পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বপ্নবাণী বাবা । তোমরা ভ কাজ-কৰ্ম্মের কথায় ব্যস্ত থাকবে,—থাবার সময় তার সঙ্গে দেখা হবে।” নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণ ব্যতীত প্রতিদিনই প্রায় রাজাবাহাদুর অন্তঃপুরে মাতার নিকট বসিয়া ভোজন করিতেন । . আহারান্তে অন্তঃপুর হইতে বৈঠকখানায় আসিয়া বৈষয়িক প্রসঙ্গ উত্থাপনের পুৰ্ব্বে শুমাচরণ কছিলেন, “র্তারা যে বড় তাগিদ দিচ্ছেন ?” বলা বাহুল্য তাগিদদার অর্ণর কেহই নহেন, শ্যামাচরণই স্বয়ং এখানে কন্যাকৰ্ত্তী । রাজা মূগের মত বলিলেন, “আপনিও উকিলদের তাগিদ দিন, টাকা মজুত ত " শুীমাচরণ মাথা চুলকাইয়া কহিলেন, “না, আমি অার এক কথা বলছি । মেয়ে বড় হ’য়ে উঠেছে ; আর তার কালবিলম্ব করতে চান না, আমাকে বলে দিলেন, অম্ৰাণেই দিনটা ঠিক করে মেতে । কিন্তু আপনার সঙ্গে কথা না কয়ে ত আমি মহারাণীকে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারিনে ৷” রাজা এইবার কথাটি বুঝিলেন, বিস্মিত ভাবে কছিলেন, “ক্ষেপেছেন আপনি ৷” “আমি ক্ষেপি নি, কিন্তু উীদের আপনি ৷” “আমি তাদের ক্ষেপিয়ে তুলেছি ? অস্তীর্থ।” “কথাটা কি এতই দুৰ্ব্বোধ্য ! যে মুহূৰ্ত্তে আপনি কণ্ঠীর মালা গ্রহণ ক’রে—তার হাতে আংটি পরিয়ে দিয়েছেন, সেই মুহূৰ্বেই আপনার ভাবিপত্নী ব’লে তাকে স্বীকার করে নেওয়া হ’য়েছে ।” রাজা সতেজে কহিলেন, “আমার মনে সেরূপ কোন অভিসন্ধিই ছিল না--আপনার দেখছি বিলিতি---” শুীমাচরণ কানে আঙ্গুল দিয়া উঠিলেন, “ছিঃ ছিঃ ও কথা বলবেন না। এ কথা শুনলে—তারা কস্তাকে চিরকুমারী রাখবেন, তবুও আপনাকে কন্ত দান করবেন না—” এতক্ষণে শ্ৰামাচরণ কস্তাপক্ষের তরফ হইতে একটা সত্য কথা কহিলেন । রাজা লজ্জিত হইলেন,—শুমাচরণ বলিলেন, “আপনি বিজ্ঞ পুরুষ, আপনার ব্যবহারে লোকে বালকের অবিবেচনা প্রত্যাশা করে না। এখন যদি আপনি তাকে প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে আপনার ব্যবহারই দুষ্মন্তের ন্তীয় অকুচিত হবে।” রাজা গম্ভীর হইয় পড়িলেন –কিছু পরে ক্ষেপিরে তুলেছেন ২০৭ বলিলেন, “অসম্ভব—অসম্ভব, ইচ্ছা থাকিলেও আমার পক্ষে বিবাহ করা এখন অসম্ভব ।” "কেন ?” উগ্র স্বরে রাজা উত্তর করিলেন, “আপনি ত আমার চেয়েও বিজ্ঞ—আর এইটুকু বুঝতে পারেন না ? রাণী-মা অণমার অবিবাহিত আর তার বুড় বাপ বিয়ে ক’রে ক’নে ঘরে আনবে ?” শু্যামাচরণ হাসিয়া কহিলেন, “বয়সেই যে লোকে বুদ্ধ হয় না—আজি আপনি তার অকাট্য প্রমাণ দিচ্ছেন। শিশুসুলভ স্বভাব নিয়ে আপনি দেখছি, কল্পনাকাশেই বিচরণ ক'রে বেড়ান , পৃথিবীর মাটর দিকে মোটেই নজর পড়ে না আপনার ।" রাজাও এইবার একটু হাসিয়া বলিলেন, “অত ভণিতার অাবগুক কি ? খুলেই বলুন না আপনার মনের কথাটা ?” “আপনার কন্যা যে ধরা পড়েছেন, বিশ্বশুদ্ধ লোকে সে খবর জানে—আর আপনি জানেন না ?” “শরৎকুমারকে মালা উপহার দেওয়াতে কথাটা রটেছে বোধ হয়—কিন্তু আমি ত রাণীর ভাবে সে রকম কিছু বুঝি নি, দেশমঙ্গল কার্য্যেই ত সমস্ত প্রাণ মা উৎসর্গ করেছেন। আপনি ষা বলছেন, তা যদি সত্য হয়, তা হ’লে আমি খুবই সুখী হই ।” “সৰ্ব্বতোভাবেই আপনি সুখী হবেন রাজাবাহছর । অণুভার বিবাহে আপনার সকলেই ত আস ছেন – তখন বুড়’ শ্যামাচরণকে ঘটক বিদায় দেলেন ।” রাজা হাদিয়া বলিলেন, “বেশ, তাই হবে ।” 못. لو۔ * 못 সে রাত্রি জ্যোতিৰ্ম্মল্পীর অনিদ্রায় কাটিল। সন্ধ্যার সমস্ত ঘটনা কখনও সংলগ্নভাবে কখনও অসংলগ্নভাবে তাহার মাথায় ঘুরিতে লাগিল। কালীমূৰ্ত্তি আর খামসুন্দর ও রাধারাণীর যুগলমূৰ্ত্তি, শরতের মুন্দর রূপ আর পিতার বিষাদপূর্ণ কণ্ঠধ্বনির মধ্যে তাহার বিভ্রান্তচিত্ত—কখনও আনন্দে, কখনও নিরানন্দে আত্মহারা হইয়া ফিরিতে লাগিল । পাশের পালঙ্কে কুন্দ যে শুইঙ্গা আছে, সে কথা জুলিয়। গিয়া মৃদ্ধ গুণগুণ কণ্ঠে তিনি একবার গান ধরিলেন— বড় সাধ, বড় আশা, বড় অকিঞ্চন— দুই চারি লাইন গায়িবার পর তাহার মনে পড়িয়া গেল—কুন্দ জাগিয়া উঠিতে পারে—গান খামিয়া গেল। কুন্দ তখন ডাকিল, “রাজকুমারি ” জ্যোতিৰ্ম্মী এতক্ষণ বিছানায় গুইয়াছিলেন,