মহিষাসুরমর্দ্দিনী (১৯৬২)

পঙ্কজ কুমার মল্লিক সুরারোপিত
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, বাঁশরী লাহিড়ী, কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, শ্যামল মিত্র, সুপ্রীতি ঘোষ গীত
রং (তথ্য)
  ঘোষণা
  সংলাপ
  অন্যান্য

[০০:০০:০০ (পুরুষ কণ্ঠে ঘোষণা)]

এখন শুনবেন বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান সঙ্গীতবীথি মহিষাসুরমর্দ্দিনী। রচনা বাণীকুমার। সঙ্গীত পরিচালনা পঙ্কজ কুমার মল্লিক। গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। আজ দেবীপক্ষের প্রাক্‌-প্রত্যুষে জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমনবার্তা আকাশে বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্যস্তবমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা। আজ শারদগগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাবক্ষণ।

[০০:০২:০১ (পুরুষ কণ্ঠে গান)]

জাগো জাগো
মহিষাসুরমর্দিনী অমলকিরণে জাগো
জাগো মা
জাগো জাগো

[০০:০২:৪০ (সমবেত কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী।
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী॥
শক্তিঃ শুম্ভনিশুম্ভদৈত্যদলনী যা সিদ্ধিদাত্রী পরা।
সা দেবী নবকোটীমূর্তিসহিতা মাং পাতু বিশ্বেশ্বরী॥
বিশ্বেশ্বরী॥

[০০:০৪:০৩ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর
ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা
আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে
রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন
তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন
আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা

[০০:০৫:০৫ (সমবেত কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রেক্ষা চতুর্ভির্ভুজৈঃ।
শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা॥
আমুক্তাঙ্গদহার কঙ্কণরণৎ কাঞ্চীক্কণন্নূপুরা।
দুর্গা দুর্গতিহারিণী ভবতু নো রত্নোল্লসৎকুণ্ডলা॥

[০০:০৬:১৪ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

মহামায়া সনাতনী শক্তিরূপা গুণময়ী
তিনি এক তবু প্রকাশ বিভিন্ন
দেবী নারায়ণী
আবার দেবী ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী
তিনি কখনো মাহেশ্বেরী রূপে ত্রিশূল-অর্ধচন্দ্র-সর্পধারণ করে আছেন
কখনো বা তিনি নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী
পরমাদেবী বৈষ্ণবীরূপে বিরাজ করেন
শঙ্খচক্রগদাখড়্গ হাতে
কখনো তিনি সলিল থেকে পৃথিবীকে উদ্ধার করে বরাহরূপিনী
তিনি ত্রৈলোক্যত্রাণকারিণী
প্রয়োজনে তিনি দৈত্যগণের বিনাশে ধারণ করেন ভীষণ সিংহমূর্তি
কখনো মহাবজ্ররূপিণী তিনি ঐন্দ্রী
কখনো তিনি উগ্রা শিবদূতী
কখনো নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা
তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি
এই সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে
সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন
বেজে উঠেছে আকাশে বাতাসে
আলোর বীণাবেণু
শুভ্র সুরের আগমনী

[০০:০৭:৪৭ (নারী কণ্ঠে গান)]

বাজলো তোমার আলোর বেণু
মাতলো যে ভুবন
বাজলো তোমার আলোর বেণু
মাতলো যে ভুবন
বাজলো তোমার আলোর বেণু

আজ প্রভাতে সে সুর শুনে
খুলে দিনু মন
বাজলো বাজলো
বাজলো তোমার আলোর বেণু

অন্তরে যা লুকিয়ে রাজে
অরুণ বীণায় সে সুর বাজে
এই আনন্দ যজ্ঞে সবার
মধুর আমন্ত্রণ
মাতলো যে ভুবন
বাজলো তোমার আলোর বেণু

আজ সমীরণ আলোয় পাগল
নবীন সুরের বীণায়
আজ শরতের আকাশবীণায়
গানের মালা বিলায়
তোমায় হারা জীবন মম
তোমারো আলোয় নিরুপম
ভোরের পাখি ওঠে গাহি
তোমারি বন্দন
মাতলো যে ভুবন
বাজলো তোমার আলোর বেণু

[০০:১১:২৬ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

হে ভগবতী মহামায়া
তুমি ত্রিগুণাত্মিকা
তুমি রজোগুণে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগ্‌দেবী
সত্ত্বগুণে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী
তমোগুণে শিবের বণিতা পার্বতী
আবার ত্রিগুণাতীত তুরীয়াবস্থায় তুমি অনির্বচনীয়া
অপার মহিমময়ী পরব্রহ্মমহিষী
অখিল চরাচরে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার পূজা বৈভব পরিব্যাপ্ত
আজ শারদ সূর্যকিরণে তাঁর কান্তি বিশ্বপ্রকৃতির শোভারূপে সর্বব্যাপিনী
এই উষালগ্নে হে মহাদেবী
তোমার উদ্বোধনে বাণীর ভক্তি রসপূর্ণ বরণ কমল
আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে দিগন্তে
হে অমৃতজ্যোতি মোহনাশিনী
জাগো জাগো

[০০:১২:৪১ (পুরুষ কণ্ঠে গান)]

মোহ আবরণ তোলো
মোহ আবরণ তোলো
জাগো জাগো আলোকবরণী
মোহ আবরণ তোলো
হৃদয়বীণা বাজাও বাজাও
স্তব নব জাগরণে
মোহ আবরণ তোলো

আকাশে রাগিনী জাগিছে পুলকে
অনাহত রবে
আকাশে রাগিনী জাগিছে পুলকে
অনাহত রবে
শিবানী সোনার বরণ মন্ত্র
জ্যোতিনির্মলভবে
অমৃতময়ী জীবনবীণা
শুনায়ে চরণধ্বনি
অমৃতময়ী জীবনবীণা
শুনায়ে চরণধ্বনি
তব বৈভব
তব বৈভব
পূজাব রবে
রচে অঞ্জনে ধরণী
মোহ আবরণ তোলো
জাগো জাগো আলোকবরণী
মোহ আবরণ তোলো

