অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/অধ্যায়: এক
অধ্যায় : এক
ভারতের সবচেয়ে ধনী জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন
২০০৫-এর ফেব্রুয়ারিতে ‘ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক’ চ্যানেলের ডিরেক্টর ফ্রেঞ্চ রবার্ট যোগাযোগ করলেন আমার সঙ্গে। উদ্দেশ্য, আমার উপর একটা তথ্যচিত্র তৈরি করা। রবার্টের একটি অনুরোধ—ভারতের সবচেয়ে ধনী জ্যোতিষীর ভণ্ডামির মুখোশ ছিঁড়ে দেখাও।
আচার্য সত্যানন্দ একজন জ্যোতিষী। বর্ণময় তাঁর জীবন। কী ক্লায়েন্ট দেখতে কী একগাদা টিভি প্রোগ্রামে যাত্রার রাজার মতো পোশাকে হাজির থাকেন। মাথায় টুপি সাদা-কালো ডিজাইনার লম্বা দাড়ি কথা বলেন অবাঙালির মতো বাংলা উচ্চারণে। তাঁর একটি বিমান আছে। থাকেন উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে বিশাল প্রাসাদে। প্রায় প্রতিটি ঘরে রয়েছে বাতানুকূল যন্ত্র। রয়েছে একাধিক কম্পিউটর। টাস্ক রোডে একটা এয়ারক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়েছেন কোটি টাকা খরচ করে। প্রায় সময়-ই সত্যানন্দকে ঘিরে থাকে ৮/১০ জন তাগড়াই যুবক। বিজ্ঞাপনে নাকি খরচ করেন বছরে কোটি টাকা। বর্তমানে জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। ১৫ বছর আগেও একটি অশ্লীল ম্যাগাজিন প্রকাশ করতেন। তখন সত্যানন্দর নাম ছিল প্রদীপকুমার বিশ্বাস। থাকতেন উত্তর শহরতলির সিঁথির ছোট্ট বাসায়। কয়েক বছরে আর্থিক অবস্থা থেকে কথা বলার স্টাইল—সব পাল্টে গিয়েছিল। এখন তাঁর বাড়িতে বড় বড় লাল বাতিওয়ালা গাড়ির আনাগোনা। রাজ্যের তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পুলিশের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তারা তাঁর বাড়িতে মাঝে-মধ্যে আসেন। ফ্রেঞ্চ রবার্ট যেমন বর্ণময় জ্যোতিষী চেয়েছিলেন, সত্যানন্দ ঠিক তেমনটি। সব শুনে রবার্ট নেচে উঠলেন—একেই বে-আব্রু করো।
নিখুঁত ও বড়ো সড়ো একটা পরিকল্পনা করে ক্যামেরার সামনে প্রমাণ করলাম সত্যানন্দর ভণ্ডামি। দিনটা ছিল ৯ মার্চ ২০০৫ সাল। গোটা কাহিনি লিখতে একটা বই হয়ে যাবে। সেটা লিখব ‘যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা’ ৩য় খণ্ডে।
সেই দীর্ঘ ও নাটকীয় কাহিনির মধ্যে না গিয়ে শুধু এটুকু বলি—সে’রাতেই সত্যানন্দ তাঁর একটি LIVE অনুষ্ঠানে ভক্তদের কাছে আমাদের হত্যা করার ফতোয়া দিলেন। ‘আমাদের’ মানে আমরা যারা ভণ্ডামি ফাঁসে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলাম। অর্থাৎ আমি, সুমিত্রা, পিনাকী, সোনালী ও মানসীকে। আমাদের ছবি দেখিয়ে ফতোয়া জারি করেছিলেন ক্রুদ্ধ, অর্থ ও ক্ষমতাগর্বে গর্বিত সত্যানন্দ।
আমি অভিযোগ দায়ের করি রাজ্য পুলিশের সদর দপ্তর ভবানী ভবনে। ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী মিডিয়াগুলো বিশাল হই-চই তোলে। তার-ই একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ নমুনা হিসেবে তুলে দিচ্ছি—

বিকেলের প্রতিদিন ১৫ মার্চ ২০০৫ মঙ্গলবার ১ চৈত্র ১৪১১ • ১ টাকা
খুনের হুমকি : জ্যোতিষীকে ধরতে তল্লাশি
স্টাফ রিপোর্টার : জ্যোতিষী তথা ভাগ্য গণনা নিয়ে ভণ্ডামির জেরে এবার এক বিখ্যাত জ্যোতিষীকে গ্রেফতারের উদ্যোগ
নিল সিআইডি। সোমবার রাতে এই জ্যোতিষীর সন্ধানে উত্তর শহরতলীর বিস্তীর্ণ অঞ্চলে হানা দেন সিআইডি কর্তারা। কিন্তু আগেভাগে গা ঢাকা দেন বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা ওই জ্যোতিষী স্বামী সত্যানন্দ। সিআইডি স্বামী সত্যানন্দকে হন্যে হয়ে খুঁজছে। ওই কেবল চ্যানেল থেকেই যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ঘোষ সহ একাধিক ব্যক্তিকে ভয় ও খুনের হুমকি দেন ওই জ্যোতিষী। প্রবীরবাবু সিআইডি-র কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানান। তার পরে নড়েচড়ে বসেন সিআইডি কর্তারা। তোড়জোড় শুরু হয় গ্রেফতারের। সোমবার সংবাদ প্রতিদিনের দফতরে কেবল টিভিতে জ্যোতিষ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন ছাত্র নেতারা, জ্যোতিষী থেকে যুক্তিবাদী সমিতির কর্তারা। প্রত্যেকেই জ্যোতিষী নিয়ে ভণ্ডামির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান মানুষকে। ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান প্রত্যেকে। মঙ্গলবার সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হতেই সংবাদ প্রতিদিনের দফতরে অসংখ্য ফোন আসে। প্রত্যেকেই ফোনে ভণ্ড জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে ছাত্র নেতাদের জেহাদে সহমত পোষণ করেন। সিআইডি ডিআইজি (অপারেশন) রাজীবকুমার জানান, স্বামী সত্যানন্দকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। কেবল চ্যানেলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অনুষ্ঠানটি ছিল একটি বেসরকারি প্রযোজক সংস্থার। তারা চ্যানেল থেকে সময় কিনে নিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছিল। সত্যানন্দ চ্যানেলকে ব্যবহার করে খুনের হুমকি দেওয়ার জন্য তারপরে চ্যানেলের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। সত্যানন্দের অনুষ্ঠানও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন দিন আগে ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের প্রতিনিধিরা স্বামী সত্যানন্দের বাড়িতে শুটিংয়ে যান। সেখানেই বিপত্তি ঘটে।১৬ মার্চ ২০০৫ বর্তমান ২১ বর্ষ ৯৮ সংখ্যা বুধবার ২ চৈত্র ১৪১১
বারাসতে জ্যোতিষী গ্রেপ্তার, চাঞ্চল্য
নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: মঙ্গলবার রাতে বারাসত থানার গোলাবাড়ি এলাকায় হানা দিয়ে পুলিশ জ্যোতিষী সত্যানন্দ আচার্যকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় বারাসত এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। এস ডি পি ও শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান, বোলাকাজিপাড়া আশ্রমের আচার্য সত্যানন্দ আচার্যর বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করেছে।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে জ্যোতিষ সংক্রান্ত সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে প্রবীরবাবুকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এছাড়া গত ৯ মার্চ প্রবীরবাবু ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ডাইরেকটর রিচার্ড রবার্ট সহ অন্য কর্মীদের নিয়ে সত্যানন্দ আচার্যর লোকনাথ আশ্রমে তাঁর সাক্ষাৎকার নিতে গেলে চরম উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন প্রশ্ন করায় সত্যানন্দ আচার্য ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। রিচার্ড রবার্টকে মারধর এবং হেনস্থা করা হয় বলে মঙ্গলবার প্রবীরবা বারাসত থানায় অভিযোগ করেন। একই অভিযোগ তিনি ডি আই জি সি আই ডি’র কাছেও করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার পুলিশ তাকে খোঁজা শুরু করে। কাজিপাড়া ইরাবতী পল্লির বাড়িতে এবং ঘোলা কাজি পাড়া মোড়ের ৪ তলা বিশাল আশ্রমে পুলিশ তাঁকে পায় না। শেষে গোলাবাড়ির রাস্তা থেকে পুলিশ এই আচার্য এবং তার এক সহযোগী রাজীব সাহাকে গ্রেপ্তার করে। প্রচুর প্রতিপত্তির মালিক এবং বহু বিশিষ্ট এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি আচার্য সত্যানন্দর সান্নিধ্যে আসেন।

১৬ মার্চ ২০০৫ • বুধবার ২ চৈত্র ১৪১১
খুনের হুমকি দেয়ায় জ্যোতিষী ধৃত
স্টাফ রিপোর্টার : জ্যোতিষী সত্যানন্দ আচার্য এবং সহযোগী রাজীব সাহাকে আজ দুপুরে বারাসত জেলা জজের আদালতে হাজির করল পুলিশ। গতকাল রাতে তাকে বারাসতের গোলাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এ ডি পি ও (বারাসত) শুভঙ্কর চ্যাটার্জী জানান, বোলাকাজিপাড়া আশ্রমের সত্যানন্দ আচার্যের বিরুদ্ধে যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষ অভিযোগ জানিয়েছিলেন। আচার্য সত্যানন্দ সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে প্রবীর ঘোষকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। গত ৯ মার্চ প্রবীরবাবু ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ডিরেক্টর রিচার্ড রবার্টসহ অন্যদের নিয়ে আশ্রমে গিয়েছিলেন সাক্ষাৎকার নিতে। বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে হঠাৎ সত্যানন্দ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে রিচার্ড রবার্টকে মারধর ও হেনস্থা করেন। মঙ্গলবার প্রবীরবাবু বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং ডি আই জি সি আই ডি’র কাছেও জানান। অভিযোগ পেয়েই পুলিশ পুলিশ সঙ্গী রাজীব সাহা সহ সত্যানন্দ আচার্যকে গ্রেপ্তার করে।

১৬ মার্চ ২০০৫ বুধবার ২ চৈত্র ১৪১১ • ১ টাকা
ধৃত সত্যানন্দ আদালতে
স্টাফ রিপোর্টার : কেবল চ্যানেলে বসে যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া স্বামী সত্যানন্দ ও সঙ্গীকে বুধবার বেলায় বারাসত আদালতে হাজির করল পুলিশ। ধৃত জ্যোতিষী ছাড়াও তাঁর আরও কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী সত্যানন্দের বিরুদ্ধে পুলিশ ১১৫/৩০২ ধারার মামলাও দায়ের করেছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের এক তথ্যচিত্র নির্মাতাদের আটক রাখা এবং মারধর করার অভিযোগও আনা হয়েছে ওই জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে। এদিকে মহাকরণ সূত্রে খবর, বিভিন্ন কেবল চ্যানেলে বসে একাধিক জ্যোতিষী ও সাধু-সন্তরা যে মাদুলি ও পাথর বিক্রি করে চলেছে, প্রতারণা করছে, সেগুলি বন্ধ করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষ জানিয়েছেন, জ্যোতিষীদের এই ভণ্ডামি বন্ধ করার জন্য আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। বুধবার বেলায় বারাসত আদালতের লকআপে স্বামী সত্যানন্দ ও তার নিরাপত্তারক্ষীকে হাজির করে পুলিশ। পরে একে একে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভর্তি করে ধৃত জ্যোতিষীর কিছু সমর্থক আসেন। আসেন ধৃতর দ্বিতীয় স্ত্রী অলকানন্দা বিশ্বাস ও সহযোগিনী শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামী সত্যানন্দের আসল নাম প্রদীপ বিশ্বাস।
এক সময় উত্তর শহরতলির সিঁথি এলাকায় প্রথম পক্ষের স্ত্রী শ্যামলী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। পরবর্তীতে অলকানন্দাকে বিয়ে করেন। তবে, স্বামী সত্যানন্দের বিমান প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সংস্থা রয়েছে তার আইনী বৈধতাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুপুর ১টার খবর, পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ধৃতের সমর্থকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়। ধৃত জ্যোতিষীর আইনজীবী পৃথ্বীশ নন্দী জানিয়েছেন, জামিনের জন্য আদালতে আবেদন জানানো হচ্ছে।
কলকাতা শিলিগুড়ি ২ চৈত্র ১৪১১ বুধবার ১৬ মার্চ ২০০৫
সত্যানন্দ গ্রেপ্তার
নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত : ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির অন্যতম প্রতিনিধি প্রবীর ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে আজ গোলাবাড়ি থেকে জ্যোতিষী সত্যানন্দ ও তাঁর সহকারী রাজীব সাহাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ৯ মার্চ তারিখে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফির ভারতীয় শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত রিচার্ড রবার্ট ও ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির প্রবীর ঘোষ একটি তথ্যচিত্র তৈরি করবেন বলে সত্যানন্দের আশ্রমে যান।
কিছুক্ষণ কথা বলার পর তাঁদের পরিচয় পেয়ে সত্যানন্দ ও তাঁর আর এক সহকারী শতাব্দী চট্টোপাধ্যায় সেখানে তাঁদের আলাদা একটি ঘরে আটকে রাখেন বলে অভিযোগ প্রবীরবাবুর। পরে পুলিশ খবর পেয়ে এসে তাঁদের উদ্ধার করে বারাসত থানায় নিয়ে যায়। এরপর দু’পক্ষকেই বারাসত থানা পাঠিয়ে দেয় এসডিপিও শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কাছে। আজ আবার প্রবীরবাবু বারাসত থানায় অভিযোগ জানালে সত্যানন্দ ও তাঁর সহকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

