কবিতাসংগ্রহ/কিংবদন্তির ভোর/কিংবদন্তির ভোর

কিংবদন্তির ভোর


এসো, কিংবদন্তির ভোর, আহিরভৈরবী নিয়ে
ব্রাত্য জীবনের কথকতা ঢেকে দাও
আলোর সংকেতে
আজ ভুলে যাই স্রোতের ব্যর্থতা
দেখি, নতুন আদল ফিরে-ফিরে আসে
জলের প্রবাদে...

নোনামাটি থেকে অঙ্কুরের পাঠ নিই
আর, উপকূল থেকে
শিখে নিই বয়নের টানা ও পোড়েন
এই, এই তো পিপাসা
সব পরিভাষা ভেঙে দেয় রোজ
শুধু অন্নজল আর চলার রূপক থেকে
জেগে ওঠো শাকস্তুরী দিন...

জল গোপন বার্তার মতো বয়ে যাচ্ছে।
ঢেউয়ে-ঢেউয়ে সন্ধাভাষা
আর শ্যাওলা-পাথরের গায়ে পুঞ্জ পুঞ্জ
স্মৃতির জাঙাল
তবুও সমস্ত ক্লান্ত প্রতিবেদনের ভাষা
মুছে দেয় জল
প্রতীকের কৃতি ও গ্রন্থনা নিঃশব্দে ফুরোয়
বয়ে যায় জল, জলের স্বভাবে....
8
হে আলো, প্রণাম
অন্ধকার, তোমাকেও সেলাম সেলাম

বিন্দু বিন্দু মৃত্যু, প্রতিরাত
প্রতিদিন প্রতিশব্দহীন ক্ষয়

ওষধি খুঁজেছি, নেই কোনো
বিশল্যকরণী

এই চক্রব্যুহে সাত রথী নয়
বন্ধুরা ঘিরেছে।
এই তীর শিখণ্ডীর আর এই ক্ষত
দিয়েছে ফাল্গুনী

অন্ধকার, তোমাকে প্রণাম
হে আলো, সেলাম


তাতে পুড়ে যাচ্ছে চোখ
ঝলসে যাচ্ছে জিহ্বা
এই সমাচার আজ, শোনো

দাঁত থেকে নখ থেকে
উথলে উঠছে বিষ
ভাষা থেকে খুঁটে-খুঁটে তুলে নিচ্ছি।
উড়ালের স্মৃতি

তাতে পুড়ে যাচ্ছে চোখ
ঝসে যাচ্ছে জিহ্বা
এই সমাচার আজ, শোনো



আজ, প্রতিটি মুহূর্ত জুড়ে
অতিজীবিতের শোকবার্তা
প্রতিদিন মেনে নিই অসুখের
দীর্ঘ পরম্পরা
রোজ, নিজেই নিজের শব বয়ে আনি
মুখে ছোঁয়াই আগুন

যাক, পুড়ে যাক স্নায়ু
একাগ্নী বিষাদে


হলুদ লণ্ঠন, দুলে-দুলে উঠছে
বালকবেলার
গানের ইশকুল থেকে, ফরফর করে
উড়ে যাচ্ছে।
নোটেশন-ভরা খাতা আর সূর্যাস্তের
জটিল মুহূর্ত সব
মনে পড়ে পউষের মেড়ামেড়ি রাত
আমাদের কচিকাঁচা
প্রেমপত্রগুলি, খসড়ার স্কুপ থেকে
উঠে-আসা বিরহ-বিরহ খেলা
মনে পড়ে, হলুদ লণ্ঠন, বয়ঃসন্ধি জুড়ে
স্বপ্ন আর দ্বিধার প্রস্তুতি

এখন নির্জন। মধ্যদুপুরের গভীর স্তব্ধতা! মাঝে-মাঝে
আকাশের লিরিক-বিহীন মেঘে বৃষ্টির সংকেত। শুধু এই। তবু
রোদে-পোড়া মাঠে নাগরিক মেধা খোঁজে ভাষার পুরাণ। এই বার্তা
নিয়ে এল গৌড়বঙ্গে মফঃস্বলবাসী.. শেকড়ের টানে
জাগো, রাত্রির চুম্বনে জাগো, জাগো সমস্ত স্তব্ধতা ভেঙে, জাগো
নির্মিতির সজল নবীন

