অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/অধ্যায়: বারো
অধ্যায় : বারো
জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল বেতার অনুষ্ঠানে
১৯৮৫-র ১৮ জুলাই তামাম পৃথিবীর জ্যোতিষীদের কাছে ‘কালা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। এই দিন রাত ৮ থেকে ৮-৩০ পর্যন্ত আকাশবাণী কলকাতা ‘ক’ কেন্দ্র থেকে একটি অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। শিরোনাম : ‘জ্যোতিষ নিয়ে দুচার কথা।’ অনুষ্ঠানটি শুনে এই বিষয়ে মতামত জানানোর জন্য পশ্চিমবাংলার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চিঠি পাঠান আকাশবাণীর বিজ্ঞান বিভাগের প্রযোজক। চিঠিতে অবশ্য অনুষ্ঠানটিকে ‘জ্যোতিষ বনাম বিজ্ঞান’ নামে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তখন টভিতে এত চ্যানেল আসেনি। রেডিওরই রমরমা।
অনুষ্ঠানে জ্যোতিষী বা ভাগ্য গণনাকারীদের পক্ষে অংশ নিয়েছিলেন জ্যোতিষসম্রাট ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী, ভৃগু আচার্য ওরফে শুকদেব গোস্বামী, ‘এ যুগের খনা’ নামে খ্যাত পারমিতা এবং পাগলাবাবা (বারাণসী)। বিজ্ঞানের পক্ষে বা জ্যোতিষীদের বিপক্ষে ছিলাম আমি একা। তিনজন জ্যোতিষী আকাশবাণীর আমন্ত্রণে সাড়া দেননি। তাঁরা হলেন, মানবী কম্পিউটার শকুন্তলা দেবী, মেটাল ট্যাবলেটখ্যাত অমৃতলাল এবং আচার্য গৌরাঙ্গ ভারতী।
আলোচনাটিকে দুটি অংশে ভাগ করা যায়। এক অংশে ছিল জ্যোতিষশাস্ত্র ‘বিজ্ঞান, কি বিজ্ঞান নয়’—এই নিয়ে বিতর্ক। দ্বিতীয় অংশে ছিল আমার পরিচিত কয়েকজনের হাত ও ছক দেখে সাধারণ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া। যেমন—তাদের আয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিবাহ, কী ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত ইত্যাদি।
রেকর্ডিং-এর মাসখানেক আগে শুকদেব গোস্বামীকে আমার এবং আমার দুই বন্ধুর হাত দেখিয়েছিলাম। অসিতকুমার চক্রবর্তী ও পারমিতাকে দিয়েছিলাম আমার চার বন্ধুর জন্ম সময়। এই দুই জ্যোতিষীও গণনার সময় পেয়েছিলেন মাসখানেক। প্রতি জাতক পিছু অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে প্রশ্ন ছিল চারটি করে। প্রশ্নগুলো রাখার সময় জ্যোতিষীদের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছিলাম। যে সব প্রশ্নের ক্ষেত্রে জ্যোতিষীরা সামান্যতম অসুবিধের কথা বলেছেন, সে সব প্রশ্ন আমি তৎক্ষণাৎ বাতিল করেছি।
অনুষ্ঠানটির রেকর্ডিং করা হয়, প্রচারিত হবার বেশ কিছুদিন আগে। প্রচারিত অনুষ্ঠানটি জনমানসে এত বিপুলভাবে নাড়া দিয়েছিল যে, বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে দীর্ঘ আলোচনা, চিঠি-পত্র এমন কী সম্পাদকীয় পর্যন্ত। বেতার অনুষ্ঠানটির প্রায় পুরোটাই বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্রপত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে। কৃষ্টি সংসদ (সোনারপুর) তাঁদের নাটক ‘ভাগো ভূত ভগবান’এ বেতার অনুষ্ঠানটিকে নিয়ে এসেছে। এই বেতার অনুষ্ঠানের পর জ্যোতিষসম্রাট ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী একটি বই লিখেছেন। নাম ‘জ্যোতিষবিজ্ঞান-কথা’। বইটি মূলত আমাকে আক্রমণ করেই লেখা। বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছেন, যে রাতে আকাশবাণী বেতার অনুষ্ঠানটি প্রচার করেছিলেন, ‘জ্বালা প্রশমনের জন্য সে রাতেই দেবতা এগিয়ে দিল লেখনী।’
হায় জ্যোতিষসম্রাট প্রমুখ অংশগ্রহণকারী অন্য জ্যোতিষীরা, আপনারা এত লোকের ভাগ্য বলে দেন, ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দেন, অথচ আপনাদের চূড়ান্ত অপমানের আগাম খবরটাই আপনারা জানতেন না?
আসুন, আপনাদের সঙ্গে পরিচয় ঘটিয়ে দিই সে দিনের সেই প্রচারিত বেতার অনুষ্ঠানটির।
অনুষ্ঠানটি শ্রোতাদের দাবিতে একাধিবার প্রচারিত হয়েছে। এখানে ১৮ জুলাই ১৯৮৫-তে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি তুলে দিলাম।
প্রথম পর্যায়
আমি : আপনাদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি শুকদেব গোস্বামীর, যিনি ভৃগু-আচার্য নামেও খ্যাত। শুকদেবের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময় রাশিফল বিচারকের কাজ করেছেন। শুকদেববাবু, আপনি নিশ্চয়ই একজন জ্যোতিষী হিসেবে বিশ্বাস করেন যে, গ্রহদের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে রয়েছে। তবে কেন, আপনার পেশেন্টদের আপনি স্টোন পরতে প্রেসক্রাইব করেন?
শুকদেব : ভাগ্য অবশ্যই পূর্বনির্ধারিত। সেই কারণেই গণনা করে ভাগ্য জানা যায়। তবে আর্য ঋষিগণ যাঁরা জ্যোতিষশাস্ত্র প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা কতকগুলো গ্রহের সঙ্গে কতকগুলো রত্নের গভীর সম্বন্ধ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। প্রত্যেক গ্রহের এক একটি বর্ণ রয়েছে, এবং সেই বর্ণ বিশিষ্ট রত্নের প্রতি সেই গ্রহের আকর্ষণ থাকায় সেই রত্ন ওই গ্রহের প্রিয় রত্ন বলে বলেছেন।
যিনি গাড়ি চাপা দেবেন, তিনি আপনাদের সাহায্য নিলেন, নির্ধারিত ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। আপনারা তাঁকে এক বা একাধিক গ্রহরত্ন ধারণ করতে বললেন। লোকটি ধারণ করল এবং পূর্ব-নির্ধারিত দুর্ঘটনা ঘটল না।
ফলে যাঁর গাড়ি চাপা পড়ে মারা যাওয়ার কথা ছিল, কোনও গ্রহরত্ন ধারণ না করেও তাঁর মৃত্যু ঘটল না। এই ঘটনার দরুন যেসব ডাক্তার ও নার্সদের কর্মব্যস্ত থাকার কথা ছিল, তাঁদের সেই বাড়তি কর্মব্যস্ত থাকতে হল না। যে ওষুধের দোকানের ভাগ্যে এই দুর্ঘটনার জন্য বাড়তি ওষুধ বিক্রির বিষয়টা আগে থেকেই ঠিক করা ছিল, তা হল না। রোগী দেখার দৌড়াদৌড়ির জন্য আত্মীয়-বন্ধুরা ট্যাক্সির পেছনে যে খরচ করতেন, তা ট্যাক্সি-ড্রাইভারদের পকেটে গেল না। স্ত্রী বিধবা হলেন না। সন্তানরা অনাথ হল না। ছেলে-মেয়েদের যিনি পড়াতেন, সেই প্রাইভেট টিউটর টিউশনি হারালেন না। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, কোনও গ্রহরত্ন ধারণ না করা সত্ত্বেও এতগুলো লোকের জীবনের ঠিক হয়ে থাকা ঘটনাগুলো ওলট-পালট হয়ে গেল।
এবার ধরুন, দুর্ঘটনায় যাঁর মৃত্যুযোগ ছিল, তাঁর ভাগ্য বিচার করলে কোনও জ্যোতিষী নিশ্চয়ই বলতেন, অমুক সময় তাঁর মৃত্যুযোগ। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা যেত তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে।
আমাদের সামাজিক জীবনে আমরা পরস্পরের সঙ্গে এত বেশি যুক্ত যে, একজনের পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলে আরও বহুজনের জীবনের পূর্ব নির্ধারিত ঘটনাগুলো পাল্টে যাবে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে আগে থেকে ঠিক হয়ে থাকা ঘটনাগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হবে।
আপনারা, জ্যোতিষীরা অনবরত প্রতিকারের মাধ্যমে যদি জাতকদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে থাকেন, তবে কী করে আপনারা বলবেন যে, ভাগ্য পূর্ব-নির্ধারিত?
