প্রস্থান

ক্ষেতের কাজে বর্ষায় ভিজে গায়ে কাদা মেখে
জোয়ান চাষী ঘরে ফিরেছে।
গা পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। কাঁথায় আপাদমস্তক ঢেকে
মাদুরের ওপর শুয়ে পড়েছে। সারা রাত্তিরের মধ্যে
শুধুমাত্র এক বাটি বার্লি পেটে পড়েছে।
অঘোরে ঘুমোচ্ছে। জ্বরে বেহুঁস।
বৌয়ের চোখের পাতা পড়ে না।
মানুষটার মুখের চেহারা যেন জ্বরের ঘোরে বদলে গেছে।
ডাকলে, সাড়া দেয় না। দরজার কপাটের মতো
প্রশস্ত বুকখানা রোগের আকস্মিক আক্রমণে
অনেকখানি সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। শালের খুঁটির মতো
বাহু দুখানাকে বাদুড়ের ডানার মতো গুটিয়ে
শুয়ে আছে যেন জলে ভেজা শুয়োপোকা।
বৌটা শাড়ীর আঁচলে নাক মুখ ঢেকে
ছলছল চোখে ঠাঁয়ে বসে রয়েছে
স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে।

অন্ধকার রাত বাড়ছে। জ্বরও বাড়ছে।
অনন্ত কবিরাজের বাড়ী অনেক দূর।
এত রাত্তিরে ডাকলে বুড়ো সাড়াই দেবে না।
ভালোয় ভালোয় রাতটা পোহালে
যাহোক একটা কিছু ব্যবস্থা করা যাবে
ভাবতে ভাবতে রুগ্ন স্বামীর পায়ের কাছে
মাথাটা রেখে কথন যেন বৌটা ঘুমিয়ে পড়েছে!

শিয়রে ঘটতে ঢাকা জল।
কেরোসিনের লণ্ঠনটা টিমটিম করে জ্বলছে।
বেড়ার ফাঁক দিয়ে কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরে এসে ঢুকছে।

ঘরের কানাচে কলার ঝোপে বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ
ঢিমে তালে টুপটাপ ঝরে পড়ছে।

অনেকক্ষণ আগে রাত ভোর হয়েছে।
বৌয়ের ঘুম ভেঙেছে।
কিন্তু চাষীর ঘুম ভাঙে নি।
তার ঘুম কোনদিনই আর ভাঙবে না।
হাউ মাউ করে কেঁদে উঠল বৌটা।
কলাঝোপে তখনও কান্নার মতো বৃষ্টির ফোঁটা ঝরছে।

শালের খুঁটির মতে সমর্থ হাত দুখানা
আর তাকে সোহাগ জানাতে পারবে না,
মাঠের ফসল কাটতে পারবে না,
লাঙলের কাস্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।