পাতা:স্বর্ণকুমারী দেবীর নূতন গ্রন্থাবলী.djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬৬ কি আমরা আপনাদের পদানত হয়ে থাকব না কি ? মনেও করবেন না তা ।” বিজনের মুখে এইরূপ স্বীকারোক্তি পুলিসসাহেবের স্বপ্নেরও অগোচর, তাহার বিস্ময়নিৰ্ব্বাক কণ্ঠ হইতে শুধু ধ্বনিত হইল, “টম্!" স্বজন রায় ব্যাকুলভাবে এতক্ষণ পরে বলিয়া উঠিলেন, “মিপ্যা কপা সাহেব, মিথ্যা বলছে ও ! আমাকে জব্দ করার জন্ত ও কথা বলছে।” পুলিসসাহেব প্রকৃতিস্থভাবেই অত:পর বলিলেন, “আপনাদের ঝগড়। ত আমরা মেটাতে পারব না, এই স্বীকারোক্তির পর একে থানায় নিয়ে যেতে আমরা বাধ্য, সেথান থেকে ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেবের কাছে একে নিয়ে যেতে হবে ।” গাড়ীর উপর কোচমানের পাশ্বে এক জন কনষ্টেবল বসিয়া ছিল, প্ৰভুল আজ্ঞায় সে নামিয়া দাড়াইবাবার বিজন বলিলেন, “জোরজবরদস্তি কিছুই করতে হবে না, চল আমি সঙ্গে যাচ্ছি।” ふ 烹 》 た স্বজন রায় ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট গিয়া দুঃপ নিবেদন করিলেন । বিদ্রোহী দলের নেতা অতুল রায়ই খে স্বজনের সর্বনাশ-সংকল্পে র্তাহার ইংরাজভক্ত সাধুসজ্জন ছেলেটিকে গুপ্ত উত্তেজনা প্ররোচনার দ্বারাই দলে টানিয়া লইয়াছেন,--নানারূপ বাগ বিষ্ঠাসে এই কথা তাহাকে বুঝাইতে লাগিলেন। ভক্তের স্তুতিমিনতি এবং অশ্রধারায় ম্যাজিষ্ট্রেটের মন গলিয়া গেল। তিনি বলিলেন, “মা ভৈঃ, বৎস, মা ভৈঃ ! তোমার ছেলে রাজসাক্ষী হ’ক—আর কোন ভয় नांदें ।” পিত বলিলেন, “তাই বল সাহেব, তুমি তাঁকে বুঝিয়ে বল । তার মেজাজটা কিছু দিন থেকে আমার প্রতি চটে রয়েছে, আমি কিছু বলব না, তাতে উণ্টে উৎপত্তি হলে ।” যথাসময়ে পুলিস বিজনকে ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে আনিয়া হাজির করিল। তখন তাহার রাগ অনেকটা পড়িয়া আসিয়াছে—চিস্তা করিবার শক্তিও ফিরিয়াছে। সে বুঝিতে আরত করিয়াছে যে, মুক্তকণ্ঠ হইয়া সে ভাল করে নাই । ম্যাজিষ্ট্রেট তাঁহাকে যখন জিজ্ঞাসা করিলেন, "তুমি রাজসাক্ষা হবে ।” “উত্তর হইল “না।” “তুমি বিদ্রোহী ?” “al " ম্যাজিষ্ট্রেট বুঝাষ্টয়া বলিলেন– “আগেই তুমি স্বীকার করেছ, এখন এরূপ অস্বীকারে ত কোন ফল স্বর্ণকুমারী দেবীর গ্রন্থাবলী নেই। যদি ‘মুক্তকণ্ঠে সব কথা এখন প্রকাশ কর—তবেই আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারি।” বিজনের মন কিন্তু এ কথা মানিল না, সমস্ত সহকৰ্ম্মাদিগকে বলিদান দিয়া আত্মরক্ষা করিতে তাহার সৰ্ব্বাস্তঃকরণ কুষ্ঠিত হইয়া উঠিল, সে মৌন হইয়া ব্লছিল। ম্যাজিষ্ট্রেট সাহেব আরও কিছুক্ষণ বুঝাইয়া অবশেষে তাহাকে বলিলেন, “আচ্ছা, চুই দিন তোমাকে সময় দিলাম, এ বিষয়ে চিন্তা কর । "দিনে নিশ্চয়ই তোমার বুদ্ধি সাফ হয়ে যাবে ।” তাহার পর গোপনে পুলিসসাহেবকে কি বলিলেন, বিজনকে তিনি হাজতে লইয়া গেলেন । বেশ কিছু বলা বাহুল্য— দুই দিনে তাহার মনের বল একেবারে তাছাকে ত্যাগ করিল, শরীরও ভাঙ্গিয়া পড়িল । তৃতীয় দিনে সে ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দোষ স্বীকার করিল, তবুও যথাসাধ্য দলের লোককে পাচাইয়া কবুল করিল। ডাকাতীর কথা আগেই বলিয়। ফেলিয়াছিল, তবুও স্বদলকে পলায়নে অবসর দিবার সংকল্পে পুলিসদলকে দিব্য ঘুরপাক দিয়া জঙ্গলের রাস্তায় যখন আনিয়া ফেলিল, তাহার পুৰ্ব্বেই ধনপতির গাড়ী দুইখানা চলিয়া গিয়াছে। পুলিসসাহেব কিন্তু গা উী হইতে নামিয়াই রাস্তায় গাড়ী চলিবার শব্দ শুনিয়া সন্দিহান হইয়া ভাবিলেন—হয় ত বা ৬াকাতরাই লুঠপট করিয়া চলিয়া যাইতেছে। তিনি তাহীদের অনুগমন করিবার ইচ্ছায় বিজনকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “শব্দ কোন দিক্ ইষ্টতে আসিতেছে?” । বিজন অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া তাহাকে দিক্ জানাইয়া দিল । তিনি দারোগাকে দলবল সহ সেইখানে রাখিয়া বিজনের সহিত গাড়ীতে উঠিয়৷ সেই শব্দলক্ষ্যে গাড়ী চালাইয়া দিলেন । গাড়ীতে উঠিবার সময় বিজনকে জিজ্ঞাসা করিয়াfছলেন,"কোন পথ ধরিলে শীঘ্ৰ গাড়া ধরিতে পারিবেন ?” বিজন গাড়ীর দিকে আসিতে আসিতে অঙ্গুলিনির্দেশে তাহাকে পথ দেখাইয়া দিল-শরৎকুমার তাহহে দেখিয়া ছিলেন । বিজন কিন্তু সোজা পথ দেখাইয়া দেয় নাই—তাই রাস্তার মধ্যে পুলিসসাহেব ধনপতির গাড়ী ধরিতে পারেন নাই। অবশেষে ঘুরিয়া ফিরিয়া আদালতের কাছে খাজনা জমা দিবার স্থানে আসিয়া ধনপতির গাড়ী দুইখান এবং সঙ্গের লোকজনকে দেখিতে পাইলেন— অনাদি ও বসন্তের প্রসাদে হুগsারা নিরাপদেই এখানে আসিয়া পৌঁছিয়াছিল। তাহীদের প্রশ্ন করিয়া শুনিলেন—