অলৌকিক নয়, লৌকিক (তৃতীয় খণ্ড)/প্রথম পর্ব/অধ্যায়: সাত
অধায় : সাত
হাতের রেখা বিচারের ইতিহাস
হস্তরেখাবিদদের মতে একজন মানুষের স্বভাব-চরিত্র সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বোঝার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সেই মানুষটির হাতের গঠন ও হাতের রেখা এক লহমায় লক্ষ্য করা।
হস্তরেখা বিচারের ইতিহাস ঠিক কতটা প্রাচীন সে বিষয়ে সঠিক করে জানা না গেলেও হস্তরেখাবিদ কিংবদন্তি পুরুষ কিরোর মতে, ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের জন-জাতি স্মরণাতীত কাল থেকে হস্তরেখা বিচারের চর্চা চালিয়ে আসছিলেন।
প্রাচীন গ্রিসেও হাতের রেখা দেখে ভাগ্য-বিচারের চল ছিল। অ্যারিস্টটল, প্লিনি, কার্ডামিস, সম্রাট অগস্টাস, সম্রাট আলোকজান্ডার হস্তরেখাবিদ্যা নিয়ে চর্চা করেছিলেন।
প্রাক মধ্যযুগে চার্চগুলো হস্তরেখাবিদ্যার বিরদ্ধে সরব হয়ে ওঠে। তারা একে ডাইনিবিদ্যা বা পিশাচবিদ্যা বলে ঘোষণা করে। চার্চের কোপ এড়াতে হস্তরেখাবিদ্যার চর্চা থেকে প্রায় সকলেই নিজেকে সরিয়ে আনেন।
এর পরবর্তী কালে হাতের রেখা দেখার চর্চা জিপসী ও ওই ধরনের কিছু ভ্রাম্যমাণ মানুষ মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
মধ্যযুগে আবার আমরা দেখতে পেলাম হস্তরেখাবিদ্যাকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় কিছু মানুষকে এগিয়ে আসতে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা হস্তরেখার উপর দুটি প্রকাশিত বই-এর খবর আমরা পাই। একটি “The Kunst Kiromanta”, প্রকাশকাল ১৪৭৫ খ্রিস্টাব্দ। অপরটি “The Cyromantia Aristotelis cum Figures” প্রকাশকাল ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দ।
হস্তরেখাবিদ্যার পুনরুত্থান ঊনবিংশ শতকে। তারপর কালের গতির সঙ্গে হাত দেখা জনপ্রিয়তা অর্জন করতে থাকে। এই মুহূর্তে সাধারণের মধ্যে ছক কষে ভাগ্য বিচার করার চেয়ে হাত দেখে ভাগ্য বিচার অনেক বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ-যুগের স্কুল-কলেজের অনেক ছেলে মেয়েই তাদের বন্ধু-বান্ধবীদের হাত টেনে নিয়ে গড়-গড় করে অনেক কথাই বলে যায়, শোনায় ভবিষ্যতের গল্প, দেখায় ভবিষ্যতের স্বপ্ন। অনেকে অবশ্য মহিলা মহলে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য, সুন্দর হাত ধরার ফন্দিতে, তোষামোদ করে মন-ভেজাতে হস্তরেখাবিদ হয়ে যায়। এর জন্য এইসব হস্তরেখাবিদ্রা পেশাদার জ্যোতিষীদের মতোই হাতের রেখার চেয়ে মানুষটিকে পোশাক-আশাক, হাঁটা-চলা, কথাবার্তা, রুচি, ভাললাগা ইত্যাদির হদিশ বুঝেই ভবিষ্যদ্বাণী করে।
ছক কষে ভাগ্য বিচারের নিয়ম-কানুনগুলো হাত দেখার নিয়ম-কানুনের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন বলেই সাধারণের মধ্যে হাত দেখা শেখার প্রবণতাই বেশি।
হস্তরেখা বিচারের পদ্ধতি
হাতের রেখায় ভবিষ্যৎ
হাতের রেখা বিচার করার আগে হস্তরেখাবিদ্রা হাতের অন্যান্য কিছু লক্ষণ দেখে জাতকের চরিত্র বিচার করেন, এবং এটাই হলো হাত দেখার প্রথম পদক্ষেপ।
স্বল্প রেখাযুক্ত পরিষ্কার হাত : এই ধরনের হাতের অধিকারী হন মার্জিত, ঠাণ্ডামাথার শান্ত স্বভাবের মানুষ। এঁরা যে কোনও ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেন। দুশ্চিন্তায় না ভুগে করণীয় কাজ করা পচ্ছন্দ করেন। চট্ করে রাগেন না।
তবে এই ধরনের হাতই যদি শক্ত ও সুগঠিত হয় তবে হাতের মালিকের আত্মনিয়ন্ত্রণক্ষমতা আরও বেশি হয়।
বহু সুক্ষ্ম রেখাযুক্ত হাত : হাতের মালিক স্বল্পে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিচলিত হয়ে পড়েন। এঁরা স্বভাবে নিরীহ, অপাত্রে বিশ্বাসী ও অতিরিক্ত সতর্ক হন।
হাতের রঙ দেখেও জাতকের চরিত্র বিচার করা হয়
লালচে : হাতের মালিক স্বাস্থ্যবান, প্রাণবন্ত, উদ্যোগী, আবেগপ্রবণ ও মেজাজি।
গোলাপী : হাতের অধিকারী করিৎকর্মা, উজ্জ্বল ও আশাবাদী ব্যক্তিত্ব।
সাদাটে : অত্যন্ত আত্মকেন্দ্রিক, তথ্য-গোপনে তৎপর, গর্বিতচিত্ত, দাম্ভিক ও সুবিধাভোগী।
হলদেটে : বিষণ্ণচিত্ত, কর্মবিমুখ, উদাসী।