শুকদেব : এখন পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্যকে কিছুতেই খণ্ডন করা যায় না; এ কথা আমরা শাস্ত্রকারগণদের মুখে বারংবার শুনেছি। শাস্ত্রকারগণ যা বলেছেন, তা অভ্রান্ত সত্য। পূর্ব-নির্ধারিত কথা প্রসঙ্গে এ কথাই আমি বলব—গ্রহাদির রত্ন ধারণ করে অনেক ক্ষেত্রে অনেকে উপকৃত হয়েছেন। আর্য মুণি-ঋষিগণ ধ্যান বলে, যোগ বলে জানতে পেরেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার করা যায়। এবং সেই প্রতিকার হিসেবে তাঁরা মণি বা রত্ন ধারণের কথা উল্লেখ করেছেন।
আমি : কিছু কিছু ক্ষেত্রে পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্য পাল্টে দেবার অর্থই হল পৃথিবী জুড়ে পূর্ব-নির্ধারিত ভাগ্যের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দেওয়া।
আপনি কি মনে করেন যে পুরুষকার দ্বারা মানুষ তাঁর ভাগ্য পরিবর্তন
করতে পারে?
শুকদেব : এবার প্রশ্নটা অতি চমৎকার। বৈদান্তিকগণ যাঁরা, তাঁরা পুরুষকারের প্রতি ভীষণ বিশ্বাসী। বশিষ্ঠ মুনি রামচন্দ্রকে পুরুষকারের কথাই বারংবার বলেছিলেন, “হে রামচন্দ্র, যে পুরুষকারকে মানে, সে সব গ্রহ-নক্ষত্রকে অতিক্রম করে যেতে পারে। তবে সাধারণ মানুষের পক্ষে পুরুষকার অনেক ক্ষেত্রে সুলভ হয় না বলেই দৈবকে আশ্রয় করে চলে।
আমি : তবে আপনি একটা কথা বললেন, পুরুষকার দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করা, অর্থাৎ কোনও গ্রহের প্রভাবকে অতিক্রম করা যায়। রত্ন ও পুরুষকারকে মেনে নিয়ে তো আপনারা জ্যোতিষশাস্ত্রেরই মূল কথা ‘ভাগ্য অপরিবর্তনীয়’—এই বক্তব্যেরই বিরোধিতা করছেন।
শুকদেব : নীরব।
আমি : আজকের এই আকর্ষণীয় আলোচনাচক্রে উপস্থিত হয়েছেন অসিতকুমার চক্রবর্তী। শ্রী চক্রবর্তীর দেওয়া আত্মপরিচয়লিপি থেকে জানতে পারছি ইনি জ্যোতিষশাস্ত্রের জন্য ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ডক্টরেট। অসিতবাবু, বাংলাদেশে এককালে আমরা অষ্টোত্তরী দশা বিচার করতাম, অর্থাৎ জ্যোতিষীরা করতেন। বর্তমান ভারতে বিংশোত্তরী দশা বিচার প্রচলিত। দুটো পদ্ধতিতে কিন্তু ভাগ্যফল ভিন্নতর। অথচ আগে বহু লোক জ্যোতিষশাস্ত্রকে অভ্রান্ত এবং বিজ্ঞানসম্মত মনে করতেন। এখনও বহুলোক তাই মনে করেন। অতএব দেখতে পাচ্ছি জ্যোতিষশাস্ত্র একটা বিশ্বাসের ব্যাপার; তাই নয় কি?
অসিত : কিছু লোকের জ্যোতিষশাস্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা বা অবিশ্বাস আছে ঠিকই। কিন্তু তাঁদের যদি প্রশ্ন করা যায়, তাঁরা কি যথেষ্ট পরিমাণে এই শাস্ত্র চর্চা করার পর এই ধরনের মনভাব পোষণ করেন? আবার অগণিত বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ, যাঁদের এই শাস্ত্রে আস্থা আছে; তাঁরা দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বা অনুশীলনের দ্বারা এর সত্যতার প্রমাণ পেয়েছেন।
আমি : ধাতু বা রত্নের দ্বারা কি শারীরিক বা মানসিকভাবে প্রতিকার সম্ভব বলে আপনার ধারণা?

জ্যোতিষ সম্রাট
ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী
অসিত : রত্নের দ্বারা প্রতিকার সম্ভব। তার কারণ হিসেবে আমরা বলতে পারি যে, রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করার অপেক্ষা রোগ প্রতিরোধ করার প্রয়োজনেই প্রাচীন ঋষিরা দিয়েছেন রত্ন ধারণের নির্দেশ।
আমি : আচ্ছা, আপনারা কি কখনও একটা সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে দেখেছেন যে, পাথর পরার পর কতগুলো রোগ সেরেছে? কতকগুলো সারেনি?
অসিত : এটা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলা যায় যে, রত্নের দ্বারা উপকার পাওয়া সম্ভব।
আমি : সম্ভব। আবার সম্ভব নাও হতে পারে। এটা কোনও পরীক্ষার কথা নয়, গবেষণার কথা নয়, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তাহলে এল কোথা থেকে? পাথরের সেখানেই কাজ করতে পারার সম্ভাবনা আছে, যেখানে রোগটা মানসিকভাবে এসেছে।
আমি : এখন আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি পারমিতার সঙ্গে। পারমিতার আসল নাম, শুভ্রা গঙ্গোপাধ্যায়।
আচ্ছা পারমিতাদেবী, এটা নিশ্চয়ই আপনি স্বীকার করবেন জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্র এক নয়?
পারমিতা : জ্যোতিষশাস্ত্র আর?
আমি : এবং জোতির্বিদ্যা; দুটো কি এক?
পারমিতা : না।
আমি : যদিও অনেকেই দুটো বিষয়কে একেবারে গুলিয়ে ফেলেন। আর তার ফলেই তাঁরা যুক্তি দেখান—অনেক সময় জ্যোতিষীরা ক্যালকুলেশনে ভুল করতেই পারেন। কিন্তু গ্রহ-নক্ষত্রকে লে অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ দেখুন; জোতির্বিজ্ঞানের বিষয় গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান, দূরত্ব, গতিপথ ইত্যাদি নিরূপণ করা। আর জ্যোতিষশাস্ত্রের বিষয় মানবদে গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব নিরূপণ করা। দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়?
পারমিতা : হ্যাঁ।
পারমিতা : জ্যোতিষশাস্ত্র যে বিজ্ঞান এ নিয়ে অনেকের অনেক রকম মত আছে। তবে আমার মতে জ্যোতিষশাস্ত্র পুরোপুরি বিজ্ঞানসন্মত।
আমি : এ-ব্যাপারে আপনি আর কিছু বলবেন?
পারমিতা : নীরব।
আমি : আচ্ছা, আমি একটা তবে অন্য প্রশ্নে যাই, যদি আর কিছু না বলেন। আপনার কি মনে হয়, ভূপালের গ্যাস দুর্ঘটনায় নিহতদের সকলেরই জন্ম ছকে একই সময়ে মৃতযোগ ছিল?
পারমিতা : এটা তো ধরুন আপনার, স্টেটেরও একটা ক্যালকুলেশন থাকে না?
আমি : আচ্ছা, স্টেট ক্যালকুলেশন মানে কী? রাজ্যের ক্যালকুশেন তো? স্টেট ক্যালকুলেশনে যাই হোক, আমার ভাগ্যে যদি থাকে আমার মৃত্যুটা ওই সময় হবে না, তাহলেও স্টেটের ক্যালকুলেশনে থাকলেই কি এতগুলো লোকের মৃত্যু হয়ে যাবে?
পারমিতা : না।
আমি : তবে কার মৃত্যুযোগটা ঠিক হবে? স্টেট ক্যালকুলেশন অনুসারে আমাদের মৃত্যুযোগ ঠিক হয়? না, মানুষের জন্মছকে যে গ্রহ সন্নিবেশ আছে, তার দ্বারাই মৃত্যুযোগ নির্ধারিত হবে?
পারমিতা : জাতকের গ্রহ সন্নিবেশ তো অবশ্যই দেখতে হবে। কিন্তু সে স্টেটে দুর্ঘটনাজনিত যেটা হয়েছে সেটাও তো একটা দেখতে হবে, সেই সময় সেই স্থানে কী ধরনের গ্রহ সমাবেশ ছিল, যার জন্য এই দুর্ঘটনা হল।
আমি : আপনারা কি স্টেট ক্যালকুলেশন করে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারতেন না তাহলে, যে, “এই সময় কেউ ভূপালে থেকো না, সবাই ভূপাল ছেড়ে চলে যাও। তাহলে মৃত্যুযোগটা অ্যাভয়েড করা যায়।” আপনারা যখন স্টেট ক্যালকুলেশন করে এটা দেখেছিলেন, তখন এটা জনসাধারণকে জানানো নিশ্চয়ই আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব ছিল?
