আধুনিক সাহিত্য/গ্রন্থপরিচয়
‘আধুনিক সাহিত্য’ ১৩১৪ সালে গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। গ্রন্থে সন্নিবেশের ক্রম অনুসরণ-পূর্বক, প্রবন্ধগুলির সাময়িকপত্রে প্রকাশের সুচী নিম্নে প্রদত্ত হইল—
১ |
বঙ্কিমচন্দ্র
|
সাধনা | বৈশাখ ১৩০১ |
২ |
বিহারীলাল
|
সাধনা | আষাঢ় ১৩০১ |
৩ |
সঞ্জীবচন্দ্র
|
সাধনা | পৌষ ১৩০১ |
৪ |
বিদ্যাপতির রাধিকা
|
সাধনা | চৈত্র ১২৯৮ |
৫ |
কৃষ্ণচরিত্র
|
সাধনা | মাঘ, ফাল্গুন ১৩০১ |
৬ |
রাজসিংহ
|
সাধনা | চৈত্র ১৩০০ |
৭ |
ফুলজানি
|
সাধনা | অগ্রহায়ণ ১৩০১ |
৮ |
যুগান্তর
|
সাধনা | চৈত্র ১৩০১ |
৯ |
আর্যগাথা
|
সাধনা | অগ্রহায়ণ ১৩০১ |
১০ |
আষাঢ়ে
|
ভারতী | অগ্রহায়ণ ১৩০৫ |
১১ |
মন্দ্র
|
বঙ্গদর্শন | কার্তিক ১৩০৯ |
১২ |
শুভবিবাহ
|
বঙ্গদর্শন | আষাঢ় ১৩১৩ |
১৩ |
মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস
|
ভারতী | শ্রাবণ ১৩০৫ |
১৪ |
সাকার ও নিরাকার
|
ভারতী | আশ্বিন ১৩০৫ |
১৫ |
জুবেয়ার
|
বঙ্গদর্শন | বৈশাখ ১৩০৮ |
১৬ |
ডি প্রোফণ্ডিস
|
ভারতী | আশ্বিন ১২৮৮ |
উল্লিখিত তালিকার প্রথম প্রবন্ধটি ‘চৈতন্য লাইব্রেরি’র এক বিশেষ অধিবেশনে পঠিত হয়; সাধনায় যে আকারে প্রকাশিত হইয়াছিল তাহার সূচনা এবং অন্য বহু অংশ ত্যাগ করিয়া গ্রন্থে সংকলিত হইয়াছে—পরিত্যক্ত অংশগুলি সাধনায় বা নবমখণ্ড রবীন্দ্র-রচনাবলীর গ্রন্থপরিচয়ে দ্রষ্টব্য। ষষ্ঠ প্রবন্ধ ‘রাজসিংহ’ সাধনায় যেরূপ প্রকাশিত হয় তাহার সুচনার বহুলাংশ ত্যাগ করিয়া গ্রন্থে সংকলিত হইয়াছে। সাধনা অথবা নবমখণ্ড রবীন্দ্র-রচনাবলীর গ্রন্থপরিচয় দ্রষ্টব্য। পঞ্চদশ প্রবন্ধ বঙ্গদর্শনে ‘সাহিত্য-প্রসঙ্গ’ রূপে ‘রচনা সম্বন্ধে জুবেয়ারের বচন’ এই শিরোনামে মুদ্রিত হয়।
‘আধুনিক সাহিত্য' গ্রন্থে আলোচিত অধিকাংশ লেখকই বাংলা সাহিত্যে সুপ্রতিষ্ঠ; সমালোচিত গ্রন্থগুলিও প্রায়শঃ বহুখ্যাত। কয়েক ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থকারদের নাম সংক্ষেপে দিয়াছেন, কয়েক ক্ষেত্রে নাম দেওয়া হয় নাই, অথচ হয়তো আধুনিক পাঠকের পক্ষে ইঙ্গিতই যথেষ্ট নয়, সেজন্য পরবর্তী উল্লেখগুলির প্রয়োজন হইতে পারে—
‘ফুলজানি’ শ্রীশচন্দ্র মজুমদারের রচিত; যুগান্তর’ গ্রন্থের রচয়িতা শিবনাথ শাস্ত্রী; ‘আর্যগাথা’ ‘আষাঢ়ে’ ‘ম’ তিনখানি কাব্যেরই লেখক দ্বিজেন্দ্রলাল রায়; ‘শুভবিবাহ' গ্রন্থের লেখিকা শরৎকুমারী চৌধুরানী। ‘মুসলমান রাজত্বের ইতিহাস’ এবং ‘সাকার ও নিরাকার’ প্রবন্ধদ্বয়ের সূচনায় প্রয়োজনীয় উল্লেখ আছে।
শ্রীশচন্দ্র মজুমদার মহাশয়ের ‘ফুলজানি’ সম্পর্কে এবং সাধারণভাবে তাঁহার রচনারীতি সম্পর্কে এই গ্রন্থের সপ্তম নিবন্ধে যে অভিমত ব্যক্ত হইয়াছে তাহারই পরিপূরক হিসাবে ‘ছিন্নপত্র’ গ্রন্থের কয়েকটি অংশ সংকলন করা যাইতে পারে―