কলকাতা • ১৭ মার্চ ২০০৫ বৃহস্পতিবার ৩ চৈত্র ১৪১১ • ২.০০ টাকা দশ পাতা • সঙ্গে খেলার দুনিয়া
খুনের হুমকি দিয়ে গ্রেফতার স্বামী সত্যানন্দ হাজতে
স্টাফ রিপোর্টার : কেবল চ্যানেলে বসে যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া স্বামী সত্যানন্দ ও সঙ্গীকে বুধবার বেলায় বারাসত আদালতে হাজির করে পুলিশ। বিচারক সত্যানন্দকে একদিনের জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। তবে, আদালতে কেস ডায়েরি না আনায় পুলিশের সমালোচনা করেছেন বিচারক সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরি। ধৃত জ্যোতিষী ছাড়াও তাঁর আরও কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেফতার করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। অভিযুক্ত স্বামী সত্যানন্দের বিরুদ্ধে পুলিশ ১১৫/৩০২ ধারার মামলাও দায়ের করেছে। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের এক তথ্যচিত্র নির্মাতাদের আটক রাখা এবং মারধর করার অভিযোগও আনা হয়েছে ওই জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে। এদিকে মহাকরণ সূত্রে খবর, বিভিন্ন কেবল চ্যানেলে বসে একাধিক জ্যোতিষী ও সাধু-সন্তরা যে মাদুলি ও পাথর বিক্রি করে চলেছে, প্রতারণা করছে। সেগুলি বন্ধ করতে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশিষ্ট আইনজীবী গীতানাথ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জ্যোতিষীদের এই ভণ্ডামি বন্ধ করার জন্য আদালতের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। কলকাতা হাইকোর্টেও জনস্বার্থ মামলা করা যেতে পারে। বুধবার বেলায় বারাসত আদালতের লকআপে স্বামী সত্যানন্দ
ও তার নিরাপত্তারক্ষী হাজির করে পুলিশ। পরে একে একে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভর্তি করে ধৃত জ্যোতিষীর কিছু সমর্থক আসেন। আসেন ধৃতের দ্বিতীয় স্ত্রী অলকানন্দা বিশ্বাস ও সহযোগিনী শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, স্বামী সত্যানন্দের আসল নাম প্রদীপ বিশ্বাস। এক সময় উত্তর শহরতলির সিঁথি এলাকায় প্রথম পক্ষের স্ত্রী শ্যামলী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন। পরবর্তীতে অলকানন্দাকে বিয়ে করেন। তবে, স্বামী সত্যানন্দের বিমান প্রশিক্ষণ নিয়ে যে সংস্থা রয়েছে তার আইনি বৈধতাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। দুপুর ১টার খবর, পরিস্থিতি সামলাতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ধৃতের সমর্থকরা পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগানও দেয়। ধৃত জ্যোতিষীর আইনজীবীরা জানান, পুলিশ মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে। যে কেবল চ্যানেলের দোহাই দেওয়া হচ্ছে, সেখানে এমন কিছু বলেননি সত্যানন্দ। এডিট করে এসব সাজানো হয়েছে। উল্টে সত্যানন্দর অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তিবাদী সমিতির লোকেদের গ্রেফতার করা উচিত ছিল। কিন্তু পুলিশ তা করেনি।

৩ চৈত্র ১৪১১ বৃহস্পতিবার ১৭ মার্চ ২০০৫ কলকাতা সংস্করণ ২.৫০ টাকা
১৫ টাকার আংটি ৫ হাজারে বেচে বিমান কিনেছেন
বুজরুক সত্যানন্দ?
অমর চক্রবর্তী : বারাসত, ১৬ মার্চ : ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রবীর ঘোষকে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ধৃত জ্যোতিষী ‘আচার্য’ সত্যানন্দকে দু’দিন জেলহেফাজতে রাখার নির্দেশ দিল আদালত। তাঁর সঙ্গী রাজীব সাহা শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন। বুধবার বারাসত আদালতে সত্যানন্দকে দেখতে ভিড় করেন অনেক উৎসাহী মানুষ। ছিলেন বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরাও। ভারপ্রাপ্ত সি জি এম সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরি অভিযুক্তকে ফের শুক্রবার বারাসত আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। পুলিশের জিপে ওঠার আগে সত্যানন্দ বলতে থাকেন, ‘হিন্দুধর্মের প্রতি বিদেশিদের আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাব।’ পুলিশ গতরাতেই গোলাবাড়িতে লুকিয়ে থাকা ওই জ্যোতিষীকে গ্রেপ্তার করে। প্রথম জীবনে সত্যানন্দের নাম ছিল প্রদীপ বিশ্বাস। থাকতেন দমদম সিথির মোড়ে। একটি অশ্লীল পত্রিকার সম্পাদক প্রদীপ হঠাৎ উত্তরপ্রদেশ চলে যান। কয়েক বছর পর ফিরে আসেন সত্যানন্দ নাম নিয়ে। শুরু করেন জ্যোতিষচর্চা। বড় দাড়ির আড়ালে থাকা প্রদীপকে কেউ চিনতে পারেনি। বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বক্তব্য, জ্যোতিষচর্চা করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। এখন সত্যানন্দের কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কে একটি বিমান চালনার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়া বারাসতেও নাকি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলছেন। ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির দাবি, অসৎ উপায়ে উপার্জন করা টাকায় সত্যানন্দ একটি ৪ আসনের বিমান কিনেছেন। বছরে কয়েক কোটি টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ করেন তিনি। ৯ মার্চ ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের তথ্যচিত্র ‘প্রবীর দি র্যাশনালিস্ট’-এর শুটিং করতে গিয়েই প্রবীরবাবু সত্যানন্দের বুজরুকি ধরে ফেলেন। এতেই কুপিত সত্যানন্দ তাঁকে ‘হিন্দু ধর্মের শত্রু’ বলে অভিযুক্ত করেন। প্রবীর ঘোষের অভিযোগ, ‘সত্যানন্দের চেলারা সেদিন ওই বিদেশি চ্যানেলের প্রতিনিধি ফ্রেঞ্চ রবার্টকে দরজা বন্ধ করে মারধর করেছে। অভিযোগ,সা মান্য একটি ১৫ টাকা দামের মন্ত্রপূত অষ্টধাতুর আংটি দিয়ে সত্যানন্দ সাড়ে ৫ হাজার টাকা ভক্তদের থেকে নেন। এর প্রমাণ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির কাছে আছে বলে প্রবীরবাবুর দাবি।

কলকাতা শিলিগুড়ি ৪ চৈত্র ১৪১১ শুক্রবার ১৮ মার্চ ২০০৫
জামিন হল না জ্যোতিষী সত্যানন্দর
নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত, ১৭ মার্চ : জামিনের আবেদন নাকচ-হয়ে গেল জ্যোতিষী সত্যানন্দ আচার্যর। বৃহস্পতিবার বারাসত সি জি এম আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁর জামিন নাকচ করে ১৯ তারিখ পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এদিন জামিনের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন জ্যোতিষী। দুপুরবেলায় পুলিশের কালো ভ্যান থেকে আদালতে নামার সময় সত্যানন্দকে তাই হাসিখুশি লাগছিল। কিন্তু জামিনের আবেদন নাকচ হতেই পরিবেশ বদলে যায়। নিরাশ হয়ে পড়েন তাঁকে নিতে আসা উদ্বিগ্ন ভক্তবৃন্দ, আত্মীয়পরিজন। জামিন নাকচ হয়ে যাওয়ায় তিনি ফেরত দিয়ে দেন বিভিন্ন বাড়ি থেকে নিয়ে আসা জিনিস। নেননি কোনও বাড়ি থেকে আসা নতুন পাঞ্জাবিও। সত্যানন্দ আচার্যর আসল নাম যে প্রদীপ বিশ্বাস তা এলাকার অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার দৈনিক স্টেটসম্যানে এই সংবাদ পড়ে বারাসতের কাজিপাড়ার ইরাতী পল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকেরই বক্তব্য, ভদ্রলোক পাড়ার কারও সঙ্গে মিশতেন না কিন্তু পাড়ার সমস্ত অনুষ্ঠানে পয়সাকড়ি দিয়ে সাহায্য করতেন। এছাড়াও দিনরাত তাঁর বাড়িতে বড় বড় লাল বাতিওয়ালা গাড়ির যাতায়াতের ফলে কেউ ঘাঁটাতে সাহস পেতেন না। প্রদীপকুমার বিশ্বাস নামে তিনি যে ১৫ বছর আগে একটি হলুদ পত্রিকা প্রকাশ করতেন তাও অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তবে পাড়ার সবাই জানতেন সত্যানন্দ আচার্য বিয়ে করেছেন গায়ক নচিকেতার দিদি অলকানন্দাকে। তবে ক’টি বিয়ে করেছেন এ ব্যাপারে সঠিকভাবে কেউই মুখ খুলতে চাননি।
টাকি রোডে রাস্তার পাশে বিশাল এলাকা নিয়ে কোটি টাকা খরচ করে যে এয়ারক্র্যাফ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তৈরি করছেন সেখানেও এলাকার কেউ চাকরির দাবি নিয়ে ভয়ে এগিয়ে আসেননি। ভয়ের অন্যতম কারণ স্থানীয় বেশ কয়েকজন মাসলম্যান নিয়ে সত্যানন্দ আচার্য সব সময় পরিবৃত হয়ে থাকেন। নতুন কেউ জ্যোতিষীর চেম্বারে গেলেই হাজির হয়ে যায় ৮/১০ জন তাগড়াই যুবক। বারাসাতের তাবড় তাবড় রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। পুলিশের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্তাও নাকি তার কাছে আসতেন জ্যোতিষ গণনার জন্য।
সব মিলিয়ে তাঁকে ঘিরে পাড়ায় একটা অদ্ভুত ভয়মিশ্রিত ধারণা তৈরি হয়েছিল। সত্যানন্দ আচার্য বারাসতের যে বাড়িতে থাকেন সেই বাড়িটির প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে একাধিক কম্পিউটার। নিজে একটি জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর ম্যাগাজিনও প্রকাশ করে থাকেন নিয়মিত। বারাসতের মতো জায়গায় হঠাৎ এয়ারক্রাফট্ ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র কেন করতে গেলেন জিজ্ঞাসা করতে সত্যানন্দর চটজলদি জবাব, “আমি চাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এমন কিছু করতে যা চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে। আমাদের রাজ্যে এখনও পর্যন্ত এমন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়নি যা আমি তৈরি করতে চলেছি। আর এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছি স্বাস্থ্য অধিকর্তা প্রভাকর চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝি ক্যাপ্টেন শতাব্দী চট্টোপাধ্যায়ের উপর।”
জ্যোতিষ গণনা করে সত্যানন্দ জন প্রতি পারিশ্রমিক নেন ৩০০ টাকা। দিনে প্রায় ৫০ জনের মতো লোক আসেন ভাগ্য গণনা
করতে। এছাড়াও সত্যানন্দর আয় পাথর বিক্রি কিংবা বিভিন্ন রকম উপদেশের পথ ধরেও। সত্যানন্দর কথায়, আয়ের পুরোটাই তাঁর আইন মেনে। কেননা পশ্চিমবঙ্গে তিনিই একমাত্র জ্যোতিষী যিনি নিয়মিত বৃত্তিকর দিয়ে থাকেন। আর ব্যবসা করার জন্য বারাসতের বামপন্থী পুরবোর্ড থেকে জ্যোতিষ গণনার জন্য ট্রেড লাইসেন্সও নিয়েছেন। ফলে জ্যোতিষ গণনাকে তিনি বৈধ বলেই মনে করেন। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ, পুলিশ তাঁর চেম্বারে হামলার অভিযোগ নিজে চোখে দেখে অভিযোগ নেওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নিল না। উল্টে যারা আক্রমণ করল তাদের অভিযোগের উপর ভিত্তি করে আমাকে গ্রেপ্তার করল। এটাকে আমি মনে করি হিন্দু ধর্মের উপর একটা পরিকল্পিত আঘাত।
১৮ মার্চ ২০০৫, ৪ চৈত্র ১৪১১
কেবল চ্যানেলে ভাগ্য ব্যবসার বিরুদ্ধে দিনভর সমালোচনা বিধানসভায়
সবকটা বুজরুক জ্যোতিষি, ধরতে চাই এখনই ফেংশুইয়ের
সেই কারবারিদের, বললেন বুদ্ধ

