শবের পাশে (পুরােহিতের প্রার্থনা: অসামাজিক)

মৃত?
তবুও সে মাটি নয়।
মাথার চুল যেন আরও অনেককাল ব্যবহার করবে সে—
তার হাতির দাঁতের মতাে ধূসর কপালের উপর
ভােরের অজস্র দাঁড়কাকের মতাে চুলের আনন্দ,
চুলের আবেগ: যেন মিশরের মহীয়সী শাল পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে
লাল নীল কাচের জানালা খুলে দিয়ে
নব-নব ভােরের রৌদ্র ও নীল আকাশকে আস্বাদ করবার জন্যে।
কোন্‌-এক অন্ধকার লাইব্রেরির নিস্তব্ধ হলুদ পাণ্ডুলিপির মতাে
দেখলাম তাকে:
শ্রাবণের রৌদ্রে রেবা নদীর মতাে ছিল যে একদিন;
সে আর ঘুমােবে না কোনােদিন,
স্বপ্ন দেখবে না;
তার মৃত মুখের বিমর্ষ মােমের গন্ধকে ঢেকে ফেলে
শুধু তার ঘন কালাে চুল
সেই আবহমান রাত্রি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জেগে রয়েছে।
কোনাে এক দূর, ভালাে দ্বীপর মতাে
যেখানে জাগ্রত পাখিদের প্রেম
ধূসর সমুদ্রকে জাগাতে পারে না আর।
যে সমুদ্রের কোনাে বেলা নেই,
পাণ্ডুর দেহের নীরবতা নিয়ে তারই ভিতর নামল সে;
জ্যামিতির ভিতর থেকে রূপ তার কুহক হারিয়ে ফেলেছে;
তারপর বিশৃঙ্খল মাংসের দুর্বলতা নিয়ে
পৃথিবীর বড়াে-বড়াে নাবিকের বিবর্ণ ভয় ও বিস্ময়ের জিনিস সে।

এই নারী আজ নিস্তব্ধ;
মনে হয় যেন কোনাে সুদূর দ্বীপে ঘুম রয়েছে শুধু;
এর দেহের ভিতর বিবর্ণ দারুচিনি ছালের গন্ধ,
এর মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হয়
কোনাে অসীম নির্জনতার ভিতরে উঁচু-উঁচু গাছের ধীর আলােড়ন যেন
(আরও নিস্তব্ধ)
এই মৃতার শরীরে সেই দূর দ্বীপের সবুজ শব্দ—স্বাদ—ছায়া-রৌদ্রের বুনুনি—

আমলকী গাছ কোকিল এই নিস্পাপ স্রোত অনুভব করেছে,
তাই সে ধূসর সম্রাটের জন্যে সংগীত খুঁজতে চলে গিয়েছে:
মৃত্যুর মহান আত্মীয়তা
পৃথিবীর পাখিদের কাছেও মৈথুনের চেয়ে প্রগাঢ়।