পারমিতা : দেখুন, এ সম্পর্কে ফোরকাস্ট তো আগেই করা হয়েছিল।
আমি : এই ভূপাল সম্বন্ধে?
পারমিতা : ‘ভূপাল’ পার্টিকুলার সম্পর্কে নয়। তবে এই ধরনের একটা দুর্ঘটনাজনিত কিছু হবে....
আমি : পাঁজি দেখলে প্রতি বছরই দেখতে পাবেন এই ধরনের দুর্ঘটনা, খরা, বন্য ইত্যাদির কথা লেখা থাকে। ভারতবর্ষ তো বিরাট দেশ। সারা বছরে বেশ কিছু দুর্ঘটনা হবেই। নির্দিষ্টভাবে কোন্ টাউনে দুর্ঘটনা ঘটবে না জানালে এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী অর্থহীন। কারণ এতবড় দেশে অনেক দুর্ঘটনা ঘটবেই। নির্দিষ্টভাবে আপনি বলতে পারেন না যে, ভূপাল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল।
পারমিতা : হ্যাঁ।
আমি : আচ্ছা, আপনার কি অন্য জ্যোতিষীদের মতো মনে হয়, মানুষের ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত? গ্রহের প্রভাবে মানুষের ভাগ্য আগে থেকেই নির্ধারিত হয়ে রয়েছে?
পারমিতা : হ্যাঁ।
আমি : মানুষের ভাগ্য যদি পূর্ব-নির্ধারিত হয়েই থাকে তাহলে আপনারা আপনাদের পেসেন্টদের স্টোন প্রেসক্রাইব করেন কেন?
পারমিতা : সূর্যগ্রহের বিকিরিত রশ্মি ছাড়া জীব-জগতের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। সূর্যরশ্মি ও অন্যান্য সব গ্রহের রশ্মি সব সময় দেহকোষ দ্বারা মানুষের দেহে সঞ্চারিত হয়ে ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে শুভাশুভ কাজ করে। দেহের স্নায়ুর দ্বারা বুদ্ধি ও জ্ঞানের বিকাশ এবং সব কাজই সম্পাদিত হয়ে থাকে। রত্নের বিকিরিত রশ্মি দেহকোষের মধ্যে দিয়ে ব্রেনের মধ্যে সঞ্চালিত হয়ে শুভাশুভ ভাবকে উন্মোচিত করে। গ্রহের অশুভ প্রতিক্রিয়াকে শুভমুখী করাই রত্নের কাজ।
আমি : ব্যাপারটা বুঝলাম না। ‘নির্ধারিত' কথার অর্থ—যা কিছুতেই পাল্টানো যাবে না। রত্ন তাহলে নির্ধারিত ভাগ্য পাল্টাবে কী করে? আর একটা কথা আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনি যে বলেন, রত্নের দ্বারা রোগ সারানো সম্ভব; আচ্ছা, এ রকম কি আপনারা কখনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে দেখেছেন?
পারমিতা : এইগুলো পরীক্ষা না করলেও স্টোন দেবার পরে যে অনেকের কাজ হয়, এটা কিন্তু দেখা গেছে।
আমি : প্রথম প্রশ্নটির উত্তর এড়ালেন। কারণ এর উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরও অত্যন্ত ‘গোলাগোলা’। অনেকের কাজ হয় মানে অনেকেরই কাজ হয় না। ‘দেখা গেছে’ কথাটা বললেন—কে বা কারা দেখেছেন? কোনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা করে কি কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দেখেছেন যে, এতজনকে এই স্টোন এই রোগে দিলাম, এবং দেখলাম তাতে এতজনের রোগ সেরেছে। অতএব এই স্টোনটা এই রোগের জন্য দেওয়া যেতে পারে। এই ধরনের কোনও সমীক্ষাভিত্তিক গবেষণা কি হয়েছে?
পারমিতা : ঠিক সেই রকমভাবে হয়নি।
আমি : আচ্ছা শুকদেববাবু, আমি কয়েকদিন আগে আপনার কাছে গিয়েছিলাম, আমার দুই পরিচিতকে নিয়ে। তাঁদের দু'জনের আর আমার হাত আপনাকে দেখিয়েছিলাম। তাঁদের মধ্যে একজন দীপক ভট্টাচার্য, একজন তপন চৌধুরী, আর একজন তো আমি নিজে। এঁদের প্রত্যেকের সন্বন্ধে চারটে করে প্রশ্ন রেখেছিলাম। এখন সেগুলোকে নিয়ে আমরা বরং আলোচনা করি। দীপকবাবুর মা-বাবা দু’জনেই কি বেঁচে আছেন?
শুকদেব : আমার বিচার-বিবেচনায় তাঁর পিতা মৃত বুঝায়।
আমি : লেখাপড়াতে দীপকবাবু কেমন ছাত্র ছিলেন?
শুকদেব : মোটামুটি ভালই ছিলেন। সাধারণত ডিগ্রি হিসাবে মাস্টার ডিগ্রির কাছাকাছি বলে হাতের রেখায় দেখা যায়।


পি. সি. চন্দ্ৰ
জুয়েলার্স
শোরুম : বৌবাজার • গড়িয়াহাট • চৌরঙ্গী
জ্যোতিষসম্রাট শ্রীশুকদেব গোস্বামী
|
চৌরঙ্গী শোরুমে |
আমি : ভাল ছিলেন বলতে কী ধরনের ভাল? ফার্স্ট ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশনে যাওয়ার মতো? ঠিক কী ধরনের ভাল?
শুকদেব : না, যেমন ধরুন অতি ভাল নয়, এই মিডিয়াম যাকে বলে।
আমি : অতি ভাল নয়, মাঝামাঝি যাকে বলে?
শুকদেব : হ্যাঁ।
আমি : এর জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা কী বলে আপনার মনে হয়েছে?
শুকদেব : দেখুন, প্রশ্নটা কঠিন থাকলেও আমি বলতে বাধ্য, মানুষের জীবন অনেক ঘটনাবহুল। এই ঘটনাবহুল জীবনে কোনটা দুঃখময় ঘটনা এটা বলা জ্যোতিষশাস্ত্রে শুধু নয়, এমন কী আধ্যাত্মিকশাস্ত্রেও বলা কঠিন।
আমি : আচ্ছা। আমি চতুর্থ প্রশ্নে যাচ্ছি, বর্তমানে ওর মোট আয় কত বলে আপনার মনে হল?
শুকদেব : নিয়ারলি প্রায় বরুন দু’হাজার থেকে আড়াই হাজারের মতো।
আমি : এখানে উপস্থিত রয়েছেন দীপক ভট্টাচার্য। দীপকবাবু বয়সে তরুণ। কাজ করেন স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার ১০ নম্বর ক্যামাক স্ট্রিট কলকাতা, ডেপুটি চিফ মার্কেটিং ম্যানেজার পদে।
দীপক, আপনি বলুন তো আপনার মা-বাবা দু’জনেই বেচে আছেন?
দীপক : হ্যাঁ, দুজনেই বেঁচে আছেন।
আমি : আপনি কি লেখাপড়ায় মোটামুটি পর্যায়ের ছাত্র ছিলেন?
দীপক : না, ভাই ছিলাম।
আমি : ভাল মনে কী ধরনের? আমি শুনেছি আপনি ইউনিভার্সিটিতে স্ট্যান্ড করা ছেলে ছিলেন।
দীপক : হ্যাঁ।
আমি : আপনার জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটা কী?
দীপক : আমি ১৯৯৭ সালে এক দুর্ঘটনায় পড়ে বি.এস-সি. পার্ট ওয়ানের পরীক্ষায় বসতে পারিনি। এটাই আমার সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা।
আমি : বর্তমানে আপনার মোট আয় কত?
দীপক : প্রায় হাজার চারেক টাকা।
আমি : এবার তপন চৌধুরীর সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন রাখছি। তপন চৌধুরীর হাত তো আপনি আগেই দেখে নিয়েছেন। বর্তমানে ও কোথায় কাজ করে? মানে, ওর পেশা কী ধরনের জায়গাতে হতে পারে?
শুকদেব : এই পরিচালনামূলক কাজ করেন, ফ্যাকট্রিতে; ওভারসিয়ার যাকে বলি আর কী।
আমি : তপনবাবু বিয়ে করেছেন। বিয়েটা কি সম্বন্ধ করে, না প্রেম করে বলে আপনার ধারণা?
শুকদেব : দেখুন, সম্বন্ধ করেই করেছেন। কিন্তু মেয়েটি পূর্বপরিচিতই, আমরা বলব।
আমি : লেখাপড়া কতদূর হয়েছে?