১৯ মার্চ ২০০৫, ৫ চৈত্র ১৪১১
সেন্সরশিপ চালু করল কিছু চ্যানেল • আজ বৈঠকে কেবল সংগঠন
জ্যোতিষী সরাব, সাহায্য চাই : বুদ্ধর কাছে দাবি
স্টাফ রিপোর্টার : প্রবল চাপের মুখে ভাগ্য-ভণ্ডামি বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে বাধ্য হল কেবল চ্যানেলগুলি। অন্তত চারটি চ্যানেল শুক্রবার থেকেই জ্যোতিষ, ফেংশুই-এর তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের উপর কিছু ‘সেন্সরশিপ’ লাগু করে দিয়েছে। আটটি কেবল চ্যানেলের মালিকপক্ষ সিদ্ধাত্ত নিয়েছেন তাঁরা একটি সমিতি গঠন করবেন। জ্যোতিষ অনুষ্ঠান পুরোদস্তুর বয়কটেরই পক্ষে তাঁরা। কিন্তু এবিষয়ে কিছু সমস্যা আছে তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে কথা বলবে সমিতি। আজ, শনিবার সন্ধ্যায় মধ্য কলকাতার ‘রাতদিন’ হোটেলে প্রথম বৈঠকে বসছেন তাঁরা। যে দু’তিনটি চ্যানেল এখনও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিচ্ছে না, তাদের সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার বিধানসভায় বিভিন্ন কেবল চ্যানেলে কিছু বুজরুক জ্যোতিষ এবং ফেংশুই বিশেষজ্ঞর কুৎসিত প্রচারের বিরুদ্ধে ঝড় ওঠে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও এনিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কড়া আইনি ব্যবস্থার ইঙ্গিত দেন। এর পর শুক্রবার নিজেদের মধ্যে দীর্ঘ বৈঠক করেন কেবল চ্যানেলগুলির কর্তারা। পরে এটিএন কলকাতার কর্ণধার তপন রায় বলেন, “আমরা জ্যোতিষকে স্লট বিক্রি করতে চাই না। পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে চাই। কিন্তু সমস্যা হল যার মাধ্যমে কেবল চ্যানেলগুলি সম্প্রচার হয়, সেই এম এসওগুলিকে প্রচুর টাকা দিতে হয়। এই টাকার জন্যই আমরা জ্যোতিষী বসাতে বাধ্য হই। আগামী সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছি। তাঁকে বলব আমরা জ্যোতিষী বসাব না। আপনি শুধু এমএসওদের বলুন টাকা কমাতে বড় উপগ্রহ চ্যানেলের মতো আমাদের রোজগার নয়। স্থানীয় চ্যানেল এত টাকা দেবে কী করে?” তপনবাবু জানান, “আমরা ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেটার টিভি ব্রডকাস্ট নামে একটি সংগঠন করেছি। শনিবার বৈঠক। সেখানেই পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক হবে।” এদিকে জানা গিয়েছে এখনও সব চ্যানেল এই ইতিবাচক উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। তারা কৌশলে জ্যোতিষ-অনুষ্ঠান চালাতে চায়। তবে শনিবার সকালেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ হবে। কয়েকটি চ্যানেল শুক্রবার থেকেই কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। চ্যানেল ভিশনের কর্ণধার অভিজিৎ দাস বলেন, “সরকার যতক্ষণ না গাইডলাইন দিচ্ছে আমরা কিছু বিধিনিষেধ রাখছি। যেমন জ্যোতিষী বসলেও তাঁরা টিভিতে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবেন না। কোনও সমস্যার চটজলদি সমাধান দিতে পারবেন না। পাথর, মাদুলি, তাবিজ বা তন্ত্র-মন্ত্র চলবে না। ফেংশুই বিশেষজ্ঞরাও কোনও ভবিষ্যদ্বাণী বা সুরাহার দাওয়াই দিয়ে জিনিসপত্র বিক্রির চেষ্টা করতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনও চিকিৎসক যদি অনুষ্ঠান করেন, তা হলে তাঁর বৈধ, স্বীকৃত নথিপত্র দেখে নেওয়া হবে।” সৃষ্টি চ্যানেলের অন্যতম কর্ণধার অশোক আগরওয়াল এবং বিশ্বনাথ গুহবর্মণ বলেন, “আমরা দর্শকদের পছন্দ ও চাহিদা অনুযায়ী সিনেমা, খেলা, রাজনীতি, বিনোদনসহ নানা স্বাদের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি আমরা জ্যোতিষের ভারসাম্যমূলক প্যাকেজ রেখেছি। গোটা বিষয়টি নিয়ে আমরা জ্যোতিষীদের সঙ্গে কথা বলছি।”
এদিকে মহাকরণে আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারী বলেন, “জ্যোতিষীদের প্রচার নিয়ে আইনি খুঁটিনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।” যে চ্যানেলটি জ্যোতিষ অনুষ্ঠান করে না, সেই বাংলা এখন-এর কর্ণধার অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত সঠিক। আর দেরি নয়, এই ভণ্ডামি এখনই বন্ধ করা দরকার। কেবল চ্যানেল মালিকদের সংগঠনে আমরা শামিল হচ্ছি।” এদিকে সত্যানন্দ গ্রেফতার হওয়ার পর সিটিভিএন চ্যানেলও অনেক সতর্ক। প্রশাসনকে তারা জানিয়েছে সত্যানন্দকে আর অনুষ্ঠান করতে দেবেন না। সিটিভিএনের অতনু ভট্টাচার্যের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সম্ভবত তিনি এদিন তাঁর বক্তব্য জানাতে পারেননি। এদিকে সিপিএমের যুবসংগঠন ডিওয়াইএফ রাজ্য সম্পাদক অসিতাঙ্গ গঙ্গোপাধ্যায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “টিভিতে ভাগ্য-ভণ্ডামি রুখতে আমরা শিগগিরই পথে নামব” তৃণমূল যুব সভাপতি মদন মিত্র বলেন, “আমরা জ্যোতিষ-বিরোধী নই। কিন্তু টিভির পর্দায় ভণ্ডামি করে ব্যবসার বিরুদ্ধে। সব নাম-ঠিকানা নোট করা হয়েছে। প্রয়োজনে চেম্বারে বিক্ষোভ হবে। আয়কর দফতরের স্মারকলিপি দেব আমরা।” শহরের একমাত্র জ্যোতিষ চ্যানেল মালিক অমৃতলাল বলেন, “আমি বিজ্ঞানের ভিত্তিতে জ্যোতিষচর্চা করি। যারা ভণ্ডামি করে তাদের শাস্তি পাওয়াই উচিত।”

