বিবৃতি

আমি কিছু বলতে চাই; তোমার কথা আমার কথা,
আমাদের সকলের সমাজ সংসারের কথা। সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে
অহঙ্কারী জীবনের পরম ব্যর্থতার গাঁথা, বিকৃত সমাজের
অপূর্ণ প্রবৃত্তির অসম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনার বার্তা।

আমরা গ্রহ উপগ্রহের মতো আপন আপন গতিপথে
আহ্নিক গতির বার্ষিক গতির মহড়া দিয়ে আয়ুর তহবিল
ক্রমে শূন্য করে আনি। আমরা প্রতেকটি আলাদা মানুষ,
সমাজের গ্রামে শহরে আলাদা এক একটি দুর্গের মতো
পাশাপাশি আমাদের অনিশ্চিত অবস্থান। নদীর ধারার
শুষ্ক রেখায় উপস্থিতির চিহ্ন নিতান্তই ক্ষীণতর। প্রায় শূন্য।

আমাদের অপহৃত অন্তরাত্মা নিরুপায়। প্রেতের দেহে
ক্যালেণ্ডারের পাতায় আয়ুর হিসেব রাখি। ক্রীতদাসের জীবনে
একান্ত অভ্যস্ত এই শতাব্দীর যত মধ্যবিত্ত, দরিদ্র। তোমরা। আমরা
সমাজের ইমারতের ছোট বড় স্তম্ভ। দীর্ণ বক্ষে ঝিমুনির ঘোরে
রুটি মেলে না। ইট পাথর সিমেণ্ট দেখেছি। দেখেছি গৃহ।
এই দেহ রক্ত মাংসের গৃহ অনাদরে অসম্মানে ভগ্নপ্রায়।

সংসারের রঙ্গমঞ্চে স্বামী স্ত্রী ভ্রাতা ভগ্নী মগ্ন অভিনয়ে,
আপন ভূমিকাটুকু স্বভাবতঃ শেষ করে সাজঘরে ঢোকে।
পরস্পরে পরিচিত সহযাত্রী; প্রয়োজনের সীমানার মাঝে
পরিমিত বাক্যালাপ কাষ্ঠ হাসি আদান প্রদানের পালা শেষে
খাঁচার কপাট বন্ধ। রাজনীতির নামে হুজুক। দেশপ্রেমে ভণ্ডামি!
স্বার্থসিদ্ধির সংগ্রাম। সুখের সংজ্ঞা দৈনন্দিন অভিধানে খুঁজি।

নিম্ন মধ্যবিত্তের স্তরে দরিদ্রের পা রাখবার আপ্রাণ চেষ্টা।
নিম্ন থেকে উচ্চতর স্তর মধ্যবিত্তের কাম্য। তারপর আরও উচ্চে

ধনীর সোপানে গতি যত্নবান শ্রমে কৌশলে। আচারে পোষাকে
অস্বাভাবিক। ছেলেরা মিশনারী স্কুলে ভর্তি হয়। বৌয়েরা মোটরে চড়ে,
পার্টিতে যায়। শহরের হোটেলে বসে বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত
মদের গেলাসে। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ মিথ্যে প্রমাণিত ফানুষের গতিতে।

তবুও গ্রামের গরীব চাষী অধিক ফলনের আশা রাখে।
মজুরের দৃষ্টি বোনাস, ওভারটাইমের বিলে। কেরানীরা পরিমিত
বাড়তি বেতনহারে উৎসাহী। শ্রমিকের জন্যে দৈনন্দিন অন্নবস্থটুকু।
চাহিদার তারতম্য প্রাপ্তির তুলনামূলক বিচারে সীমাবদ্ধ।