অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/দ্বিতীয় পর্ব/অধ্যায়: পাঁচ
অধ্যায় পাঁচ
সেঞ্চুরি—৪
সূচি :
১। কবিতা—১৪ : জন এফ. কেনেডি।
২। কবিতা—৩৪: ডঃ হেনরি কিসিংগার
৩। কবিতা—৫৯ : ইরান, এবং আয়াতুল্লা খুয়েমিনী।
৪। কবিতা—৯২ : রেডিও বা রাডার যন্ত্র।
৫। কবিতা—৯৯ : মিসাইল, রকেট।

কবিতা—১৪ (সেঃ—8)
La mort subite du premier personnage,
Aura change & mis un autre au regne;
Tost, tard venu a si haut & bas aage,
Que terre & mer faudra que on le craigne.
এর অর্থ হল :
এক বিশাল ব্যক্তিত্বের সহসা মৃত্যুর ফলে,
এক নতুন ব্যক্তিত্ব আসবে শাসনে
এই উঁচু পদ সে পাবে অতি অল্প বয়সেই,
জলে, স্থলে, সকলেই তাঁকে করবে সমীহ।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : জন এফ. কেনেডি
“আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডির আগমনের কথাই সম্ভবত নস্ট্রাডামুস তার অতিন্দ্রীয় দৃষ্টিতে দেখে এই কবিতাতে লিখে গেছেন” – এরিকার ধারণা। তিনি অবশ্য এও স্বীকার করেছেন যে, এই কবিতা অন্য ঘটনার সঙ্গেও ‘সম্পর্কিত’ করা যেতে পারে।
বয়স্ক জেনারেল আইসেন হাওয়ারের মৃত্যুর পর শাসনে আসেন অল্পবয়সী জন এফ. কেনেডি। কাজেই, হতে পারে, এই কবিতাটা কেনেডির সম্বন্ধেই লেখা।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :
এই কবিতাতে আর একবার নস্ট্রাডামুসের ধূর্ততার প্রমাণ পেলাম। কবিতাটা আসলে একদম সাধারণ, যাকে বলে সাদামাটা। অতি সাধারণ বুদ্ধিতেই আন্দাজ করা যায় যে, পৃথিবীর কোথাও, কখনো এক বড় ব্যক্তির মৃত্যুর পর অন্য এক অল্পবয়সী ব্যক্তি তাঁর জায়গা নেবেন। এতো সাধারণ ঘটনা। এত আকছারই ঘটছে। ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর অল্পবয়সী রাজীব গান্ধী এসেছিলেন। বোমা বিস্ফোরণ হায়দার আলির মৃত্যুর পর এসেছিলেন অল্পবয়সী টিপু সুলতান।
কিন্তু নস্ট্রাডামুস কবিতাটা এমনভাবে গুরুত্ব সহকারে লিখলেন যে এই ঘটনা তিনি তাঁর অতিন্দ্রীয় দৃষ্টির সাহায্যে দেখেছেন। এখানেই তাঁর ধূর্ততা। আর ব্যাখ্যাকার এরিকা কবিতাটা জুড়ে দিলেন জন এফ. কেনেডির জীবনের সঙ্গে। এরিকার বোধহয় পশ্চিমী ইতিহাসটাই বেশি জানা, তাই বেশিরভাগ কবিতাই জুড়েছেন পশ্চিমের ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে। ভারতের ইতিহাস জানা থাকলে হয়তো টিপু সুলতান, বা রাজীব গান্ধীর সঙ্গেই কবিতাটা ‘সম্পর্কিত’ করে দিতেন।
কবিতা—৩৪ (সেঃ—8)
Le grand mene captif d'estrange terre,
D’or enchaine au Roy CHYREN offert :
Qui dans Ausone, Milan perdra la guerre,
Et tout son ost mis a feu & a fer.