[০০:১৫:৩০ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী
তিনি চিন্মাত্ররূপে কৃষ্ণজগত ঘিরে করেন অবস্থান
লোকের অভ্যুদয়কালে বিশ্ব প্রসদিত্রী বিশ্বমোহিনী মহাদেবী লক্ষ্মীবৃদ্ধিপ্রদা
দেবী দিব্যজ্ঞান ইচ্ছা ও ক্রিয়ার প্রত্যক্ষমূর্তি
তিনি সর্বচৈতন্যময়ী
দেবমানবকে বহুবাঞ্ছিত আত্মতত্ত্ব দানে করেন ধন্য
আজ মহামহোৎসবে শুচিরপ্রার্থিকা বিদ্যা বিজ্ঞান শ্রী সম্পদ শক্তি সিদ্ধি সংযোজিনী
ত্রিলোকেশ্বরী মূর্তিতে এই বীরাবির্ভাবে শ্যামলা ধরিত্রী হোক নন্দিতা

ব্রাহ্মমুহূর্তে যখন মহামুনি সুমেধা মহাশক্তি দুর্গাকে আবাহন করছেন তখন হৃতসর্বস্ব রাজা সুরথ ও নিগৃহীত বৈশ্য সমাধি মিলিত হয়ে ব্রহ্মর্ষির আশ্রমে এলেন। সুরথ মহামুনির কাছে আপনার সকল দুঃখ বেদনা নিবেদন করলেন আর বললেন ধনলোভের কারণে পুত্র কলত্রাদি কর্তৃক বিতাড়িত তথাপি মায়া দুর্বলচিত্ত বৈশ্যের করুণকাহিনী। ঋষি বললেন, “মহাশক্তির আরাধনা কর। তিনি এই নিখিল চরাচর সৃষ্টি করেছেন। সেই মহাদেবীকে প্রসন্ন কর। তিনি সকল কামনা পূর্ণ করবেন, দুঃখের শান্তি এনে দেবেন।” তখন রাজা সুরথ প্রশ্ন করলেন, “ভগবন্‌, আপনি যে মহামায়া মহাশক্তির কথা বলছেন, তিনি কে? তাঁর সৃষ্টি কোথায়? তাঁর কর্ম, তাঁর প্রভাব, তাঁর স্বরূপ কি প্রকার?” সুমেধা বললেন, “মহারাজ, তিনি নিত্যা, তাঁর আদি নেই, অন্ত নেই, তাঁর প্রাকৃত মূর্তি নেই, এই বিশ্বের প্রকাশ কারণ তিনি, এতেই তিনি মিলিয়ে আছেন। নিত্যা হয়েও অসুরপীড়িত দেবতাদের রক্ষা করবার জন্য তাঁর আবির্ভাব হয়। সেই বার্তা তোমায় জ্ঞাপন করি। পুর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগত কেবল কারণসলিলে পরিণত হল। ভগবান বিষ্ণু অখিলশক্তীয়রভাব সংগৃহীত করে সেই কারণ সমুদ্রে রচিত অনন্ত শয্যাপরে যোগনিদ্রায় অভিভূত হলেন। বিষ্ণুর যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবীকল্পের সৃষ্টিবিধাতা ব্রহ্মা। কিন্তু বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধু কৈটভ অসুরদ্বয় ব্রহ্মার কর্ম অস্তিত্ব বিনাশে উদ্যত হতেই পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগনিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্বপাতা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য জগতের স্থিতি সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী হরিনেত্রনিবাসিনী নিরূপমা ভগবতীকে স্তব মন্ত্রে উদ্বোধিত করলেন।

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষ্‌টকারঃ স্বরাত্মিকা।
সুধা ত্বং অক্ষরে নিত্যে তৃধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা॥
অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যা অনুচ্চারিয়াবিশেষতঃ।
ত্বমেব সন্ধ্যা সাবিত্রী ত্বং দেবী জননী পরা॥
ত্বয়েতদ্ধার্যতে বিশ্বং ত্বয়েতৎ সৃজ্যতে জগৎ।
ত্বয়েতৎ পাল্যতে দেবী ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা॥
বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে।
তথা সংহৃতিরূপান্তে জগতোস্য জগন্ময়ে॥
মহাবিদ্যা মহামায়া মহামেধা মহাস্মৃতিঃ।
মহামোহা চ ভবতি মহাদেবী মহাসুরী॥
প্রকৃতিস্ত্বং চ সর্বস্ব গুণাত্রয়বিভাবিনী।
কালরাত্রির্মহারাত্রির্মোহারাত্রিশ্চ দারূণা॥
ত্বং শ্রীস্তমীশ্বরী ত্বং হৃস্ত্বং বুদ্ধির্বোধলক্ষণা।
লজ্জা পুষ্টিস্তথা তুষ্টিস্ত্বং শান্তিঃ ক্ষান্তিরেব চ॥
খড়্গিনী শূলিনী ঘোরা গদিনী চক্রিনী তথা।
শঙ্খিনী চাপিনী বাণ ভূশূণ্ডী পরিঘায়ূধা॥
সৌম্যা সৌম্যতরাঽশেষ সৌম্যেভ্যস ত্বতিসুন্দরী।
পরাপরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী॥

তখন বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল। বিষ্ণুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বাহির হলেন প্রলয়ান্ধকাররূপিনী তামসী দেবী। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রচালনে মধু কৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।

এদিকে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিম্লান হয়ে গেল। স্বর্গভ্রষ্ট অমরকুলের এই দুর্বিষহ অত্যাচার কাহিনী শুনে শান্ত যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙা বরণ ধারণ করলে আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণের আনন ভ্রুকুটিকুটিল হয়ে উঠল। বিশ্বযোনি বিষ্ণু ও রুদ্রের বদন থেকে তেজজ্যোতি বিচ্ছুরিত হল। ব্রহ্মা ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল। এই পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্‌মণ্ডল পূর্ণ করে দিলে। ঐ তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রীমূর্তি উৎপন্ন হল। ইনি জগন্মাতৃকা মহামায়া। তিনিই দেবী, তিনিই বাক্‌। তাই তাঁর স্তুতিগাথা সর্বলোকে অভিমন্দ্রিত হল।”