শুকদেব : উচ্চ ডিগ্রিতে বিঘ্ন হবে। যেমন আই.এ. পাশ বি.এ পাশ বা বি.কম. পাশ করল, কিন্তু হাতের চেহারাটা কিন্তু প্র্যাকটিক্যাল। তাই কর্মটাকে প্রাকটিক্যালই করতে হবে।
আমি : শেষ প্রশ্ন, বর্তমানে তপনবাবুর আয় কেমন?
শুকদেব : দেড় হাজার থেকে দু’হাজার টাকা।
আমি : তপনবাবু, আপনাকে প্রশ্ন করার আগে আপনার সম্বন্ধে বলে নিই। তপনবাবু বয়সে তরুণ। কাজ করেন স্টেট ব্যাঙ্কের গো ব্রাঞ্চে অফিসার পদে। সুতরাং শুকদেববাবুর প্রথম উত্তর ফ্যাটারিতে কাজ করার ব্যাপারটা মেলেনি।
তপন, আপনার বিয়ে কি সামাজিক প্রথা মত হয়েছিল?
তপন : না।
আমি : আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা কী?
তপন : বি.কম।
আমি : বর্তমানে আপনার মোট আর কেমন?
তপন : তিন হাজার।
আমি : আমার শেষ প্রশ্ন যার সম্পর্কে রাখছি, সে আমি স্বয়ং। আমি কত বছর বয়সে বিয়ে করেছি বলে আপনি দেখলেন।
শুকদেব : হাতের রেখাতে আঠাশ থেকে তিরিশের মধ্যে বিয়ে করেছেন বোঝায়।
আমি : আমার মা-বাবা দু’জনেই কি জীবিত আছেন?
শুকদেব : পিতা মৃত। মা জীবিত।
আমি : কত বছর আগে মারা গেছেন?
শুকদেব : প্রায় আট থেকে দশ বছর আগে।
আমি : কবে থেকে আমার চাকরি জীবন শুরু হয়েছে?
শুকদেব : পঁচিশ থেকে সাতাশ বছরের মধ্যে।
আমি : আমার নিজের বাড়ি আছে কি?
শুকদেব : হ্যাঁ, নির্ঘাৎ আছে। এটা হাত থেকেই বোঝা যায়।
আমার বিষয়ে জানাই—আমি বিয়ে করেছি চব্বিশ বছর বয়সে। মা-বাবা দু’জনে জীবিত। চাকরি করেছি একুশ বছর বয়স থেকে। আমার নিজের বাড়ি কেন, এক টুকরো জমিও নেই।
জ্যোতিষসম্রাট তৃণ্ড-আচার্য ওরফে শুকদেব গোস্বামীকে জাতক পিছু চারটি করে প্রশ্ন অর্থাৎ মোট ৩×৪ = ১২টি প্রশ্ন করেছিলাম। জাতকদের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে ১১টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন পুরোপুরি ভুল। তপন চৌধুরীর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নটির ক্ষেত্রে তিনটি উত্তর দিয়েছিলেন। তার মধ্যে একটি ঠিক হয়েছিল। অর্থাৎ ১২টি প্রশ্নের মধ্যে ১১২⁄৩টির উত্তরই তিনি ভুল দিয়েছিলেন।
চারজনের জন্ম সময় অনুষ্ঠান রেকর্ডিং-এর কিছুদিন আগেই দিয়ে এসেছিলাম জ্যোতিষসম্রাট ড: অসিতকুমার চক্রবর্তী এবং ‘এ-যুগের খনা' পারমিতাকে।
ওই চারজন জাতক পিছু চারটি করে প্রশ্ন, অর্থাৎ ৪×৪=১৬টি মোট প্রশ্ন করেছিলাম। এবার আবার আপনাদের প্রচারিত বেতার অনুষ্ঠানে নিয়ে যাচ্ছি।
তৃতীয় পর্যায়
আমি : কলকাতার চারজন মানুষের জন্ম সময় এবং কিছু প্রশ্ন আগে থেকেই দেওয়া হয়েছিল জ্যোতিষী অসিতকুমার চক্রবর্তী এবং পারমিতাকে। অসিতবাবু, আপনাকে চারজন জাতকের জন্ম সময় এবং জন্মস্থান জানিয়েছিলাম। এঁদের সম্বন্ধে চারটি করে প্রশ্ন রেখেছিলাম। উত্তরগুলো তো আপনি নিয়ে এসেছেন দেখছি।
প্রথম জাতকের জন্ম সময় ১৯৫৩ সালের ১৩ জুন, সকাল ৫টা ৫৩ মিনিটে কলকাতায়। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, জাতক জীবিত? না
মৃত?
অসিত : জন্মসময়ে গ্রহদের অবস্থান দেখে মনে হয় এর মৃত হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি।
আমি : দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, লেখাপড়ায় কেমন ছিলেন?
অসিত : স্নাতকমান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আমি : মোটামুটি? না ভাল?
অসিত : মোটামুটি, একেবারেই মোটামুটি।
আমি : কর্মজীবন কেমন ছিল?
অসিত : কর্মজীবন ভাল বা স্থায়ী ছিল না।
আমি : বিয়ে করেছিলেন কি?
অসিত : বিয়ে সম্ভবত হয়নি। কিন্তু ১৯৮৪ সনে যোগ ছিল।
আমি : পারমিতাদেবী, প্রথম জাতকের জন্ম সময় তো আপনাকে ওটাই দিয়েছি। অর্থাৎ ১৩/৬/১৯৫৩ সালের সকাল ৫টা ৫৩ মিনিটে কলকাতায়৷
আমার প্রথম প্রশ্ন, এই জাতকের শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন বলে আপনার মনে হল?
পারমিতা : এর তেমন কিছু শিক্ষাগত বিশেষ যোগ্যতা নেই।
আমি : পেশা কী?
পারমিতা : পৈতৃক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। ব্যবসা করেন।
আমি : আর্থিক অবস্থা কেমন?
পারমিতা : আর্থিক অবস্থা সচ্ছল। আয়ের অবস্থা কোনও মাসেই স্থির নয়। বার্ষিক আয় মোটামুটি ৫০ হাজার টাকার ওপরে।
আমি : কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন বলে মনে হয়?
পারমিতা : অনেক সময় দেখা যায়, হাতে বা ছকে বিবাহের সম্ভাবনা থাকলেও বাস্তবে দেখা যায়, বিয়ে হয়নি। একটু খোঁজ নিলেই দেখবেন, এই জাতক বিয়ে না করলেও কোনও মহিলার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
প্রথম জন্ম তারিখটি ডঃ সুভাষ সান্যালের। ডঃ অসিত চক্রবর্তীর বিচারকে ভুল প্রমাণ করে এখনও বেঁচে। চাকরি করেন আকাশবাণীর কলকাতা কেন্দ্রে। ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত নন। স্থায়ী চাকুরে।
আমি : সুভাষ, আপনি কোন বিষয়ে ডক্টরেট?
সুভাষ : আমার বিষয় ছিল ফিজিওলজি।
আমি : আপনার বার্ষিক আয়ের মোটামুটি অংকটা কী?
সুভাষ : এখনও পর্যন্ত ইনকাম ট্যাক্সের রেঞ্জে পৌঁছতে পারিনি। (অর্থাৎ বার্ষিক ২০ হাজার টাকার মতো। আয় স্থায়ী)
আমি : বিয়ে করেছেন তো?
সুভাষ : নিশ্চয়ই?
আমি : কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন?
সুভাষ : আমার বিয়ে হয়েছিল ১৯৮১ সালের ডিসেম্বর মাসে।
আমি : দু’নম্বর জাতকের জন্ম ১৯৩৫ সালের ২৩মে, সকাল ১১টা ১ মিনিটে কলকাতায়, আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, লেখাপড়ায় কেমন ছিলেন?
অসিত : বিদ্যাস্থান উত্তম। ডক্টরেটও হতে পারেন।
আমি : দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, কর্মজীবন কেমন?
অসিত : কর্মজীবন খুব ভাল। উচ্চ এবং সম্মানজনক পদে, শিক্ষামূলক এবং সাহিত্যমুলক হতে পারে।
আমি : তৃতীয় প্রশ্ন, জাতক কি বিদেশে গিয়েছিলেন?
অসিত : একাধিকবার।
আমি : ‘বিদেশে’ বলতে এখানে আমি কিন্তু বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটানকে বোঝাতে চাইছি না।
অসিত : দূরদেশেই একাধিকবার।
আমি : কবে নাগাদ বিয়ে করেছেন?
অসিত : মার্চ ১৯৬৪ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৬৮-র মধ্যে বিবাহ হয়েছে। কিন্তু আগস্ট ১৯৬৬ থেকে আগস্ট ১৯৬৭-র মধ্যে প্রবল সম্ভাবনা বিয়ে হওয়ার।
আমি : পারমিতা, আপনার কি মত?
