গ্রহ-নক্ষত্র/নক্ষত্র চেনা

নক্ষত্র চেনা

আকাশে চোখে যে ছয় হাজার আন্দাজ নক্ষত্র দেখা যায়, জ্যোতিষীরা তাহাদের সকলেরি হিসাব রাখেন। শুধু তাহা নয়, প্রত্যেকেরই এক-একটা নাম দিয়া তাহা কেতাবে ও নক্ষত্রদের ম্যাপে লিখিয়া রাখেন।

 তোমরা হয় ত ভাবিতেছ, গোটা পঁচিশ নাম আমাদের মনে রাখা যখন কঠিন, ছয় হাজার নক্ষত্রের নাম মনে রাখিবার জন্য বুঝি জ্যোতিষীরা রাত্রি জাগিয়া নাম মুখস্থ করেন। কিন্তু তাহা করিতে হয় না।

 পৃথিবীতে কত গ্রাম ও নগর আছে ভাবিয়া দেখ দেখি। গ্রমের কথা ছাড়িয়া তোমরা যদি বড় বড় সহরগুলির একটা হিসাব কর, তাহা হইলে সহরের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি হয় না কি? কিন্তু ইহাদের নাম আমরা মনে রাখিতে চেষ্টা করি না। আমরা পৃথিবীকে কখনই একটিমাত্র দেশ বলিয়া মনে করি না, সমস্ত স্থলভাগকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ভাগ করি এবং এক-একটা ভাগের এক-একটা নাম দিই। তার পর কেতাবে ও ম্যাপে তাহাদের নাম লিখি। এই সব নাম আমাদের প্রায়ই মনে থাকে। মনে না থাকিলে ম্যাপ দেখিয়া বই খুলিয়া কোথায় কোন্ সহর আছে ঠিক্ করি।

 নক্ষত্র চিনিবার জন্য জ্যোতিষীরা ঠিক্ ঐরকমই করেন। তাঁহারা সমস্ত আকাশটাকে খণ্ড খণ্ড করিয়া ভাগ করেন এবং এক-একটা ভাগকে এক-একটা নক্ষত্রমণ্ডল বা রাশি বলেন। তার পরে প্রত্যেক ভাগের কোথায় কোন্ নক্ষত্রটি আছে, আকাশের ম্যাপে লিখিয়া রাখেন এবং বড় বড় নক্ষত্রদের এক-একটা নামও দেন। কেহ নক্ষত্র চিনিতে গেলে, তাঁহারা আকাশে সেই নক্ষত্র-মণ্ডলগুলিকে দেখান এবং তাহাদের মধ্যে যে-সব নক্ষত্র আছে তাহাদের নাম শিখাইয়া দেন।

 পৃথিবীকে কি রকমে ভাগ করা হয়, তোমরা ভূগোলে তাহা পড়িয়াছ। এক এক রাজা যে জায়গাটুকুতে রাজত্ব করেন, সেই জায়গাগুলিকে প্রায়ই এক একটা দেশ বলা হয়। যেমন এ অঞ্চলে ইংরাজ যেটুকুতে রাজত্ব করেন, তাহা ভারতবর্ষ; কাবুলের আমীর যে অংশের রাজা তাহা আফগানিস্তান্; মিকাডো যেটুকু শাসন করেন, তাহা জাপান। কিন্তু আকাশে ত আর এ-রকম রাজা নাই এবং রাজ্যও নাই; কাজেই জ্যোতিষীরা আর এক রকমে আকাশকে ভাগ করিয়াছেন।