অর্থাৎ :
মস্ত মানুষটাকে বিদেশ থেকে বন্দী করে আনা হবে,
সোনার শিকলে বেঁধে তাঁকে আনা হবে রাজা CHYREN-এর কাছে :
তাঁর সমস্ত সৈন্য অসোনিয়া আর মিলান-এর কাছে পরাজিত হবে।
পরাজিত সৈন্যরা শেষ হয়ে যাবে আগুন, আর তলোয়ারের কোপে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : ডঃ হেনরি কিসিংগার
চিটহ্যাম এই কবিতার এক বিটকেল ব্যাখ্যা হাজির করেছেন। কেন বিটকেল, পড়লেই বুঝবেন। তাঁর ধারণা এই কবিতাতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ-সচিব ডঃ হেনরি কিসিগারের কথা বলতে চেয়েছেন নস্ট্রাডামুস। CHYREN কথাটার অক্ষরগুলো অন্যরকমভাবে যদি সাজানো যায় তাহলে HENRYC মানে চতুর্থ হেনরি। ব্যাখ্যাকাররা নতুন আরও মনে করেন এখানে এমন এক রাজার কথা বলতে চাওয়া হয়েছে, যিনি এখনও জন্মাননি। ভবিষ্যতে আসবেন। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতনামা ব্যাখ্যাকার এরিকা চিটহ্যাম বলেন ‘HENRY-C’ মানে প্রায় ‘HENRY-K’, HENRY-K মানে নিশ্চয় ‘HENRY KISSINGER; যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিদেশ সচিব।
এরিকা এর বেশি কিছু ব্যাখ্যা করতে পারেননি। এক লাইনও ব্যাখ্যা করতে পারেননি।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :
এই কবিতার কি-ই বা বিশ্লেষণ করব? ব্যাখ্যার যুক্তি এত দুর্বল যে, বিশ্লেষণের প্রয়োজনই রাখে না। একেই বোধহয় বলে ‘আনতাবড়ি মেলানোর চেষ্টা’। যুক্তির মাথা-মুণ্ডু নেই। কিসিংগারের জীবনের সঙ্গে কবিতার একটি লাইনও মেলে না। আরও বিদঘুটে ব্যাপার হল এই যে, কবিতার দ্বিতীয় লাইনে লেখা আছে—‘রাজা CHYREN’। তাহলে মানতে হয় ডঃ কিসিংগার রাজা ছিলেন।
এই খ্যাপাটে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের দায়িত্ব যুক্তিবাদী পাঠকদের ওপরেই ছেড়ে দিলাম।
কবিতা—৫৯ (সেঃ—8)
Deux assiegez en ardente ferveur,
De soif estaincts pour deux plaines tasses:
Le fort lime & un vieillart resveur,
Au Genevois de Nira monstra trasse.
মানে :
দু’জন, জ্বলন্ত আগুনের দ্বারা ঘেরাও হয়ে,
মারা পড়বে, দু’কাপ পানীয়র অভাবে :
কেল্লার সৈনিকদের এক বৃদ্ধ ভাবুক পথ দেখাবে,
Nira থেকে জেনেভাবাসীদের কাছে যাবার।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : ইরান এবং আয়াতুল্লা খুয়েমিনী
এরিকা বেশ ব্যাখ্যা করেছেন কবিতাটার। বেশ সহজ সরল। ‘বৃদ্ধ ভাবুক’ মানে তাঁর মতে আয়াতুল্লা খুয়েমিনী। কেন? কারণ Nira কথাটার অক্ষরগুলো অন্যরকমভাবে সাজালে Iran (ইরান) কথাটা পাওয়া যায়। আর আয়াতুল্লা ইরানের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। এইটুকুই ব্যাখ্যা। এরপর বাকি কবিতাটা ব্যাখ্যা করার ঝামেলার মধ্যে তিনি যাননি।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :
আবার হেনরি কিসিংগারের কবিতাটার মতো (সেঃ—৪; কবিতা—৩৪) মেলানোর কায়দা। শব্দের অক্ষর অন্যরকমভাবে সাজিয়ে। এভাবে যদি ‘ইরান’ শব্দটা পাওয়াও যায়, তাতেই বা কী হয়েছে? তাতে কি কবিতাটা ইরানের ইতিহাসের সঙ্গে বিন্দুমাত্র মিলছে? প্রথম লাইন, দ্বিতীয় লাইনের ব্যাখ্যা কই? ব্যাখ্যা নেই, কেননা ব্যাখ্যা করা যায়নি। ‘জ্বলন্ত আগুন’, ‘পানীয়ের অভাব’, —এই কথাগুলোর মানে তাহলে কী?
