পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন-রাত্রি তপস্তা-তুষ্ট ভগবান এক দিন স্বয়ং হলধরন্ধপে অভু্যদিত হয়ে নিজ হাতে হল ধরবেন।" “র্তা’র উদয়ে ত সকল সমস্তারক্ট সমাধান হয়ে যাবে। কে বলতে পারে, অস্বগলন দ্বারাই শ্ৰীকৃষ্ণের দ্যায় তিনি স্বরাজলাভের পথ নির্দেশ করবেন না ? যুগান্তরকালী কল্কি-অবতারের বীররূপই দ্য আমাদের কল্পনাপটে মুদ্রিত !” রাজা হাসূিহ্ম বলিলেন, “তুমি দেখছি অস্ত্র না ধ'রে ছাড়বে না ; লোকের অঙ্গচ্ছেদ ক’রে ক’রে অস্ত্রের উপরষ্ট তোমার বিশেষ শ্রদ্ধা জন্মে গেছে । নবীন চালক বাদ স্বরাজলাভের জন্ত অস্ত্রচালনায় উপদেশ দেন, তবে তিনিই পাঞ্চজন্ত ঘোষণা ক’রে তোমাদের সারথি হবেন । কিন্তু এখনো সে সময় আসে নি, আমাদের আত্মশক্তি এখন ও ক্রণরূপ অন্যুট, অপূর্ণ। তোমাকে আমি এ কথা বোঝাতে পারছি কি না, জানি না ; তবে তোমাদের অস্ত্ৰপাওীগণ- মাণিকতলার সেই বালকরা যে ধরা পড়ার সময় এ কথা বুঝেছে, তা’তে সন্দেহ নেই!" রাজা মুঠক্তকাল থামিলেন, তাহলে পর অন্তরঙ্গ বন্ধুর নিকট সৃদয় উদঘাটন করিয়া মনের জ্বালানিবৃত্তির উদ্দেশ্যেই যেন কহিলেন -“দেখ ডাক্তার, এ তুর্থ আমি কিছুতেই মন থেকে তড়িাতে পারিনে, যে মহা প্রাণ বালকদের আমরা খারিয়েছি, তাদের শোক আমি কিছুতেই ভুলতে পারিনে – তার দিগ ভ্রান্ত না হ’লে দেশের প্রাণে তার ইন্দ্ৰধনু ফুটিয়ে তুলতে পারত। এত শক্তি তাদের বৃথা কাধে নষ্ট হ’ল ?” "আমার কিন্তু তা’ মনে হয় না । ভুলষ্ট করুক, আর যাই করুক, তাদের আগ্নোৎসর্ণ রথ যায় নি ।” “তা ঠিক, এ সংসারে কোন energyষ্ট বৃথা যায় না--সব ভুলভ্রান্তির মধ্যে থেকেই ভাবান পরাফল আদায় ক’রে নেন । কে বলতে পারে - এই শিক্ষাই তাদের ভবিষ্ণু জীবন-গঠনের সোপানপথ নয় ?” বলিয়া রাজা চক্ষু মুদ্রিত করিয়া সৰ্ব্বশক্তিমান নিয়ন্ত পুরুষের উদ্দেশে মনে মনে কছিলেন,-“হে অকুলের কর্ণধায়, তাদের রক্ষা কর, প্রভু, এই শিশুমতি বালকদের মোহকৃত অপরাধ মাৰ্জ্জন ক’রে কুলে তুলে নিয়ে এদের পুণ্য কাযের অবসর দাও।” তকমাধারী ভূত্য কিছু পুৰ্ব্বে এখানে আসিয়া বারান্দার প|শের বড় টেবিলে চা’র সরঞ্জাম গুছ'ইতেছিল—সে মুহূ-মধুর ধ্বনিতে ঘণ্টা বাজাইয়। জানাষ্টল—চা প্রস্তুত । ২৯ দ্বাদশ পরিচ্ছেদ রাজা উঠিয়া শরৎকুমারকে বলিলেন,—“আসল কথাটাই তোমাকে এখনও বলা হয় নি, ডাক্তার, চল, চ খেতে থেতে বলছি। এতক্ষণ তর্কে-বিতর্কে বোধ হয় তোমার গলা শুকিয়ে গেছে ।" তাহারা উভয়ে চা-টেবিলের সম্মুখে আসিবামাত্র খানসামা চ1.দানী হইতে দুষ্ট পেয়ালা চ ঢালিয়৷ উভয়ের নিদিষ্ট আসনের নিকট ধরিয়া পরে রাজইঙ্গিতে ট্রে শুদ্ধ চা-দানী শরৎকুমারের হাতের কাছে রক্ষা করিল । রাজা বলিলেন,—-“ব’স ডাক্তার, তুমি পেতে আরম্ভ কর—আমি মুখে একটু জল দিয়ে আসি ।" রাজা মানের ঘর হইতে ফিরিয়া আসিয়া বলিলেন,—“চা’র পেয়ালা নিয়ে চুপচাপ ব’সে আছ দেখছি ? আজ রাণী আসেন নি—বোধ হয়, সখীবেষ্টিত আছেন, আজ তোমাকে নিজের আতিথ্যের কায নিজেই করতে হবে--বুঝলে ত, ডাক্তার ?” রাজকুমারী যে সখীবেষ্টিত নহেন— এই গুপ্ত রহস্ত প্রকাশে রাজার ভুল ভাঙ্গিতে প্রয়াস না করিয়া শরৎকুমার দাড়াইয়া উঠিয়া সহস্তে কছিলেন, “আতিথ্যের কিছুমাএ ক্রটি হবে না, রাজাবাহাদুর, সেজন্স ব্যস্ত হবেন না ।” উভয়ে আসন গ্রহণ করিবার পর খানসাম কেক, মিষ্টান্ন প্রভূতির থালা যথাক্রমে একটির পর একটি আনিয়া উভয়কে এক একবার দেখাষ্টতে লাগিল । র্তাহার ইচ্ছামত পার্শ্বস্থিত নিজ নিজ Lরকাবে ভোজ্যদ্রব্য কিছু কিছু উঠাইবার পর থালাগুণ পুনরায় টেবিলে যথাস্তানে রাখিয়া দিয়া ভূত্য অতঃপর দ্বারপ্রান্তে হরকরার নিকট গিয়া বসিল । আপাততঃ তাহার পরিবেষণ-কাৰ্য্য এইখানেই শেষ, চা মিষ্টান্ন সকলই তাহীদের হাতের কাছে, অবিশুকমত নিজেরাই তুলিয়া লইতে পরিবেন এবং প্রয়োজন বুঝিলে ঘণ্টা বাজাইয়া তাহাকে ডাকিবেন । রাজা দু’এক ঢোক চা-পান করিবার পর বলিলেন,—“দেওয়ানের সঙ্গে আজই কি তুমি প্রসাদপুর যেতে পারবে ? সন্তেয গুলীর আঘাতে শয্যাগত, সেথানকার ডাক্তাররা তোমাকে চায় ।” শরৎকুমার চা’র পেয়ালাটা মুখ হইতে নীচে নামাইয়া রাখিয়া বলিলেন, “অবশুষ্ট । আমিও কিন্তু, বাজাবাহাদুর, যে কথা আপনাকে বলতে এসেছিলুম, এখনও বলা হয় নি।”