কিশোরী

তার  জলচুড়িটির স্বপন দেখে
অলস হাওয়ায় দীঘির জল,
তার আলতা-পরা পায়ের লোভে
কৃষ্ণচূড়া ঝরায় দল!
করমচা-ডাল আঁচল ধরে,
ভোমরা তারে পাগল করে,
মাছ-রাঙা চায় শীকার ভুলে,
কুহরে পিক অনর্গল;
তার  গঙ্গাজলী ডুরের ডোরা
বুকে আঁকে দীঘির জল।

তারে  আস্‌তে দেখে ঘাটের পথে
শিউলি ঝরে লাখে লাখে,
জুঁয়ের বুকে নিবিড় সুখে
প্রজাপতি কাঁপ্‌তে থাকে!
জলের কোলে ঝোপের তলে
কাঁচপোকা রং আলোক জ্বলে,
লুব্ধ ক’রে মুগ্ধ ক’রে
বৌ-কথা কও কেবল ডাকে;
আর  হাল্‌কা বোঁটা ফুলের বুকে
প্রজাপতি কাঁপতে থাকে।


তার  সীঁথায় রাঙা সিঁদূর দেখে
রাঙা হ’ল রঙন ফুল,
তার  সিঁদূর টিপে খয়ের টিপে
কুঁচের শাখে জাগল ভুল!
নীলাম্বরীর বাহার দেখে
রঙের ভিয়ান্‌ লাগল মেঘে,
কানে জোড়া দুল্‌ দেখে তার
ঝুমকো-জবা দোলায় দুল;
তার  সরু সী’থার সিঁদূর মেখে
রাঙা হ’ল রঙন ফুল!

সে  যে ঘাটে ঘট ভাসায় নিতি
অঙ্গ ধুয়ে সাঁঝের আগে,
সেথা  পূর্ণিমা চাঁদ ডুব দিয়ে নায়,
চাঁদ-মালা তায় ভাসতে থাকে!
জলের তলে খবর পেয়ে
বেরিয়ে আসে মৃণাল মেয়ে,
কল্‌মী-লতা বাড়ায় বাহু
বাহুর পাশে বাধতে তাকে;
তার  রূপের স্মৃতি জড়িয়ে বুকে
চাঁদের আলো ভাস্‌তে থাকে!




সে  ধূপের ধোঁয়ায় চুল্‌টি শুকায়,
বিনিসূতার হার সে গড়ে,
দোলন চাঁপার ননীর গায়ে
আলোর সোহাগ গড়িয়ে পড়ে!
কানড়া ছাঁদ খোঁপা বাঁধে,
পিঠ-ঝাঁপা তার লুটায় কাঁধে,
তার  কাজল দিতে চক্ষে আজো
চোখের পাতায় শিশির নড়ে;
সে  বেণীতে দেয় বকুল মালা
বিনিসূতার হার সে গড়ে।

সে  নামালে চোখ আকাশ ভরা
দিনের আলো ঝিমিয়ে আসে,
সে  কাঁদ্‌লে পরে মুক্তা ঝরে
হাস্‌লে পরে মাণিক হাসে!
কেরল কাঠের নৌকাখানি
জানে নাক’ তুফান পানি,—
কুল্‌কুলিয়ে  ঢেউগুলি যায়
নুইয়ে মাথা আশে পাশে
যদি  সেঁউতি ‘পরে চরণ পড়ে
হয় সে সোনা অনায়াসে!


ওই  সওদাগরের বোঝাই ডিঙা
ফিঙার মত চলত উড়ে,
তার  পরশ-লোভে আজকে সে হায়,
দাঁড়িয়ে আছে ঘাটটি জুড়ে!
অরাজকের পাগলা হাতী
পথে পথে ফির্‌ছে মাতি,’—
তারে  দেখতে পেলেই করবে রাণী
শুঁড়ে তুলে তুল্‌বে মুড়ে!
ওগো  তারি লাগি বাজছে বাঁশী
পরাণ ব্যেপে ভুবন জুড়ে!