চওড়া তালু, বেঁটে, মোটা আঙুল, কুশ্রী নখ : এদের হাতে প্রধান তিনটি ভাঁজ ছাড়া অন্যান্য রেখা প্রায় থাকেই না, অর্থাৎ থাকলেও সেগুলো থাকে অতি অস্পষ্ট, না থাকার মতোই। বুড়ো আঙুল হয় মোটা। এরা ক্রোধী, কাপুরুষ, উচ্চাকাঙ্ক্ষাহীন হয়।
চৌকো হাত : হাতটি বেশ পরিষ্কারভাবেই চৌকো। নখগুলোও চৌকো। এরা ধীরস্থির, গতানুগতিক, আইন-শৃঙ্খলা মেনে চলেন। ব্যবহারিকজ্ঞান যথেষ্ট।
চৌকো হাতে লম্বা আঙুল : জীবিকা হিসেবে ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনও বৃত্তি পছন্দ করেন। সাহিত্য ভালবাসেন, অর্থ সঞ্চয়ী নন।
দার্শনিক হাত : এঁদের আঙুলের পর্বে পর্বে গাঁট থাকে। এঁরা চিন্তাশীল, তথ্যানুসন্ধানী, অন্তর্মুখী।
শিল্পী-হাত : হাতের গঠন সুন্দর। আঙুলগুলো গোল এবং আঙুলের অগ্রভাগ ধীরে ধীরে সরু হয়েছে। এঁরা সৌন্দর্যপ্রিয়, মিষ্টভাষী, ভোগী, আবেগপ্রবণ এবং দৈববিশ্বাসী।
আধ্যাত্মিক হাত : হাত লম্বা, সরু এবং পাতলা। আঙুলগুলো ক্রমশ সরু নখগুলো বাদাম আকারের। এঁরা ধার্মিক, স্পর্শকাতর, আবেগপ্রবণ।
নমনীয় বুড়ো আঙুল : শান্ত, নমনীয়, পরিশীলিত, উদার এবং অমিতব্যয়ী। যে কোনও পরিবেশে মানিয়ে নেন।
অনমনীয় বুড়ো আঙুল : স্বল্পভাষী, দৃঢ়চেতা, সতর্ক, গোপনীয়তা-রক্ষায় তৎপর।
হাতের ভাষা বুঝতে গেলে নখের বিষয়েও জানতে হবে, হস্তরেখাবিদ্রা এমনটা বিশ্বাস করেন, বলে থাকেন।
নখ থেকে রোগ
খুব লম্বা নখ : শারীরিকভাবে দুর্বল, ফুসফুসের দোষ থাকার সম্ভাবনা।
খুব লম্বা এবং সরু নখ : শরীর দুর্বল, মেরুদণ্ডের দুর্বলতা থাকার সম্ভাবনা।
খুব লম্বা নীলচে অথবা মলিন বর্ণের নখ : ক্ষয়রোগের প্রবণতা নির্দেশ করে।
ছোট নীলচে নখ : বক্ষদেশের দুর্বলতা বোঝায়। হার্টের অসুখ হতে পারে।
ছোট গোলাকার নখ : নাক এবং গলার অসুখ, হাঁপানি, ল্যারিঞ্জাইটিস, ব্রঙ্কাইটিস প্রভৃতি রোগ নির্দেশ করে।
ছোট নখ, নখের তলার দিকটা চ্যাপ্টা : হৃদরোগী।
ছোট নখ, নখের তলার দিকে সাদা চাঁদ : হৃদযন্ত্র সবল।
শরীরের ভিতর গভীরভাবে চেপে বসা চ্যাপ্টা নখ : স্নায়ুঘটিত ব্যাধি নির্দেশ করে।
নখে সাদা সাদা দাগ : স্নায়বিক রোগ নির্দেশ করে।
খুব পাতলা ভঙ্গুর নখ : দুর্বল স্বাস্থ্যের লক্ষণ।
নখ থেকে স্বভাব
লম্বা নখ : শান্ত, ভদ্র, আদর্শবাদী, শিল্প-সাহিত্য অনুরাগী।
ছোট নখ : বাস্তববাদী, বিশ্লেষণ ও সমালোচনা পছন্দ করে, যুক্তিবাদী।
লম্বার চেয়ে চওড়া বেশি যে নখ : ঝগড়ুটে, খিটমিটে, তিলকে তাল করেন।
গ্রহস্থল বা গ্রহের মাউন্ট
হাতে নয়টি গ্রহস্থল কল্পনা করেছেন হস্তরেখাবিদ্রা। যেমন—১। শুক্রস্থল ২। প্রথম মঙ্গলস্থল (ভারতীয় মতে রাহুস্থল) ৩। বৃহস্পতিস্থল ৪। শনিস্থল ৫। রবিস্থল ৬। বুধস্থল ৭। দ্বিতীয় মঙ্গলস্থল ৮। চন্দ্রস্থল ৯। মঙ্গলের সমতল।
শুক্রস্থল : বুড়ো আঙুলের মূলে শুক্রের ক্ষেত্র। শুক্র সুখ, প্রেম, ভালোবাসা ও শিল্প-সাহিত্য-সংগীত-অভিনয় জগতে প্রতিষ্ঠা প্রদানকারী গ্রহ। শুক্রের ক্ষেত্র প্রশস্ত হলে জাতক প্রেম, ভালোবাসা যেমন পায়, তেমনই জীবনে একাধিক প্রেম এসে থাকে অথবা বিয়ের পরও চলে প্রেমের অভিনয়। সৃষ্টিধর্মী কাজে ও কর্মজীবনে সফলতা আসে।
শুক্রের ক্ষেত্রে কাটাকাটি বা জাল রেখা থাকলে জাতকের জীবনে দেখা যায় যৌন দুর্বলতা পতিতা গমন এবং দুর্নাম।
শুক্রের ক্ষেত্রে তিল থাকলে জাতকের দুর্নাম হয়। প্রেমিক-প্রেমিকাদের দ্বারা প্রতারিত হন।
প্রথম মঙ্গলস্থল বা ভারতীয় মতে রাহুস্থল : তর্জনী ও বুড়ো আঙুলের মাঝে এই ক্ষেত্র। ক্ষেত্রটি উন্নত, কাটাকাটিহীন, সুগঠিত, তিন বর্জিত হলে জাতক কর্মশক্তিতে ভরপুর, সংগঠনের নেতা, জনগণের বিশ্বাস অর্জনকারী হন। আবার এঁরা বড় গুণ্ডাদলের নেতা, সমাজবিরোধী নেতা, শিকারী, ক্রোধী, যৌন আসক্তিসম্পন্ন হতে পারেন। জাতক কোন্ দলে পড়বেন সামগ্রিক হাতের রেখা বিচার করে বলা প্রয়োজন।
ক্ষেত্রটিতে কাটাকাটি, জালচিহ্ন বা তিল থাকলে উন্নতিতে পদে পদে বাধা, শুভকাজে বিঘ্ন, প্রাপ্তিতে বিলম্ব ও শত্রুভয়, পেটের রোগ, যৌন রোগ, নেশার রোগ, অঙ্গহানি, আঘাত ইত্যাদি দেখা যায়।