আর ‘বৃদ্ধ ভাবুক’ মানেই আয়াতুল্লা? কেন? ইরানে আর কোনো ভাবুক বৃদ্ধ নেই? বরং আয়াতুল্লা তো ‘ভাবুক’ই ছিলেন না। তাহলে কেন ওঁর নাম ব্যবহার করা হল? কারণ :
বিখ্যাত লোকেদের নাম ব্যবহার করলে পাঠকরা ‘খায়'
ভালো। অখ্যাত, অচেনা নাম ব্যবহার করলে পাঠকরা
“দূর ছাই” বলে বইটা ছুঁড়ে ফেলে দেবে যে! তাই
নস্ট্রাডামুসের কবিতার সঙ্গে শুধুমাত্র ঘটনার
কথাই জোড়ার ধান্দা করেন
ব্যাখ্যাকাররা।
কবিতা—৯২ (সেঃ—8)
Teste tranchee du vaillant capitaine,
Sera gettee devant son adversaire :
Son corps pendu de la classe a l’antenne,
Confus fuira par rames a vent contraire.
অর্থাৎ :
জাহাজের সাহসী ক্যাপ্টেনের মাথাটা কেটে,
ছুড়ে দেওয়া হবে তাঁর নাবিকদের সামনে :
তাঁর ধড়টা ঝুলিয়ে রাখা হবে মাস্তুলের সঙ্গে,
নাবিকরা দাঁড় টেনে পালাবে, বাতাসের উল্টোদিকে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : রেডিও বা রাডারযন্ত্র আবিষ্কার
‘রেডিও, বা রাডারযন্ত্র’—এই হেডিংটা কবিতার পর পড়ে নিশ্চয় অবাক হয়ে যাচ্ছেন? আমিও এরিকার বই—THE PROPHECIES OF NOSTRADAMUS-এ কবিতাটির এই ব্যাখ্যা পড়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কবিতাটা স্পষ্টতই কোনো জাহাজ ও তার নাবিকদের সম্পর্কে লেখা হয়েছে। কিন্তু শ্রীমতী চিটহ্যাম মনে করেন তৃতীয় লাইনে যা বলা হয়েছে, অর্থাৎ—“তাঁর বড়টা ঝুলিয়ে রাখা হবে মাস্তুলের সঙ্গে”, তার দ্বারা নস্ট্রাডামুস বলতে চেয়েছিলেন রেডিও, বা রাডার যন্ত্রের কথা। কেননা রাডারযন্ত্রও ওভাবেই লাগানো থাকে কোনো মাস্তলের মতো দেখতে ‘টাওয়ার’ এর সঙ্গে।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :
চিটহ্যামের এইরকম সাংঘাতিক যুক্তি পড়ে আমি-ই আমার যুক্তি হারিয়ে ফেলছি। এই কবিতার এমনতর ব্যাখ্যা পড়ে হাসব না কাঁদব, বুঝতেই পারছি না। এটা কি কোনো ব্যাখ্যা হল?
জাহাজের ক্যাপ্টেনটি কে? তার মুণ্ডু কেটে নাবিকদের সামনে ছুড়ে দেওয়া হবে, মানে কী? নাবিকরা দাঁড় টেনে পালাবে কেন?—এসব প্রশ্নের জবাব মেলে না শ্রীমতী চিটহ্যাম-এর ব্যাখ্যায়। এক একটা লাইনের এক একটা আজগুবি ব্যাখ্যা করেই তিনি খালাস। এ ব্যাখ্যা ধোপে টেকে কই?
অথচ অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন নেটওয়ার্ক থেকে নেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এরিকা গম্ভীর মুখে বলে গেলেন যে নস্ট্রাডামুস রাডারযন্ত্র সম্পর্কে নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। ভবিষ্যদ্বাণীটা আসলে কী, তা কিন্তু তিনি বললেন না! (অনুষ্ঠানটার ভিডিওক্যাসেট আনিয়ে দেখেছি।)
এই কবিতার কি আর খোলসা করে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন আছে? মনে হয় না। যুক্তিবাদী পাঠকরা, নিশ্চয়ই এর বিশ্লেষণ নিজেরাই করে নিতে পারবেন। যুক্তি দিয়ে বিচার করে যদি মনে হয় এরিকার ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য, তাহলে নিশ্চয়ই গ্রহণ করবেন। গ্রহণযোগ্য মনে না হলে অবশ্যই করবেন বর্জন।
কবিতা—৯৯ (সেঃ—8)
L’aisne vaillant de la fille du Roy,
Repoussera si profond Celtiques :
Qu’il mettra foudres, combien en tel arroi,
Peu & loing puis Profond es Hesperiques.