{{gap}•••আপনার বহিটা শেষ হয়ে গেলে সাধারণ পাঠকদের কিরকম লাগে জানতে ইচ্ছা রইল। হয়তো বা ভালো লাগতেও পারে। ভালো লাগবার একটা কারণ এই দেখছি, আপনি আপনার কেতাবের মধ্যে আমাদের চিরপরিচিত বাংলাদেশের একটি সজীব মূর্তি জাগ্রত আধুনিক সাহিত্য করে তুলেছেন, বাংলার আর কোনো লেখক এতে কৃতকার্য হন নি। এখনকার অধিকাংশ বাংলা বই পড়ে আমার এই মনে হয় যে, আধুনিক বঙ্গসাহিত্যের সময় বাংলাদেশই ছিল কি না ভবিষ্যতে এ নিয়ে তর্ক উঠতে পারে।••• ভবিষ্যতে এমন একজন তত্ত্বজ্ঞের প্রাদুর্ভাব হতে পারে যিনি নিঃসংশয়ে প্রমাণ করে দিতে পারবেন যে, বাংলা সাহিত্য যে দেশের সাহিত্য সে দেশ মূলেই ছিল না তখন বঙ্কিমবাবুর এত সাধের ‘সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলাং’ পুরাতত্ত্বের গবেষণার তোড়ে কোথায় ভেসে যাবে। পণ্ডিতেরা বলবেন, বঙ্গসাহিত্য একটা কলেজের সাহিত্য, এটা দেশের সাহিত্য নয় কিন্তু সে কলেজটা ছিল কোথায় এ বিষয়ে কিছুই মীমাংসা হবে না। আপনার সেই লেখাটির মধ্যে বাংলা দেশের সন্ধান পাওয়া যায়। ৭ মে ১৮৮৬
বলা বাহুল্য পত্রখানি শ্রীশবাবুর উদ্দেশে লিখিত। শ্রীশবাবুকে লেখা (ছিন্নপত্র গ্রন্থে সংকলিত) পরবর্তী আর-একখানি পত্রে রবীন্দ্রনাথ বলেন—
•••শীতল ছায়া, আম-কাঁঠালের বন, পুকুরের পাড়, কোকিলের ডাক, শান্তিময় প্রভাত এবং সন্ধ্যা এরই মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে, তরল কলধ্বনি তুলে, বিরহমিলন হাসিকান্না নিয়ে যে মানবজীবনস্রোত অবিশ্রান্ত প্রবাহিত হচ্ছে তাই আপনি আপনার ছবির মধ্যে আনবেন। প্রকৃতির শান্তির মধ্যে, স্নিগ্ধচ্ছায়াশ্যামল নীড়ের মধ্যে যে-সব ছোটো ছোটো হৃদয়ের ব্যাকুলতা বাস করছে, দোয়েল কোকিল বউকথাকও'এর গানের সঙ্গে মানবহৃদয়ের যে-সকল আকাঙ্ক্ষাধ্বনি মিশ্রিত হয়ে অবিশ্রাম আকাশের দিকে উঠছে, আপনার লেখার মধ্যে সেই ছবি এবং সেই গান মেশাবেন।••• বাংলার অন্তর্দেশবাসী নিতান্ত বাঙালিদের সুখদুঃখের কথা এ-পর্যন্ত কেহই বলেন নি••• বঙ্কিমবাবু ঊনবিংশ শতাব্দীর পোষ্যপুত্র আধুনিক বাঙালির কথা যেখানে বলেছেন সেখানে কৃতকার্য হয়েছেন, কিন্তু যেখানে পুরাতন বাঙালির কথা বলতে গিয়েছেন সেখানে তাকে অনেক বানাতে হয়েছে; চন্দ্রশেখর প্রতাপ প্রভৃতি কতকগুলি বড়ো বড়ো মানুষ এঁকেছেন। (অর্থাৎ তারা সকল-দেশীয় সকল-জাতীয় লোকই হতে পারতেন, তাদের মধ্যে জাতি এবং দেশকালের বিশেষ চিহ্ন নেই) কিন্তু বাঙালি আঁকতে পারেন নি। আমাদের এই চিরপীড়িত, ধৈর্যশীল, স্বজনবৎসল, বাস্তুভিটাবলম্বী, প্রচণ্ডকর্মশীলপৃথিবীর-এক-নিভৃত-প্রান্তবাসী শান্ত বাঙালির কাহিনী কেউ ভালো করে বলে নি। ১৮৮৮
“ডি প্রোফণ্ডিস” রবীন্দ্র-রচনাবলী অচলিত সংগ্রহ দ্বিতীয় খণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। আধুনিক সাহিত্য' গ্রন্থে এই প্রবন্ধের সংক্ষিপ্ত রূপ মুদ্রিত।