পারমিতা : ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ মার্চ পর্যন্ত ওনার বিশেষ শারীরিক অসুস্থতা মারকভাবে দেখছি।
আমি : পেশা কী?
পারমিতা : শিল্পী। মনে হয়। সংগীত-জগতের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এছাড়া অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আমি : দ্বিতীয় প্রশ্ন, শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন দেখলেন?
পারমিতা : উচ্চশিক্ষিত। সম্ভবত ইঞ্জিনিয়ারিং লাইনের কোনও শিক্ষায় ডিগ্রি পেয়েছেন।
আমি : বিয়ে করেছিলেন কি?
পারমিতা : বিবাহিত-জীবন সুখের হয়নি।
আমি : তার মানে, আপনি বলছেন, বিয়ে করেছিলেন; কিন্তু সুখের হয়নি তাই তো?
পারমিতা : হ্যাঁ।
আমি : দ্বিতীয় জন্ম সময়টি অরুণ মুখোপাধ্যায়ের। অরুণবাবু এখনও মরেননি। অরুণবাবু, আপনি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনো করেছেন?
অরুণ : আমি বি.এ. পাশ করেছি।
আমি : কোথায়, কী পোস্টে কাজ করছেন?
অরুণ : স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মেন ব্রাঞ্চে অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্টে আমি কাজ করি। হেড ক্লার্ক।
আমি : আপনি গান করেন? মানে ফ্যাংশনে কখনও গেয়েছেন?
অরুণ : না, কখনও না।
আমি : দূর বিদেশে গিয়েছেন?
অরুণ : দূর বিদেশে কেন? ভারতের বাইরেই যাইনি।
আমি : আপনি কোন বছর বিয়ে করেছেন?
অরুণ : আমি বিয়ে করিনি।
আমি : আমরা তৃতীয় ছকে চলে যাচ্ছি। তৃতীয় ছকের জাতকের জন্ম সময় ২৩ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে, সকাল ৮টা ৩০ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড হুগলি জেলার ‘জঙ্গলপাড়া’ গ্রামে। প্রথম প্রশ্ন হল- লেখাপড়ায় কেমন?
অসিতকুমার : বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চশিক্ষিত।
আমি : ওর পেশা কী?
অসিতকুমার : চিকিৎসক হওয়ার সম্ভাবনা।
আমি : দূর দেশে গিয়েছেন কি?
অসিতকুমার : বিদেশে ভ্রমণ যোগ আছে।
আমি : বিয়ে করেছেন কি? করলে কবে নাগাদ?
অসিতকুমার : বিয়ে হওয়ার যোগ হল জুন ১৯৮১ থেকে সেপ্টেম্বর ১৯৮৩-র মধ্যে। কিন্তু ৯ মে ১৯৮২ থেকে নভেম্বর ১৯৮৩-র মধ্যে হওয়ার সম্ভাবনাই খুব বেশি।
আমি : পারমিতাদেবী, আমরা তৃতীয় ছকে যাবে এবার। জাতকের জন্ম ২৩/৪/১৯৪৭ সালে সকাল ৭টা ৩০মি. ৫৬ সেকেন্ডে হুগলির জঙ্গলপাড়ায়।
পারমিতা : এও তো দেখছি শিল্পী ছক দিয়েছেন। এবং উনি সম্ভবত চিত্রশিল্প পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত।
আমি : উনি কোনও আন্তর্জাতিক-সম্মান পেয়েছেন?
পারমিতা : পেয়েছেন, বিদেশে বিশেষ সম্মানিত হয়েছেন।
আমি : শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন?
পারমিতা : কমার্স নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি অথবা সমপর্যায়ের কোনও ডিগ্রি পেয়েছেন।
আমি : বিয়ে হয়েছে কি?
পারমিতা : এই সময় থেকে দু'বছরের মধ্যে বিয়ের সম্ভাবনা দেখা যায়।
আমি : তৃতীয় জন্ম তারিখটি আর এক অরুণবাবুর। অরুণ চ্যাটার্জির। ভাই অরুণ, তুমি কতদূর পর্যন্ত পড়াশুনো করেছ?
অরুণ : বি.এ. পাস।
আমি : কোথায়, কী পোস্টে কাজ করছ?
অরুণ : আমি এখন স্টেট ব্যাঙ্কের ক্যালকাটা মেন ব্রাঞ্চে আছি।
আমি : কী পোস্টে?
অরুণ : ক্ল্যারিক্যাল পোস্টেই আছি।
আমি : দূর বিদেশে কখনও গিয়েছ?
অরুণ চ্যাটার্জি : না, বিদেশে কখনও যাইনি।
আমি : সিনেমাশিল্পের সঙ্গে তোমার কোনও যোগাযোগ আছে?
অরুণ চ্যাটার্জি : হ্যাঁ। দর্শক হিসেবে যোগাযোগ আছে।
আমি : চতুর্থ আর শেষ ছক নিয়ে এবার বলছি। জাতকের জন্ম ১৯৫১ সালের ২০ আগস্ট দুপুর ১টা ৫৮ মিনিটে কলকাতায়। অসিতবাবু, প্রথম প্রশ্ন, বিয়ে করেছেন কি? করলে কবে?
অসিতকুমার : না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। তবে জুন ১৯৮৪ থেকে জুন ’৮৭-র মধ্যে বিয়ে হওয়ার যোগ রয়েছে। কিন্তু এইটি ফাইভেই হতে পারে।
আমি : আয় কেমন?
অসিতকুমার : হাজার থেকে দেড় হাজারের মধ্যে হতে পারে।
আমি : শিক্ষাগত যোগ্যতা কেমন?
অসিতকুমার : স্নাতক মান পর্যন্ত আশা করা যায়।
আমি : পেশা কী?
অসিতকুমার : চাকরি হবে।
আমি : পারমিতা, এর ছকে কি দেখলেন?
পারমিতা : রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। জননেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আমি : আয় কেমন?
পারমিতা : বহুভাবে প্রচুর আয় দেখা যায়।
আমি : বিদেশে গিয়েছেন?
পারমিতা : হ্যাঁ, বিদেশে গেছেন।
আমি : এর সম্পর্কে আর কিছু বলবেন?
পারমিতা : এর সম্পর্কে আমি বলছি; বক্তা হিসেবে উনি খুবই জনপ্রিয়।
আমি : চতুর্থ জন্ম তারিখটি রাজীব নিয়োগীর। রাজীব আপনি কবে বিয়ে করেছেন?
রাজীব : আমি ১৯৭৮ সালে নভেম্বর মাসে।
আমি : আপনার পেশা কী?
রাজীব : স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের ডেপুটি চিফ মার্কেটিং ম্যানেজার। কলকাতা অফিসেই আছি। (সঙ্গে কলকাতার দুটি বিখ্যাত কোম্পানির অংশিদার।) একটি, ‘এ মুখার্জী কোম্পানী প্রা. লি.’ পুস্তক প্রকাশনী সংস্থা, দ্বিতীয়টি ‘গিরিশ’—ওষুধ বিক্রয় কেন্দ্ৰ)
আমি : রাজনীতি করেন?
রাজীব : না।
আমি : আয় কেমন?
রাজীব : আমার চাকরি থেকে বছরে আয় প্রায় ছত্রিশ হাজার টাকার মতন।
আমি : কতদূর লেখাপড়া করেছেন?
রাজীব : আমি পোস্ট গ্রাজুয়েশন করেছি, বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিয়ে।
আমি : দূর বিদেশে গিয়েছেন?
রাজীব : না।
আমি : বক্তৃতা দিতে পারেন?
