ইস্তাহার/জনতা
জনতার দেহে আজ প্রাণের সঞ্চার দেখি গ্রামে শহরে
অফিসে কাছারিতে কলে কারখানায় স্কুলে কলেজে রাজপথে;
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা সাম্যবাদ আজ দেয়ালের পরিচিত লিপি,
তাই সমাজ ব্যবস্থার চাই আশু পরিবর্তন।
এই উপমহাদেশে আজ এত দিনে রীতিমত কায়েম হল জনতার রাজ।
ছোট বড় উচু নীচু রোড রোলারের তলে পিষ্ট দলিত একাকার।
ফানুষের মতো ফাঁকা ঠুনকো বুলির ধাপ্পাবাজি ধরা পড়ে,
সখের নেতাদের স্বার্থপর পুরনো কারসাজির দিন খতম হয়েছে।
এবার বন্ধু, শ্রমের কড়ি দিয়ে কেনো তোমাদের অন্ন বস্ত্র,
যথারীতি বংশানুক্রমিক শোষণের মহার্য রক্তের দামে নয়।
ব্যাঙ্কের লেজারে কাগজে কালিতে তোমাদের কোটি টাকার হিসেব
কোন আগন্তুক সকালে বাজেয়াপ্ত হলে বিস্মিত হয়ো না, বন্ধু!
অনেক দিনের জমানো দুধ ক্ষীর মাখন এত কাল খেয়েছ,
এবার জনতার মাঝে সকলের পাশে বসে ডাল রুটি খাও।
মনে রেখ বন্ধু, বাড়তি বিত্ত আনে বাড়তি রক্তচাপের রোগ;
বিত্তহীনের অকালমৃত্যু বিরল, যেমন মাথাহীনের থাকে না মাথাব্যথা।
দিন আনা দিন খাওয়ার বাঁধাধরা সরল কাঠামোয়
ভেদাভেদের বিরাট ফাঁক ক্রমে ক্রমে ভরাট হয়ে আসে।
আজকের জনতার মুক্ত আদালতে সাম্যের আইনে বাঁধা
এই উপমহাদেশে এক জাতি। একতা।
আজকের জাতীয় জীবনে ভাঙাগড়ার নিত্য খেলায়
পরম শত্রু সংক্রামক ব্যাধির মতো ঘৃণ্য মারাত্মক আক্রমণে
দূষিত বন্যার মতো সমাজের স্তরে স্তরে ক্ষয়িষ্ণু আস্তানা পাতে
নিদারুণ দারিদ্র্যের পচনশীল ক্ষতগ্রস্ত নিঠুর অভিশাপ।
তাই বৈশাখের খরতর রুদ্র রৌদ্র দহনে ভস্মীভূত হয়ে যায়
গণজীবনের মূল মর্মকথা; প্রতিভার যোগ্যতার সাফল্যের উজ্জ্বল মানদণ্ড
বেসামাল দারিদ্র্যের দমকা ঝড়ে কালে কালে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়।
কত মূল্যবান প্রাণ নিঃশেষিত, কত মহান আত্মা লাঞ্ছিত লুণ্ঠিত হয়,
সাধু আর শয়তানের ঐতিহাসিক উপাধিতে স্বচ্ছ তুলনা আনে
নিশি শেষের চরম ব্যর্থতা হতাশা অথবা বিকৃত মনোবৃত্তির বিকাশ।
দুর্বাসার কঠিন অভিশাপ যেন দারিদ্র্যের প্রত্যক্ষ বিদ্রোহের ভাষা,
ভিক্ষা প্রতারণা আত্মদহন অথবা আত্মহত্যা কখনও পথের সম্বল;
কারণ দিনরাত মাটি কেটে পাথর ভেঙ্গে বোঝা বয়ে, তবু মেলে না
পেট ভরার মতো দু মুঠো ভাত, দুখানা রুটি কিংবা তৃষ্ণার জল।
স্নেহপুত্তলিকা রুগ্ন উলঙ্গ শিশুর ভাগ্যে বার্লি জোটে না,
পরম আদরের সোমত্ত বৌয়ের নেই পরনের এক টুকরো শাড়ী,
বেড়া ভাঙ্গা মাটির ঘরের জীর্ণ চালে নেই ছাউনির পাতা,
দারুণ খরায় মাঠের ফাটল বাড়ে, গোয়ালের বলদ মরে অনাহারে,
বাকি খাজনার দায়ে ঘরবাড়ী ঘটি বাটি মান ইজ্জত প্রাণটুকু পর্যন্ত
প্রতি বছরই মহাজনের হাতের মুঠোর মধ্যে অনায়াসে বাঁধা পড়ে।
জনজীবনের এই সব মামুলি কথা কে কবে শুনতে চায়?
কোন হৃদয়বান বোঝে সর্বহারাদের এই চিরাচরিত দুঃখ?
তথাকথিত ভদ্র সভ্য সমাজের চোখে অনীপ্সিত নোংরা জঞ্জাল
এই উপমহাদেশের উপেক্ষিত জনগণের যে বিরাট অংশ,
তারাই কোটি কোটি দরিদ্র নিম্ন মধ্যবিত্ত অবহেলিত নগণ্য মানুষ;
তবু দেশ সংগঠনে তাদের সস্তা জলবৎ রক্তের বিশেষ প্রয়োজন।
জনতার কণ্ঠে সংস্কারের সংগ্রামের উদার ডাক শোনা যায়,
সিভিল সাইরেণে দীর্ঘ দিনের ভয়াবহ কঠিন যুদ্ধের ঘোষণা,
জনগণের আশু পরম বৈরী দারিদ্র্যকে নিঃশেষিত করে মুছে দাও!
এবার তাই ধনী বন্ধুদের সন্ধির হাত উদারতায় প্রসারিত হোক!
যা কিছু সঞ্চিত রয়েছে তাদের গোপন ভারী ভাণ্ডে সমানভাগে
পুরনো দিনের পাওনার খতিয়ানে নির্ভুল গাণিতিক হিসেবে
আসরের সকলের মাঝে এনে সমানভাবে দিতে হবে বেঁটে,
সেই হবে দারিদ্র্যের সংগ্রামের স্বয়ংক্রিয় চরম সংহার হাতিয়ার।
এ কথা তো মানো, এই উপমহাদেশ তোমার আমার এবং তাহাদের;
এখানের গণ আদালতে এক জাতি সমতায় চাই একতা।
আজ সেই পরম লগ্ন এসেছে, বন্ধু। আর বৃথা দেরী নয়,
তোমাদের বৃহৎ প্রাসাদের অব্যবহৃত অখ্যাত কোন অন্ধকার কোণে
শত শত পথবাসী গৃহহীনের জন্যে সামান্যতম ঠাঁই চাই,
তোমাদের ভাঁড়ারের বাড়তি বাসি খাবারের অকৃপণ দানের দ্বারা
তাদের জ্বলন্ত জঠরের ক্ষুধার দাবানলের নিবৃত্তি অবশ্যই হবে!
শুধু মনে রেখ, বন্ধু, এক জাতি। একতা।