 নক্ষত্রগুলিকে তোমরা যদি কিছুক্ষণ ভাল করিয়া দেখিতে পার, তাহা হইলে দেখিবে, এক জায়গার কতকগুলি নক্ষত্র মিলিয়া যেন একগাছি মালার মত হইয়া রহিয়াছে। আর এক জায়গায় হয় ত দেখিবে, নক্ষত্রে নক্ষত্রে মিলিয়া যেন বেশ একটা তিন কোণা বা চারি কোণা জিনিস হইয়া দাঁড়াইয়াছে। শরৎকালে যখন সাদা মেঘ আকাশে ভাসিয়া বেড়ায়, তখন মেঘে কত রকম আকৃতি কল্পনা করা যায় দেখ নাই কি? একটা মেঘকে হয় ত ঠিক্ হাতীর মত দেখা গেল, কিছুক্ষণ পরে তাহা একটা গোরু বা বুড়ো মানুষের মত হইয়া দাঁড়াইল। এ-রকম মেঘের খেলা অনেক সময়েই দেখা যায়। জ্যোতিষীরা আকাশের নক্ষত্রদের লইয়া ঐ রকমই এক-একটা অদ্ভুত আকৃতির কল্পনা করিয়া থাকেন।

 তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে, আকাশে রাজা বা রাজ্য না থাকিলেও, তাহার জায়গায় জায়গায় নক্ষত্রেরা মিলিয়া যে-সব আকৃতির সৃষ্টি করিয়াছে তাহা আছে। জ্যোতিষীরা এই সব আকৃতিকে মনে রাখিয়া আকাশকে নানা অংশে ভাগ করেন এবং কতকগুলি নক্ষত্র একত্র হইয়া আকাশের যেখানে একটা ভেড়ার মত চেহারা পাইয়াছে, তাহাকে মেষরাশি বলেন; যেখানে ষাঁড়ের মত চেহারা পাইয়াছে তাহাকে বৃষরাশি বলেন এবং যেখানে বিছার মত আকৃতি করিয়াছে তাহাকে বৃশ্চিকরাশি বলেন। এই রকম রাশিতে এবং নক্ষত্র-মণ্ডলে সমস্ত আকাশ ভাগ করা রহিয়াছে। কেবল ইহাই নহে, কোন্ কোন্ নক্ষত্র মিলিয়া আকাশের কোন্ অংশে মেষ, বৃষ, বিছা প্রভৃতির মত হইয়া আছে, জ্যোতিষীরা তাহাও ম্যাপে আঁকিয়া রাখেন। যাহারা নক্ষত্র চিনিতে চায়, তাহাদিগকে সেই ম্যাপ দেখাইয়া আকাশের কোথায় মেষরাশি, কোথায় বৃষরাশি আছে, তাহা দেখাইয়া দেন।

 তাহা হইলে বুঝা যাইতেছে নক্ষত্র চেনা খুব শক্ত নয়। মনে কর, কেহ জিজ্ঞাসা করিল, জাপানের টোকিয়ো সহর কোথায়? যাহার ভূগোল জানা আছে, সে কানাডা বেল্‌জিয়ম্ ইংলণ্ড বা চীন দেশে খোঁজ না করিয়া, প্রথমেই জাপান দেশটিকে ম্যাপে দেখে এবং শেষে টোকিয়ো সহরকে আঙুল দিয়া দেখায়। সেই রকম যদি কেহ জিজ্ঞাসা করে বৃষরাশির রোহিণী নক্ষত্র কোথায়,—তাহা হইলে যাহার নক্ষত্র চেনা আছে, সে কোনো দিকে না তাকাইয়া আকাশের যেখানে বৃষরাশি আছে, তাহার খোঁজ করে এবং তার পরে সেখানে রোহিণী নক্ষত্রকে ধরিয়া ফেলে।