বর্ষ ২৪ সংখ্যা ৩৫৬ শনিবার ৫ চৈত্র ১৪১১ বঙ্গাব্দ ১৯ মার্চ ২০০৫ কলকাতা
আজকাল জনমত টিভি-তে জ্যোতিষের প্রচার আইন করে বন্ধ করা উচিত?
‘ভণ্ড’ জ্যোতিষ-সম্প্রচার রুখতে কাজ শুরু রাজ্যে
একমত কেব্ল মালিকরাও
অংশু চক্রবর্তী, অর্পিতা চৌধুরী : ‘ভণ্ড’ জ্যোতিষীদের বুজরুকি ও লোকঠকানো ভবিষ্যদ্বাণী প্রচারের অনুষ্ঠান বাতিলের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে একমত অধিকাংশ কেব্ল চ্যানেলই। এ টি এন কলকাতা, স্পন্দন, সোনার বাংলা, সৃষ্টি, তাজা, আমার চ্যানেল, আলোসহ একাধিক কেব্ল চ্যানেল মালিকরা সম্প্রতি গঠন করেছে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অফ বেটার টিভি ব্রডকাস্ট’ নামে একটি সংগঠন। সংগঠনের সদস্যরা একমত ফেংশুই, জ্যোতিষ, তন্ত্রের মতো বিষয় দেখানো বন্ধ হোক। এদিকে রাজ্যের আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারী শুক্রবার মহাকরণে বলেছেন, জ্যোতিষীদের টিভি চ্যানেলের অনুষ্ঠান বন্ধের কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আইনগত কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ টি এন কলকাতার পরিচালন কমিটির এক সদস্যের মতে, ইচ্ছে করে কে আর এ সব দেখাতে চায়? কিন্তু এম এস ওগুলির অত্যাচারে বাধ্য হয়েই আমরা এগুলি সম্প্রচার করি। আর পিজি, মন্থনের মতো এম এস ওগুলির বিশাল অঙ্কের ‘চার্জ’ মেটাতে ইচ্ছের বিরুদ্ধেই এ সব অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে সহমত কেবল মালিকরা। খুব শিগগিরই জ্যোতিষের অনুষ্ঠান বাতিলের ব্যাপারে আলোচনার জন্য নবগঠিত সংগঠনের ব্যানারে বৈঠকে বসবেন তাঁরা। জানা গেছে, জ্যোতিষের অনুষ্ঠান বন্ধ করার। বিষয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করতে চান। আইনমন্ত্রী শুক্রবার মহাকরণে এক প্রশ্নের জবাবে জানান, অপরাধের তদত্ত চলাকালীনই টিভি সিরিয়ালে নানা কাহিনি দেখানো হচ্ছে। এটা কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। এতে তদত্ত প্রভাবিত হতে পারে। এই প্রবণতা বন্ধের জন্যও আইনি ব্যবস্থার কথা ভাবা হচ্ছে। জ্যোতিষের অনুষ্ঠান বা বিতর্কিত সিরিয়াল বন্ধের জন্য আইনি ববস্থা নেওয়া হলেই কেব্ল চ্যানেল মালিকদের তা জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর অনুষ্ঠান বন্ধের পদক্ষেপ নেবেন তাঁরাই।
চ্যানেলের ঘাড়েও খাঁড়া
অরূপ বসু : ‘রাম ভরোসে...’। রামই নাকি রক্ষা করবেন। আচার্য সত্যানন্দ বিপন্ন ভাগ্যান্বেষীকে মেটাল ট্যাবলেট ধরিয়ে এই ব্রহ্মবাণী শুনিয়ে দিতেন। বলতেন, আমি থাকব না, আমার কাজ থাকবে। কিন্তু ‘রাম’ কি জানেন, সত্যসখা শতাব্দী চ্যাটার্জির সামনে বিপদ? ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক-এর প্রতিনিধি ফ্রেঞ্চ রবার্টকে আক্রমণ, ক্যামেরা কেড়ে নেওয়া, যুক্তিবাদী আন্দোলনের প্রবীর ঘোষকে গুলি করার মতো প্ররোচনামূলক মন্তব্য— সব অভিযোগের অঙ্কুশই সত্য-শতাব্দীকে জড়িয়ে। পুলিসের হাতে সে তথ্য-প্রমাণ পৌঁছে গেছে। এমনকী মাননীয় বিচারকের হাতেও। বাঁচতে পারছে না এবার টিভি চ্যানেলগুলোও। জ্যোতিষীরা তাঁদের জ্যোতি (নিন্দুকেরা বলেন জালিয়াতি) দেখান টিভির পর্দা ভাড়া করে। চ্যানেল-মালিকেরা বলে থাকেন, এর জন্য তো আমরা দায়ী নই। পয়সা দিয়ে স্লট ভাড়া করে নিজেদের ঢাক নিজেরা পেটালে আমরা কী করব? তাই নাকি? গায়ক নচিকেতা, যিনি নিজের ভগ্নিপতি সত্যানন্দ সম্পর্কেও আক্রমণাত্মক মন্তব্য করতে, শ্লেষাত্মক গান গাইতে পিছিয়ে যাননি, তিনি বললেন : আমি যদি পয়সা দিয়ে টিভি চ্যানেলের স্লট ভাড়া করে আর ডি এক্স ব্যবহার, বোমা বাঁধা শেখাই, প্রশাসন ছেড়ে দেবে? নাকি এ ধরনের ঘটনা ঘটলে চ্যানেল-মালিকেরা হাত ধুয়ে ফেলতে পারবেন? সি টি ভি এন-এর যে অনুষ্ঠানে প্রবীর ঘোষকে গুলি করে মারার কথা বলেছেন সত্যানন্দ, তার ক্যাসেট বিচারক, পুলিশ সবার কাছে পৌঁছে গেছে। চ্যানেল মালিক পুলিস প্রশাসনকে, বিচারককে বলার চেষ্টা করছেন, লাইভ প্রোগ্রাম তো সেন্সর করা যায় না? প্রথম কথা, এই অনুষ্ঠান সব সময়ে লাইভ হয় না। দ্বিতীয়ত, অনুষ্ঠানটি যখন পুনঃপ্রচারিত হয়েছে, তখনও কি লাইভ প্রোগ্রাম? এ কথা কাদের তিনি বোঝাবেন? মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শুধু ঠগ জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন না, এই চ্যানেলগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছেন। শুধু এই ধরনের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করে থাকে এই সব চ্যানেল – সি টি ভি এন-১, সি টি ভি এন-২, চ্যানেল ভিশন, সোনার বাংলা, মন, ফরচুন, আমার চ্যানেল, স্পন্দন, এ টি এন কলকাতা ইত্যাদি। পার্ক স্ট্রিট, শ্যামবাজার, বেহলার দত্তভিলা, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ (ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসের কাছে) – এই সব জায়গায় এদের স্টুডিও। প্রধানত যে সব জ্যোতিষী মাসে গড়ে দেড় লাখ টাকা খরচ করে এই সব চ্যানেলে আগে থেকে তৈরি প্রশ্নের উত্তর দেন তাঁরা হলেন : সত্যানন্দ, শিবানন্দ, অমৃতলাল, গৌতম ভারতী, শ্রী গৌতম, বিশ্বনাথ শাস্ত্রী, তপন শাস্ত্রী, সুভাষ শাস্ত্রী, স্বামী বশিষ্ঠানন্দ, দেবদাস, শ্রী আদিত্য, প্রলয় শাস্ত্রী, আদি শ্রীভৃগু, শ্রীভৃগু, শ্রীতপন, পস্খিমুনি, সব্যসাচী, জয়া মা, খনা মা, অনুরাধা মা, সন্দীপন চৌধুরি, সুবীর বসু প্রমুখ। শোনা যায় অমৃতলাল নিজেই ফরচুন চ্যানেলের মালিক। স্টুডিও ডোভার লেনে। সবারই মোহজাল বিস্তারের পদ্ধতি একই। নির্দিষ্ট কিছু ফোন ধরেন, আগে থেকে জানা উত্তরই টিভির পর্দায় শুনিয়ে দেন। ছকের বাইরে যদি কোনও টেলিফোন ধরে ফেলেন, এমন একটা উত্তর দেবেন যাতে সবই হতে পারে। সামনাসামনি হলেও আগে থেকে যদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট না থাকে, তবে ধোঁয়াটে জবাব দেবেন।

কলকাতা • ২০ মার্চ ২০০৫ রবিবার ৬ চৈত্র ১৪১১ • ৩.০০ টাকা • আট পাতা • সঙ্গে রোববার
জ্যোতিষী নিয়ন্ত্রণের গাইডলাইন নিয়ে কথা শুরু
স্টাফ রিপোর্টার : কেব্ল চ্যানেলগুলিতে কিছু ভণ্ড জ্যোতিষী এবং ফেংশুই-এর তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের অবৈজ্ঞানিক প্রচার বন্ধ করতে নির্দিষ্ট গাইডলান দেওয়া কথা ভাবছে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর নির্দেশে তথ্য দফতর এবং আইন দফতর এবিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর শুরু করেছে। মানুষের দুর্বলতা বা হতাশাকে কাজে লাগিয়ে এই জ্যোতিষী বা ফেংশুই স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞরা টিভির পর্দায় নানা চটজলদি সমাধানের খেলা দেখিয়ে আকর্ষণ করে মানুষকে চেম্বারে টানছেন এবং ব্যবসা করছেন। সরকার এই অস্বাস্থ্যকর কাজ বন্ধ করতে চায়। ফলে সংশ্লিষ্ট আইন খতিয়ে দেখার পাশাপাশি সামাজিক দায়বদ্ধতার কথা ভেবে একটি গাইডলাইন দিতে চান তাঁরা।
সরকারি সূত্রে খবর, গাইডলাইনের খসড়াটি হচ্ছে এরকম : ১। কোনও চ্যানেলে জ্যোতিষ বা ফেংশুই অনুষ্ঠান হলে সেই শ্লট বিক্রির যথাযথ নথি রাখতে হবে। ২। অনুষ্ঠানটি আগে ‘প্রি-ভিউ’ করে ছাড়তে হবে, যাতে আপত্তিকর কিছু থাকলেও তা বাদ দেওয়া যায়। যা প্রচারিত হবে তার পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে চ্যানেলেরও থাকবে। ৩। অনুষ্ঠানে গণনা করে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা চলবে না। কোনও বিপদের কথা বলা যাবে না। আশার কথাও বলা যাবে না। ৪। অনুষ্ঠানে কোনও সমস্যার সমাধানের কথা বলা যাবে না। ৫। কোনও রোগের প্রতিকারে বা সমস্যার সমাধানে পাথর, তাবিজ, তন্ত্র, পুজোর দাওয়াই দেওয়া চলবে না। ৬। কোনও ব্যক্তির হতাশার কারণ বিশ্লেষণ চলবে না। ৭। বিকল্প চিকিৎসার বিশেষজ্ঞরা ‘ডাঃ’ তকমা ব্যবহারের আগে স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের শংসাপত্র দেখাতে হবে। ৮। মামলা-মোকদ্দমার সমাধান জ্যোতিষ বা ফেংশুই দিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া যাবে না। ৯। কোনও ঘটনার তদন্ত চলাকালীন তা নিয়ে সিরিয়াল করা যাবে না। ১০। প্রত্যেকের বিজ্ঞাপন দেওয়ার অধিকার আছে। আইনে তা স্বীকৃত হলে শুধু নাম-ঠিকানা দিয়ে বিজ্ঞাপন হতে পারে। কিন্তু লোক টানতে ‘পাবলিক প্রেসেনটিসন’ চলবে না। ১১। অনুষ্ঠানে কোনও অলৌকিক ক্ষমতা দেখানো যাবে না। সরকারি মহলে এই গাইডলাইনের খসড়া নিয়ে আইনি আলোচনা চলছে।
পাশাপাশি সাত-আটটি কেবল চ্যানেলকে নিয়ে তৈরি সংগঠন এনিয়ে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তাও বলেছে। দু'তিনটি চ্যানেল অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এবং রাজ্য বিধানসভার বক্তব্যকে মর্যাদা না দিয়ে এদিনও জ্যোতিষ এবং ফেংশুই অনুষ্ঠান করেছে। এই স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞরা অবশ্য এখন খানিকটা সুর বদলেছেন। এদিন দুপুরে এমনই এক ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এক ফেংশুই বিশেষজ্ঞ স্বভাবসিদ্ধ কায়দায় বলেছেন, “আপনার ছেলের মধ্যে যত প্রতিভা আছে, তার পুরো ফল সে পাচ্ছে না। কী করতে হবে, চেম্বারে এসে জেনে নিতে পারেন।” অর্থাৎ টিভিতে খোলাখুলি সমাধান বা পুতুল বিক্রির ফতোয়া দেননি তিনি। তবে বড় বড় কথার খামতি ছিল না। তিনি বলেছেন, “ডাক্তাররা যেমন শিখে পড়ে সমাধান দেন, আমরাও তাই করি। আমরা হলাম বৃষ্টিতে ছাতার মতো।” এদিকে, একাধিক মহল থেকে ভাগ্য-ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছে। তাৎপর্যপূর্ণ হল এর সঙ্গে গলা মেলাচ্ছেন অনেক জ্যোতিষীও। এঁদের বক্তব্য, টিভিতে ইন্সট্যান্ট-জ্যোতিষীদের মাধ্যমে ব্যবসা করতে গিয়ে অনেকে প্রকৃত জ্যোতিষ-চর্চার ক্ষতি করছেন।
মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছেন। টিভির পর্দায় বসেন, এমন কিছু জ্যোতিষীও এ ব্যাপারে একমত। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি সূত্রের খবর, কোনও চ্যানেলেরই ক্ষতি সরকার চায় না। তাই কড়া হাতে আইনি প্রয়োগের আগে চ্যানেল কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধির কাছে আবেদন করা হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকজন জ্যোতিষী বিরুদ্ধ-মতাবলম্বীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছেন। দু'একটি চ্যানেল ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে কৌশল নিয়েছে। তাদের কেউ বিধানসভায় প্রতিবাদ করা কোনও বিধায়ককে ফোন করে ঠান্ডা করার চেষ্টা করছেন। কেউ আবার কোনও যুক্তিবাদী নেতাকে অনুষ্ঠানের প্রলোভন দেখিয়ে নিজেদের প্রগতিশীল সাজানোর চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে, সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস এবং এসইউসি-র ছাত্র, যুব, মহিলা শাখা এই ইস্যুতে জোরদার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এঁদের বক্তব্য, কেউ জ্যোতিষে বিশ্বাস করেন, কেউ করেন না।
সেটা অন্য বিতর্ক। কিন্তু জ্যোতিষ, ফেং শুইয়ের কর্তারা এভাবে সকাল থেকে রাত টিভির মাধ্যমে অন্দরে ঢুকে মানুষকে সমস্যা সমাধানের স্বপ্ন দেখিয়ে ব্যবসা করে যাবেন, সেটা হতে পারে না। এই লড়াইতে জ্যোতিষের প্রকৃত সাধকরাও এগিয়ে আসুন।

২১ মার্চ ২০০৫ সোমবার

ভাগ্য গণনা নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন চ্যানেলে চ্যানেলে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন এক শ্রেণির জ্যোতিষী তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ মুখ্যমন্ত্রীও। এই ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমগুলিও প্রতিবাদে সরব। রাজ্যের ছাত্র-যুবরাও দলমত নির্বিশেষে এই প্রশ্নে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাশে রয়েছেন বিশিষ্ট মানুষজনও। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পাঠকরাও প্রতিবাদে কলম ধরেছেন