রাজীব : বক্তৃতা দেওয়া আমার পেশা নয়; আমি পারিও না।
{{dent|5em|0|পারমিতা ও অসিত চক্রবর্তীকে জাতক পিছু চারটি করে অর্থাৎ মোট ৪×৪=১৬টি প্রশ্ন করেছিলাম। এরা দুজনই ১৬টি প্রশ্নেরই ভুল উত্তর দিয়েছিলেন। আশ্চর্যের কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও আশ্চর্যের কথা এই যে দু'জনে একই জন্ম সময় নিয়ে গণনা করা সত্ত্বেও ১৬টি উত্তরের মধ্যে একটি মাত্র ক্ষেত্রে দু’জনের উত্তরে মিল ছিল।
উত্তর না মিললে জ্যোতিষীরা সঠিক জন্ম সময় নিয়ে কূট প্রশ্ন
তোলেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একই জন্ম সময় নিয়ে গণনা
করা সত্ত্বেও দু’জনের দু’রকম উত্তরের কী অজুহাত
তাঁরা দেবেন? উত্তর বেতার অনুষ্ঠান
থেকেই তুলে দিচ্ছি।
ডঃ অসিতকুমার চক্রবর্তী : তার কারণ, কখনও আমাদের অক্ষমতা, আবার কখনও শাস্ত্রের অপূর্ণতা।
পারমিতা : দেখুন, সমস্ত উত্তর হানড্রেড পারসেন্ট নির্ভুল হওয়া কখনই সম্ভব নয়।
যাক! আলোচনা শেষে লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্যে হলেও অন্তত একবারের জন্য জ্যোতিষসম্রাট স্বীকার করলেন জ্যোতিষশাস্ত্রের অপূর্ণতার কথা। কিন্তু এ কি কথা শোনালেন ‘এ-যুগের খনা’? “সত্য সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!” এখানে হানড্রেড পারসেন্ট ভুল উত্তর দিয়েও ম্যাডাম ‘খনা’ যে গলাবাজি করলেন, সেটা জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ ‘চোরের মায়ের বড় গলা’র একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত।
এবার বলি ওদের ফেল করাবার গোপন রহস্য। দু-একটি উদাহরণ দিলেই চলবে। কারণ ‘সমঝদার কে লিয়ে ইশারাই কাফি’।
দীপক ভট্টাচার্যকে বুঝিয়ে-পড়িয়ে নিয়েই হাজির করেছিলাম। ওঁর নিজস্ব গাড়িটি ব্যবহার করতে দিইনি। কথায় কথায় শুকদেববাবুকে দীপক বলেও দিয়েছিলেন, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ায় কাজ করেন। কিন্তু পোশাক-পরিচ্ছদ দেখে, কথাবার্তা শুনে শুকদেববাবু দীপককে অতি সাধারণের একটুও ওপরে স্থান দেননি।
তপন চৌধুরীকে পরিয়ে ছিলাম ফুটপাত থেকে কেনা সেকেন্ডহ্যান্ড স্ট্রেচলনের পঁয়তিরিশ টাকা দামের প্যান্ট। গায়ে ছিল পুরনো বুশ-শার্ট যার তলার সেলাই গেছে খুলে। ক্ষয়ে যাওয়া ধুলো-মাখা চটি। রিহারসল মাফিক তপন জ্যোতিষীর সামনে কথা বলেছিলেন চড়া গলায়, ভুল ইংরেজিতে। ফলে জ্যোতিষীর চোখে ব্যাঙ্ক অফিসার হয়ে পড়েছিল কারখানার কর্মী। আর মোক্ষম ভুলের ফলেই বাকি সব ক্যালকুলেশনই গোলমাল হয়ে গিয়েছিল।
স্টেট ব্যাঙ্কের হেড ক্লার্ক অরুণ মুখার্জিকে জ্যোতিষসম্রাট অসিতবাবু দেখেছিলেন নিপার্ট ধুতি পাঞ্জাবিতে। হাতে মোটা ঢাউস চামড়ার একটা ব্যাগ। ব্যাগের হ্যান্ডেলের তলায় গ্লাসটিকের খাপে গোঁজা ছিল একটি ভিজিটিং কার্ড ডঃ অরুণ মুখার্জি পি. এচ. ডি., প্রফেসর, কমপারিজিন লিটারেচর, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা। অ্যাডভাইজার, ল্যাঙ্গোয়েজ-সেল (ইউ.এন.ও)।
অসিতবাবু অরুণ মুখার্জির জন্ম সময়ের চেয়ে সম্ভবত অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন অরুণ মুখার্জির পোশাক, চোখে দামি চশমাকে। এবং সম্ভবত তাঁর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ব্যাগে সাঁটা ভিজিটিং-কার্ডটা এড়াতে পারেনি। সদ্য ছাপা এই ভিজিটিং কার্ডটাই যে সব হিসেব ওলট-পালট করে দেবে, এ বিষয়ে আমি অতিমাত্র, নিশ্চিন্ত ছিলাম।
জাতকদের আমি যে ভাবে, যে রূপে জ্যোতিষীদের কাছে হাজির করেছি, সেই রূপটিকে মাথায় রেখেই জ্যোতিষীরা তাদের নিদান এঁকেছেন এবং মুখ থুবড়ে পড়েছেন।
যুক্তির দিক থেকে না হয় ধরেই নিলাম, জাতকদের জন্ম সময় ভুল ছিল। কিন্তু একই জন্ম সময় নিয়ে জ্যোতিষীরা একটি ছাড়া প্রতিটি ক্ষেত্রে কেন ভিন্নতর মত দিলেন? আসলে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন; দিতে বাধ্য করেছিলাম আমি। ওঁরা জাতকের জন্মসময় আর জ্যোতিষশাস্ত্রের ওপর সামান্যতম নির্ভর করলে একই শাস্ত্র বিচারে ভিন্ন বা বিপরীত ফল নিশ্চয়ই বেরিয়ে আসত না।
ওরা জাতকদের পোশাক-আশাক কথাবার্তায় নির্ভর করাতেই জ্যোতিষীদের শাস্ত্রের বুলি কপচানো মুখোশটি খুলে পড়ে আসল চেহারাটাই বেরিয়ে পড়েছিল।
আপনারা একই ভাবে নিজেকে আমূল পাল্টে হাজির হন, যে কোনও জ্যোতিষসম্রাট বা ওই জাতীয় কারও কাছে। দেখবেন, আপনি যে সং সেজে নিজেকে হাজির করেছেন, সেটাকে সত্যি ধরে জ্যোতিষী শুধু ভুলই বলে চলেছে। প্রতিটি জ্যোতিষীর ক্ষেত্রেই এই ঘটনাই ঘটবে। এই ঘটনা ঘটতে বাধ্য। আপনি নিজেই হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখুন না।পাগলাবাবা জ্যোতিষীর চেয়ে বেশি কিছু
পাগলাবাবা ব্রাকেটে ‘বারাণসী’ কথার ওপর বিজ্ঞাপনে যে চুল, দাড়ি, গোঁফ শোভিত পাগল-পাগল একটি প্রৌঢ়ের ছবি ছাপা হয় সেই ছবির ওপরে লেখা থাকে—‘আপনি কি বিশ্বাস হারিয়েছেন’। পাগলাবাবার দাবি, যে কোনও প্রশ্নের
সঠিক উত্তর দিতে পারেন। তাঁর সেই দাবি পরীক্ষার জন্যেই মুখোমুখি হয়েছিলাম ওই বেতার অনুষ্ঠানে। পাগলাবাবা বেতার অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছিলেন। এর পর তাঁর ডেরায় গিয়েছিলাম, কিঞ্চিৎ মোলাকাত করতে। কারণ, সত্যি বলতে কী অজানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার একটা ভয় আমাকে পেয়ে বসেছিল। শর্ত অনুসারে বেতার অনুষ্ঠানে আমি মাত্র তিনটে প্রশ্ন করতে পারব, তাঁর দাবির পরীক্ষা নিতে। হয়তো এমন হল, প্রথম প্রশ্নটি হাজির করলাম, পাগলাবাবা সঠিক উত্তর দিয়ে দিলেন, যেমনি হাজার হাজার মানুষকে আজ পর্যন্ত দিয়ে এসেছেন, এবং আমি এই সঠিক উত্তর দিতে পারার কারণটি ধরতে পারলাম না। দ্বিতীয় প্রশ্নটি হাজির করলাম। পাগলাবাবা সঠিক উত্তর দিলেন। সঠিক উত্তর দিতে পারার কারণটি এবার আমি ধরতে পারলাম। ফলে তৃতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাগলাবাবা ভুল উত্তর দিতে বাধ্য হলেন। এত করেও কিন্তু পাগলাবাবার এই সঠিক উত্তর দানের কৌশলটি ধরার সমস্ত গৌরব, সমস্ত প্রয়াসই ব্যর্থ হবে। শ্রোতারা কী শুনবেন? কী ধারণা তাঁদের মধ্যে সৃষ্টি হবে? তাঁরা শুনবেন, বিজ্ঞানের তরফ থেকে হাজির করা তিনটি প্রশ্নের মধ্যে দুটির ক্ষেত্রেই অলৌকিকক্ষমতা জয়ী। অতএব এই জয়ই বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে অলৌকিকক্ষমতার জয়ের প্রতীক হয়ে উঠবে; তখন এই জয় আর প্রবীর ঘোষের বিরুদ্ধে পাগলাবাবার জয় বলে গণ্য হবে না।
যাঁরা জাদু-শিল্পী তাঁরা জানেন, কোনও একটা নতুন জাদু দেখার সঙ্গে সঙ্গে কোনও একজন দর্শক জাদুকরের পক্ষে তার কৌশল বুঝে ওঠা সম্ভব নাও হতে পারে; এমন কি সেই দর্শক জাদুকরটি ভারতশ্রেষ্ঠ জাদুকর না হয়ে বিশ্বশ্রেষ্ঠ জাদুকর হলেও।
প্রোগ্রাম রেকর্ডিং-এর আগে পাগলাবাবার ক্ষমতাটা একবার দেখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম প্রচণ্ড রকম। গেলাম। পাগলাবাবা অনেক খাওয়ালেন। অনেক গল্প করলেন। এই সময় তাঁর কোনও ক্লায়েন্টকেই আমাদের সামনে হাজির হতে দিলেন না। আমার নানা কায়দার অনুরোধকেই নাক থেকে মাছি তাড়াবার মতো করেই সরিয়ে দিলেন। তাঁর সঙ্গে শুধু এ-টুকুই ঠিক হলো, রেকর্ডিং-এর দিন কী কী প্রশ্ন হাজির করব। এক : আমার এক বন্ধু জিজ্ঞেস করবেন, তাঁর সিগারেটের প্যাকেটে কটা সিগারেট আছে। দুই : একটা ক্যামেরা হাজির করে জিজ্ঞেস করা হবে, এই ক্যামেরায় কটা ফিল্ম তোলা হয়েছে। তিন : এক বন্ধু তাঁর মানিব্যাগ বার করবেন। বলতে হবে কত টাকা আছে (খুচরো পয়সা বাদ)। টাকাটা হবে তিনশোর মধ্যে।
ব্যর্থ আমি প্রচণ্ড অস্বস্তি নিয়েই ফিরেছিলাম সেদিন। শুধু এ-কথাই বার বার ঘুরে ফিরে আমাকে তাড়িত করছিল রেকর্ডিং-এর আগেই আমাকে এই রহস্যের সূত্র খুঁজে বের করতেই হবে। নতুবা প্রথাগত পদ্ধতিতে প্রশ্ন করলে আমাকে হারতেই হবে; কারণ পাগলাবাবা অবশ্যই ঠিক উত্তর দেবেন এবং অবশ্যই কৌশলের সাহায্যেই।
ওই একই ধরনের ক্ষমতার দাবিদার আচার্য গৌরাঙ্গ ভারতীর সঙ্গে দেখা করলাম। গৌরাঙ্গ ভারতী এই বেতার অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এবং আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। গৌতম ভারতীর সঙ্গে গল্পে গল্পে জমিয়ে নিয়েছিলাম। তিনি আমাকে তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, “আমি কি বিবাহিত?”