 পৃথিবীতে রাজার সংখ্যা খুব বেশি নয়, কাজেই রাজ্যের সংখ্যাও বেশি নয়। কিন্তু জ্যোতিষীরা আকাশকে যে-সব মণ্ডল বা রাশিতে ভাগ করিয়াছেন, তাহার সংখ্যা অনেক। ক্যাল্‌ডিয়ান্ নামে এক অতি প্রাচীন জাতি নক্ষত্রদের লইয়া সর্ব্বপ্রথমে নানা আকৃতির কল্পনা করিতেন। মেষপালন ইঁহাদের কাজ ছিল। তাঁহারা এখনকার লোকদের মত লেখাপড়া জানিতেন না এবং গ্রহ-নক্ষত্রদের গতিবিধির কথাও বুঝিতেন না। বাঘ-ভল্লুকের মুখ হইতে ভেড়াগুলিকে রক্ষা করিবার জন্য তাঁহারা খোলা মাঠের মধ্যে শুইয়া রাত জাগিয়া পাহারা দিতেন এবং নক্ষত্রদের দেখিয়া তাহাদের এক-একটা আকৃতি কল্পনা করিতেন। এই রকমে তাঁহারা সিংহ ভল্লুক ছাগল কুকুর প্রভৃতি জীবজন্তুর নামে আকাশকে অনেক ভাগে ভাগ করিয়া ফেলিয়াছিলেন। আজকালকার জ্যোতিষীরা সেই ক্যাল্‌ডিয়ান্‌দেরই ভাগকে মানিয়া চলিতেছেন। আমরা তোমাদিগকে আকাশের সকল নক্ষত্র-মণ্ডলের কথা বলিব না, কেবল প্রধান প্রধান গোটাকতককে চিনিবার উপায় বলিয়া দিব।

 তোমরা উত্তর-আকাশের সপ্তর্ষি নামে নক্ষত্র মণ্ডলকে দেখিয়াছ

সপ্তর্ষিমণ্ডল

কি? সাতটি বড় বড় নক্ষত্রকে লইয়া এই মণ্ডলটি হইয়াছে। এখানে সপ্তর্ষিমণ্ডলের একটা ছবি দিলাম। ইহার সাতটি নক্ষত্র কেমন সুন্দরভাবে সাজান আছে দেখিতেছ। যখন উত্তর-আকাশে সপ্তর্ষির উদয় হয়, তখন নক্ষত্রগুলিকে ঐ রকমেই সাজানো দেখা যায়।

 চৈত্র-বৈশাখ মাসে সন্ধ্যার সময়ে তোমরা এই মণ্ডলকে উত্তর আকাশের খুব উপর দিকে দেখিতে পাইবে এবং জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস হইতে তাহাকে এক-একটু করিয়া পশ্চিমে হেলিতে দেখিবে। তার পরে ভাদ্র আশ্বিন কার্ত্তিক অগ্রহায়ণ এই চারি মাসের সন্ধ্যাকালে যদি তোমরা সপ্তর্ষির খোঁজ কর, তাহা হইলে তাহাকে দেখিতেই পাইবে না। পৌষ মাসে খোঁজ করিলে সন্ধ্যার সময়ে আকাশের উত্তর-পূর্ব্ব কোণ হইতে ইহাকে এক-একটু করিয়া উপরে উঠিতে দেখিবে।

 যে ছবি দেওয়া গেল তাহার সহিত মিলাইয়া তোমরা হয় ত সপ্তর্ষিকে চিনিতে পারিবে। যদি চিনিতে না পার, তবে যাঁহারা একটু-আধটু জ্যোতিষের কথা জানেন তাঁদের কাহাকেও জিজ্ঞাসা করিয়ো, তিনি সপ্তর্ষিমণ্ডলকে চিনাইয়া দিবেন।

 দুই হাজার আড়াই হাজার বৎসর আগে আমাদের পূর্ব্বপুরুষেরা সপ্তর্ষিকে বেশ ভাল করিয়া জানিতেন এবং ইহার সাতটি নক্ষত্রের মরীচি, অত্রি, অঙ্গিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু, এবং বশিষ্ঠ এই সাতটি নাম দিয়াছিলেন। এগুলি আমাদের দেশের বড় বড় ঋষিদের নাম। এই জন্যই এই সাতটি তারা আকাশের যে জায়গাতে আছে, তাহাকে সপ্তর্ষিমণ্ডল বলা হয়।

