । তাহার পর আরো খানিকটা চলিয়া নদী-কিনারে আসিয়া বাধাঘাটের উপর দুই জনে বসিয়া পড়িল । নদী, আকাশ, জীবজন্তু, গাছপালা সহসা তাহদের নেত্ৰে এক অপূৰ্ব্ব মহিমায় প্রকাশিত হইয়া উঠিল, নবজীবনের চক্ষু দিয়া আজ তাহারা এ সকল প্রত্যক্ষ করিল ; তাহার। ত মৃত্যুমুখ হইতে—যমপুরী হইতেই ফিরিয়া আসিতেছে। অনাদি খানিকক্ষণ পরে বলিয়া উঠিল— “এ সব কথা কাউকেই বলতে পারব না, বসন্ত-দ’ ?” “অবশুই না।” “রাণীদিদকেও না ?” “না। আমরা ষে শপথে অপবদ্ধ।” “আমার বড় দুঃখ হচ্ছে বসন্ত-দা।” বসন্ত বলিল, “আমার ছুঃখ হচ্ছে যে কত ছেলেকে ওরা সৰ্ব্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে, তাদের সাবধান ক’রে দেবার উপায় নেই।”