বহু কথা বলা হলো। এখন সঞ্চার
অন্ধকারে জেগে থাক আভা

আভা, শ্মশানের শেষ চিতা থেকে
রেখে যায় মুঠো-মুঠো ছাই।
ছাই সমস্ত মুখোশে মেখে নিই।
প্রতিটি গ্রন্থিতে তবু ক্ষত

ক্ষত, মিশে যায় দিনের গভীরে
১০
জন্মান্ধের কাছে কেন ধুলো
কেন বা হেমন্ত
বিনিদ্র রাত্রির রূপকথা লিখি
টীকা-ভাষ্য দিয়ে
এই, এই তো উৎসব, এই..
আমাদের যাপনের কথা...

১১
ধূলোকে চুম্বন করি নুয়ে যেতে-যেতে
লিখি দোঁহাকোষ
গ্রীষ্মের দুপুর আর শ্রাবণ-লাবনি নিয়ে লিখি পাশাখেলা
আর, খেয়াপারানির কড়ি গুনে নিই
লিখি ব্রতপালনের
গাথা, অভিশাপ, মৃত্যু ও সময়
হারানো এ-জীবনের পাণ্ডুলিপি রেখে যাই
নির্বোধ রাত্রির দিকে বয়ে যেতে-যেতে

১২
এই গাথা, অজস্র মৃত্যুর
নিঙড়ে নিক মুহূর্তের পরম্পরা

বাচালতা থেকে সরে যাক ভাষা
শিখে নিক মেঘের গোধুলিকাল

এই গাথা একাকী রাত্রির
শুষে নিক বিন্দু বিন্দু স্মৃতির ক্ষরন

১৩
ভাবো, অনুশাসনের বাগর্থ ভেঙেছি
আর সভ্যতার কোলাহল থেকে
সরিয়ে নিয়েছি সাবেক গ্রন্থনা, এবার শৈশব
পিপাসা শেখাবে
ধান ও জলের সুন্দর লিখি আজ, কতদিন
গেল খরার পাঁচালি আর
স্বগতোক্তি নিয়ে, প্রতীকের ভাষা খুঁজে-খুঁজে
এখন তাহলে উৎসে ফিরে যাক
চেতনাপ্রবাহ, শুনি শবর-শবরীকথা সুষুম্না-সংসার
দেখি মুখ লালকমলের
দেখি মুখ নীলকমলের

১৪
আলো হোক, আলো হোক, আলো হোক, আলো

মুহূর্তের সমস্ত পিপাসা মুছে নিয়ে
লেখো রাত্রি
লেখো জয়
লেখো আকাশ লেখো আকাশ লেখো হে আকাশ

স্পন্দন, তোমাকে শিখি
ধূলো, তোমাকেও
গাঢ় চুম্বনের দাগ ঘাসে-ঘাসে, দিনের পরিধি জুড়ে
শিখি এই প্রকাশের আয়ু

আলো হোক, আলো হোক, আলো হোক, আলো

১৫
জল ফিরে যাচ্ছে উৎসে। এখানেই শুরু হলো
সন্ধাভাষা। এই ভাষা রাত্রি-সহচর।.
ভুসুকুর ভাত নেই আজও। ফুটো হাঁড়ি থেকে
গলে গেছে রূপকের আয়ু। ক্রিয়া নেই
বিশেষণ নেই। শুধু ন্যাংটো অভিধার ছায়া
পড়ে আছে কঙ্কাল-শহরে। জল আজ
ফিরে যাচ্ছে উৎসে। মোহানার দিকে তার
যাওয়া নেই আর। খালি হাতে
ফিরে আসে কাহ্নপাদ শবরীর কাছে। ভাষা থেকে
খসে পড়ছে সন্ধানের আলো।

১৬
পুড়ে যাচ্ছে আঁখি-তারা, ইড়া ও পিঙ্গলা
ধ্যান ভেঙে যায়, কায়াতরু
থেকে জেগে ওঠে কামমোহিতের শ্লোক
এই পরম্পরা আজ শিখে নিচ্ছে
রূপান্তর, তবু দাহ থেকে যায় পুরোনো রিপুর
পাঁচ শাখা যায় পাঁচ দিকে
খামারের বুক চিরে, কোষে-কোষে, মাটি ও হাওয়ায়
পুড়ে যাচ্ছে স্মৃতিবীজ ধ্যানের প্রহর
ও আঁখি ও তারা ....