একটা রাইটিং প্যাড টেনে নিয়ে তাতে উত্তর লিখে কলমটা নামিয়ে রেখে বলেছিলেন, “আপনি কি বিয়ে করেছেন?”
বলেছিলাম, “হ্যাঁ, করেছি।”
প্যাডটা আমার সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন, তাতে লেখা ছিল ‘বিবাহিত’।
আমি এরপর দ্বিতীয় প্রশ্ন রেখেছিলাম, “বলুন তো আমার প্রথম সন্তান ছেলে না মেয়ে?”
রাইটিং প্যাডে আবার উত্তরটা লিখে নামিয়ে রাখলেন কলমটা। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “আপনার প্রথম সন্তান কী?” বললাম, “ছেলে।”
“দেখুন তো কী লিখেছি?” প্যাডটা মেলে ধরলেন আমার চোখের সামনে। স্পষ্ট লেখা “ছেলে।”
তৃতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে উত্তর এবং রহস্যভেদ একই সঙ্গে হলো। (কীভাবে এমন সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখে দেওয়া যায়, তাঁর প্রয়োগ-কৌশল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটির প্রথম খণ্ডে।)
পাগলাবাবা রেকর্ডিং-এর দিন আকাশবাণী ভবনে এলেন কয়েকটা গাড়ি বোঝাই বহু বিশিষ্ট শিষ্যকে নিয়ে। পরনে রক্তলাল ধুতি ও রক্তলাল হাফ ফতুয়া বা পাঞ্জাবি জাতীয় কিছু। আকণ্ঠ পান করে দরদর করে ঘামছেন, তবে মাতাল নন। আকাশবাণী ভবনেও দেখলাম তাঁর ভক্তের অভাব নেই। পাগলাবাবা বিজ্ঞান প্রযোজকের ঘরে দাঁড়িয়েই অনেকের প্রশ্নের মুখোমুখি হচ্ছিলেন। অনেকের সম্বন্ধে অতীতের কথা বলে চমক সৃষ্টি করছিলেন (আমাদের সমিতির বেশ কিছু সদস্যই মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে এমন অনেক কথা বলে থাকেন।) একজনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে পাগলাবাবা রাইটিং প্যাড বের করলেন, এবং সক্কলকে প্রচণ্ড রকম আশ্চর্য করে (আমাকে বাদে) প্রশ্নের উত্তরটা মিলিয়েও দিলেন। তারপর যা শুরু হল, তাকে বলা চলতে পারে দস্তুর মতো পাগলামি। একজন সরাসরি দাবি করলেন, “এখানেই পাগলাবাবার ক্ষমতার পরীক্ষার রেকর্ডিং করতে অসুবিধে কোথায়? এখানেই রেকর্ডিং হোক।” এই দাবির সুরে অনেকেই সুর মেলালেন।
অবস্থাটা হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝে বিজ্ঞান প্রযোজক অমিত চক্রবর্তীকে বললাম, “আপনি বাস্তবিকই প্রোগ্রামটার রেকর্ডিং করতে চাইলে আর একটুও দেরি না করে ওঁকে নিয়ে স্টুডিওতে চলুন। আমার একটা জরুরি কাজ আছে। রেকর্ডিং শেষ হলেই আমায় সেখাতে যেতে হবে। আর দেরি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”
আমার তরফ থেকে প্রশ্ন করার জন্য হাজির করেছিলাম আমার তিন বন্ধু, চিত্র-সাংবাদিক কল্যাণ চক্রবর্তী, প্রকাশক ময়ূখ বসু এবং একাধারে চার্টার্ড ইঞ্জিনিয়ার ও প্রকাশক রঞ্জন সেনগুপ্তকে। পাগলাবাবার এমন অদ্ভুত সব কাণ্ড-কারখানা দর্শনে আমার সাজানো ব্যাপারটা তাঁরা না গোলমাল করে ফেলেন, এ বিষয়েও নজর রাখতে হচ্ছিল।
তার পর আমরা স্টুডিওতে ঢুকলাম। রেকর্ডিং শুরু হল। প্রশ্নোত্তরের পর্ব চুকতে পাগলাবাবার দাবি পরীক্ষার সময় তাঁকে লিখে উত্তর দিতে দিইনি। এবার আসুন, আপনাদের নিয়ে যাই সেই অতি বিখ্যাত বেতার অনুষ্ঠানের তৃতীয় পর্যায়ে, এখানে অবশ্য জ্যোতিষশাস্ত্র সরাসরি নেই, তবু আছে অদৃষ্টবাদের কথা।
চতুর্থ পর্যায়
সুনীলবাবু, পত্র-পত্রিকায় বহু জ্যোতিষী ও তান্ত্রিকদের বিজ্ঞাপন দিতে দেখি, যাঁদের নামের পরেই থাকে কয়েক ইঞ্চি নানা ধরনের অদ্ভুত সব ডিগ্রির মিছিল। এই যেমন ধরুন M.A.A. (Great Britain), L.WI.CWA (New Delhi) F.R.A.S. (London), L.M.K.B.S. (N.Delhi), তান্ত্রিক-জ্যোতিষী, রাজ জ্যোতিষী, অ্যাসট্রোপামিস্ট, তান্ত্রিক আচার্য, জ্যোতিষ সম্রাট, সামুদ্রিক রত্ন, ইত্যাদি।
পাগলাবাবা : আমার কোনও ডিগ্রি নেই, সব বিষয়ে আমি বলতে পারব না। ‘রাজ জ্যোতিষী’, যেমন 'রাজ-কর্মচারী'। কিছু কিছু জ্যোতিষী আছেন যাঁরা জেলে গিয়ে কয়েদীদের ধর্ম-তত্ত্ব, গীতা-ভগবত ইত্যাদি পাঠ করে শোনান। এর জন্য গভর্ণমেন্ট থেকে কিছু পান, আবার কেউ কেউ বিনে পয়সায় কাজ করেন। এঁদেরকেই রাজ-জ্যোতিষী বলে। M.A.A. (London), at Calcutta, এ-রকমও আছে। আবার আমি শুনেছি, অনেকে কোর্টে এফিডেভিট করে যেগুলো চায় সেগুলো নিতে পারে।
আমি : ডিগ্রিগুলো নিতে পারেন?
পাগলাবাবা : হ্যাঁ।
আমি : আমাদের সময়ও খুবই কম। তিনজন আপনার সামনে প্রশ্ন রাখবেন। প্রথম প্রশ্ন রাখবেন কল্যাণ চক্রবর্তী। প্রফেশনে প্রেস ফটোগ্রাফার।
কল্যাণ : আমার সঙ্গে যে ক্যামেরা আছে, সেই ক্যামেরায় কতগুলো ছবি উঠিয়েছি?
