বনবাণী/নটরাজ-ঋতুরঙ্গশালা/শ্রাবণবিদায়


শ্রাবণবিদায়

গান

শ্রাবণ, তুমি বাতাসে কার
আভাস পেলে।
পথে তারি সকল বারি
দিলে ঢেলে।
কেয়া কাঁদে, যায় যায় যায়।
কদম ঝরে, হায় হায় হায়।
পুব হাওয়া কয়, ওর তাে সময় নাই বাকি আর।
শরৎ বলে, যাক-না সময়, ভয় কিবা তার—
কাটবে বেলা আকাশ-মাঝে
বিনা কাজে
অসময়ের খেলা খেলে।


কালাে মেঘের আর কি আছে দিন,
ও যে হল সাথিহীন।
পুব-হাওয়া কয়, কালাের এবার যাওয়াই ভালাে।
শরৎ বলে, গেঁথে দেব কালােয় আলাে-
সাজবে বাদল আকাশ-মাঝে
সােনার সাজে
কালিমা ওর মুছে ফেলে।

যায় রে শ্রাবণকবি রসবর্ষা ক্ষান্ত করি তার-
কদম্বের রেণুপুঞ্জে পদে পদে কুঞ্জবীথিকার
ছায়াঞ্চল ভরি দিল। জানি, রেখে গেল তার দান
বনের মর্মের মাঝে; দিয়ে গেল অভিষেকস্নান
সুপ্রসন্ন আলােকেরে; মহেন্দ্রের অদৃশ্য বেদীতে
ভরি গেল অর্ঘ্যপাত্র বেদনার উৎসর্গ-অমৃতে;
সলিলগণ্ডুষ দিতে তটিনী সাগরতীর্থে চলে,
অঞ্জলি ভরিল তারি; ধরার নিগূঢ় বক্ষতলে
রেখে গেল তৃষ্ণার সম্বল; অগ্নিতীক্ষ্ণ বজ্রবাণ
দিগন্তের তূণ ভরি একান্তে করিয়া গেল দান
কালবৈশাখীর তরে; নিজ হস্তে সর্ব ম্লানতার
চিহ্ন মুছে দিয়ে গেল। আজ শুধু রহিল তাহার
রিক্তবৃষ্টি জ্যোতিঃশুভ্র মেঘে মেঘে মুক্তির লিখন,
আপন পূর্ণতাখানি নিখিলে করিল সমর্পণ।