[০০:২২:৪৫ (সমবেত কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্‌ আদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ অহম্‌।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহম্‌ ইন্দ্রাগ্নি অহমশ্বিনোভা অহম্‌॥
অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্‌।
অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে॥
অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকিতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্‌।
তাং মা দেবা ব্যদধুঃ পুরুত্রা ভূরিস্থাত্রাং ভূর্যাবেশয়ন্তীম্‌॥
অহং রুদ্রায় ধনুরাতনোমি ব্রহ্মদ্বিষে শরবে হন্তবা উ।
অহং জনায় সমদং কৃণোম্যহং দ্যাবাপৃথিবী আবিবেশ॥
অহমেব বাত ইব প্রবাম্যারভমাণা ভুবনানি বিশ্বা।
পরো দিবা পর এনা পৃথিব্যৈতাবতী মহিনা সংবভূব॥

[০০:২৫:২৭ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

এই অপূর্ব স্ত্রীমূর্তি মহাশক্তি দেবগণের অংশসম্ভূতা দেবগণের সমষ্টিভূত তেজঃপিণ্ড এক বরবর্ণিনী শক্তিস্বরূপিণী দেবীমূর্তি ধারণ করলেন।

অতুলং তত্র তত্তেজঃ সর্বদেব শরীরজম্।
একস্থং তদভূন্নারী ব্যাপ্তলোকত্রয়ং ত্বিষা॥
যদভূচ্ছাম্ভবং তেজো স্তেনাজায়ত তন্মুখম্।
যাম্যেন চাভবন্ কেশা বাহবো বিষ্ণুতেজসা॥
সৌম্যেন স্তনয়োর্যুগ্মং মধ্যং চৈন্দ্রেণ চাভবৎ।
বারুণেন চ জঙ্ঘোরূ নিতম্বস্তেজসা ভুবঃ॥
ব্রহ্মণস্তেজসা পাদৌ তদঙ্গুল্যোঽর্ক তেজসা।
বসূনাং চ করাঙ্গুল্যঃ কৌবেরেণ চ নাসিকা॥
তস্যাস্তু দন্তাঃ সম্ভূতা প্রাজাপত্যেন তেজসা।
নয়নত্রিতয়ং যজ্ঞে তথা পাবকতেজসা॥
ভ্রুবৌ চ সন্ধ্যয়োস্তেজঃ শ্রবণাবনিলস্য চ।
অন্যেষাং চৈব দেবানাং সম্ভবস্তেজসাং শিবা॥
ততঃ সমস্ত দেবানাং তেজোরাশিসমুদ্ভবাম্।
তাং বিলোক্য মুদং প্রাপুঃ অমরা মহিষার্দিতাঃ॥

এই দেবীর আনন শ্বেতবর্ণ, নেত্র কৃষ্ণবর্ণ, অধরপল্লব আরক্তিম ও করতলদ্বয় তাম্রাভ। তিনি কখনো বা সহস্রভুজা, কখনো বা অষ্টাদশভুজারূপে প্রকাশিত হতে লাগলেন। এই ভীমকান্তরূপিণী দেবী ত্রিগুণা মহালক্ষ্মী, তিনিই আদ্যামহাশক্তি। মহাদেবীর মহামহিমময় আবির্ভাবে বরণগীত ধ্বনিত হয়ে উঠল।

[০০:২৭:৪০ (নারী কণ্ঠে গান)]

অখিল বিমানে
তব জয়গানে
যে সামরব
অখিল বিমানে
তব জয়গানে
বাজে সেই সুরে
সোনার নূপুরে
কি সে নব
অখিল বিমানে
তব জয়গানে

হে আলোর আলো
তিমির মিলালো
হে আলোর আলো
তিমির মিলালো
তব জ্যোতি সুধা
চেতনা বিলালো
রাগিণী দেশীরে
গাহিল মধুরে
সে বৈভব
অখিল বিমানে
তব জয়গানে
যে সামরব
অখিল বিমানে
তব জয়গানে
অখিল বিমানে
তব জয়গানে

[০০:৩২:১৫ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে॥

[০০:৩২:১৫ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবীর আবির্ভাবের এই শুভ বার্তা প্রকাশিত হল। সকল দেবদেবী মহাদেবীকে বরণ করলেন গীতিমাল্যে, সেবা করলেন রাগচন্দনে। জগন্মাতা চণ্ডিকা উপাসকের ধনদাত্রী, ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা সর্বোত্তম মহিমা মহাদেবী অন্তর্যামীরূপে ব্যপ্ত হয়ে আছেন দ্যুলোক-ভূলোক। ভুবনমোহিনী সর্ববিরাজমানা জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবা-পৃথিবী ও সৃষ্টির মধ্যে পরিব্যপ্ত হয়ে অবস্থান করেন, পরমচৈতন্যরূপা। মানবের কল্যাণে সর্বমঙ্গলা হোন উদ্বুদ্ধা।

[০০:৩৩:৫৩ (পুরুষ ও নারী কণ্ঠে গান)]

শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত
শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত
আকাশতলে অনিলে-জলে দিকে-দিগঞ্চলে
সকল লোকে পুরে বনে-বনান্তরে
নৃত্যগীতছন্দে নন্দিত
শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত
শরৎপ্রকৃতি উল্লাসে উত্সব-গানে
চিরসুন্দর চিরসুন্দর চিতসুন্দর বন্দন রাগে
ত্রিলোকে জাগে শরন্ময়ী আনন্দে
মহাশক্তিরূপা মঞ্জুলশোভা জাগে আনন্দে
রাজে কল্যাণী সদা রাজে
সদা সুখদা সদা বরদা সদা জয়দা ক্ষেমঙ্করী শুভা রাজে
অসুরনাশন দশপ্রহরণভুজা রাজে
রণিত বীণাবেণু মধুললিত-শমিত তানে
শুভ আরতি-ঝঙ্কৃত ভুবনে
নব গতিরাগে-যতি-অলঙ্কারে
প্রাণে প্রাণে ওঠে গীতি
সুধারসঘন শান্তি ঝনঝন জয়বাণী
আকাশতলে অনিলে-জলে দিকে-দিগঞ্চলে
সকল লোকে পুরে বনে-বনান্তরে
নৃত্যগীতছন্দে নন্দিত
শুভ্র শঙ্খরবে