দরকার কড়া আইন
নিজেকে কতটা উচ্চাসনে বসালে দেশের আইনকানুনের তোয়াক্কা না করে টিভি চ্যানেলে ফতোয়া দেওয়া যায়। জনগণকে প্ররোচিত করা যায় একজনকে চিহ্নিত করে, তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের গুলি করে মেরে ফেলতে। আমরা দেখলাম জ্যোতিষী সত্যানন্দ নিজে আতঙ্কের সৃষ্টি করলেন, দরজা বন্ধ করে মারধর করলেন বিদেশি সাংবাদিককে এবং অপরপক্ষকে ‘আতঙ্কবাদী’ বলে প্রচার করলেন নির্দ্বিধায়। ওঁর হিন্দুধর্ম প্রীতি চাগিয়ে উঠল ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা দেখে। হ্যাঁ, বছরে কয়েক কোটি টাকা ইনভেস্ট করেন এইসব জ্যোতিষীরা চ্যানেল ভাড়া ও কাগজে ছবিসমেত বিজ্ঞাপনে। সৎভাবে লেখাপড়া করা ডাক্তার বা শিক্ষকরাও ভাবতে পারেন না এত টাকা। এই অস্বাস্থ্যকর সমাজদূষণ বন্ধ করতে পারেন প্রশাসনই। দেশের বিশাল সংখ্যক মানুষ বিজ্ঞানে অগ্রগতি সম্বন্ধে বেওয়াকিবহাল,—তাঁরা জানেন না বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন আংটি তাবিজে ভাগ্য ফেরানো সম্ভব নয়, জন্মসময়ে গ্রহের অবস্থান কোনওভাবেই জাতকের জীবনকে প্রভাবিত করে না। এ কথা মানুষকে জানানোর পাশাপাশি আইন করে জ্যোতিষ চ্যানেল ও বিজ্ঞাপন বন্ধ করা এই মুহূর্তের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ – ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। ধন্যবাদ ‘প্রতিদিন’-কে।
বোতল ভাঙা পাথর
কেব্ল চ্যানেলগুলি জ্যোতিষীদের দিয়ে অনুষ্ঠান করিয়ে কমিশন পাচ্ছে। অনুষ্ঠানগুলি বেশিরভাগই ‘রেকর্ডেড'। ফোনগুলি ‘গট-আপ'। দুর্বল চিত্তের মানুষ টিভির পর্দায় এইসব ভেকধারী জ্যোতিষীদের দেখে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে শরণাপন্ন হচ্ছে। জনজীবন কৃচ্ছ্রসাধন করে ঈশ্বরের করুণা পাওয়া যায় না। আর এইসব ভেকধারীরা এত ক্ষমতাবাদ যে ফোনে মানুষের ভাগ্য বলছে। বোতলভাঙা পাথর দিয়ে মানুষের ব্যর্থতা আটকাচ্ছে। এই মুখোশধারী ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে প্রকৃত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে জেহাদ ঘোষণা করতে হবে।
ঈশ্বরের কী দরকার
যদি গ্রহ নক্ষত্ররা জীবন্ত প্রাণী হয় এবং তাদের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে, তা হলে আর ঈশ্বর বা বিভিন্ন ঠাকুর দেবতার অস্তিত্ব মানার উদ্দেশ্য কী, মাদুলি-কবচ পাথর ধারণ করে এইসব গ্রহ-নক্ষত্রকে সন্তুষ্ট রাখলেই হয়। সত্যি, মাদুলি, কবচ, পাথর ধারণ করে বা ‘ফেংশুই’ অনুযায়ী খেলনা সাজিয়ে গ্রহ-নক্ষত্রদের ক্রোধ শান্ত করে প্রাকৃতিক বিপর্যয় এড়ানো যায়? বন্যা, মহামারী, ভূমিকম্প বা সুনামির প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় বলে দেননি কেন?
সরকার কী বলছে
আসলে ভাগ্য বলনেওয়ালারা নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে দেশময় তাবিজ মাদুলির চর্চা এবং নীল লাল পাথরের পরিচর্যা বৃদ্ধি করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এবং এ কাজে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছে কিছু টিভি চ্যানেল। জ্যোতিষী এবং ওইসব নির্বোধ চিন্তার বিশ্বাসীদের উদ্দেশে বলি, আমরা কি দেশগুলিকে রক্ষা করতে উন্নত প্রযুক্তির প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে, বিপত্তারিণী বা রক্ষাকবচ ধারণ করব। যাই হোক, এগুলিকে ব্যক্তিগত বিশ্বাস বলে উপেক্ষা করা উচিত। আমার যতদূর মনে হয় এ বিষয়ে মাননীয় বামফ্রন্ট সরকার মানুষের বিশ্বাস ও সেন্টিমেন্টকে মূল্য দেয়। এতে তাদের প্রতি বিশ্বাস এবং বামপন্থার মূল্য কমছে, এ বিষয়ে নিঃসন্দেহ।
চাই প্রকৃত শিক্ষা
কতকগুলো প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন এসে যাচ্ছে : (ক) ‘এখানে ফোন’ করছে, যোগাযোগ করছে যারা, তারা কি অশিক্ষিত, বিচারবুদ্ধিহীন? (খ) যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয় তবে, প্রথমে আন্দোলনটা কেতাবি শিক্ষার বিরুদ্ধে এবং প্রকৃত শিক্ষা বিস্তারের জন্য করা একান্ত জরুরি। (ঙ) অতএব ‘ধূমপান স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর’-এর মতো কোনও সতর্কতা বাণী এই সমস্ত অনুষ্ঠানে লেবেল হিসাবে সেঁটে দেওয়া গেলেই কিছুটা হলেও ‘জোরদার আন্দোলন’ সফল হতে পারে।
স্রেফ উপেক্ষা করুন
‘জ্যোতিষ’ নিয়ে এত মাতামাতির তো কিছু নেই! যারা এসব নিয়ে মশগুল আছে থাকুক না। আপনি-আমি পাত্তা না দিলেই হল। সচেতন মানুষ এসব নিয়ে ভাবে না। তাদের অনেক কাজ আছে। সিগারেটের প্যাকেটে তো নিষেধাজ্ঞা দেওয়াই আছে, তা হলে কি মানুষ সিগারেট খায় না? মদের দোকানের নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে, না দেওয়া হলেও যারা খায় তারা ঠিকই খাবে। নিষেধাজ্ঞা বা ক্ষতি হবে জেনেও তারা খেতে দ্বিধা করে না। কই আমি-আপনি তো খাচ্ছি না। ওসব লিখে শুধু পাতা খরচ করা। এদের কথা যত লিখবেন ততই এদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। কী দরকার, আসুন তো সাধারণ মানুষের গান গাই।
ভণ্ডামি দেখলে লজ্জা হয়
আমরা সাজপোশাকে আধুনিক হয়েছি। সেলফোন ব্যবহার করি। কম্পিউটারের কি-বোর্ডে আঙুল রাখছি। কিন্তু আঙুলে পাথরের আংটি, হাতে মাদুলি ব্যবহার করছি নিজের ভাগ্য ফেরানোর জন্য। কী সুন্দর আমাদের চারপাশে আধুনিকতা ও বুজরুকির এক সহাবস্থান অথচ এমন হচ্ছে কেন? আমরা ধূমকেতু, গ্রহ-নক্ষত্র, সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ, উল্কাপাতকে বিজ্ঞান বলে মানতে পারছি অথচ একশ্রেণির বুজরুক জ্যোতিষীর ভুল ব্যাখ্যায় জ্যোতিষকে বিজ্ঞান বলে মেনে নিচ্ছি। একটা কমিউনিস্ট শাসিত রাজ্যে জ্যোতিষ-ফেংশুই ভণ্ডামির এমন রমরমা দেখে লজ্জা হয়। এর অবসান হওয়া দরকার।
লোক ঠকিয়ে ব্যবসা
যে দেশে ডাইনি সন্দেহে মেয়েদের পিটিয়ে মারা হয়, পর পর কন্যাসন্তান প্রসব করলে বাড়ির বউকে ‘অপয়া’ আখ্যা নিয়ে শ্বশুরবাড়ির থেকে বিতাড়িত হতে হয়, সেই দেশে জ্যোতিষচর্চার মতো বুজরুকি ব্যবসা মানুষকে সর্বস্বান্ত করবে, সেটাই স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে শিক্ষায় আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে। বিশ্বে নারীশিক্ষায় ভারতের স্থান নিরীক্ষণ করতে হলে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন। অশিক্ষার সুযোগ নিয়ে জ্যোতিষীরা অসহায় মানুষদের প্রতারিত করছে। এটা অমার্জনীয় অপরাধ। ‘অপহরণের মাধ্যমে পণ আদায় করা’ ‘নারী পাচার করা’ কিংবা ‘মাদকদ্রব্যের চোরাচালান’ প্রভৃতির সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের সঙ্গে জ্যোতিষীদের লোক ঠকানো ব্যবসার কোনও তফাত নেই। তফাত এখানেই, জ্যোতিষীরা অন্যায় করেছে জেনেও, সরকার এদের বিরুদ্ধে কোনওরকম আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
{{কেন্দ্র|দায়বদ্ধ অবশ্যই আমরা আমাদের দেশে ‘ড্রাগ অ্যান্ড ম্যাজিক রেমিডিস (অবজেকশন্যাবল অ্যাডভারটাইজমেট) অ্যাক্ট’ ১৯৫৪ সালে সংসদে পাস হওয়া আইন বলে প্রতিটি জ্যোতিষীর প্রতারণার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা খুবই প্রয়োজন সরকার তথা প্রশাসনের। টিভি চ্যানেলগুলিতে জ্যোতিষীদের ‘ফোন ইন’ (লাইভ) অনুষ্ঠানে প্রায় প্রতিটি ফোনই গটআপ! আমি নিজে বহুবার ওইরকম অনুষ্ঠানে লাইন পাওয়ার পর প্রতিবারই অদৃশ্য কারণে অন্য প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। আসলে অপরিচিত কোনও কণ্ঠস্বর শুনলেই এদের পিলে চমকায়। কেব্ল চ্যানেলগুলি, যাঁরা নীতিজ্ঞান বিসর্জন দিয়ে জ্যোতিষীদের বিভ্রান্তিমূলক অনুষ্ঠান প্রচারের সুযোগ করে দিয়ে অসংখ্য মানুষের শারীরিক, মানসিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতি করে চলেছেন, তাঁরা একবার ভেবে দেখবেন কি, এই সমাজের প্রতি তাদের কোনওরকম দায়বদ্ধতা আছে কি না? এই দায়বদ্ধতা আমাদের প্রত্যেককে গড়ে তুলতে হবে।
{{কেন্দ্র|সবটাই উপরচালাকি কেবল চ্যানেলের জ্যোতিষীদের সম্পর্কে কিছু ভাল-মন্দ বলার আগে একটা মজার অভিজ্ঞতা বরং 'শেয়ার' করা যাক। এক ভদ্রলোক নিজের সন্তান সম্পর্কে জানতে চেয়ে জন্মছক থেকে ‘ডেট অফ বার্থ' ইত্যাদি বললেন। পলকের মধ্যে কী সব অঙ্কটঙ্ক করে (কোয়ান্টাম!) সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলেন ছেলের পড়াশোনা ব্যাপক, স্কলার ছেলে, পশ্চিম স্থানে কন্যারাশির ঘরে রবি-বুধ (স্বক্ষেত্রী) এ বুধাদিত্য যোগ। ভদ্রলোক এবার অপ্রতিভ হয়ে বললেন, সন্তান না জন্মাতেই এত কিছু। জ্যোতিষ সম্রাট বললেন, কেন ওই তো ডেট বললি। ‘কলার’ শুষ্ক কণ্ঠে বললেন, তিন বছর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সন্তান নেই, তাই ফোন করছিলাম। বিন্দুমাত্র ঘাবড়ে না গিয়ে গণক ঠাকুর বললেন, ওঃ হ ওটা তা হলে তোর ফলাফল। ‘কলার’ ঘাবড়ে গিয়ে বলল, আমি যে মাধ্যমিকও নই।
নিজেদের ভবিষ্যৎ জানেন
এখন মানুষ নানা সমস্যায় জর্জরিত আর এই সুযোগ নিয়ে কিছু ভুয়া জ্যোতিষীর দল পয়সা উপার্জনে ব্যস্ত। আমার মনে হয় এটা সম্পূর্ণ বুজরুকি। যারা শুধু টিভির পর্দায় বসে জন্মলগ্ন শুনে সেই মানুষটা সম্বন্ধে সবকিছু বলে দিতে পারে আমার জিজ্ঞাসা, তারা এই পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে কেন বলে দিতে পারে না অঘটনের কথা, তা হলে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা না গিয়ে অন্তত সাবধান হতে পারত। আসলে এইসব জ্যোতিষীদের নিজেদেরই ভবিষ্যতের ঠিক নেই, সাধারণ মানুষের কী উপকার করবে?
গারদে ঢোকান এদের
জ্যোতিষ আদৌ বিজ্ঞান কি না সেই আলোচনায় যাব না। কিন্তু এই জ্যোতিষ চ্যানেলগুলিতে বিচিত্র সাজে সজ্জিত জ্যোতিষ, ফেংশুই, রেইকি বিশেষজ্ঞ নামধারী একদল ঠক, প্রতারক, বুজরুক ক্লাউনেরা যে ভাঁড়ামোর অভিনয় করে তা যে কোনও চটুল হিন্দি বা ‘বাবার হাতে ছাতা’ মার্কা বাংলা ছবিগুলিকেও হার মানায়। জ্যোতিষ, ফেংশুই, তন্ত্র প্রভৃতির নাম করে এই ভণ্ড প্রতারকেরা গেরুয়া বসনে কেউ চৈতন্য প্রভু বা রজনীশ সেজে বা মাথায় ফেট্টি বেঁধে ‘টুথ পেস্ট’-এর বিজ্ঞাপনের কায়দায় দাঁত বের করে এমন আশঙ্কাপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে তার সমাধান করতে সাধারণ মানুষরা ওই ভণ্ডদের কাছে আর্থিক বা মানসিকভাবে সর্বস্বান্ত হন। এই অপরাধীদের স্থান হওয়া উচিত একমাত্র জেলগারদে।
প্রশাসন কী করছিল
সতর্কটা আরও অনেকদিন আগেই হওয়া উচিত ছিল। এ পর্যন্ত নানারকম দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বহু সংখ্যক ঠক-জোচ্চোর জ্যোতিষ, তান্ত্রিক এবং ফেংশুই-এর স্বঘোষিত বিশেষজ্ঞই মানব-জাতির সঙ্গে প্রতারণা করে এসেছে, চরম ফুলে-ফেঁপে উঠেছে আর্থিকভাবে। কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট টেলিভিশন চ্যানেল টাকার বিনিময়ে এদের প্রচারের আলোয় এনে সর্বনাশ করে চলেছে সমাজের। কুসংস্কারের মোড়কে থাকা ওইসব স্বার্থান্বেষী বুজরুকদের দল রাত নেই, দিন নেই, দুপুর-সন্ধে নেই বিভিন্ন চ্যানেলে বক-বক করে চলে, সব ব্যাপারে যেভাবে জ্ঞানবৃষ্টি বর্ষণ করে চলে দেখলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায়। প্রশাসন সব দেখেশুনেও নির্বিকার। তবু ভাল, দেরিতে হলেও সম্বিত ফিরেছে আমাদের।
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
জ্যোতিষ বিদ্যাকে পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে বেঁধে ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো দৃষ্টতা না দেখানোই উচিত। A little learning is a dangerous things. জ্যোতির্বিদ্যা তখন আর বিজ্ঞানভিত্তিক থাকে না, হাস্যাস্পদ থেকে নামতে নামতে অপরাধ বিজ্ঞানে রূপান্তরিত হয়।
গ্রেফতার ঠেকাতে পারলেন
সত্যানন্দ শুনেছিলাম খুব নামী জ্যোতিষী। অন্যের ভবিষ্যৎ বলে দেন, সময় কখন খারাপ যাবে জানিয়ে দেন। কিন্তু তিনি নিজেই যে গ্রেফতার হচ্ছেন, এই তথ্যটুকু গণনা করে ধরতে পারলেন না কেন? কেন পাথর পরে গ্রেফতার এড়ালেন না?
টাকা দিয়ে স্লট কেনেন
যে সব জ্যোতিষী, তান্ত্রিক ফেংশুই বিশেষজ্ঞদের দেখি টিভির পর্দায় বসেন, তাঁরা যদি নিজেরা টাকা দিয়ে স্লট না কিনতেন, তা হলে কি চ্যানেল থেকে তাঁদের ডাকত? নিশ্চয়ই ডাকত না। নিজেদের ঢাক নিজেদের পেটাতে হয়, এরা কেমন বিশেষজ্ঞ?
জেলেও জায়গা হবে না
জ্যোতিষীরা শীঘ্র ভিআরএস নিয়ে বাড়িতে বসে আরাম করুন। নতুবা জেলখানায় জায়গা হবে না। বহুদিন ধরে এই অপবিজ্ঞান, শাস্ত্র ও হিন্দুধর্মের দোহাই দিয়ে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মানসিক কারণে অসুস্থতা ও সামাজিক কারণে অশান্তি আমাদের সমাজের বিরাট সংখ্যক মানুষকে প্রতিনিয়ত বিব্রত করে চলেছে। আর জ্যোতিষীরা আংটি, তাবিজ দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক কিছুটা আত্মবিশ্বাস এনে দিচ্ছে (ইংরাজিতে একে বলে প্লাসিবো ট্রিটমেন্ট) এবং আখেরে সর্বস্বাত্ত করে দিচ্ছে। পাথরে ভাগ্য পাল্টায় না। যারা নিজেদের বিজ্ঞাপনের জন্য টিভি চ্যানেল ভাড়া করে, তারা অপরের ভাগ্য পাল্টাবে কী করে? এ তো সাধারণ বুদ্ধিতেই বোঝা যায়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, সমস্ত জ্যোতিষ চ্যানেল তুলে দিয়ে বিজ্ঞান ও সাধারণ চিকিৎসার অনুষ্ঠান করা উচিত।
এরা বড় প্রতারক
গত ১৫ মার্চ ২০০৫ তারিখের ‘সংবাদ প্রতিদিন’ থেকে জ্যোতিষ তন্ত্র ও ফেংশুই বিশেষজ্ঞদের প্রতারণা বন্ধ করার লক্ষ্যে সংগঠিত হওয়া আন্দোলন সম্পর্কে যে সংবাদ পেলাম। তা জেনে ভীষণই ভাল লাগছে। যুক্তিবাদীরা এ কথা বহুবার প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, যে যত বড় জ্যোতিষী সে তত বড় প্রতারক। তাঁরা বিভিন্ন আইন উল্লেখ করে এ সম্পর্কেও আমাদের অবহিত করেছেন যে, তাবিজ-কবচ দিয়ে রোগ সারানোর দাবি করাটাই বেআইনি। পেশার প্রতারকদের প্রতারণা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হোক। নতুবা পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রগতিশীল’ ভাবমূর্তি যথেষ্ট পরিমাণে কালিমালিপ্ত হবে।