 ইংরাজ-জ্যোতিষীরাও সপ্তর্ষির সাতটি তারার এক-একটি নাম রাখিয়াছেন; কিন্তু সেগুলি দেবতা বা ঋষিদের নাম নয়। তাঁহারা ইহাকে সপ্তর্ষিমণ্ডল না বলিয়া ভল্লুক-মণ্ডল বলিয়াছেন। সাতটি নক্ষত্রে মিলিয়া একটি ভল্লুকের আকৃতি করিয়াছে বলিয়া তাঁহাদের মনে হইয়াছিল। শেষের তিনটি তারাকে তাঁহারা ভল্লুকের লেজ বলেন।

 সপ্তর্ষির একটি তারা বড় মজার। ইহাকে আমাদের জ্যোতিষীরা বশিষ্ঠ বলেন। পরিষ্কার রাত্রিতে তোমরা যদি বশিষ্ঠকে ভাল করিয়া দেখ, তাহা হইলে উহার ঠিক্ গায়ে একটি খুব ছোট নক্ষত্র দেখিতে পাইবে। এটির নাম “অরুন্ধতী”। অরুন্ধতী বশিষ্ঠের স্ত্রী। সকলের ভাগ্যে কিন্তু ঐ ছোট নক্ষত্রটিকে দেখা ঘটে না। যাহাদের দৃষ্টিশক্তি খুব ভাল তাহারাই অরুন্ধতীকে দেখিতে পায়। তোমরা নিশ্চয়ই চেষ্টা করিলে দেখিতে পাইবে।

 তোমরা ধ্রুব-তারার বোধ হয় নাম শুনিয়াছ। সব তারা রাত্রিতে সরিতে সরিতে পশ্চিমে অস্ত যায়, কিন্তু ধ্রুব তারার অস্ত নাই,—উদয়ও নাই। আজ তাহাকে যেখানে দেখিতেছ, এক শত বৎসর পরে, হয় ত হাজার বৎসরও পরে তাহাকে ঠিক সেই জায়গাতেই দেখা যাইবে। সপ্তর্ষি দিয়া এই তারাটিকে বেশ চেনা যায়। ছবিতে সপ্তর্ষির “ক” ও “খ” নামে যে দুটি তারা দেখিতেছ, তাহারা ধ্রুব নক্ষত্রের সহিত সর্ব্বদাই প্রায় এক রেখায় থাকে।

 “ক” ও “খ”কে যোগ করিয়া তোমরা মনে মনে একটা রেখা কল্পনা কর এবং তার পরে এই রেখাকে নীচের দিকে বাড়াইয়া দাও। এই রকম করিলে রেখাটিকে একটি মাঝারি রকমের উজ্জ্বল নক্ষত্রের কাছ দিয়া যাইতে দেখিবে। এই নক্ষত্রটিই ধ্রুব-তারা। ইহা পৃথিবী হইতে অনেক দূরে আছে; সে দূরত্ব এত বেশি যে তাহার আলো পৃথিবীতে আসিয়া পড়িতে পথের মাঝেই সাতচল্লিশ বৎসর কাটাইয়া দেয়।

 ধ্রুব-তারা আকাশের ঠিক্ উত্তরে থাকে এবং সপ্তর্ষিমণ্ডলও উত্তর আকাশে ঘুরিয়া বেড়ায়। যদি গাড়ীতে বা নৌকায় যাইতে যাইতে রাত্রির অন্ধকারে তোমাদের কখনও পথ ভুল হইয়া যায়, তাহা হইলে এই সব নক্ষত্রদের দেখিয়া তোমরা অনায়াসে দিক্ ঠিক করিতে পারিবে। অকূল সমুদ্রে যখন জাহাজ চলে, রাত্রির অন্ধকারে দিক্ ঠিক করা বড় কঠিন হয়। জাহাজের কাপ্তেনেরা এই রকমে নক্ষত্র দেখিয়াই পথ চিনিয়া লন। দিনের বেলায় যখন তারা দেখা যায় না, তখন সূর্য্যকে দেখিয়া দিক্ ঠিক করিতে হয়।