[০০:৩৭:২৯ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবী নিত্যা তথাপি দেবগণের কার্যসিদ্ধিহেতু সর্বদেবশরীরজ তেজঃপুঞ্জ থেকে তখন প্রকাশিত হয়েছেন বলে তাঁর এই অভিনব প্রকাশ বা আবির্ভাবই মহিষমর্দিনীর উৎপত্তিরূপে খ্যাত হল। শুচিস্মিতা ইন্দ্রাণী ও দেবদেবীর বরণগানে দেবী প্রসন্না হলেন। মন্দ্রিত হল দেবীর বিজয়শঙ্খধ্বনি। দেবী জনে জনে ঘোষণা করলেন, নিয়ে এসেছি।

দেবী সজ্জিতা হলেন অপরূপ রণচণ্ডী মূর্তিতে। হিমাচল দিলেন সিংহবাহন, বিষ্ণু দিলেন চক্র, পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, ঐরাবত কণ্ঠলগ্ন জয়ঘণ্টা, বরুণ দিলেন পাশ, অগ্নি দিলেন শক্তি, যম তাঁর দণ্ড, কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ, চন্দ্র অষ্টচন্দ্র শোভা চর্ম দিলেন, ধনুর্বাণ দিলেন সূর্য, বিশ্বকর্মা অভেদ্য বর্ম, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা-কমণ্ডলু, কুবের রত্নহার। সকল দেবতা দেবীকে নানা অলঙ্কারে অলঙ্কৃত ও বিবিধপ্রহরণে সুসজ্জিত করে অসুরবিজয় যাত্রায় যেতে প্রার্থনা করলেন। রণদুন্দুভিতে বিশ্বচরাচর নিনাদিত হতে লাগল। যাত্রার পূর্বে সুর-নরলোকবাসী জননী দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা মহাশক্তিকে ধ্যানমন্ত্রে করলেন অভিবন্দনা।

[০০:৩৯:২৫ (সমবেত কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

জটাজূটসমাযুক্তাং অর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্‌।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌॥
অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাম্‌।
নবযৌবনসম্পন্নাং সর্বাভরণভূষিতাম্‌॥
সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত-পয়োধরাম্‌।
ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীম্‌॥

মৃণালায়ত-সংস্পর্শ-দশবাহুসমন্বিতাম্‌।
ত্রিশূলং দক্ষিণে ধ্যেয়ং খড়্গং চক্রং ক্রমাদধঃ॥
তীক্ষ্ণবাণং তথা শক্তিং দক্ষিণেষু বিচিন্তয়েৎ।
খেটকং পূর্ণচাপঞ্চ পাশমঙ্কুশমেব চ।
ঘণ্টাং বা পরশুং বাপি বামতঃ সন্নিবেশয়েৎ॥
অধস্তানন্মহিষং তদ্বদ্বিশিরষ্কং প্রদর্শয়েৎ॥

রক্তারক্তীকৃতাঙ্গঞ্চ রক্তবিস্ফুরিতেক্ষণম্‌।
বেষ্টিতং নাগপাশেন ভ্রূকুটি-ভীষণাননম্‌॥
কিঞ্চিদুর্দ্ধং তথা বামমঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।
দেব্যাস্তু দক্ষিণং পাদং সমং সিংহোপরি স্থিতম্‌॥
স্তূয়মানঞ্চ তদ্রূপমমরৈঃ সন্নিবেশয়েৎ।
প্রচণ্ডবদনাং দেবীং সর্বদাং বলপ্রদাং॥

উগ্রচণ্ডা প্রচণ্ডা চ চণ্ডোগ্রা চণ্ডনায়িকা।
চণ্ডা চণ্ডবতী চৈব চণ্ডরূপাতি চণ্ডিকা॥
আভিঃ শক্তিভিষ্টাভিঃ সততং পরিবেষ্টিতাম্‌।
চিন্তয়েজ্জগতাং ধাত্রীং ধর্মকামার্থমোক্ষদাং॥
ধর্মকামার্থমোক্ষদাং ধর্মকামার্থমোক্ষদাং॥

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে॥

[০০:৪৩:৫৫ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবী অষ্টাদশভুজা সিংহবাহিনীমূর্তি পরিগ্রহ করে শঙ্খে দিলেন ফুৎকার। দেবীর রণ-আহ্বানশব্দ অনুশরণ করে সসৈন্যে ধাবমান হল মহাবলশালী মহিষাসুর। অসুররাজ লক্ষ্য করলেন মহালক্ষ্মীদেবীর তেজঃপ্রভায় ত্রিলোক জ্যোতির্ময়, তাঁর মুকুট গগন চুম্বন করছে, পদভারে পৃথ্বী আনতা আর ধনুকটঙ্কারে রসাতল প্রকম্পিত। দেবীর সঙ্গে মহিষাসুরের প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হল। দেবীর অস্ত্রপ্রহারে দৈত্যসেনা ছিন্নভিন্ন হতে লাগল। মহিষাসুর ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করে নানা কৌশল বিস্তার করলে। মহিষ থেকে হস্তীরূপ ধারণ করলে। আবার সিংহরূপী দৈত্যের রণোন্মত্ততা দেবী প্রশমিত করলেন। পুনরায় নয়নবিমোহন পুরুষবেশে আত্মপ্রকাশ করলে ওই ঐন্দ্রজালিক। দেবীর রূঢ় প্রত্যাখ্যান পেয়ে আবার মহিষমূর্তি গ্রহণ করলে। রণবাদ্য দিকে দিগন্তরে নিনাদিত, চতুরঙ্গ নিয়ে অসুরেশ্বর দেবীকে পরাজিত করবার মানসে উল্লসিত। দেবীর বাহন সিংহরাজ দাবাগ্নির মত সমস্ত রণক্ষেত্রে শত্রুনিধনে দুর্নিবার হয়ে উঠল। নানাপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা মধু পান করতে করতে মহিষাসুরকে সদম্ভে বললেন,

“গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্‌।
ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ॥”

[০০:৪৫:৫৯ (পুরুষ কণ্ঠে গান)]

নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী
জাগো রক্তবীজনিকৃন্তিনী
জাগো মহিষাসুরবিমর্দিনী
উঠে শঙ্খমন্দ্রে অভ্রবক্ষ শঙ্কাস্বননে ক্রন্দি
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী

তব খড়্গশক্তি কৃতকৃতান্ত শত্রুশাতন তন্দ্রি
নাচো সিংহবাহিনী রণহুংকারে ইন্দ্রারি চমূদণ্ডী
চমূদণ্ডী
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী
নমো চণ্ডী