বৃহস্পতিস্থল : তর্জনীর মূলে বৃহস্পতির ক্ষেত্র। ক্ষেত্রটি প্রশস্ত, উচ্চ ও কাটাকাটিহীন হলে ইঙ্গিত করে আধিপত্য বিস্তারের প্রবণতা, নেতৃত্বের ক্ষমতা, গঠনমূলক কাজে দক্ষতা, স্বাতন্ত্র্যবোধ, আদর্শের জন্য ত্যাগস্বীকারের মানসিকতা। স্বভাবে আনন্দচিত্ত, শান্তিপ্রিয়, উদার, চিন্তাশীল, অর্থ-উপার্জনে ক্ষেত্র অতি শুভ।
বৃহস্পতিস্থল অপ্রশস্ত, নিচস্থ, দুর্বল, অপরিষ্কার হলে জাতক হয় সংকীর্ণ-চিত্ত, সন্দেহপ্রবণ, দাম্ভিক, অসৎবন্ধুযুক্ত। জাতকের জীবনে আসে বিড়ম্বনা, দুর্ভোগ ও দুঃখ।
শনিস্থল : শনির ক্ষেত্র মাধ্যমার মূলে। শনির ক্ষেত্র সুপ্রশস্ত, সুউচ্চ হলে জাতক দৃঢ়চেতা, সহনশীলতা, চিন্তাশীল, সাধনমগ্ন, কৃচ্ছসাধনকারী, ধার্মিক, ত্যাগী, গুপ্তবিদ্যায় পারদর্শী, কর্তব্যপরায়ণ, দায়িত্বসচেতন, নীতিজ্ঞানী ও ধনী হন। শনির ক্ষেত্র অতি শুভ হলে জাতক সম্রাটতুল্য সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করেন। ধর্মের জন্য সংসার ত্যাগের প্রবণতা থাকে।
শনির ক্ষেত্র অপ্রশস্ত হলে বোঝায় জাতকের গভীরতার অভাব এবং জীবনের প্রতি তাচ্ছিল্যভাব, আত্মীয়দের সঙ্গে অমিল, অন্যায় পথে আনন্দ।
রবিস্থল : অনামিকার মূলে রবির ক্ষেত্র। রবির ক্ষেত্র সুগঠিত হলে জাতক লোকপ্রিয়, খ্যাতিমান, সম্মানীয়, জীবনযুদ্ধে অজেয়, দাতা, কলাপ্রিয়, ব্যক্তিত্ববান, সৌন্দর্যপূজারী, উদার হৃদয়, স্নেহপ্রবণ এবং উৎফুল্ল মেজাজের হয়। ভণ্ডামি সহ্য করতে পারে না। ঘৃণ্যদের আন্তরিকভাবে ঘৃণা করে। ভালোবাসে আন্তরিকতার সঙ্গে। অনুগ্রহভাজন হতে অপছন্দ করে। মাথা উঁচু করে চলতে ভালোবাসে, ভালোবাসে নিজের গুণগান শুনতে।
রবির ক্ষেত্র খারাপ হলে জাতক সংকীর্ণমনা, ঈর্ষাকাতর হয়। জীবন-যুদ্ধে ও সম্মানলাভে দেখা দেয় বাধা।
বুধস্থল : কনিষ্ঠার নিচে বুধের ক্ষেত্র। বুধের ক্ষেত্র উন্নত, প্রশস্ত, কাটাকাটিবিহীন হলে বোঝায় জাতকের চিন্তাশক্তির গভীরতা, রসবোধ, বালকসুলভ মানসিকতা। সরলতার পাশাপাশি বিরাজ করে কুটিলতা। চিকিৎসাবিদ্যা, অধ্যাপনা, শিক্ষকতা, গ্রন্থরচনা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের যে কোনও কাজের সার্থক হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়।
বুধের ক্ষেত্র অপ্রশস্ত, কাটাকাটিযুক্ত বা তিল চিহ্নযুক্ত হলে জাতক কুপথে চালিত, অহংকারী ও বিবাদপ্রিয় হয়। জাতক পুরুষ হলে নারীর দ্বারা এবং নারী হলে পুরুষ দ্বারা প্রতারিত হয়।
দ্বিতীয় মঙ্গলস্থল : বুধের ক্ষেত্রের ঠিক নিচেই মঙ্গলের দ্বিতীয় ক্ষেত্র। মঙ্গলের এই ক্ষেত্রটি উন্নত ও পরিচ্ছন্ন হলে ইঙ্গিত করে তেজ, বীরত্ব, বাস্তববোধ ও পরাক্রম বিস্তারের প্রবণতা। জাতক কঠোর পরিশ্রমী। চাকরি বা ব্যবসায় যে পথেই যাবে উন্নতি করবে। শুভ মঙ্গল ভূ-সম্পত্তি, কৃষিজমি ও বাড়ি দেয়। জাতক কর্মপ্রিয় হলেও নেশার প্রতি আসক্তি থাকা স্বাভাবিক।
মঙ্গলের এই ক্ষেত্রটি খারাপ হলে জাতক সম্পত্তিহীন হয়—থাকলেও নষ্ট হয়। দাঙ্গাহাঙ্গামাপ্রিয় হয়, আকস্মিক দুর্ঘটনায় পড়ার যোগ দেখা যায়।
চন্দ্রস্থল : মঙ্গলের দ্বিতীয় ক্ষেত্রের নিচে, কব্জির উপরে চন্দ্রের ক্ষেত্র। ক্ষেত্রটি উচ্চ, প্রশস্ত ও পরিষ্কার হলে জাতক লেখক, কল্পনাপ্রবণ, ভাবপ্রবণ, রোমান্টিক, আদর্শবাদী, সূক্ষ্ম অনুভূতিসম্পন্ন এবং ভ্রমণপ্রিয় হয়।
মঙ্গলের সমতল-ক্ষেত্র : হাতের তালুর কেন্দ্রস্থলই মঙ্গলের সমতল ক্ষেত্র। এই ক্ষেত্রটি একটু নিচুই হয়। তবে এটি প্রশস্ত ও সুগঠিত হলে শুভ। শুভ হলে সুখ, কর্মজীবনে উন্নতি, যশ, সম্পত্তি, সুউপার্জন-যোগ। জাতক ধৈর্যশীল ও পরিশ্রমী হয়।
মঙ্গল অশুভ হলে অর্থাৎ হাতের তালুতে অত্যধিক কাটাকাটি বা তিল থাকলে কাজে অসাফল্য, ব্যবসায় ক্ষতি, সম্পত্তি নষ্ট ও লোকনিন্দার সম্ভাবনা দেখা যায়।
হাতের প্রধান প্রধান রেখা
শিরোরেখা : হস্তরেখাবিদদের কাছে শিরোরেখা হাত দেখার পক্ষে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় রেখা। সোজা সরলরেখা জাতকের প্রবল বাস্তববুদ্ধির ও সাংগঠনিক প্রতিভার পরিচয় দেয়।
যদি শুরুতে সোজা হয়ে তারপর নিচের দিকে বাঁকা হয়, তাহলে বোঝায় বাস্তববুদ্ধি ও কল্পনাশক্তির মিলন, ব্যবসায় সাফল্য এবং অর্থাগম।
