কলিকাতা কল্পলতা/প্রস্তাবনা

প্রস্তাবনা।

...এইক্ষণেও কলিকাতা নগরে এমন দুই চারিজন তোক পাওয়া যায় যাঁহারা অমরাবতীতুল্য চৌরঙ্গীকে ব্যাঘ্রনিবাসজঙ্গল ও গড়ের মাঠে হলপ্রবাহদৃষ্টিকরিয়াছেন, যে সময় দস্যুভয়ে সাহেবদিগের ভৃত্যগণ শুভ্রবস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া মলিন বেশে ঐ মাঠ দিয়া গমনাগমন করিত এবং রাত্রিযোগে সাহেবরা প্রাণভয়ে মুহুর্মুহু বন্দুক ধ্বনি করিতেন। “অন্যে পরে কাকথা” যে হেদুয়া পুষ্করিণীর পূর্ব্ব পশ্চিম তীর এক্ষণে বিদ্যাচর্চার গণ্যস্থান হইয়াছে দিবসের মধ্যভাগে সেইসরোবরকে লোকে ভয়াবহ জ্ঞানকরিত এবংসন্ধ্যার পর কাহার সাধ্য সেই মুখে গমন করে। একশত বৎসর হইল—কলিকাতা নগরী ভয়াবহ ব্যাঘ্র নাদির সজল জঙ্গলময় বসতিস্থলী ছিল কিন্তু এক্ষণে সেই কলিকাতায় নিয়ত ৫/৬ লক্ষ লোক বাস করিতেছে।

কলিকাতা কি ছিল এবং কি হইয়াছে তদ্বিষয়ে অধিক বক্তব্য পরপৃষ্ঠার তালিকায় প্রকটিত পুরাতন দুর্গের চিত্র দেখিলে এখনকার লোরোবিস্ময়াপন্ন হইবেন সন্দেহ নাই, যেহেতুএক্ষণেউক্ত দুর্গের চিহ্নমাত্র দ্রষ্টব্য নহে—পরন্তু তাহা অন্য কোন নগরের প্রতিরূপ বোধ হইতে থাকিবে। আচার, ব্যবহার, রীতি-নীতি, পরিচ্ছদ,ভাষা প্রভৃতি বিষয়ে অত্রত্য লোকের এই স্বল্পকাল মধ্যে এরূপ পরিবর্তন হইয়া আসিয়াছে যে যদি বৈষ্ণবচরণ শেঠ প্রভৃতি বিগত শতাব্দীর প্রসিদ্ধ লোকেরা দৈববশে পুনর্জীবন প্রাপ্ত হইয়া কলিকাতায় পুনরুদিত হন তবে এখনকার কৃতবিদ্য নব্য সম্প্রদায়কে দেখিয়া স্বদেশীয় জ্ঞান করিতে সাহসী হইবেন না।

অতএব এই সময়ে আসিয়াখণ্ডের* সর্ব্বপ্রধান নগরী এই কলিকাতায় শতবৎসরের পুরাবৃত্ত সংগ্রহ অতি প্রয়োজনীয় বোধ হইতেছে। পরে তদ্বিষয়ে চেষ্টা করাও ব্যর্থ হইবে। এখনও অনেক স্থানীয় লোকজীবিত আছেন এবং দুই-একখানি প্রাচীন পুস্তক প্রাপ্ত হওয়া যায়। কিন্তু কিছুকাল পরে এতদুভয় দুর্লভ হইয়া উঠিবে। এইসব বিবেচনা করিয়া“কলিকাতাকল্পলতা”নামে অভিনব গ্রন্থের রচনাকার্য্যেহস্তক্ষেপ করা গেল।

*আসিয়াখণ্ড - এশিয়া মহাদেশ