ক্ষণিকা/শেষ
শেষ
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না, ভাই, কিছু!
সেই আনন্দে যাও রে চলে
কালের পিছু পিছু।
অধিক দিন তো বইতে হয় না
শুধু একটি প্রাণ।
অনন্ত কাল একই কবি
গায় না একই গান।
মালা বটে শুকিয়ে মরে—
যে জন মালা পরে
সেও তো নয় অমর, তবে
দুঃখ কিসের তরে।
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না, ভাই, কিছু!
সেই আনন্দে যাও রে চলে
কালের পিছু পিছু॥
সবই হেথায় একটা কোথাও
করতে হয় রে শেষ,
গান থামিলে তাই তো কানে
থাকে গানের রেশ।
কাটলে বেলা সাধের খেলা
সমাপ্ত হয় ব’লে
ভাবনাটি তার মধুর থাকে
আকুল অশ্রুজলে।
জীবন অস্তে যায় চলি, তাই
রঙটি থাকে লেগে
প্রিয়জনের মনের কোণে
শরৎসন্ধ্যামেঘে।
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না ভাই, কিছু।
সেই আনন্দে যাও রে ধেয়ে
কালের পিছু পিছু॥
ফুল তুলি তাই তাড়াতাড়ি
পাছে ঝ’রেই পড়ে।
সুখ নিয়ে তাই কাড়াকাড়ি,
পাছে যায় সে স’রে।
রক্ত নাচে দ্রুতচ্ছন্দে,
চক্ষে তড়িৎ ভায়,
চুম্বনেরে কেড়ে নিতে
অধর ধেয়ে যায়।
সমস্ত প্রাণ জাগে রে তাই,
বক্ষোদোলায় দোলে—
বাসনাতে ঢেউ উঠে যায়
মত্ত আকুল রোলে।
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না, ভাই, কিছু।
সেই আনন্দে চল্ রে ছুটে
কালের পিছু পিছু॥
কোনো জিনিস চিনব যে রে
প্রথম থেকে শেষ,
নেব যে সব বুঝে-পড়ে—
নাই সে সময়-লেশ।
জগৎটা যে জীর্ণ মায়া
সেটা জানার আগে
সকল স্বপ্ন কুড়িয়ে নিয়ে
জীবন-রাত্রি ভাগে।
ছুটি আছে শুধু দুদিন
ভালোবাসবার মতো,
কাজের জন্যে জীবন হলে
দীর্ঘজীবন হত।
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না, ভাই, কিছু।
সেই আনন্দে চল্ রে ছুটে
কালের পিছু পিছু॥
আজ তোমাদের যেমন জানছি
তেমনি জানতে জানতে
ফুরায় যেন সকল জানা—
যাই জীবনের প্রান্তে।
এই-যে নেশা লাগল চোখে
এইটুকু যেই ছোটে
অমনি যেন সময় আমার
বাকি না রয় মোটে।
জ্ঞানের চক্ষু স্বর্গে গিয়ে
যায় যদি যাক খুলি,
মর্তে যেন না ভেঙে যায়
মিথ্যে মায়াগুলি॥
থাকব না ভাই, থাকব না কেউ—
থাকবে না, ভাই, কিছু।
সেই আনন্দে চল্ রে ধেয়ে
কালের পিছু পিছু॥