এর অর্থ :
এক রাজার কন্যার বড় ছেলে,
ফরাসিদের তাড়াবে দূরে :
সে ব্যবহার করবে বজ্রপাত,
আঘাত হানবে সুদূর পশ্চিমেও।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যা : মিসাইল, রকেট
এই কবিতাতেও আবার এরিকার অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা! প্রথম দু-লাইনের ব্যাখ্যা নেই। পরের দু-লাইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এরিকা বলেছেন, তাঁর ধারণা এখানে মিসাইল, রকেট ইত্যাদি আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের কথা বলতে চাওয়া হয়েছে। ‘বজ্ৰপাত’ মানে আসলে মিসাইল, বা রকেট। বজ্রপাত দ্রুত ছুটে গিয়ে যেখানে পড়ে, সেখানে তছনছ করে দেয় তেমনি রকেট, বা মিসাইলও দ্রুত ছুটে গিয়ে যেখানে পড়ে, সেখানে করে তছনছ। অতএব এখানে নির্ঘাৎ মিসাইল বা রকেটের কথাই বলতে চেয়েছেন নস্ট্রাডামুস।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণ :
প্রথমেই জানতে ইচ্ছে করছে প্রথম ও দ্বিতীয় লাইনের ব্যাখ্যা কোথায়। এরিকা যেটুকু র্যাখ্যা করতে পেরেছেন, করেছেন। যেটুকু করতে অসুবিধা হয়েছে, করেন নি। বাঃ! একজন ব্যাখ্যাকার হিসেবে তাঁর কর্তব্য হল,—অবশ্যই পুরো কবিতাটার ব্যাখ্যা করা নতুবা ব্যাখ্যাদানে বিরত থাকা।
যাহোক, ‘বজ্রপাত’ মানে এখানে মিসাইল বা রকেট। ভালো। ‘বজ্রপাত’ মানেই আবার সেঞ্চুরি—১ এর কবিতা—২৬-এ (এই বইতেই কবিতাটা আছে) এরিকার মতে বুলেট। আবার অন্য এক ব্যাখ্যাকার সি. ডেলটা (C. Delta)-র মতে ‘বজ্রপাত’ মানে লেসারগান থেকে ছোড়া লেসার-রশ্মি।
একটা শব্দের এত রকম ব্যাখ্যা হয়? সেঞ্চুরি-১ এর কবিতা-২৬-এ যদি ‘বজ্ৰপাত’ মানে বুলেট হয়, তাহলে এই কবিতাতেও ‘বজ্রপাত’ মানে বুলেট হবে না কেন?
এরিকার মতো সুবিধেবাদী ব্যাখ্যাকাররা শব্দের ব্যাখ্যা নিজেদের
সুবিধেমতো করে কিছু মানুষকে কিছু সময়ের জন্য ঠকাতে
পারেন; কিছু মানুষকে সব সময়ের জন্য ঠকাতে পারেন;
সব মানুষকে কিছু সময়ের জন্য ঠকাতে পারেন;
কিন্তু সব মানুষকে সব সময়ের জন্য
ঠকাতে পারবেন না!
পাঠকদের মনে হতে পারে, আমি এরিকা চিটহ্যামকে কেন এত গুরুত্ব দিচ্ছি। অন্যান্য ব্যাখ্যাকাররাও তো আছেন। তাদের কথা তো অত তুলছি না? কারণ, ওয়াকিবহাল পাঠকরা হয়তো জানেন যে, এরিকা চিটহ্যাম হল নস্ট্রাডামুসের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে এমন একটা কিংবদন্তি নাম, যে নামের ধারে কাছে অন্য কোনো নাম আসেই না। এরিকা তাঁর তিনটে বই—THE
PROPHECIES OF NOSTRADAMUS; THE FURTHER PROPHECIES OF NOSTRADAMUS; THE FINAL PROPHECIES OF NOSTRADAMUS লিখে যে বিপুল পরিমাণ খ্যাতি, যশ ও অর্থ পেয়েছেন, তার হাজার ভাগের একভাগও অন্য কোনো ব্যাখ্যাকার পেয়েছেন কিনা সন্দেহ। অতএব এরিকাকে গুরুত্ব দেওয়াটাই স্বাভাবিক। তথাপি আমি অন্যান্য ব্যাখ্যাকারদের ব্যাখ্যাও জায়গায় জায়গায় হাজির করেছি, নিশ্চয়ই লক্ষ করে থাকবেন। তবে সত্যি কথা বলতে কি প্রায় সব ব্যাখ্যাকাররাই এরিকা ভাঙিয়ে খাচ্ছেন। যাকে বলে টুকে মারা আর কী!