বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/ব্যঞ্জনা


ব্যঞ্জনা

শুনিতে কি পাস—
এই-যে শ্বসিছে রুদ্র শূন্যে শূন্যে সন্তপ্ত নিশ্বাস
এরি মাঝে দূরে বাজে চঞ্চলের চকিত খঞ্জনি,
মাধুরীর মঞ্জীরের মৃদুমন্দগুঞ্জরিত ধ্বনি?
রৌদ্রদগ্ধ তপস্যার মৌনস্তব্ধ অলক্ষ্য আড়ালে
স্বপ্নে-রচা অর্চনার থালে
অর্ঘ্যমাল্য সাঙ্গ হয় সংগােপনে সুন্দরের লাগি।
মগ্ন যেথা ধেয়ানের সর্বশূন্য গহনে বৈরাগী
সেথা কে বুভুক্ষু আসে ভিক্ষা-অম্বেষণে
জীর্ণ পর্ণশয্যা-’পরে একা রহে জাগি
কঠিনের শুষ্ক প্রাণে কোমলের পদস্পর্শ মাগি।


তাপিত আকাশে
হঠাৎ নীরবে চলে আসে
একটি করুণ ক্ষীণ স্নিগ্ধ বায়ুধারা-
কে অভিসারিণী যেন পথে এসে পায় না কিনারা।

অকস্মাৎ কোমলের কমলমালার স্পর্শ লেগে।
শান্তের চিত্তের প্রান্ত অহেতু উদ্‌বেগে
ভ্রূকুটিয়া ওঠে কালাে মেঘে,
বিদ্যুৎ বিচ্ছুরি উঠে দিগন্তের ভালে,
রােমাঞ্চকম্পন লাগে অশ্বথের ত্রস্ত ডালে ডালে—
মুহূর্তে অম্বরবক্ষে উলঙ্গিনী শ্যামা
বাজায় বৈশাখীসন্ধ্যা-ঝঞ্ঝার দামামা,
দিগ্‌বিদিকে নৃত্য করে দুর্বার ক্রন্দন,
ছিন্ন ছিন্ন হয়ে যায় ঔদাসীন্য-কঠোর বন্ধন।