কলকাতা ২৩ মার্চ ২০০৫ বুধবার ৯ চৈত্র ১৪১১ ২.০০ টাকা দশপাতা
আইন প্রয়োগের আগেই বন্ধ হোক চ্যানেল ভাগ্য গণনা : আইনমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার : কেব্ল চ্যানেলগুলির উদ্দেশে অবিলম্বে জ্যোতিষ, ফেংশুই এবং ‘ডাঃ’ তকমাধারী বিকল্প চিকিৎকদের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে আহ্বান জানালেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী নিশীথ অধিকারী। মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভা ভবনে তিনি বলেন, “আইনি দিক আমরা খতিয়ে দেখছি। আইনে যে ব্যবস্থা দরকার, তা আমরা নেব। কিন্তু তার আগে কেবল চ্যানেলগুলির কাছে অনুরোধ করছি তাঁরা এধরনের অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করুন। যেভাবে জ্যোতিষ, ফেংশুই-রা বসে পাথর বা খেলনা দিয়ে ভাগ্য বদল বা রোগ সারানোর কথা বলছেন, এটা চলতে পারে না। আইনের চোখে এভাবে রোগ সারানোর কথা বলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই সঙ্গে বন্ধ হোক তদন্ত চলাকালীন কোনও ঘটনা নিয়ে সিরিয়াল দেখানো।” আইন দফতর সূত্রের খবর, এঁরা চ্যানেলগুলির ক্ষতি চান না বলেই আইনি পথে এগোনোর আগে মৌখিক আবেদন রাখছেন। এদিকে যেসব চ্যানেলে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে ঢালাও জ্যোতিষ ব্যবসা চলছে সেগুলির মধ্যে রয়েছে সিটিভিএন, সিটিভিএন টু, ফরচুন, চ্যানেল ভিশন, এটিএন কলকাতা, সোনার বাংলা, সৃষ্টি, আমার চ্যানেল ইত্যাদি। এর মধ্যে সোমবার একটি চ্যানেলে শ্রীজয়ন্ত নামে এক জ্যোতিষ নিজেই বাকিদের বিরুদ্ধে কামান দাগেন। তিনি বলেন, “অনেকেই বিশেষজ্ঞ সাজতে নিজেদের নামের আগে বা পরে আদি, আসল, শাস্ত্রী, মা, মহারাজ, গোল্ড মেন্ডেলিস্ট-এসব ব্যবহা করেন। এদের জন্যই জ্যোতিষ শাস্ত্র ধাক্কা খাচ্ছে। কোনওদিন দেখব শ্রীজয়ত্ত বিখ্যাত হলে সেই ব্র্যান্ড ভ্যালু ব্যবহার করে ব্যবসা করার জন্য অন্য কেউ শ্রীজয়ন্ত (আসল) নাম নিয়ে নেমে পড়বেন।” অর্থাৎ শ্রীজয়ন্তর কথাতেই বোঝা গিয়েছে কত বুজরুক টিভির পর্দায় ভাগ্য-ভণ্ডামি চালাচ্ছে। গত ক’দিনে প্রবল চাপের মুখে এরা অবশ্য পাল্টা আক্রমণের চেষ্টাও চালাচ্ছেন। স্বীকৃত ডাক্তারির বাইরে বেআইনিভাবে ‘ডাঃ’ শব্দ ব্যবহারকারী এক দম্পতি অনুষ্ঠানে এক মহিলাকে বসিয়ে দেখাতে গিয়েছিলেন তাঁর সমর্থক। হাস্যকরভাবে সেই মহিলা বলেছেন, “এসব ঠিক না ভুল জানি না। এঁকে ভালো লাগে বলে যোগাযোগ করি।” অর্থাৎ এই হচ্ছে আইনি স্বীকৃতির নমুনা। রাজ্য সরকারের বক্তব্য, কোনও চ্যানেল যদি বারবার বলা সত্ত্বেও এসব চালায় এবং নানাভাবে ‘লবি’ করে, আমরা কড়া হতে বাধ্য হব। জ্যোতিষদের অনুষ্ঠানের গটআপ সঞ্চালকরাও যদি এতে মদত চালান তাহলে প্রচারে সহযোগী হিসাবে এদের বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থার পথ খোলা থাকছে। কেবল চ্যানেলগুলির নবগঠিত অ্যাসোসিয়েশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা
চালাচ্ছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের বক্তব্য বলছেন তাঁরা। এদিকে ছাত্র-যুব সংগঠনগুলি কয়েকদিনের মধ্যেই ভাগ্য-ভণ্ডামির বিরুদ্ধে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বড় এবং তীব্রতর চেহারায় হতে চলেছে আন্দোলন।Hindustan Times
Thursday, Maurch 24, 2005, Lucknow
Bengal moves to ban astrology on TV
Indo-Asian News service, Kolkata, March 23: WEST BENGAL is moving to fight a proliferation of television programmes on astrology and feng shui that promise anything from controlling fate to curing diseases.
An assortment of selfprofessed prophets, fortune-tellers, godmen, oracles, mystics and seers are seen on Bengali TV channels, and their programmes are believed to have a large following.
Viewers call into these interactive programmes to know their fate and future, and most of these asrologers rattle off what's in store for the callers.
“This hypocrisy has to stop,” said Nisith Adhikary, the law minister of the communist-ruled West Bengal.
These programmes on astrology and pseudospiritualism came in for sharp criticism this month after one of the popular godmen asked his followers on TV to confront rationalists and said their leader should be shot.
The sootsayer was arrested for publicly issuing death threats. After an investigation it was found that he sold rings worth a mere Rs. 15 for Rs. 5,000 as miracle rings to unsuspecting disciples.
The man, always dressed in saffron and wearing reams of beads like a traditional Hindu holy man, owns prime properties and even a small aircraft.
The incident prompted the state government to step in. Adhikary has for now urged the TV channels to stop airing programmes featuring godmen and astrologers.
“We are considering whatever legal measures there are to be taken. But we would like the channels to desist from airing such bogus programmes,” said Adhikary.
Officials say some programmes are ouright dangerous because these astrologers say discouraging things about prople's lives.
The government has warned that many of the godmen and oracles on TV ran the danger of being arrested because they were even prescribing “medicines and panacea” that had no scientific basis.
The astrologer community in the state has been rattled. While some are talking about a counter attack, others are blaming one another.
The government has warned that. it could even arrest those who assist in airing programmes of dubious godmen.
কলকাতা ২৪ মার্চ ২০০৫ বৃহস্পতিবার ১০ চৈত্র ১৪১১ ২.০০ টাকা দশপাতা সঙ্গে খেলার দুনিয়া
‘অভিযোগ জানান, ব্যবস্থা নেব’
স্টাফ রিপোর্টার : শহর ও শহরতলিতে ছড়িয়ে থাকা সততার মুখোশধারী ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাধারণ মানুষকেই সবচেয়ে বেশি করে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন কলকাতা পুলিশের ডিসি সদর রণবীর কুমার। জ্যোতিষীদের ভণ্ডামির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে পুলিশ। প্রয়োজন হলে অভিযোগকারীর নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁদের নাম ও পরিচয়ও গোপন রাখা হবে বলে ডিসি সদর পরিষ্কার জানান। ডিসি সদরের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান জ্ঞানবন্ত সিং জানান, নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর পেলেই আমরা প্রয়োজন মতো জাল জ্যোতিষীদের উপর সাদা পোশাকের গোয়েন্দা তদন্তও চালবে। তবে এর জন্য পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও একটা সামাজিক দায়িত্ব থাকে বলে পুলিশ কর্তারা মনে করেন। তাঁরা স্পষ্টই জানান, “কোথায় কোন জ্যোতিষী লোক ঠকানোর ব্যবসা ফেঁদেছে সেই খবর আমাদের কাছে পৌঁছে দিন। আমরা সেই ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।”
ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা কিছুদিন আগেই বিধানসভায় ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশ জারির পরেই জ্যোতিষীদের ভণ্ডামির বিষয়ে সতর্ক হয় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশ। সতর্ক হন রাজ্যের গোয়েন্দা কর্তারাও। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ডিসি-সদর রণবীর কুমার বুধবার জানান, “জ্যোতিষ চর্চার বিষয় পুরোপুরি মানুষের বিশ্বাসের উপর নিইয়ে করে। অন্ধ বিশ্বাসে মানুষ জ্যোতিষীদের কাছে ছোটেন। মানুষের এই সরল মানসিকতা ও বিশ্বাসকে দুর্বলতা জেনে অধিকাংশ ভণ্ড জ্যোতিষীই তাদের সঙ্গে প্রতারণা করে। এটা বড় ধরনের জালিয়াতি ও মারাত্মক অপরাধ। ধরা পড়লে ও দোষ প্রমাণিত হলে আদালতে ভণ্ড জ্যোতিষীদের সাজাও হতে পারে।” ডিসি-সদর রণবীর কুমার জানান, মানুষ এখনও জ্যোতিষের উপর নির্ভরশীল। তার উপর জ্যোতিষীদের পোষা লোকজনের ভয়ে অনেক মানুষ প্রতারিত হয়েও পুলিশের কাছে মুখ খুলতে চান না। এতে আমাদের কাজের সমস্যা হয়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে ধৃত জ্যোতিষীর বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিতে যেতে চান না অনেকেই। এর ফলে গ্রেফতার হলেও সাক্ষীর অভাবে জালিয়াত জ্যোতিষীরা আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। পুলিশি তদত্তও ব্যাহত হয়। তাই ডিসি সদরের আবেদন, শুধু পুলিশ নয়, ভাগ্য-ভণ্ডামি রুখতে সাধারণ মানুষ এগিয়ে আসুন।
কলকাতা ২৪ মার্চ ২০০৫ বৃহস্পতিবার ১০ চৈত্র ১৪১১ ২.০০ টাকা দশপাতা সঙ্গে খেলার দুনিয়া

