পঁচিশ

পাঁচিলের এ ধারে
ফুলকাটা চীনের টবে
সাজানাে গাছ সুসংযত।
ফুলের কেয়ারিতে
কঁচি-ছাঁটা বেগনি গাছের পাড়।
পাঁচিলের গায়ে গায়ে
বন্দী-করা লতা
এরা সব হাসে মধুর ক'রে,
উচ্চহাস্য নেই এখানে;
হাওয়ায় করে দোলাদুলি,
কিন্তু জায়গা নেই দুরন্ত নাচের-
এরা আভিজাত্যের সুশাসনে বাঁধা।
বাগানটাকে দেখে মনে হয়
মােগল বাদশার জেনেনা,
রাজ-আদরে অলংকৃত,
কিন্তু পাহারা চার দিকে,
চরের দৃষ্টি আছে ব্যবহারের প্রতি

পাঁচিলের ও পারে দেখা যায়
একটি সুদীর্ঘ য়ুকলিপটাস
খাড়া উঠেছে উর্ধ্বে।
পাশেই দুটি-তিনটি সােনাঝুরি
প্রচুর পল্লবে প্রগলভ।
নীল আকাশ অবারিত বিস্তীর্ণ
ওদের মাথার উপরে।

অনেকদিন দেখেছি অন্যমনে,
আজ হঠাৎ চোখে পড়ল
ওদের সমুন্নত স্বাধীনতা-
দেখলেম, সৌন্দর্যের মর্যাদা
আপন মুক্তিতে।
ওরা ব্রাত্য, আচারমুক্ত,
ওরা সহজ;
সংযম আছে ওদের মজ্জার মধ্যে,
বাইরে নেই শৃঙ্খলার বাঁধাবাঁধি
ওদের আছে শাখার দোলন
দীর্ঘ লয়ে;
পল্লবগুচ্ছ নানা খেয়ালের;
মর্মরধ্বনি হাওয়ায় ছড়ানাে।

আমার মনে লাগল ওদের ইঙ্গিত;
বললেম, 'টবের কবিতাকে
রােপণ করব মাটিতে,
ওদের ডালপালা যথেচ্ছ ছড়াতে দেব
বেড়া-ভাঙা ছন্দের অরণ্যে।'