 উত্তর আকাশে ক্যাসোপিয়া (Cassiopeia) নামে একটা বড় মজার মণ্ডল আছে। ইহার ভিতরকার নক্ষত্রগুলিকে সারি বাঁধিয়া ঠিক ইংরাজি অক্ষর “M” বা “W”এর মত থাকিতে দেখা যায়। এখানে ক্যাসোপিয়ার একটা ছবি দিলাম। ইহা সপ্তর্ষিমণ্ডলের ঠিক

উল্টা দিকে থাকে। অর্থাৎ ধ্রুব-তারার একদিকে সপ্তর্ষি এবং তাহার ঠিক উল্টা দিকে ক্যাসোপিয়াকে দেখা যায়। কাজেই বৎসরের যে মাসে সপ্তর্ষিকে দেখা যায় না, তখনি ক্যাসোপিয়াকে দেখা যায়।

 কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাসের সন্ধ্যার সময়ে উত্তর আকাশের বেশ একটু উঁচু জায়গায় তোমরা ক্যাসোপিয়াকে দেখিতে পাইবে। কিন্তু বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে তাহাকে একবারে দেখিবে না; তথন সপ্তর্ষিকেই আকাশে দেখিতে পাইবে। ক্যাসোপিয়া ঠিক ছায়াপথের উপরে আছে; ছায়াপথ ধরিয়া উত্তর আকাশে সন্ধান করিলে উহার খোঁজ পাইবে।

 আশ্বিন মাস হইতে ফাল্গুন পর্য্যন্ত আমাদের দেশের আকাশ বেশ পরিষ্কার থাকে। কার্ত্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে সন্ধ্যাকালে তোমরা ঠিক মাথার উপরকার নক্ষত্রগুলির দিকে একবার চাহিয়া দেখিয়ো। সেখানে একটি বড় নক্ষত্রমণ্ডল আছে। ইংরাজিতে এই মণ্ডলকে

পেগাসস্ (Pegasus) বলে। এখানে উহার একটা ছবি দিলাম। দেখ,—ইহার চারিটি বড় বড় নক্ষত্রে একটি বৃহৎ চতুর্ভুজের মত হইয়াছে এবং তাহার এক কোণ হইতে তিনটা বড় বড় নক্ষত্র একে একে উত্তর আকাশের নীচে নামিয়াছে। চতুর্ভুজকে যদি একখানা বড় রকমের ঘুঁড়ি বলিয়া ধরা যায়, তাহা হইলে নীচের তিনটি নক্ষত্রে ঘুঁড়ির লেজ হইয়াছে মনে হয় না কি?

 ধ্রুব-নক্ষত্রকে তোমরা বোধ হয় চিনিতে পারিয়াছ। যদি চিনিয়া থাক, তবে ধ্রুবের উপরেই তোমরা ক্যাসোপিয়াকে দেখিবে এবং ক্যাসোপিয়ার উপরে অর্থাৎ ঠিক মাথার উপরে পেগাসস্‌কে খুঁজিয়া পাইবে।

 তোমরা বোধ হয় মনে করিতেছে, ঘুঁড়ি ও তাহার লেজ সকলকেই পেগাসস্ বলে, কিন্তু তাহা নয়। কেবল ঘুঁড়িখানাই পেগাসস্ এবং তাহার লেজের তিনটি তারা এন্‌ড্রোমিডা-মণ্ডল। তাহা হইলে দেখ পেগাসসের লেজেই আর একটা নক্ষত্রমণ্ডল আছে।