শিরোরেখা যদি নিচের দিকে হৃদয়রেখার দিকে বেঁকে যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে হাতের মালিক ঝোগড়ুটে, খিটমিটে, এমন কী তার হাতে খুন-খারাবিও হয়ে যেতে পারে, অর্থের প্রতি অত্যধিক ঝোঁক।
রেখাটি যদি নিচের দিকে একটু একটু করে ঢালু হয়ে নামতে থাকে তাহলে জাতকের সৃজনশীলতা ও কল্পনাশক্তি বেশি থাকে। শিল্পী, সংগীতজ্ঞ, সাহিত্যিক, অভিনেতাদের হাতে মিলবে এই জাতীয় শিরোরেখা।
রেখাটি খুব বেশি ঢালু হলে তা অবশ্যই রোম্যান্টিসিজম এবং আদর্শবাদের চূড়ান্ত হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় জাতকের মনে আত্মহত্যার ইচ্ছে জেগে ওঠে।
ঢালু শিরোরেখা চন্দ্রস্থানে দুটি ভাগ হয়ে গেলে সাহিত্যপ্রতিভা বোঝায়।
শিরোরেখা যদি আয়ুরেখার সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় শুরু হয় তা জাতকের স্পর্শকাতরতা, সতর্ক-মনোবৃত্তি এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব নির্দেশ করে।
শিরোরেখা আয়ুরেখা থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলে এবং রেখাটি করতলের অনেকদূর পর্যন্ত থাকলে জাতক হয় স্বাধীন ও চিন্তাশীল মানসিকতার। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন কাজে এগিয়ে আসে। জনগণকে নিজের মত সহজ-সরলভাবে বোঝাতে সক্ষম হয়।
শিরোরেখাটি খুব ছোট হয়ে তালুর মাঝখানে শেষ হয়ে গেলে জাতক অত্যন্ত বাস্তববাদী-মানসিকতার পরিচয় দেয়।
রেখাটি সংক্ষিপ্ত ও খুব দৃঢ় হলে জাতকের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে হৃদয় শাসন করে।
শিরোরেখার উপর বিভিন্ন চিহ্ন
শিরোরেখায় যব চিহ্ন মানসিকভাবে ভেঙে পড়া ও মস্তিষ্কের অসুখ বোঝায়। কী কারণে মানসিক বৈকল্য দেখা দেবে তা নির্ভর করে কোন জায়গায় যব চিহ্ন আছে তার ওপর।
বৃহস্পতির ক্ষেত্রের নিচে শিরোরেখায় যব চিহ্ন থাকলে জাতক অতি উচ্চাকাঙ্খার জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, অথবা মানসিক রোগের শিকার হয়।
শনির ক্ষেত্রের নিচে শিরোরেখায় যব চিহ্ন থাকলে জাতক অতিমাত্রায় আত্মানুসন্ধান চালাতে গিয়ে নিরাশ হয়ে শেষ পর্যন্ত মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, অথবা মানসিক রোগের শিকার হয়।
রবির ক্ষেত্রের নিচে শিরোরেখায় যব চিহ্ন থাকলে খ্যাতি ও সাফল্যের পিছনে ছুটতে ছুটতে জাতক এক সময় অতিশ্রমে অথবা নিরাশায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে বুধের ক্ষেত্রের নিচে শিরোরেখায় যব চিহ্ন থাকলে জাতক ব্যবসা বা বিজ্ঞানসাধনার চিন্তায় অতি পীড়িত হয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
পুরো শিরোরেখাটা শিকলের মতো দেখতে হলে জাতক অতি দুর্বল-মস্তিষ্কের হয়। কোনও মানসিক আঘাত, কোনও গভীর চিন্তা, কোনও দুশ্চিন্তা বা কোনও গুরুদায়িত্ব অর্পিত হলে এরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে, অথবা মস্তিষ্কের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
কেবলমাত্র শিরোরেখার শুরুতে শিকল থাকলে দেখা যায় জাতক জীবনের শুরুতে মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতায় ভুগলেও পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।
শিকল শিরোরেখার শুধুমাত্র মধ্যভাগে থাকলে মধ্য-জীবনে মানসিক অসুস্থতা বোঝায়।
শিরোরেখার শেষপ্রান্তে শিকল থাকলে শেষ জীবনে মানসিক অসুস্থতা বোঝায়।
শিরোরেখাটি যখন অভগ্ন না হয়ে কিছু ছোট ছোট রেখার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে তখন জাতকের পক্ষাঘাত-প্রবণতা নির্দেশ করে।
আয়ুরেখা
আয়ুরেখা তর্জনীর কিছুটা নিচে থেকে শুরু হয়ে বুড়ো আঙুলের নিচের শুক্রের ক্ষেত্রটিকে ধনুকের মতো বাঁক দিয়ে ঘিরে মণিবন্ধের দিকে যায়।
আয়ুরেখা থেকে শারীরিক কাঠামো, জীবনীশক্তি, কর্মক্ষমতা, ভ্রমণ ইত্যাদির হদিশ পাওয়া যায়।
আয়ুরেখা থেকে শুরু হয়ে কোনও রেখা যদি বৃহস্পতির ক্ষেত্রের দিকে যায় তবে জাতকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও কাজ করার তীব্র ইচ্ছে দেখা যায়। এই বৃহস্পতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার রেখাটিতে কোনও যব বা দ্বীপ চিহ্ন থাকার অর্থ, জাতক তীব্র ইচ্ছাকে কার্যকর করতে গিয়ে অত্যধিক পরিশ্রমের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়বে।