তুমি রণকোদণ্ড টঙ্কারে হান খরকলম্বজালে
সব রথতুরঙ্গ ছিন্ন ছিন্ন সুতীক্ষ্ণ করবালে
নাচ ধূম্রনেত্র দনুজমুণ্ড চক্রপাতনে খণ্ডি
তব তাতাথৈ থৈ থৈ প্রলয় নৃত্য ধ্বংসে বাঁধনগণ্ডি
বাঁধনগণ্ডি
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী
নমো চণ্ডী

[০০:৪৮:৩২ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবতাগণ সানন্দে দেখলেন, দুর্গা মহিষাসুরকে শূলে বিদ্ধ করেছেন আর খড়্গনিপাতে দৈত্যের মস্তক ভূলুণ্ঠিত। আনন্দগানে বিশ্বনিখিল মন্দ্রিত হয়ে উঠল। দেবীর করুণায় আলোর প্রসাদলব্ধ নব আশার গীতি দিব্যাঙ্গনার কণ্ঠে স্বরলোক ও রাগিণীতে প্রকাশ করলে বিশ্ববাসীর মর্মবাণী।

[০০:৪৯:২০ (নারী কণ্ঠে গান)]

মাগো
তব বীণে সঙ্গীত প্রেমললিত
নিখিল প্রাণের বীণা তারে তারে রণিত
তব বীণে সঙ্গীত প্রেমললিত
সকল রোদন সেই সুরে গেল মরিয়া
মাগো
কালে কালে যত জমেছিল দুখযামিনী
ঊষার মূরতি ধরিয়া গাহিল রাগিনী
জীবন উঠিল আলোকসুধায় ভরিয়া
সকল রোদন সেই সুরে গেল মরিয়া
তব বীণে সঙ্গীত প্রেমললিত
নিখিল প্রাণের বীণা তারে তারে রণিত
তব বীণে সঙ্গীত প্রেমললিত
মাগো

[০০:৫২:৩৮ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

হে দেবী চণ্ডিকা, তোমার পুণ্যস্তবগাথা ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, শত্রুহানি ও পরম মোক্ষলাভের উপায়। তোমার স্তবমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা।

দেবি প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ প্রসীদ মাতর্জগতোঽখিলস্য।
প্রসীদ বিশ্বেশ্বরী পাহি বিশ্বং ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য॥
আধারভূতা জগতস্ত্বমেকা মহীস্বরূপেণ যতঃ স্থিতাসি।
অপাং স্বরূপস্থিতয়া ত্বয়ৈতৎ আপ্যায্যতে কৃৎস্নমলঙ্ঘ্যবীর্যে॥
ত্বং বৈষ্ণবীশক্তিরনন্তবীর্যা বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া।
সম্মোহিতং দেবি সমস্তমেতৎ ত্বং বৈ প্রসন্না ভুবি মুক্তিহেতুঃ॥
বিদ্যাঃ সমস্তাস্তব দেবি ভেদাঃ স্ত্রিয়ঃ সমস্তাঃ সকলা জগৎসু।
ত্বয়ৈকয়া পূরিতমম্‌বয়ৈতৎ কা তে স্তুতিঃ স্তব্যপরাপরক্তিঃ॥
সর্বভূতা যদা দেবী স্বর্গমুক্তিপ্রদায়িনী।
ত্বং স্তুতা স্তুত্যে কা বা ভবন্তু পরমোক্তয়ঃ॥
সর্বস্য বুদ্ধিরূপেণ জনস্য হৃদি সংস্থিতে।
স্বর্গাপবর্গদে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
কলাকাষ্ঠাদিরূপেণ পরিণাম প্রদায়িনি।
বিশ্বস্যোপরতৌ শক্তে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে।
শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনী।
গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
শরণাগতদীনার্তপরিত্রাণপরায়ণে।
সর্বস্যার্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণিরূপধারিণী।
কৌশাম্ভঃক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে মহাবৃষভবাহিনি।
মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
ময়ূরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরেঽনঘে।
কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
শঙ্খচক্রগদাশার্ঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে।
প্রসীদ বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
গৃহীতোগ্রমহাচক্রে দংষ্ট্রোদ্ধৃতবসুন্ধরে।
বরাহরূপিণি শিবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
নৃসিংহরূপেণ হন্তুং দৈত্যান্‌ কৃতোদ্যমে।
ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
কিরীটিনি মহাবজ্রে সহস্রনয়নোজ্জ্বলে।
বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রী নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে।
ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
দংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে।
চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
লক্ষ্মি লজ্জে মহাবিদ্যে শ্রদ্ধে পুষ্টি স্বধে ধ্রুবে।
মহারাত্রি মহাবিদ্যে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
মেধে সরস্বতি বরে ভূতি বাভ্রবি তামসি।
নিয়তে ত্বং প্রসীদেশে নারায়ণি নমোঽস্তু তে॥
সর্বস্বরূপে সর্বেশে সর্বশক্তিসমন্বিতে।
ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি দুর্গে দেবি নমোঽস্তু তে॥
এতৎ তে বদনং সৌম্যং লোচনত্রয়ভূষিতম্‌।
পাতু নঃ সর্বভূতেভ্যঃ কাত্যায়নি নমোঽস্তু তে॥
জ্বালাকরালমত্যুগ্রমশেষাসুরসূদনম্‌।
ত্রিশূলং পাতু নো ভীতেভদ্রকালি নমোঽস্তু তে॥
হিনস্তি দৈত্যতেজাংসি স্বনেনাপূর্য যা জগৎ।
সা ঘণ্টা পাতু নো দেবি পাপেভ্যোঽনঃ সুতানিব॥
অসুরাসৃগ্‌বসাপঙ্কচর্চিতস্তে করোজ্জ্বলঃ।
শুভায় খড়্গ ভবতু চণ্ডিকে ত্বাং নতা বয়ম্‌॥
রোগানশেষান্‌ অপহংসি তুষ্টা রুষ্টা তু কামান্‌ সকলানভীষ্টান।
ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি॥
এতং কৃতং যৎ কদনং ত্বয়াদ্য ধর্মদ্বিষাং দেবি মহাসুরাণাম্‌।
রূপৈঃ অনেকৈঃ বহুধাত্মমূর্তিং কৃত্বাম্‌বিকে তৎ প্রকরোতি কান্যা॥
বিদ্যাসু শাস্ত্রেষু বিবেকদীপেষ্বাদ্যেষু বাক্যেষু চ কা ত্বদন্যা।
মমত্বগর্তেঽতিমহান্ধকারে বিভ্রাময়ত্যেতদতীব বিশ্বম্‌॥
রক্ষাংসি যত্রোগবিষাশ্চ নাগা যত্রারয়ো দস্যুবলানি যত্র।
দাবানলো যত্র তথাব্‌ধিমধ্যে তত্র স্থিতা ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌॥
বিশ্বেশ্বরি ত্বং পরিপাসি বিশ্বম্‌ বিশ্বাত্মিকা ধারয়সীতি বিশ্বম্‌।
বিশ্বেশবন্দ্যা ভবতী ভবন্তি বিশ্বাশ্রয়া যে ত্বয়ি ভক্তিনম্রাঃ॥
দেবি প্রসীদ পরিপালয় নোঽরিভীতেঃ নিত্যং যথাসুরবধাদধুনৈব সদ্যঃ।
পাপানি সর্বজগতাঞ্চ শমং নায়াশু উৎপাতপাকজনিতাংশ্চ মহোপসর্গান্‌॥
প্রণতানাং প্রসীদ ত্বং দেবি বিশ্বার্তিহারিণি।
ত্রৈলোক্যবাসিনামীড্যে লোকানাং বরদা ভবঃ॥

