এরাও মানুষ/সপ্তম পরিচ্ছেদ

সপ্তম পরিচ্ছেদ

 আকাশের রঙ কখন ধীরে ধীরে বদলে এসেছে। সূর্যদেবের রক্ত-রাঙা নৌকা তখন দিগন্ত-রেখার পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যাচ্ছে। চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে এসেছে। ঠিক এমনি নিস্তব্ধতা প্রতিদিন মাত্র দুবার করে দেখা দেয়; একবার যখন সূর্য ওঠে, ঠিক তার আগে, আর একবার যখন সূর্য ডুবে যায়, ঠিক তার আগে।

 বিসিবিংগুই উঠে দাঁড়ায়। সমস্ত দেহটাকে টেনে ঠিক করে নেয়। ইয়াসীর দিকে চেয়ে বলে, তুমি যা বলে, তার একটা কথাও আমি অবিশ্বাস করি না। তবে আজ নয়, আমাকে একটু ভেবে দেখতে দাও! নাঙ্গাকৌরার শপথ নিয়ে বলছি, আমি তোমার কথা ভুলবো না। যাবো, তোমাকে নিয়ে যাবো। তবে তার সময় এখনো আসে নি। শিকারের পর্ব শেষ হয়ে যাক। বাতোয়ালার সঙ্গে আমার বোঝাপড়া বাকি আছে। তার মাঝখানে তুমি এসো না। শিকারের পর্ব শেষ হোক···তখন আমি ব্যাংগুই শহরে যাবো···নিশ্চয়ই যাবো···আমার অনেক দিনের সাধ, আমি তুরুগু হবো···আপাতত তাই চললুম এখন ইয়াসীগুইন্দজা!

 ইয়াসীগুইন্দজা প্রার্থনা জানায়, নির্বিঘ্ন হোক তোমার পথ!

 দাঁড়িয়ে দেখে, বিসিবিংগুই ধীরে ধীরে পাহাড়ের পথের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেলো। মাথার ঝুড়ি মাথায় তুলে নিয়ে ইয়াসীগুইন্দুজা অন্য পথ ধরে নীচে নামতে শুরু করে।

 তখন ধীরে ধীরে প্রান্তরভূমিকে ছেয়ে নেমে এসেছে ধূসর সন্ধ্যা···তারায়-ভরা সন্ধ্যা। বাতাসে আল্‌গা দুলছে বনফুলের সুরভি। অন্ধকারের ফ্রেমে-আঁটা জ্বলন্ত বনের লাল ছবি। আকাশে উঠেছে কাস্তের মত বাঁকা চাঁদ, এক ফালি আলো। কাছাকাছি গভীর ঘন নীলের অগাধ বিস্তারে দপ দপ করে জ্বলছে শুধু একটা তারা।

 চারদিকে প্রশান্ত সৌন্দর্য···স্নিগ্ধ সুকোমল আলো···দেখলেই মনে হয় এই পরিবেশের মধ্যে অন্যায়ের, অসুন্দরের, অমঙ্গলের যেন কোন স্থান নেই।

 কিন্তু তার ভেতর থেকে মাঝে মাঝে কানে এসে পৌঁছায় ডুগডুগীর আওয়াজ, লিংঘার গুম্ গুম্ শব্দ···মনে হয় অন্ধকারে যেন আস্ফালন করছে কোন দুরন্ত প্রাণী···মহা-প্রশান্তির অন্তরে গুমরে উঠছে চির-দুর্বিনীত অশান্ত···