আয়ুরেখা থেকে শুরু হয়ে কোনও রেখা যদি শনির ক্ষেত্রের দিকে যায় তবে জাতকের স্বভাব হবে কঠোর পরিশ্রমী, বিষণ্ণ ও একা থাকতে ইচ্ছুক।
আয়ুরেখা থেকে শুরু হয়ে কোনও রেখা যদি রবির ক্ষেত্র পর্যন্ত যায় তবে বোঝা যায় জাতক বহু মানুষের সঙ্গে চলতে ও তাদের কাছে প্রিয় হতে ইচ্ছুক। এরা সাধারণত সুবক্তা, অভিনেতা, রাজনীতিক হয়।
আয়ুরেখা বৃহস্পতির ক্ষেত্র থেকে শুরু হলে কোনও জাতকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বয়সের চেয়ে বেশি বুদ্ধির পরিপক্বতা বোঝায়
আয়ুরেখা মঙ্গলের প্রথম ক্ষেত্র বা ভারতীয় মতে বাহুর ক্ষেত্র থেকে শুরু হলে জাতক অতি সাহসী হয়। বিপদের মুখে ঝাঁপিয়ে পড়তে সামান্যতম দ্বিধা করে না।
আয়ুরেখা থেকে কোনও রেখা বেরিয়ে যদি চন্দ্রের ক্ষেত্রের দিকে যায় তবে তা জাতকের বিদেশ ভ্রমণ নির্দেশ করে।
আয়ুরেখাটি মণিষ্কের কাছাকাছি এসে দুটি ভাগ হয়ে গেলে এবং অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট রেখাটি ক্ষেত্রের দিকে গেলে বোঝায় জাতক তাঁর দেশ ছেড়ে বিদেশেই স্থায়ী আস্তানা গড়বে।
আয়ুরেখা থেকে কোনও রেখা চন্দ্রের ক্ষেত্রের দিকে এগুলে এবং রেখাটির শেষে যব বা দ্বীপ চিহ্ন থাকলে বোঝায় জাতকের বিদেশ যাত্রার শেষ পরিণতি হতাশা এবং নৈরাশ্যে ভরা।
আয়ুরেখা থেকে কোনও রেখা চন্দ্রের ক্ষেত্রে গিয়ে যদি ক্রস চিহ্নে শেষ হয়, তবে বিদেশযাত্রাকালে দুর্ঘটনায় জলমগ্ন হয়ে জাতকের মৃত্যু ঘটে।
আয়ুরেখা যদি শিকলের মতো দেখতে হয় তবে জাতকের জীবনীশক্তির অভাব দেখা যায়।
আয়ুরেখাটি শিরোরেখার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত থাকলে জাতক খুবই স্পর্শকাতর ও আত্মকেন্দ্রিক হয়।
আয়ুরেখা ও শিরোরেখার মধ্যে যদি সামান্য ফাঁক থাকে তবে দেখা যায় জাতক তার উচ্চাকাঙ্খাকে, কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে সচেষ্ট হয়। তবে স্বভাবে কিছুটা হঠকারী মানসিকতাও দেখা যায়।
আয়ুরেখা ও শিরোরেখার মধ্যে ফাঁক অত্যধিক হলে জাতক তার উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে, কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিতে সচেষ্ট হয়। তবে স্বভাবে কিছুটা হঠকারী মানসিকতাও দেখা যায়।
আয়ুরেখা ও শিরোরেখার মধ্যে ফাঁক অত্যধিক হলে জাতক একরোখা, অবিবেচক ও অতিমাত্রায় হঠকারী হন।
আয়ুরেখা, শিরোরেখা ও হৃদয়রেখা একই সঙ্গে যুক্ত থাকলে জাতক স্নেহ-প্রীতির বিষয়ে অসুখী, শোষিত মানুষদের প্রতি সহানুভূতিশীল ও সংগ্রামী হন। এই ধরনের হাতের মালিকই হন উগ্রপন্থী। এঁদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও থাকে বেশি। যদি আয়ুরেখা, শিরোরেখা ও হৃদয়রেখা বাঁ হাতের যুক্ত থাকে এবং ডান হাতে যুক্ত না থাকে তবে নির্দেশ করে জাতক এইসব প্রবণতা নিয়ে প্রথম জীবন শুরু করবেন এবং পরবর্তী জীবনে এই প্রবণতার পরিবর্তন ঘটবে।
হৃদয়রেখা
জীবনের প্রেম, প্রীতি, নাটকীয় মুহূর্তগুলি ক্ষেত্রে এই রেখার গুরুত্ব যথেষ্ট। রেখাটি যত স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয় ততই ভাল।
বৃহস্পতির ক্ষেত্রের কেন্দ্র থেকে হৃদয়রেখা শুরু হলে প্রেম-প্রীতির ব্যাপারে জাতকের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নির্দেশ করে। এরা সাধারণত তার চেয়ে অবস্থাপন্ন ঘরে বিয়ে করে।
হৃদয়রেখা বৃহস্পতির স্থানের একেবারে প্রথম অর্থাৎ তর্জনীর গোড়া থেকে শুরু হলে জাতক সব কিছুতেই 'বশি উৎসাহ দেখায়। যাকে ভালোবাসে তার কোনও ত্রুটি দেখতে পায় না। কাজেই প্রেমিক বা প্রেমিকার দিক থেকে অনেক সময়ই হতাশার সম্মুখীন হয়। তবু ঠেকে শিখতে চায় না।
হৃদয়রেখাটি যদি আরম্ভ হয় তর্জনী এবং মধ্যমার মাঝে তাহলে তা ইঙ্গিত করে শান্ত এবং গভীর চরিত্রের, বিশেষ করে প্রেমের ব্যাপারে। বৃহস্পতির আদর্শবাদিতা এবং শনির সরল গাম্ভীর্যের সংমিশ্রণ পাওয়া যায় এ রকম হাতে। হৃদয়রেখা যদি শনির স্থান থেকে শুরু হয়, তাহলে জাতক স্নেহ-প্রীতির বিষয়ে কম-বেশি আত্মকেন্দ্রিক এবং অহংবোধসম্পন্ন হয়।