[০১:০১:০২ (নারী কণ্ঠে গান)]

বিমানে বিমানে আলোকের গানে
জাগিল ধ্বনি
বিমানে বিমানে
তব বীণা তারে সে সুর বিহারে
কি জাগরণী
বিমানে বিমানে

অরুণরবি যে নিখিল রাঙালো
অরুণরবি যে নিখিল রাঙালো
পূর্ব আঁচলে তন্দ্রা ভাঙালো
রাঙা হিল্লোলে ধরণী যে দোলে
রাঙা হিল্লোলে ধরণী যে দোলে
নূপুররণি
বিমানে বিমানে

অন্তর বীণে তরুণ প্রাতের অমৃত রবে
অন্তর বীণে তরুণ প্রাতের অমৃত রবে
আছে যে ঘুমায়ে সে বাণী ঘনায়ে
তুলিলে নাভে
সে আলোর ধারা বন্ধনহারা
তলায়ে যাবে
গীতহীন তারা
গাহি যে তোমার মোহন মায়ার
কি আগমনী
বিমানে বিমানে

[০১:০৫:৪৮ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

দেবীর অক্ষয় কৃপাকণা পেয়ে সপ্তলোক আনন্দিত। এখন দেবীর আগমনহেতু প্রকৃতির উৎসব সঙ্গীতে ত্রিজগতের আনন্দ পরিপূর্ণ। প্রথম কল্পে দেবী কাত্যায়াননন্দিনী কাত্যায়নী অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডারূপে মহিষমর্দন করেন। দ্বিতীয় কল্পে ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হস্তে মর্দিত হয় মহিষ। আর তৃতীয় ঐ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী। মহিষাসুরমর্দিনী মা’র তিনদিন পূজার উৎসব নিখিল ধরণীতে এই বার্তা প্রচারিত হল।

[০১:০৬:৫২ (সমবেত কণ্ঠে গান)]

জয় জয় জপ্য জয়ে জয় শব্দ পরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে
ঝণঝণ ঝিংঝিমি ঝিংকৃত নূপুর শিঞ্জিতমোহিত ভূতপতে।
নটিত নটার্ধ নটী নট নায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে॥

অয়ি সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিযুতে
সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনঃ সুমনোহর কান্তিযুতে
শ্রিতরজনী রজনী রজনী রজনী রজনীকর বক্‌ত্রবৃতে।
সুনয়ন বিভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমর ভ্রমরাধিপতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে॥

কনকলসৎকল সিন্ধুজলৈরনুষিঞ্চতি তে গুণরঙ্গভুবং গুণরঙ্গভুবং
কনকলসৎকল সিন্ধুজলৈরনুষিঞ্চতি তে গুণরঙ্গভুবং গুণরঙ্গভুবং
ভজতি স কিং ন শচীকুচকুম্ভ তটীপরিরম্ভ সুখানুভবম্‌ সুখানুভবম্‌
ভজতি স কিং ন শচীকুচকুম্ভ তটীপরিরম্ভ সুখানুভবম্‌ সুখানুভবম্‌।
তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাসি শিবম্‌
তব চরণং শরণং করবাণি নতামরবাণি নিবাসি শিবম্‌
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে॥

[০১:০৯:১২ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

এই তপ্তকাঞ্চনবর্ণাভা দশপ্রহরণধারিণী মহিষাসুরমর্দিনী মহালক্ষ্মী দুর্গার পূজাবৈভব নিখিল জগতে কীর্তিত। ত্রিলোকে বিঘোষিত। ত্রিলোকমঙ্গল্যার অর্হণা ও স্তবনগাথা সেই পরমার্থদায়িনী দেবী বিষ্ণুমায়ার পুণ্যস্তব যুগে যুগে সুভাষিত।

নমো দেব্যৈ মহাদেব্যৈ শিবায়ৈ সততং নমঃ।
নমঃ প্রকৃতৈ ভদ্রায়ৈ নিয়তাঃ প্রণতাঃ স্ম তাম্‌॥
রৌদ্রায়ৈ নমো নিত্যায়ৈ গৌর্যৈ ধাত্র্যৈ নমো নমঃ।
জ্যোৎস্নায়ৈ চেন্দুরূপিণ্যৈ সুখায়ৈ সততং নমঃ॥
কল্যাণ্যৈ প্রণতা বৃদ্ধ্যৈ সিদ্ধ্যৈ কুর্মো নমো নমঃ।
নৈঋত্যৈ ভুভৃতাং লক্ষ্ম্যৈ শর্বাণ্যৈ তে নমো নমঃ॥
দুর্গায়ৈ দুর্গপারায়ৈ সারায়ৈ সর্বকারিণ্যৈ।
খ্যাত্যৈ তথৈব কৃষ্ণায়ৈ ধূম্রায়ৈ সততং নমঃ॥
অতিসৌম্যাতিরৌদ্রায়ৈ নতাস্তস্যৈ নমো নমঃ।
নমো জগৎপ্রতিষ্ঠায়ৈ দেব্যৈ কৃত্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু চেতনেত্যভিধীয়তে।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু বুদ্ধিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু নিদ্রারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু ছায়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু তৃষ্ণারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু শ্রদ্ধারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু লক্ষ্মীরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু বৃত্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু স্মৃতিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু দয়ারূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু তুষ্টিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
যা দেবী সর্বভূতেষু ভ্রান্তিরূপেণ সংস্থিতা।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥
ইন্দ্রিয়াণামধিষ্ঠাত্রী ভূতনাঞ্চাখিলেষু যা।
ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ॥
চিতিরূপেণ যা কৃৎস্নমেতদ্‌ ব্যাপ্যা স্থিতা জগৎ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমো নমঃ॥