 পেগাসস্ ও এন্‌ড্রোমিডাকে যদি তোমরা চিনিয়া থাক, তাহা হইলে তোমরা পার্সুস্ রাশিকে চিনিতে পারিবে। এই নক্ষত্রমণ্ডল পেগাসসের লেজের শেষ তারাটিতে আরম্ভ হইয়াছে। ছবিতে দেখিতে পাইবে, লেজের সহিত আড়াআড়ি ভাবে গোটা তিনেক নক্ষত্র রহিয়াছে, এগুলি পার্সুস্ রাশির নক্ষত্র। তোমরা আগে “আল্‌গল” অর্থাৎ “দৈত্য-তারা”র নাম শুনিয়াছ। এটি বেশ উজ্জ্বল তারা কিন্তু প্রায় তিন দিন অন্তর ইহার আলো ভয়ানক কমিয়া আসে। এই অদ্ভুত নক্ষত্রকে তোমরা পার্সুস্-মণ্ডলে দেখিতে পাইবে। কোথায় খুঁজিলে সন্ধান পাইবে তাহা ছবিতে আঁকিয়া দিলাম। ছবি দেখিয়া আকাশে পার্সুস্‌কে চিনিয়া লইয়ো এবং তার পরে ছবির সহিত মিলাইয়া আল্‌গলের সন্ধান করিয়ো,—তাহাকে নিশ্চিত দেখিতে পাইবে।

 একে একে অনেকগুলি নক্ষত্রমণ্ডলের কথা তোমাদিগকে বলিরাম। ক্যাসোপিয়া, এন্‌ড্রোমিডা, পার্সুস্,—এ সকলাই ইংরাজি নাম। ইহাদের বাংলা বা সংস্কৃত নাম নাই। এই নামগুলির সঙ্গে কতকগুলি মজার গল্প আছে।

 একটা গল্প তোমাদের বলি, শুন।

 অনেক দিন আগে গ্রীস্‌দেশে সিফস্ (Cepheus) নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর রাণীর নাম ছিল ক্যাসোপিয়া। রাজা ও রাণী অনেক দিন সুখে রাজত্ব করিয়াছিলেন, কিন্তু তাঁহাদের পুত্র সন্তান ছিল না। এন্‌ড্রোমিডা নামে কেবল এক পরমা সুন্দরী কন্যা ছিল। কন্যার রূপ ও গুণের কথা দেশ-বিদেশে ছড়াইয়া পড়িয়াছিল।

 এমন সুখের রাজ্যেও কিন্তু মহা ভয় দেখা দিল। রাজধানীর নিকটে একটা কিম্ভূতকিমাকার রাক্ষস আসিয়া প্রতিদিন গণ্ডায় গণ্ডায় মানুষ খাইতে আরম্ভ করিল। যাহারা রাক্ষসটাকে দেখিয়াছিল তাহারা বলিতে লাগিল,—উহার শরীরের পিছনটা সাপের মত, সম্মুখটা কুমীরের মত, তার উপরে আবার দুই পাশে দুটা বড় বড় ডানা! যাহা হউক জলে স্থলে আকাশে সব জায়গায় সে অনায়াসে বেড়াইয়া ভয়ানক উৎপাত আরম্ভ করিল। জালে ধরিতে গেলে সে জাল খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিতে লাগিল,—শিকারীদের বাণ তার গায়ে ঠেকিয়া বাঁকিয়া যাইতে লাগিল।

 রাজা গণক ঠাকুরকে ডাকিলেন। অনেক পাঁজিপুথি ঘাঁটিয়া ঠাকুর বলিলেন,—এই রাক্ষস সামান্য নয়। ইহার নাম হাইড্রা (Hydra)। স্বয়ং জলদেবতা রাগ করিয়া সিফসের রাজ্য নষ্ট করিবার জন্য উহাকে পাঠাইয়াছেন। জলদেবতার অনেকগুলি সুন্দরী কন্যা ছিল; কিন্তু রাজকুমারী এন্‌ড্রোমিডার রূপগুণ তাদের চেয়েও বেশি। ইহা দেখিয়াই জলদেবতা এন্‌ড্রোমিডাকে হত্যা করিবার জন্য হাইড্রা রাক্ষসকে পাঠাইয়াছেন।

