এতদ্দেশীয় স্ত্রীলোকদিগের পূর্ব্বাবস্থা/অহল্যা বাই

অহল্যাবাই।

 অহল্যাবাই মহারাষ্ট্র দেশে মালহর রায়ের স্ত্রী ছিলেন। তাঁহার এক পুত্র ও এক কন্যা ছিল। পুত্রের বিয়োগ হইল, ও কন্যার স্বামির কাল হওয়াতে তিনি সহমরণে প্রবৃত্ত হইলেন। অহল্যাবাই কন্যাকে নিবৃত্ত করিতে অনেক চেষ্টা করিয়াছিলেন; কিন্তু তিনি তাঁহার কথা শুনিলেন না। মাতা তখন শান্ত হইয়া কন্যার সহমরণ বসিয়া দেখিলেন। ত্রিশ বৎসর বয়ক্রমে অহল্যাবাই রাজ্যের ভার গ্রহণ করিলেন। তিনি বাহিরে আসিয়া সিংহাসনের উপর বসিয়া রাজকার্য্য করিতেন। প্রাতে উঠিয়া উপাসনা করণানন্তর গ্রন্থাদি পাঠ শুনিতেন, পরে ব্রত নিয়মাদি সাঙ্গ করিয়া দান করিতেন। মৎস্য মাংস খাইতেন না। আহারের পরে শ্বেতবস্ত্র পরিধান করিয়া কেবল গলায় এক ছড়া হীরকের চিক দিয়া বাহিরে আসিয়া বসিতেন। বেলা ২ টা অবধি ৬ টা পর্য্যন্ত রাজকার্য্যে নিযুক্ত থাকিতেন। প্রজাদিগের প্রাণ ও বিষয় রক্ষা করা ও তাহাদিগের নিকট হইতে অল্প কর লওয়ায় তাঁহার বিশেষ যত্ন ছিল। তিনি প্রজাদিগের দুঃখে দুঃখী ও সুখে সুখী ছিলেন; এজন্য তাহাদিগের সকলের কথা আপন কর্ণে শুনিয়া হুকুম দিতেন। ৬ টার পর তিনি আত্মোন্নতিতে নিযুক্ত থাকিতেন। পুরাণ শ্রবণে তাঁহার বিশেষ অনুরাগ ছিল। তিনি বলিতেন ঈশ্বরের নিকট আমার সর্ব্ব কার্য্যের জবাব দিতে হইবে, এজন্য তাঁহার অভিপ্রায়ের কিছু যেন অন্যথা করা না হয়।

 তিনি সত্যকে আদর করিতেন ও তোসামদকে ঘৃণা করিতেন। একজন ব্রাহ্মণ তাঁহার প্রশংসা করিয়া এক পুস্তক লিখিয়া তাঁহাকে প্রদান করিলে, তিনি ঐ পুস্তক নর্ম্মদা নদীতে ফেলিয়া দিতে আজ্ঞা দিলেন। যেমন ঈশ্বর পরায়ণা নারী ছিলেন, তেমনি তাঁহার বিষয় কার্য্যে পরিষ্কার বুদ্ধি ছিল। তিনি উত্তম উত্তম কর্ম্মচারী নিযুক্ত করিয়াছিলেন। রাজকার্য্য ৩০ বৎসর নিরুদ্বেগে নির্ব্বাহিত হইয়াছিল—কাহার সহিত বিবাদ কলহ ও যুদ্ধ হয় নাই। অহল্যাবাই অনেক মন্দির ধর্ম্মশালা দুর্গ কূপ ও রাস্তা নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন। তাঁহার দয়া কেবল মানব জাতিতে ছিল না। পশু পক্ষীদের প্রতি তাঁহার বিশেষ কৃপা ছিল। পশু পক্ষী ও মৎস্যের আরাম জন্য তিনি অনেক যত্ন প্রকাশ করিয়া গিয়াছেন।