[০১:১৪:৪৬ (পুরুষ কণ্ঠে গান)]

হে চিন্ময়ী
হিমগিরি থেকে এলে কারে ডেকে নির্মল প্রাতে
বসুন্ধরা যে সুবিমল সাজে অঞ্জলি হাতে
হে চিন্ময়ী

নভোনীলিমায় বাজে মহাভেরী
নভোনীলিমায় বাজে মহাভেরী
দিকে দিকে তব মাধুরী যে হেরি
সুললিত তানে প্রাণে সুধা আনে আলোকেরি সাথে
হে চিন্ময়ী

সাজাব যে ডালা গাঁথিব যে মালা জ্যোতির মন্ত্রে
তাই অন্তরে অমৃত যে ভরে পুলক তন্ত্রে
মাগি মহাবর অম্লান মনে
জননী গো
জননী গো নমি রাতুল চরণে
পূজায় উল্লাসে ধরণী যে হাসে
পূজায় উল্লাসে ধরণী যে হাসে
সুরভিত বাতে
হে চিন্ময়ী
হে চিন্ময়ী
হে চিন্ময়ী

[০১:১৬:৫৯ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

শ্রীশ্রীচণ্ডিকা গুণাতীতা গুণময়ী। সগুণ অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী। তিনি পরিণামিনী নিত্যা নির্গুণ চৈতন্য সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্‌ অথবা সরস্বতী; তাঁর স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী; আবার সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তাই রুদ্রাণী দুর্গা। দুর্গোৎসব বলতে একাধারে এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই। এই তিন মাতৃমূর্তির পূজায় ও আরত্রিকে মানবজীবনের পরম কামনা, সাধনা সার্থক হয়, চতুর্বর্গ লাভ করে মর্তলোক।

[০১:১৮:১০ (সমবেত কণ্ঠে গান)]

হে চারু পূর্ণসোম শিখরিণী
হে চারু পূর্ণসোম শিখরিণী
নমি গো ক্ষেমঙ্করী
চারু পূর্ণসোম শিখরিণী

সচেতন চিন্ময়রূপা
অয়ি দেবি
রহো তুমি ভুবন ভরি’
চারু পূর্ণসোম শিখরিণী

ত্রিগুণ সাম্য প্রকৃতি গুণময়ী
স্থিতি কাল চারী শক্তি লীলাময়ী
পরমা বিভূতি ভূষণা
নমি বিজ্ঞান দীপঙ্করী
চারু পূর্ণসোম শিখরিণী

কবরীরূপ ধারিণী
সুখদা নমি গো সুনির্মলা
ভাব স্বরূপিনী রূপী
বরদা নমি গো সুমঙ্গলা
নমি গো অগ্নিলোচনা রুদ্রাণী
নমি নমি ব্রহ্মমহিষী সর্বাণী
ত্রিলোক পরিণাম চিন্ময়ী
নমি আমার কন্ঠ ভরি
চারু পূর্ণসোম শিখরিণী

[০১:২২:১৯ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

মহাদেবীর চরিত মাহাত্ম্য ধ্যান নাম গান যে জন করে, তার সকল অবসাদ দূর হয়। সে সকল সঙ্কট থেকে মুক্তিলাভ করে। এই সর্বৈশ্বয্যময়ী দেবী নিত্যা হয়ে ঐরূপ বারম্বার আবির্ভূতা হন। তিনি জগতকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন। বিধাতৃ বরদার করুণার পুণ্যে বিশ্বনিখিল বিমোহিত। গন্ধ পুষ্প ধূপ দীপাদি ও ভক্তিপ্রচারে অমৃতরসবর্ষিণী মহাদেবীর অটল প্রতিষ্ঠা, প্রকৃত কল্যাণের তপস্যা। তার অমলরূপের সুষমায় প্রতিভাত ধরিত্রীর ধ্যানগরিমা।

[০১:২৩:২০ (নারী কণ্ঠে গান)]

অমল কিরণে ত্রিভুবনমনোহারিণী
অমল কিরণে ত্রিভুবনমনোহারিণী
হেরিনু তোমার রূপে করুণা লাবণী
নমি নমি নমি নিখিল চিতচারিণী
জাগাও পুলক নিত্য নূপুরে জননী
অমল কিরণে ত্রিভুবনমনোহারিণী

তোমারে পূজিছে দেবদেবী দ্বারে দ্বারে
তোমারে পূজিছে দেবদেবী দ্বারে দ্বারে
রাগিণী ধ্বনিছে আকাশবীণার তারে
তনু মন প্রাণ নিবেদি চরণে
প্রেম সুমোহন পূজা ধূপে অয়ি ভরণী
নমি জগতের সকল ক্ষেমকারিণী
লভিনু তোমার প্রেমে করুণা লাবণী
তনু-মন-প্রাণ নিবেদি তোমারে নমি

[০১:২৬:৩২ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

মহাশক্তির পূর্ণ উদ্বোধন হল। দানবপ্রকৃতি হিংসার লয় হয়। দেবী সর্বমঙ্গলা সকল ভূতের শুভকারিণী। তিনি অভিষ্ট বরদাত্রী। তিনি সকলের আশ্রয়। দেবী অসংসারে নাশ করেন জ্ঞানদারিদ্র্য ও বস্তুদারিদ্র্য। ধরার মানবকণ্ঠে দিকে দিগন্তলে আজ তাই দেবীর গৌরবগান নন্দিত।

[০১:২৭:১৫ (পুরুষ কণ্ঠে গান)]

আকাশ যে মধুময় ছন্দে
শেফালিকা গন্ধে
শারদারে অন্তরে বন্দে
শঙ্খের রণনে বন্দে
শঙ্খের রণনে
আকাশ যে মধুময় ছন্দে