হৃদয়রেখাটি হাতের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হলে এরা যাকে ভালোবাসে তার মুহূর্তের অদর্শনও সহ্য করতে পারে না। সুতরাং প্রেমের অতি আবেগ এদের দুঃখ দেয়।
হৃদয়রেখা থেকে ছোট ছোট রেখা বেরিয়ে এলে তা বোঝায় ভালোবাসার ব্যাপারে জাতক দৈহিক কামনা ছাড়া কিছু বোঝো না।
হৃদয়রেখাটি যদি শনির ক্ষেত্রের নিচু থেকে শুরু হয় তবে জাতক বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কোনও আকর্ষণ বোধ করে না। হৃদয়রেখা ভগ্ন হলে তা বোঝায় ভালোবাসার ব্যাপারে নৈরাশ্য।
হৃদয়রেখাটি যদি বৃহস্পতির ক্ষেত্রে দু-ভাগ হয়ে শুরু হয় তাহলে সেই হাতের অধিকারী হয় আদর্শবাদী, সৎ প্রকৃতির। তার ভালোবাসা হয় গভীর ও আন্তরিক। হৃদয়রেখাটি খুব সরু হলে বোঝায় বন্ধ্যাত্ব।
ভাগ্যরেখা
ভাগ্যরেখার গুরুত্ব নির্ভর করে হাতের আকারের ওপর। লম্বাটে দার্শনিক বা শিল্পী-মানসিকতার হাতে ভাগ্যরেখা দীর্ঘ ও গভীর হওয়ার গুরুত্ব যতটা, একটা চৌকো হাতে ততটাই দীর্ঘ ও গভীর ভাগ্যরেখার গুরুত্ব তারচেয়ে বেশি।
যদি এই রেখাটি কব্জি থেকে শনির স্থান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়, তাহলে তা ইঙ্গিত করে জাতকের সাফল্য ও সৌভাগ্যর। জাতকের এই সাফল্যের মূলে থাকে আত্মকেন্দ্রিক চরিত্র।
রেখটির উৎস যদি চন্দ্রের স্থান হয় এবং রেখাটি বাঁকাভাবে ওপরে উঠে যায় তাহলে জাতকের ভাগ্য গড়ে উঠবে অন্যের সাহায্য ও সহযোগিতায়।
রেখাটির উৎস যদি আয়ুরেখার সঙ্গে যুক্ত থাকে অথবা খুব কাছাকাছি থাকে তাহলে জাতক পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের প্রতি কর্তব্যতাড়িত হয়ে নিজের ইচ্ছাকে বলি দিয়ে থাকে।
রেখাটি যদি বৃহস্পতির ক্ষেত্রে অগ্রসর হয় তাহলে তা বিশেষ সাফল্যের ইঙ্গিত বহন করে। এরা কর্মজীবনে সর্বোচ্চ পদে পৌঁছে যায়।
ভাগ্যরেখাটি যদি হৃদয়রেখা বা শিরোরেখা পর্যন্ত এসে থেমে যায় তা সৌভাগ্যকে খণ্ডন করার ইঙ্গিত দেয়।
ভাগ্যরেখা যদি একাধিক হয়, তাহলে কর্মজীবনে অনেক সহজে সাফল্য পাওয়া যায়। ভাগ্যরেখা যদি দুটি হয় এবং একটি বৃহস্পতির ক্ষেত্রের দিকে অপরটি রবির ক্ষেত্রের দিকে যায় তবে সাধারণভাবে বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না জাতক একই সঙ্গে দুটি বৃত্তিতে নিযুক্ত।
সরু-সরু ছোট ছোট রেখা ভাগ্যরেখা থেকে বেরিয়ে এলে বা ভাগ্যরেখার পাশাপাশি থাকলে জাতকের জীবনে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রভাব নির্দেশ করে।
যদি ওই প্রভাবকারী সরু রেখাগুলো আসার পর ভাগ্যরেখা সবল হয়ে ওপরে উঠে যায় তবে জাতকের জীবনে বিপরীত লিঙ্গের প্রভাব সৌভাগ্যজনক হয়।
প্রভাবকারী সরু রেখার মধ্যে দ্বীপ চিহ্ন বা যব চিহ্ন থাকলে প্রভাবকারী জাতকের জীবনে দুর্ভাগ্যের সঙ্গে সঙ্গে কলঙ্কও নিয়ে আসে।
ভাগ্যরেখা না থাকা সত্ত্বেও জাতক যথেষ্ট সুখী হতে পারে যদি তার শিরোরেখাটি সুচিহ্নিত হয়। কিন্তু এই ধরনের মানুষের অনুভূতিশক্তির অভাব দেখা যায়। গভীর বোধশক্তির অভাব থাকার জন্য জীবনের কোনও ক্ষেত্রেই তুঙ্গে ওঠা সম্ভব নয়।
রবি রেখা
ভাগ্যরেখা যেমন সৌভাগ্য ও সাফল্যের ইঙ্গিতরেখা, রবিরেখা সেইরকম যশ, খ্যাতি ও সাফল্য চিহ্নিত করে।
শিল্পী বা দার্শনিক-হাতের যদি রবিরেখা ঢালু শিরোরেখা থেকে ওঠে তবে জাতকের কাব্যে, সাহিত্যে বা শিল্পে সাফল্য ও খ্যাতি বোঝায়।
রবিরেখা হৃদয়রেখা থেকে আরম্ভ হলে শিল্পকলার প্রতি জাতকের আকর্ষণ ও প্রতিভা নির্দেশ করে।
রবিরেখা আয়ুরেখা থেকে উঠলে এবং হাতটি শিল্পী-হাত হলে জাতক হয় সুন্দরের পূজারী। শিরোরেখাটি ঢালু শিল্পকলায় আসে সাফল্য।
রেখাটি মঙ্গলের স্থান থেকে উঠলে সাফল্য আসে অনেক সমস্যার পর।
রেখাটি চন্দ্রের ক্ষেত্র থেকে উঠলে জাতক অপরের সাহায্য ও সহযোগিতায় সাফল্য ও সম্মানলাভ করে।
হাতে যদি খুব সুন্দর ভাগ্যরেখা থাকে কিন্তু রবিরেখা না থাকে তবে জাতক জীবিকার ক্ষেত্রে বা কর্মক্ষেত্রে যতই সফল হোক না কেন তাদের আনন্দ থাকে না। হয়ে পড়ে আত্মকেন্দ্রিক। সামাজিক জীবনে মেলামেশা পছন্দ করে না।
