লজ্জা

আমার হৃদয় প্রাণ সকলি করেছি দান,
কেবল শরমখানি রেখেছি।
চাহিয়া নিজের পানে নিশিদিন সাবধানে
সযতনে আপনারে ঢেকেছি।

হে বঁধু, এ স্বচ্ছ বাস করে মোরে পরিহাস,
সতত রাখিতে নারি ধরিয়া;
চাহিয়া আঁখির কোণে তুমি হাস মনে মনে,
আমি তাই লাজে যাই মরিয়া।

দক্ষিণপবনভরে অঞ্চল উড়িয়া পড়ে
কখন্ যে নাহি পারি লখিতে;
পুলকব্যাকুল হিয়া অঙ্গে উঠে বিকশিয়া,
আবার চেতনা হয় চকিতে।

-বন্ধ গৃহে করি বাস রুদ্ধ যবে হয় শ্বাস
আধেক বসনবন্ধ খুলিয়া
বসি গিয়া বাতায়নে সুখসন্ধ্যাসমীরণে
ক্ষণতরে আপনারে ভুলিয়া।

পূর্ণচন্দ্রকররাশি মূর্ছাতুর পড়ে আসি
এই নবযৌবনের মুকুলে;
অঙ্গ মোর ভালোবেসে ঢেকে দেয় মৃদু হেসে
আপনার লাবণ্যের দুকূলে।

মুখে বক্ষে কেশপাশে ফিরে বায়ু খেলা-আশে,
কুসুমের গন্ধ ভাসে গগনে;
হেনকালে তুমি এলে মনে হয় স্বপ্ন ব’লে—
কিছু আর নাহি থাকে স্মরণে।

থাক্‌ বঁধু, দাও ছেড়ে, ওটুকু নিয়ো না কেড়ে,
এ শরম দাও মোরে রাখিতে—
সকলের অবশেষ এইটুকু লাজলেশ
আপনারে আধখানি ঢাকিতে।

ছলছল দুনয়ান করিয়ো না অভিমান—
আমিও যে কত নিশি কেঁদেছি;
বুঝাতে পারি নে যেন সব দিয়ে তবু কেন
সবটুকু লাজ দিয়ে বেঁধেছি।

কেন যে তোমার কাছে একটু গোপন আছে,
একটু রয়েছি মুখ হেলায়ে—
এ নহে গো অবিশ্বাস, নহে সখা, পরিহাস,
নহে নহে ছলনার খেলা এ।

বসস্তনিশীথে বঁধু, লহো গন্ধ, লহো মধু,
সোহাগে মুখের পানে তাকিয়ো;
দিয়ে। দোল আশে-পাশে, কোয়ো কথ। মৃদু ভাষে,
শুধু এর বৃন্তটুকু রাখিয়ো।

সেটুকুতে ভর করি এমন মাধুরী ধরি
তোমা-পানে আছি আমি ফুটিয়া;
এমন মোহনভঙ্গে আমার সকল অঙ্গে
নবীন লাবণ্য যায় লুটিয়া—

এমন সকল বেলা পবনে চঞ্চল খেলা,
বসন্তকুসুম-মেলা দুধারি।
শুন বঁধু, শুন তবে, সকলি তোমার হবে—
কেবল শরম থাক্‌ আমারি।

২৮ আষাঢ় ১৩০০