ভাগ্য গণনা নিয়ে যেভাবে বিভিন্ন চ্যানেলে চ্যানেলে মিথ্যাচার চালাচ্ছেন এক শ্রেণির জ্যোতিষী তার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন জনপ্রতিনিধিসহ মুখ্যমন্ত্রীও। এই ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমগুলিও প্রতিবাদে সরব। রাজ্যের ছাত্র-যুবরাও দলমত নির্বিশেষে এই প্রশ্নে এক প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়িয়েছেন। পাশে রয়েছেন বিশিষ্ট মানুষজনও। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর পাঠকরাও প্রতিবাদে কলম ধরেছেন

ভণ্ডামি এবার বন্ধ হোক
আলোক, যা থেকে আলোর উৎস তা জ্যোতিষ্ক। মহাকাশে জ্যোতিপুঞ্জের অবস্থান, আকার গতি, পথ নিৰ্ণয় যে বিশেষ জ্ঞান তা জ্যোতির্বিজ্ঞান। বর্তমানে পদার্থ-বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত এবং বিদ্যালয়ে পাঠ্য। ‘জ্যোতিষ’ বেদেরই ষড়াঙ্গের অন্যতম। ‘বেদ’ শব্দটি বিদ্ ধাতুর উত্তর ‘ঘঙ’ প্রত্যয় যুক্ত করে করণ ও অধিকরণ কারকে নিষ্পন্ন হয়। বিদ্ ধাতুর অর্থ—বিদ — জ্ঞানে-বিচারণে সভায়াম-বিদহ-লাভে জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিচার, লাভ এবং সতার্থ। অতএব ‘বেদ’ জ্ঞান ও বিজ্ঞানে এবং তাহার অঙ্গ স্বরূপ জ্যোতিষ ও বিজ্ঞান। গ্রহ-নক্ষত্রাদির অবস্থান গতিপথ নির্ণয় বিজ্ঞানশাস্ত্র। ২। ফলিত জ্যোতিষ (Astrology) যাহা গ্রহ-নক্ষত্রাদির অবস্থান নির্ণয়পূর্বক মানুষের ভবিষ্যৎ শুভাশুভ বিচার বিদ্যা। এই বিজ্ঞানকে যে সব ভণ্ড জ্যোতিষী কলুষিত করছেন, মাজের বিভিন্ন মানুষকে বিভ্রান্ত করে লক্ষ লক্ষ টাকা প্রতারণা করছেন, সমাজকে শোষণ এবং পঙ্গু করছেন ওই সব ভণ্ড জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
চ্যানেলে মিথ্যাচার বন্ধ হোক
বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্রিকাগুলো থেকে আমরা ও আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অনেক কিছু শিক্ষালাভ করে থাকি। সেখানে এই চ্যানেলগুলোতে যদি ২৪ ঘণ্টাই ওইসব জোচ্চর, ভণ্ড জ্যোতিষীদের মিথ্যে বড় বড় বাণী বা অঙ্গভঙ্গি দেখতে হয়, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মানসিক দিক দিয়ে ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে চলবে। এই মিথ্যে স্তোক বা আশার উপর নির্ভর করে তারা জীবনের পথে কোথায় তলিয়ে যাবে সেটাই ভাবার। তাই একজন শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ হিসাবে আমার আবেদন এই মুহূর্ত থেকে এই চ্যানেলগুলোতে এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর প্রোগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হোক।
অবিবাহিত অথচ পুত্র অসুস্থ
বিভিন্ন কেবল চ্যানেলে জ্যোতিষীরা যেসব অনুষ্ঠান করছেন সেগুলোর বিপক্ষে আমি। অনলাইন লটারির বিজ্ঞাপনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে কোটিপতি হতে চেয়ে বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে আত্মহত্যাও করেছেন। এই বুজরুকিও অবিলম্বে বন্ধ করুন এটাই আমাদের অনুরোধ। জ্যোতিষ বিদ্যা অবশ্যই বিজ্ঞানসম্মত। কেব্ল চ্যানেলে যেটা হচ্ছে তা বিজ্ঞানসম্মত নয়। শুধুমাত্র একটা ফোন করলেই ভবিষ্যৎ বলে দিচ্ছেন যেসব ‘স্বঘোষিত’ জ্যোতিষী তাঁরা ভণ্ড, প্রতারক। প্রমাণ নিয়েছিলাম আমি নিজেই। আমাকে বলা হল সন্তানের শারীরিক অসুস্থতা, স্ত্রীর পথদুর্ঘটনার আশঙ্কা, অথচ আমি অবিবাহিত।
এরা তো রক্তচোষা পরজীবী!
প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা অসংখ্য চ্যানেলে কিছু কিম্ভূত বেশ-ভূষার শয়তান জ্যোতিষী, ফেংশুই, বাস্তু ইত্যাদি নিয়ে প্রতারণা করে চলেছে, এরা কারা? এরা রক্তচোষা পরজীবী। অসহায় মানুষের অনিশ্চিত ‘ভবিষ্যৎ ভয়’-কে (প্রতিটি ক্ষেত্রেই ‘ভয়টা’ এদেরই সৃষ্টি) গণ্য করে এক-একটা সংসারকে গ্রাস করে চলেছে। যদিও আমরা জানি আইন অনুযায়ী এই সব পেশা (স্মাগলিং, নারীপাচার, জ্যোতিষ, জালনোটের ব্যবসা), বেআইনি (বৃত্তিকর দেওয়া যায় না) তবুও এসব রমরমিয়ে চলছে, পার্থক্য শুধু এটুকুই অন্য পেশার লোকেরা মুখ লুকিয়ে চলে। আইনকে ভয় পায়। আর এরা প্রতারক হয়েও সমাজের সম্মানীয়, উঁচুমহলে মেলামেশা করে। প্রশাসনকে অনুরোধ, এই শয়তান ও তাদের সহযোগী প্রতারক, চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে আইনত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ছেলের উন্নতি হবে পাঁচ হাজারে
আমি এক জ্যোতিষী/তান্ত্রিকের কাছে আমার সন্তানের জন্য যাই। তিনি বলেছিলেন বছর তিনেকের মধ্যে আমার ছেলে এমন একটা উন্নত স্থানে যাবে যেটা আমি কল্পনা করতে পারব না। তবে একটা ফাঁড়া আছে যার প্রতিকার একটি যজ্ঞ। তার জন্য ৫৫০০ টাকা দিতে হবে। অবশ্যই একটা তাবিজের বিনিময়ে। স্বভাবাতই ছেলের মঙ্গল কামনার জন্য আমি সর্বসাকুল্যে ৪৫০ টাকা অগ্রিম দিই। সত্যি, সবটা মিথ্যা ভাঁওতা ছাড়া কিছুই নয়। কোনও ক্ষমতা যদি থাকত তা হলে চারদিকে বিপদগুলোকে বিনষ্ট করতেন। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ আমার চোখ খুলে দিল।
বাবাজিদের লালসার শিকার
এই ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানটি হতাশাগ্রস্ত মানুষকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সমস্যা জর্জরিত অসহায় মানুষেরা ওই সমস্ত স্ব-ঘোষিত বাবাজি-মাতাজিদের লালসার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জ্যোতিষ শাস্ত্রের কোনও বাস্তব ভিত্তি আছে বা নেই সেই বিতর্কে না গিয়ে বলা যায়, যাঁরা মনে করেন, জ্যোতিষ একটি শাস্ত্র এবং কোনও সৎ, নিষ্ঠাবান জ্যোতিষীর দ্বারা তাঁরা কোনওভাবে উপকৃত হয়েছেন তাঁদেরও সমস্ত প্রতিবাদী মানুষের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এই ধরনের ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত।
সে কী মিথ্যানন্দ গণৎকার!
ফলিত জ্যোতিষে বিশ্বাসী বা অলৌকিকতায় বিশ্বাসী দুর্বলমনের মানুষের সংখ্যা আজও এ দেশে অগণিত। আর এ সব দুর্বলমনের মানুষদের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে জ্যোতিষী তান্ত্রিক বাবাজি-মাতাজিরা তাদেরকে যথেচ্ছভাবে ঠকিয়ে চলেছে। এমনকী কেব্ল টিভি চ্যানেল ভাড়া করে পর্যন্ত কিছু চরমতম প্রতারক তাদের ঠগবাজি কারবার রমরমিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে। লোকটাকে দেখে হাসছ কেন?
হাততালি দিচ্ছ কেন পিছনে তার? লোকটা কে হে? সে কী মিথ্যানন্দ গণৎকার!
খেলা ভাঙার খেলা
অধিকাংশ বেসরকারি চ্যানেল জ্যোতিষীদের আখড়া চলছে চুটিয়ে জ্যোতিষী। কার সাধ্য দেবে বাগড়া। বুজরুকি, ভণ্ডামি, শঠতার পাহাড়, দেখেশুনে গা-জ্বলে বন্ধ করি আহার। অনেক হয়েছে আর নয়, এবার থামাতে হবে, এসেছে সময়। চটজলদি ভাগ্য নয় গণনা এক্কেবারে ভেক ভাঙতে হবে এদের শক্তপোক্ত ঠেক।
দেবাশিস চক্রবর্তী, গ্রিন পার্ক, বেহালা
THE TELEGRAPH
THURSDAY 31 MARCH 2005
TV healing alert
A STAFF REPORTER
Calcutta, March 30: Television programmes on astrology, Feng Shui and herbal remedy might soon be pulled off air, if the government has its way.
Health minister Surjya Kanta Mishra said: “We are seeking legal opinion to check whether these programmes, which might create confusion in the minds of people, can be stopped completely.” He added that the campaign against those claiming to heal people with medicines not recognised by the government will be stepped up. While the Cenre recognises only four branches of medicine-allopathy, ayurveda, unani and homoeopathy-the state has given its nod to acupuncture, naturopathy and yoga.
“We are evaluating the scenario every day and will definitely step up our campaign against illegal forms of treatment,” said C.R. Maiti, the director of medical education. Hydrotherapy, magnetotherapy and reiki are some forms of treatment that are not recognised by the state government.
THE TELEGRAPH
TUESDAY 5 April 2005
METRO
THE CITY DIARY
Cable channels bar astrology