রবিরেখায় চতুষ্কোণ থাকলে তা শত্রু থেকে আত্মরক্ষা করতে সাহায্য করে, বিশেষ করে শত্রুর আক্রমণের লক্ষ্য যদি হয় জাতকের সুনাম বা সম্মান।
রবিরেখায় যবচিহ্ন বা দ্বীপচিহ্ন থাকলে তা সম্মান ও সাফল্যের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বহু রবিরেখা থাকলে সাফল্য বারবার এড়িয়ে যায়।
বিবাহরেখা
বিয়ের রেখা থাকে বুধের ক্ষেত্রে। কড়ে আঙুলের নিচ থেকে অনামিকার নিচের দিকে এগোয় হৃদয়রেখার পাশাপাশি। দীর্ঘ ও স্পষ্ট বিবাহরেখা বিয়ের নির্দেশ করে।
বুধের ক্ষেত্রে ছোট রেখাগুলো প্রেমের ইঙ্গিত দেয়।
বিবাহরেখা হৃদয়রেখার যত কাছে থাকে বিয়ে তত তাড়াতাড়ি। যত দূরে থাকে বিয়ে ততই দেরিতে।
বিবাহরেখা অভগ্ন থাকলে এবং রেখাটিতে কোনও ক্রশ চিহ্ন না থাকলে সুখী বিয়ে বোঝায়।
বিবাহরেখা উপরে উঠে দু-ভাগ হয়ে গেলে বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভাবনা-চিন্তা ভিন্নতর হয়।
যদি বিবাহের রেখাটি বেঁকে হৃদয়রেখার দিকে নেমে যায় তবে সঙ্গী বা সঙ্গিনীর মৃত্যু বিচ্ছেদ আনবে ইঙ্গিত করে।
বিবাহরেখা থেকে একটি শাখারেখা হৃদয়রেখার দিকে নেমে এলে অসুখী বিবাহিত জীবন বোঝায়।
শুক্রের ক্ষেত্র থেকে কোনও রেখা এসে বিবাহরেখার সঙ্গে যুক্ত হলে বিয়েতে অন্যের দিক থেকে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা হয়।
বিবাহরেখার শেষে দ্বীপ চিহ্ন থাকলে বিয়ে নিয়ে কেলেঙ্কারি বা শেষপর্যন্ত বিবাহ-বিচ্ছেদ নির্দেশ করে।
বিবাহরেখায় ক্রুশ চিহ্ন থাকলে এবং রেখাটি শনির ক্ষেত্রে হলে জাতক বা জাতিকা ঈর্ষাপ্রবণতা, সন্দেহপ্রবণতা বা স্বার্থসিদ্ধির জন্য সঙ্গিনী বা সঙ্গীকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলতেও পিছপা হয় না।
যদি বিবাহরেখা বেশ স্পষ্ট ও পরিষ্কার থাকে, কিন্তু তা থেকে অনেক সরু রেখা নিচের দিকে ঢালু হয়ে থাকে তবে সেই হাতের মালিকের সঙ্গী বা সঙ্গিনী দীর্ঘ রোগভোগ করে।
বিবাহরেখা সোজা রবি রেখার ওপর গেলে বা বিবাহরেখার কোনও শাখা রবির ক্ষেত্রের দিকে গেলে জাতক বা জাতিকার বিয়ে হয় তাঁর চেয়ে বিখ্যাত বা বিশিষ্ট কারও সঙ্গে।
বিবাহরেখাটি নিচুর দিকে বেঁকে গিয়ে রবিরেখাতে ছেদ করলে বিয়ের দ্বারা সম্মান হারান বোঝায়।
চিহ্ন
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে হাতের রেখা যেমন জীবন, অতীত ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বয়ে বেড়ায় তেমনই বিশেষ কিছু চিহ্নও জীবন ও ভবিষ্যতের পথনির্দেশ করে। যেমন,
চিহ্নটি বৃহস্পতির ক্ষেত্রে থাকলে জাতকের জীবনে সম্মান, যশ, সাফল্য, কর্মে উন্নতি সবই বিপুলভাবে এসে হাজির হয়।
রবির ক্ষেত্রে চিহ্নটি অর্থ, সম্মান, সাফল্য দিলেও শান্তি দেয় না। তবে রবির ক্ষেত্রে রবিরেখা ছুঁয়ে তারা চিহ্ন থাকলে জাতকের জীবনে সম্মান, সাফল্য ও অর্থ অপর্যাপ্ত পরিমাণে আসার সম্ভাবনা প্রবল।
শনির ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন অশুভ। জাতক হয়ে পড়ে ভাগ্যের হাতের পুতুল। এদের জীবনে বিয়োগান্তের ভূমিকাই বেশি দেখা যায়।
চন্দ্রের ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন আনে বিপুল সম্মান। সাহিত্য, শিল্প, চারুকলা বা আবিষ্কার তা সে যে ক্ষেত্র থেকেই হোক না কেন।
বুধের ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন জাতককে সুবক্তা করে, বিজ্ঞানে সাফল্য এনে দেয়, এনে দেয় আর্থিক সাফল্যও।
শুক্রের ক্ষেত্রে তারা চিহ্ন জাতক-জাতিকাকে বিপরীত লিঙ্গের কাছে প্রচণ্ড আকর্ষণীয় করে তোলে। জীবনে আসে বহু প্রেম।
চিহ্নটি শনির ক্ষেত্রে থাকলে জাতক অদৃষ্টবাদী হয়ে পড়ে। চিহ্নটি শনির ক্ষেত্রে ভাগ্যরেখাকে স্পর্শ করে থাকলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ইঙ্গিত দেয়।
চিহ্নটি রবির ক্ষেত্রে থাকলে অর্থ ও যশের ক্ষেত্রে জাতকের প্রতিটি প্রচেষ্টা হতাশায় শেষ হয়।
বুধের ক্ষেত্রে ক্রুশ চিহ্ন জাতকের কুটিলতার প্রমাণ।