পাগলাবাবা : এই ১৬ থেকে ১৭টা।
আমি : কল্যাণ, কটা ছবি তুলেছ, তুমি একটু দেখাও।
কল্যাণ : আমার ক্যামেরায় ইন্ডিকেটরে তোলা ছবির নম্বরটা দেখে নিন, তিরিশ।
পাগলাবাবা : তাহলে আমার ভুল হয়েছে।
আমি : ময়ূখবাবু, ময়ূখ বোস এবার প্রশ্ন রাখছেন।
ময়ূখ : আমার মানিব্যাগে কত টাকা আছে?
পাগলাবাবা : সেভেন সেভেন।
ময়ূখ : সেভেন সেভেন? আমার মানি ব্যাগে ২৭০ টাকা আছে, দেখে নিন।
পাগলাবাবা : ভুল আমার ভুল।
আমি : এবার প্রশ্ন করছেন রঞ্জনবাবু, রঞ্জন সেনগুপ্ত।
রঞ্জন : আমার একটাই প্রশ্ন, আমার পকেটের সিগারেটের প্যাকেটটা দেখেছেন, এটায় ক’টা সিগারেট আছে?
পাগলাবাবা : সাতটা।
রঞ্জন : দেখুন, ন’টা আছে।
পাগলাবাবা : তিনটেই আমার ভুল হল।
আমি : আচ্ছা, এই ধরনের ভুল কেন হল?
পাগলাবাবা : আমাদের এটা মুড আছে। প্রত্যেক মানুষের একটা জায়গা আছে।
আমি : তার মানে নিজের জায়গায় হলে আপনার সুবিধে হয়?
পাগলাবাবা : না, তার কোনও প্রশ্ন নয়। যে কোনও জায়গায়ই প্রশ্নের উত্তর দিই। হয়তো আপনি বলবেন যে আমি এখানে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। অতএব গুল ওসব। হয়তো আমি এখন মুডে নেই। মানুষের সুস্থতা, অসুস্থতা আছে। আর তিনটে প্রশ্নের উত্তরেই ভুল করলাম। এতে আমি খুব আনন্দ পেলাম। বুঝলাম, আমিও ভুল করি।
রহস্য এখানেই শেষ নয়। এর পরও বলার কিছু থেকে যায়। এই লড়াইয়ের নেপথ্যের কিছু কথা তুলে দিলাম, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজনে আসতে পারে ভেবে।
পাগলাবাবা (বারাণসী)-কে লিখে উত্তর দিতে দিইনি; শুধুমাত্র
এই কারণেই জিতেছি; এমনটা ভাবলে পুরোপুরি ভুল
ভাবা হবে। সেদিন কল্যাণ চক্রবর্তী এবং রঞ্জন
সেনগুপ্ত যেমন প্রশ্ন করবেন ভেবেছিলেন,
তেমনটি করলে পাগলাবাবা না লিখেই
সঠিক উত্তর দিয়ে দিতে
সক্ষম হতেন।
আর, তার ফলেও অলৌকিক ক্ষমতারই বিশাল জয় ঘোষিত হতো। যুক্তিবাদী অন্দোলন আজ যে অবস্থায় অবস্থান কছে তা নিঃসন্দেহে অনেকটাই ব্যাহত হতো।
রেকর্ডিং-এর দু’দিন আগে আমার অফিসে এসেছিলেন কল্যাণ। জানালেন, সব তৈরি। একটা ক্যামেরায় কিছু ফিল্ম তুলে রেখে দিয়েছেন। ওটাই পরশু নিয়ে আসবেন। জিজ্ঞেস করলাম, “ক’টা ফিল্ম তুলেছ? ১৬-১৭টা?”
কল্যাণ বললেন, “হ্যাঁ, সতেরোটা তুলেছি।”
বললাম, “ওটা তিরিশে নিয়ে যাও।”
“বললে নিয়ে যাব। কিন্তু কোনও দরকার আছে কী?”
“নিশ্চয়ই। কারণ তোমাকে দেখে যেমন আমি অনুমান করতে পেরেছি পরীক্ষার জন্য তুমি এক থেকে ছত্রিশ-এর মধ্যে কত নম্বরকে বেছে নেবে। পাগলাবাবাও তা পারবেন। পাগলাবাবার সঙ্গে একদিন কিছুক্ষণ মেশার সুযোগে যা বুঝেছি, তাতেই মনে হয়েছে বিভিন্ন মানুষের সংখ্যা ভাবার ক্ষেত্রে যে বিভিন্ন মানসিকতা কাজ করে, সেই মনস্তত্ত্ব বিষয়ে উনি ওয়াকিবহাল। লিখে উত্তর দেবার সুযোগ বন্ধ করে দিলেই যে উনি ভুল বলতে বাধ্য হবেন, এমনটা ভাবারও কোন কারণ নেই। উনি তোমার মানসিকতাকে বুঝে নেবার চেষ্টা করবেন। ছত্রিশটা ফিল্মের মধ্যে কতটি তুলেছ, অর্থাৎ ১ থেকে ৩৬-এর মধ্যে একটা সংখ্যা তোমাকে বেছে নিতে বললে তুমি কোন সংখাটি বেছে নিতে চাইবে—এটাই পাগলাবাবা বুঝতে চাইবেন তোমাকে দেখে। এবং পারবেনও দেখে নিও। কিন্তু তুমি ৩০-এ রেখে দেখো, পাগলাবাবা বলতে পারবেন না। কারণ, বাস্তবিকই তাঁর অতীন্দ্রিয়-দৃষ্টিশক্তি নেই। তাঁর মানুষের মন বোঝার ক্ষমতা সম্বন্ধে আমি ওয়াকিবহাল তাঁর আগাম চিন্তা আমি ধরতে সক্ষম।”
কল্যাণ আমার কথামতো ১৭কে ৩০-এ নিয়ে গিয়েছিলেন। ফলে হেরে যাওয়া বাজিও জিতে নিয়েছিলাম।
রেকর্ডিং-এর একটু আগে রঞ্জন সেনগুপ্তকে একটু নির্জনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘সিগারেটের প্যাকেট রেডি?’
“হ্যাঁ।”
“কটা সিগারেট রেখেছেন?”
“আপনাকেও বলব না। কেউ না জানলে জেতার সম্ভাবনা বাড়ে।”
বলেছিলাম, “সাতটা রেখেছেন না?”
বিস্মিত রঞ্জন বললেন, “হ্যাঁ, কিন্তু আপনি কী করে জানলেন?
বললাম, “সে পরে বোঝাব, এখন প্যাকেটে আর দুটো সিগারেট পুরে ফেলুন।”
অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হওয়ার কিছুদিন পর কল্যাণ চক্রবর্তী তাঁর এক চিত্র-গ্রাহক বন্ধু কল্যাণ বসাককে নিয়ে এসেছিলেন আমার ফ্ল্যাটে। কল্যাণ বসাক আমার অনুমান-শক্তির প্রমাণ নিতে চেয়েছিলেন, বলেছিলাম, “১ থেকে ১০-এর মধ্যে একটা সংখ্যা ভাবুন তো?”
কল্যাণ বসাক বললেন, “ভেবেছি।”
“সাত ভেবেছেন।”
কল্যাণ বসাক যথেষ্টই বিস্ময়ের সঙ্গে বললেন, “হ্যাঁ, সাতই ভেবেছিলাম।”
কল্যাণ বসাককে দেখে আর পাঁচজন গড় মানুষের মতোই সতর্ক, সাবধানী মানুষটিকে আবিষ্কার করেছিলাম। তাই ১ থেকে ১০-এর মধ্যে সাধারণভাবে ‘৭’ ভাবার গড়পড়তা মানুষের প্রবণতার কথাই বলেছিলাম। এই সতর্ক ও সাবধানী হওয়ার প্রবণতা সাধারণভাবেই অখ্যাত, বিখ্যাত সবার মধ্যেই বেশির ভাগ সময়ই বিরাজিত। আপনারা হাতে কলমে পরীক্ষা করলেই আমার বক্তব্যের যাথার্থতা বিষয়ে আরও আস্থাশীল হবেন। আবার যাঁরা অতি মাত্রায় সাহসী যাঁরা জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে পারেন যখন তখন, তাঁরা নামী বা অনামী যাই হোন না কেন, অন্য ধাতে গড়া। তাঁদের চিন্তায় আবার একই ধরনের সংখ্যা আসবে। এমনি অনেক রকম শ্রেণি-বিভাগ করে বহু ক্ষেত্রেই চিন্তার হদিশ পাওয়া সম্ভব হয়।
“যে যত বড় জ্যোতিষী, তত বড় প্রতারক
চ্যালেঞ্জ নিলেই বুজরুকি ফাঁস”