পুলকিত মালতীর কুঞ্জে
আগমনী গুঞ্জে
প্রকৃতি যে রচে প্রীতি পুঞ্জে
রৌরব বরণে
শারদারে অন্তরে বন্দে
শঙ্খের রণনে বন্দে
শঙ্খের রণনে
আকাশ যে মধুময় ছন্দে

তিমিরেরও নাগপাশ লুপ্ত
রবি হল মুক্ত
জেগে ওঠে রহে যাহা সুপ্ত
শুভ্রেরও আলোকে
আজই মহা অম্বর নিত্য
লভি জ্যোতিবৃত্ত
বন্দনাগানে ভরে চিত্ত
শান্তির পুলকে
শারদারে অন্তরে বন্দে
শঙ্খের রণনে বন্দে
শঙ্খের রণনে
আকাশ যে মধুময় ছন্দে

[০১:২৯:৩০ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

পরম শক্তি সাধনা মানব সিদ্ধিলাভ করলে অন্তরমন্দিরে মহাশক্তির দিব্য আবির্ভাব হয়। তিনি জয়দাত্রী, তিনি বরদাত্রী, তিনি বিভবদাত্রী, গৌরবদাত্রী ও রিপুহন্ত্রী।

[০১:২৯:৫৪ (সমবেত কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে॥
মধুকৈটভবিধ্বংসি বিধাতৃ বরদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
মহিষাসুরনির্ণাশি ভক্তনাং সুখদে নমঃ।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
বন্দিতাঙ্ঘ্রিযুগে দেবি সর্বসৌভাগ্যদায়িনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
অচিন্ত্যরূপচরিতে সর্বশত্রুবিনাশিনি সর্বশত্রুবিনাশিনি।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
নতেভ্যঃ সর্বদা ভক্ত্যা চাপর্ণে দুরিতাপহে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
দেহি সৌভাগ্যমারোগ্যং দেহি দেবি পরম্‌ সুখম্‌।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
বিধেহি দেবি কল্যাণং বিধেহি বিপুলাং শ্রিয়ম্‌।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
দেবি ভক্তজনোদ্দাম দত্তানন্দদয়েঽম্‌বিকে।
দেবি ভক্তজনোদ্দাম দত্তানন্দদয়েঽম্‌বিকে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
তারিণি দুর্গসংসার সাগরস্যাচলোদ্ভবে।
তারিণি দুর্গসংসার সাগরস্যাচলোদ্ভবে।
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥
রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি॥

[০১:৩৬:২৩ (পুরুষ কণ্ঠে স্তোত্রপাঠ)]

বিশ্বপ্রকৃতি মহাদেবী দুর্গার চরণে চিরন্তনী ভৈরব ধ্যানরতা পূজারিণী ভৈরবীতে গীতাঞ্জলি প্রদান করে ধন্যা হলেন। তাঁর গীতবাণী আজ অনিলে সুনীলে নবীন অরুণোদয়ে দিকে দিকে সঞ্চারিত।

[০১:৩৭:০১ (নারী কণ্ঠে গান)]

শান্তি দিলে ভরি
দুখরজনী গেল তিমির হরি
শান্তি দিলে ভরি
প্রেমমধুর গীতি
বাজুক হৃদে নিতি
প্রেমমধুর গীতি
বাজুক হৃদে নিতি
প্রাণে সুধা ঢালো
প্রাণে সুধা ঢালো
মরি গো মরি
শান্তি দিলে ভরি

[০০:০০:০০ (পুরুষ কণ্ঠে ঘোষণা)]

শ্রীশ্রীচণ্ডিকার পুণ্যস্তবগাথা ও মহাদেবীর স্তোত্র সম্পূর্ণ হল। সঙ্গীতবীথী রচনা বাণীকুমার। সঙ্গীত পরিচালনা পঙ্কজ কুমার মল্লিক। গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। কণ্ঠসঙ্গীতে সুমিত্রা সেন, বাঁশরী লাহিড়ী, সুপ্রীতি ঘোষ, কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌরী মিত্র, অসীমা ভট্টাচার্য, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, অরুণকৃষ্ণ ঘোষ, অম্বুজকুমার মল্লিক, রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রভাত মিত্র, রবীন বসু, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু, রাধারমণ বসাক ও পঙ্কজ কুমার মল্লিক। যন্ত্রসঙ্গীতে গৌর‌ গোস্বামী, অবনী রায়চৌধুরী, দুলাল সেন, বিজলী কুমার সেন, অমলেশ চট্টোপাধ্যায়, অমৃতলাল রায়, রবি রায়চৌধুরী, নির্মল বিশ্বাস, রাধাকান্ত নন্দী, দীনেশ চন্দ্র, অমর দত্ত, রবীন গঙ্গোপাধ্যায়, অ্যাণ্টো মেনেঞ্জেস, আলী আহমেদ হুসেন, অনিল বন্দ্যোপাধ্যায়, গোপীনাথ ভট্টাচার্য, শৈলেন দাস, সত্য মজুমদার, ভোলানাথ সাহা, শ্যামচাঁদ সেন, রমেশ চন্দ্র, অজিত মুখোপাধ্যায়, গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায়, বিবেকেন্দ্র দেবরায়, সুনীল চক্রবর্তী, ডম্বরুপাণি ভট্টাচার্য, কমল মল্লিক, অলোকনাথ দে, মহম্মদ সাগিরুদ্দীন খাঁ, রবীন মজুমদার, শ্যামল বসু, লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়, বীরেন্দ্রনারায়ণ, রাজেন্দ্রনারায়ণ বর্মণ, রবীন জর্জ, পরিতোষ রায়, বঙ্কিম পাল, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, শৈলেশ্বর চট্টোপাধ্যায়, প্রবোধ দাস, দুর্গা মিশ্র, চন্দ্রকান্ত‌‌ নন্দী, বঙ্কিম দে, বিজয় সেনগুপ্ত, মহেশপ্রসাদ মিশ্র, তারকনাথ দে ও কার্তিক বসাক। সম্পাদনা সুধীর মুখোপাধ্যায়।


এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭-এর ২৭ নং ধারা অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। ধ্বনিরেকর্ডের প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত সকল ধ্বনি রেকর্ডিং পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।