 দেশময় রাষ্ট্র হইয়া গেল, এন্‌ড্রোমিডাকে খাইতে না পারিলে হাইড্রা রাজ্য ছাড়িবে না। রাজা ভয়ানক চিন্তিত হইয়া পড়িলেন। প্রজারা বিদ্রোহী হইয়া রাজবাড়িতে আসিয়া এন্‌ড্রোমিডার খোঁজ করিতে লাগিল।

 রাজা ও রাণী কন্যাকে কিছুক্ষণ লুকাইয়া রাখিয়াছিলেন বটে, কিন্তু একেবারে সকলকে ফাঁকি দিতে পারিলেন না। মত্ত প্রজারা এন্‌ড্রোমিডাকে ধরিয়া ফেলিল এবং নদীর ধারের এক পাহাড়ে শিকল দিয়া বাঁধিয়া রাখিল। তাহারা ভাবিতে লাগিল, সেই রাক্ষসটা রাত্রিতে এন্‌ড্রোমিডাকে খাইয়া পরদিন দেশ ছাড়িয়া পলাইয়া যাইবে।

 রাজা ও রাণী এন্‌ড্রোমিডার জন্য কাঁদিয়া কাঁদিয়া পাগলের মত হইয়া গেলেন এবং এন্‌ড্রোমিডা হাতে পায়ে শিকল পরিয়া একলাটি কাঁদিতে লাগিলেন।

 রাত্রি দুপুর হইয়া গিয়াছে, কাঁদিতে কাঁদিতে বোধ হয় এন্‌ড্রোমিডার একটু ঘুম আসিয়াছিল;—এমন সময়ে খুব বড় একটা পাখীর ডানার ঝট্‌পট্ শব্দে তাঁর ঘুম ভাঙিয়া গেল। তিনি মনে করিলেন, এইবার বুঝি রাক্ষস আসিল। ভয়ে ভয়ে চোখ খুলিলেন, কিন্তু রাক্ষসকে দেখিতে পাইলেন না। দেখিলেন, এক পরমসুন্দর বীরপুরুষ তীর-ধনুক হাতে করিয়া সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছেন। তাঁর পায়ের খড়মের সঙ্গে দুটা পাখীর ডানা বাঁধা,—সেই ডানায় ভর করিয়া তিনি কোথা হইতে উড়িয়া আসিয়াছেন। বীরপুরুষ নিজের পরিচয় দিয়া বলিলেন, তাঁহার নাম পার্সুস্, বিপদের কথা শুনিয়া রাজকন্যাকে উদ্ধার করিতে আসিয়াছেন।

 পার্সুস্‌কে কাছে পাইয়া এন্‌ড্রোমিডা খুব খুসী হইলেন এবং তাঁর ভয়ও কমিল। পার্সুস্ রাজকুমারীকে ভরসা দিয়া নিকটের এক জঙ্গলের মধ্যে লুকাইয়া রহিলেন।

 রাত্রি যখন প্রায় শেষ হইয়া আসিয়াছে, তখন হাতীর ডাকের মত একটা শব্দে এন্‌ড্রোমিডা চম্‌কাইয়া উঠিলেন। নদীর দিকে তাকাইয়া দেখিলেন, জল তোলপাড় করিয়া দশটা হাতীর মত দেহ লইয়া হাইড্রা-রাক্ষস পাহাড়ের দিকে ছুটিয়া আসিতেছে। কিন্তু তাহাকে আর বেশি দূর আসিতে হইল না, পার্সুসের দুইটা তীরের আঘাতে তাহার দেহ দুই খণ্ড হইয়া গেল!