চন্দ্রের ক্ষেত্র চিহ্নটি থাকলে জাতক আবেগের তাড়নায় নিজেকে নিজেই বঞ্চিত করে ঠকায়।
চন্দ্রের ক্ষেত্রের তলায় ক্রুশ চিহ্ন থাকলে জলে ডুবে জাতকের মৃত্যু হয়।
শুক্রের ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে জাতক স্নেহ-প্রেম-প্রীতির ব্যাপারে আঘাত পায়৷ বৈভব ভোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
ভাগ্যরেখাকে স্পর্শ করে চিহ্নটি থাকলে জাতক পেশাগত সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রচুর বাধার মুখোমুখি হয়।
বৃহস্পতি ক্ষেত্রে চিহ্নটি প্রেম-প্রীতিতে সাফল্য আনে।
চতুষ্কোণ চিহ্নটি সাধারণত সমস্যাকে হাল্কা করতে সাহায্য করে, তাই এই চিহ্নটিকে রক্ষাকবচ বলা হয়ে থাকে যদি না চিহ্নটি হৃদয়রেখার ওপর থাকে।
শিরোরেখার ওপর চিহ্নটি থাকলে জাতক মস্তিষ্কের আঘাত বা মানসিক ব্যাধি থেকে রক্ষা পায়।
ভাগ্যরেখায় চিহ্নটি জাতককে ক্ষতি ও কষ্ট থেকে উদ্ধার করে।
রবির ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে জাতক সুনামহানি থেকে রক্ষা পায়।
চন্দ্রের ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে ভ্রমণ নিরাপদ হয়।
বুধের ক্ষেত্রে চতুষ্কোণ অত্যধিক মানসিক পরিশ্রম থেকে রক্ষা করে।
বৃহস্পতির ক্ষেত্রে চিহ্নটি উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে আসা হতাশা থেকে রক্ষা করে।
এটিও একটি অশুভ চিহ্ন। এর প্রধান কাজ হচ্ছে যে ক্ষেত্রে এই চিহ্ন আবির্ভূত হয়, তার গুণাবলীকে ধ্বংস করা বা কমিয়ে দেওয়া।
আয়ুরেখায় যচিহ্ন থাকলে অসুস্থতা ও দুর্বলতা বোঝায়। আয়ুরেখার শুরুতে দ্বীপচিহ্ন থাকলে শৈশবে বা কৈশোরে দুর্বল স্বাস্থ্য বোঝায়। একই ভাবে আয়ুরেখার মাঝে চিহ্নটি থাকলে যৌবনে এবং শেষে থাকলে বার্ধক্যে অসুস্থতা বোঝায়।
শিরোরেখায় চিহ্নটি থাকলে অতিরিক্ত পরিশ্রমে মানসিক দুর্বলতা বোঝায় বৃহস্পতির ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে অত্যাধিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রমে মানসিক বা স্নায়বিক রোগী হবার সম্ভাবনা থাকে।
শনির ক্ষেত্রে চিহ্নটি জাতককে বিষাদময় জীবন দেয়।
রবির ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে জাতক সাইনাস বা চোখের রোগ ভোগ করে।
বুধের ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে জাতক মানসিক দুশ্চিন্তায় কষ্ট পায়।
বৃত্ত বা চক্রচিহ্নটি ছোট ছোট রেখা দিয়ে সাধারণত তৈরি হয়। রবির ক্ষেত্র ছাড়া অন্য কোথায় চিহ্নটি শুভ ফল দেয়। চিহ্নটি যে ক্ষেত্রে বা যে রেখায় থাকে তাকে দুর্বল করে। চন্দ্রের ক্ষেত্রে চিহ্নটি থাকলে জলে ভ্রমণে বিপদের ইঙ্গিত দেয়৷
বৃহস্পতির ক্ষেত্রে এটি বোঝায় জনগণকে পরিচালনা করার ক্ষমতা, সাংগঠনিক ক্ষমতা, অপরকে পরামর্শ দেওয়ার সক্ষমতা, প্রত্যুপন্নমতিত্ব। রাজনীতির সঙ্গে মানুষদের ক্ষেত্রে চিহ্নটি অবশ্যই আশীর্বাদস্বরূপ।
শনির ক্ষেত্রে চিহ্নটি জাতককে বিজ্ঞান বা পরামনোবিদ্যা বিষয়ে গবেষক করে।
রবির ক্ষেত্রে চিহ্নটি ইঙ্গিত করে জাতক দৃঢ়মতি, পেশায় সফল, সুনামের অধিকারী এবং শান্ত-ব্যক্তিত্ব।
মঙ্গলের ক্ষেত্রে এই চিহ্ন বিপদের সময় প্রত্যুৎপন্নমতিত্বের লক্ষণ।
বুধের ক্ষেত্রে চিহ্নটি দেয় মানসিক ধৈর্য এবং প্রতিভা প্রকাশের ক্ষমতা।
শুক্রের ক্ষেত্রে চিহ্নটি কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়।
চন্দ্রের ক্ষেত্রে চিহ্নটি চিন্তায় সমতা রক্ষা করে।
একটি অত্যন্ত শুভ চিহ্ন। যে কোনও ক্ষেত্রেই এটি শুভফল দেয়। ত্রিশূল চিহ্ন যে ক্ষেত্র বা রেখাস্পর্শ করে থাকে সেই ক্ষেত্র বা রেখা জীবনের যে বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে সেই বিষয়ে অতি শুভফল লাভ করেন জাতক।
এই চিহ্ন যে ক্ষেত্রে বা রেখায় থাকে সেই ক্ষেত্রের বা রেখার গুণাবলী থেকে জাতক বঞ্চিত হয়।
বৃহস্পতির ক্ষেত্রে চিহ্নটি জাতককে অহংকারী ও দর্পিত করে।
শনির ক্ষেত্রে চিহ্নটি জাতককে প্রচণ্ড স্বার্থপর করে।
রবির ক্ষেত্রে চিহ্নটির জাতক মিথ্যে অহমিকায় ভুলের পর ভুল করে চলে।
“যে যত বড় জ্যোতিষী, তত বড় প্রতারক
চ্যালেঞ্জ নিলেই বুজরুকি ফাঁস”