Six major local cable channels joined hands on Monday to announce that they would stop airing astrology, Feng Shui and other “unscientific” programmes.
“We did not want to air these programmes but were forced to as they generate significant revenue,” admitted Abhijit Dasgupta, of the West Bengal Association for Better television Broadcast, an umbrella organisation of Bangla Ekhon, ATN, Taaza TV, Spandan, Sristi and Sonar Bangla.
Chief miniser Buddhadeb Bhattacharjee had recently expressed concern over the astrology programmes aired on local cable channels. He also announced that the law department would examine wheher the channels could be prosecuted.
According to the forum, multi-system operators (MSOs) are to be blamed, as they charge exorbitant rates-between Rs. 1 lakh and Rs. 4 lakh-as “carriage fee” for placing the channels on their networks.
“It is difficult for us to pay so much and we have written to the chief miniser for intervention. We are plan- ning to stop all such programmes Poila Boisakh onwards,” Dasgupta said.
The forum is also trying to negotiate with MSOs for uniform place ment rates for all cable channels.
বর্ষ ২৫ সংখ্যা ১১ মঙ্গলবার ২২ চৈত্র ১৪১১ বঙ্গাব্দ ৫ এপ্রিল ২০০৫ কলকাতা
মাশুল কমাতে মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থনা
বৈশাখ থেকে জ্যোতিষ বন্ধ ৬ কেব্ল-এ
আজকালের প্রতিবেদন : পয়লা বৈশাখ থেকে জনস্বার্থ বিরোধী অবৈজ্ঞানিক জ্যোতিষচর্চা, ফেংশুই, রেইকি জাতীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করবে ৬টি কেবল চ্যানেল বাংলা এখন, এ টি এন কলকাতা, সৃষ্টি, স্পন্দন, সোনার বাংলা ও তাজা টিভি। মাল্টি সার্ভিস অপারেটর (এম এস ও)-দের মাশুল বৃদ্ধির নিত্যনতুন দাবিতে তাঁরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন, জানালেন ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন ফর বেটার টেলিভিশন ব্রডকাস্ট-এর সভাপতি ও ‘বাংলা এখন’-এর কর্ণধার অভিজিৎ দাশগুপ্ত। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় তাঁরা পাশে চান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে, জানান অভিজিৎবাবু। মাশুল নির্ধারণের ক্ষেত্রে এম এস ও-রা স্বচ্ছ নীতি গ্রহণ করলে তাঁরা জনস্বার্থ বিরোধী অনুষ্ঠান বন্ধ করতে উদ্যোগী হবেন বলে জানান অভিজিৎবাবু। এম এস ও-রা সহযোগিতা না করলে মাশুল বৃদ্ধির চাপে কেব্ল চ্যানেলগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে বলে জানান তিনি। কন্ডিশনাল অ্যাকসেস সিস্টেম (ক্যাস) চালু হলে অবস্থার উন্নতি সম্ভব বলে জানান অভিজিৎবাবু। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সাহায্য প্রার্থনা করে দুটি চিঠি লেখা হয়েছে বলে জানানো হয় সংগঠনের পক্ষে। সোমবার বিকেলে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিজিৎ দাশগুপ্ত, তপন রায়, পান্নালাল দত্ত, আশিস চক্রবর্তী, অশোক আগরওয়াল ও বিপিন নায়ার।
চ্যানেলে বসে ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দিলে কড়া সরকারি ব্যবস্থা
টিভিতে কোনও জ্যোতিষী বসলেও ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবেন না। সমস্যা সমাধানের জন্য কোনও ব্যবস্থার বিধান দিতে পারবেন না। পাথর, মাদুলি, তাবিজ বা মন্ত্র-তন্ত্র চলবে না। ফেশুইং-এর নামে পুতুল-টুতুল দিয়ে ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দিতে পারবে না। এমনটি কেউ করছে অভিযোগ এলেই পুলিশ এই জ্যোতিষী ও চ্যানেল মালিককে গ্রেপ্তার করবে। পুলিশের তরফ থেকে এমন নির্দেশ জারি হওয়ার পর জ্যোতিষী ও তাদের চ্যানেলগুলো ছিল বাঘ, হুলো বিড়াল।
জ্যোতিষীদের যে গণ্ডাখানেক কেব্ল চ্যানেল টিমটিম করে চলছে, তাতে জ্যোতিষী আছে তো সমস্যা সমাধানের উপায় নেই। জ্যোতিষীরা প্যান-প্যান করে বলে চলেছে, বুধ সপ্তমে থাকলে অমুক হয়, মঙ্গল অষ্টমে থাকলে তমুক। আরে বাবা ও’সব জ্যোতিষশাস্ত্রের কচকচানি কে শুনতে চায়! অতএব দর্শক সংখ্যা ধু-ম্ করে তলানিতে নেমেছে জ্যোতিষীদের আয় পড়েছে। কেবল টিভির ভাড়া কমেছে। এমনকী পত্রিকার বিজ্ঞাপন রেট প্রায় অর্ধেক হয়েছে-শুধু জ্যোতিষীদের জন্য।
কেবল চ্যানেলে নাম ভাগ্য পাল্টাবার বিধান দেওয়া বন্ধ করতেই জ্যোতিষীদের ভাগ্যে নেমে এল বিপর্যয়। কোনও রত্ন, মাদুলি, মন্ত্রর সাধ্য হল না এই বিপর্যয় সামলানোর।
জ্যোতিষীদের বৃত্তিকর বাতিল করল যুক্তিবাদী সমিতি
সত্যানন্দের ভাণ্ডাফোড় করতেই কোণঠাসা সত্যানন্দ সাংবাদিকদের ডেকে জানালেন, তিনিই একমাত্র জ্যোতিষী যিনি নিয়মিত বৃত্তিকর দেন। বৃত্তিকর দিয়ে পাওয়া সার্টিফিকেট হাতে তুলে দেখালেন।
এতেই কাল হল। বিষয়টা জেনে জোগাড় করলাম বৃত্তিকর দিয়ে পাওয়া ‘সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট'-এর জেরক্স কপি। অর্থাৎ বৃত্তিকরের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সার্টিফিকেট-এর জেরক্স কপি।
১৯.১০.২০০৫ ডেপুটি কমিশনার, প্রফেশন ট্যাক্স অফিস, হেডকোয়ার্টার
কলকাতা-র ঠিকানায় একটি চিঠি দিলাম ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে। চিঠির বয়ানের বাংলা তর্জমা এখানে তুলে দিলাম—
প্রতি
|
১৯.১০.২০০৫
|
প্রিয় মহাশয়,
আমরা যতটুকু জানি, বৃত্তিকর যারা দিতে পারবেন তাঁদের তালিকায়, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, তান্ত্রিক ইত্যাদি পেশার নাম নেই। আমরা এই দেখে বিস্মিত যে আপনার ডিপার্টমেন্ট আচার্য সত্যানন্দর কাছ থেকে বৃত্তিকর নিয়েছে এবং তাঁকে বৃত্তিকরে নাম অন্তর্ভুক্তির একটি সার্টিফিকেট দিয়েছে। সত্যানন্দের জ্যোতিষী হিসেবে বে-আইনি পেশা চালাবার ঠিকানা ৮৬/১/৯ টাকি রোড, নর্থ কাজিপাড়া, বারাসাত, ২৪ পরগনা (উত্তর)। সার্টিফিকেটটি ইস্যু করা হয়েছিল ৮ মার্চ ২০০৫ সালে। ইস্যু করেছিলেন প্রফেশন ট্যাক্স অফিসার নবীনকৃষ্ণ সাহা, WBCU-V, বারাসাত, ২৪ পরগনা (উত্তর)।
আমি এই চিঠির সঙ্গে সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্ট-এর একটি প্রতিলিপি পাঠালাম।
আপনার কাছে অনুরোধ, যত দ্রুত সম্ভব এই বে-আইনি ভাবে ইস্যু করা সার্টিফিকেট অফ এনরোলমেন্টটি বাতিল করুন।
প্রবীর ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক
মেমো নং ১৩০৫ পিটি
|
তারিখ : ২৫ নভেম্বর ২০০৫
|
প্রতি
শ্রীপ্রবীর ঘোষ
সাধারণ সম্পাদক
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি
৩৩ এ, ক্রীক রো, কলকাতা-৭০০০১৪
বিষয়: আচার্য সত্যানন্দকে দেওয়া এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট
রেফারেন্স: আপনার ১৯.১০.২০০৫ এর দেওয়া চিঠি।
প্রিয় মহাশয়,
উপরে উল্লেখ করা আপনার চিঠির উত্তরে আমি জানাচ্ছি ওই এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট ভুল করে ৮ মার্চ ২০০৫-এ ইস্যু করা হয়েছিল। অধিকারী প্রফেশন ট্যাক্স অফিসার ৩১ অক্টোবর ২০০৫ একটি আদেশ বলে ওই এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট বাতিল করেছেন।
আপনার আস্থাভাজন
সুগত ভট্টাচার্য
ডেপুটি কমিশনার
প্রফেশন ট্যাক্স, হেড কোয়ার্টার
GOVERNMENT OF WEST BENGAL
DIRECTORATE OF COMMERCIAL & PROFESSION TAX,
14. Beliaghata Road, Kolkata - 15.
Memo No. 1305 PT |
Dated, 25th November, 2005.
|
From:
Shri Sugata Bhattacharyya,
Deputy Commissioner,
Profession Tax (Hqr.)
To
Shri Prabir Ghosh
General Secretary
Bharatiya Bigyan O Yukubadi Samiti
33A Creek Row, Kolkata-700014
Sub; Issue of Enrolment Certificate to Acharya Satyananda. Ref. Your letter dated 19.10.2005
Dear Sir,
In response to your letter referred to above, I would like to state that the aforesaid Enrolment Certificate, which was erroneously issued on 8th March, 2005 has been cancelled by the appropriate Profession Tax Officer by an order dated 31st October, 2005.