 ভোর হইলে লোকে ভাবিল, এন্‌ড্রোমিডাকে বুঝি রাক্ষসে খাইয়া ফেলিয়াছে। কিন্তু যখন তাহারা শুনিল, বীর পার্সুস্ রাক্ষস বধ করিয়া এন্‌ড্রোমিডাকে উদ্ধার করিয়াছেন, তখন তাহারা খুবই আশ্চর্য্য হইল। রাজা ও রাণী কন্যাকে ফিরিয়া পাইয়া পরম সুখী হইলেন। দেশে আবার শান্তি ফিরিয়া আসিল। রাজা সিফস্ খুসী হইয়া এন্‌ড্রোমিডার সহিত পার্সুসের বিবাহ দিলেন এবং অর্দ্ধেক রাজ্য মেয়ে জামাইকে দান করিলেন।

 তোমরা বুঝিতেই পারিতেছ, যে গল্পটি বলিলাম তাহা সত্য নয়। কিন্তু ইহাতে আগে গ্রীসের লোকেরা বিশ্বাস করিত; এবং বলিত, রাণী ক্যাসোপিয়া, রাজ-জামাতা পার্সুস্ এবং রাজকন্যা এন্‌ড্রোমিডা মৃত্যুর পর এক-একটা নক্ষত্রমণ্ডল হইয়া আকাশে রহিয়াছেন।

 সিফস্ এবং হাইড্রাও উত্তর-আকাশের দুই স্থানে আছে। তোমর যখন নক্ষত্রের বড় ম্যাপ দেখিয়া তারা চিনিতে শিখিবে, তখন ঐ দুইটি নক্ষত্র-মণ্ডলকে দেখিতে পাইবে।

 যাহা হউক এখন অন্য নক্ষত্র-মণ্ডলের পরিচয় দেওয়া যাউক। পূর্ব্ব পৃষ্ঠায় একটা ছবি দিলাম। দেখিলেই বুঝিবে, ছবিতে ধ্রুব-তারা ও ক্যাসোপিয়া আছে। তার পরে পার্সুসের সেই তিনটি তারাও আছে। কিন্তু পার্সুস্-মণ্ডল এখানে শেষ হয় নাই। ছবিতে দেখিবে, একগাছি মালার মত বাঁকিয়া গিয়া পার্সুসের অপর তারাগুলি “সাতভাই” মণ্ডলে ঠেকিয়াছে।

 “সাত ভাইকে” তোমরা আকাশে দেখ নাই কি? কেহ কেহ ইহাকে “সাত বোন্”ও বলে। অগ্রহায়ণ মাসে সন্ধ্যার পরে ইহাকে পূর্ব্ব-আকাশে দেখিতে পাইবে। দেখিলে বোধ হইবে, যেন কতকগুলি জোনাকী পোকা জড় হইয়া মিট্‌মিট্ করিতেছে। চেষ্টা করিলে তোমরা ইহাতে অনায়াসে ছয়টি তারা গুণিয়া বাহির করিতে পারিবে। দূরবীণে কিন্তু “সাত ভাইয়ে” প্রায় চারিশত নক্ষত্র দেখা যায়। আমাদের দেশের প্রাচীন জ্যোতিষীরা এই সব নক্ষত্রকে কৃত্তিকা-রাশি বলিতেন। ইহা বৃষরাশিরই একটা এংশ

 কৃত্তিকা অর্থাৎ “সাত-ভাইয়ের” নীচেই তোমরা রোহিণীকে দেখিতে পাইবে। এটি লাল রঙের বেশ একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিন কোণার মত যে একটু জায়গায় অনেকগুলি নক্ষত্রকে জটলা করিতে দেখিবে, সেখানেই রোহিণীকে খুঁজিয়া পাইবে। আমাদের প্রাচীন জ্যোতিষীরা বলিতেন, রোহিণী চন্দ্রের স্ত্রী এবং বুধ গ্রহটি রোহিণী ও চন্দ্রের পুত্র।

 তোমরা আকাশে “কালপুরুষ” নামক নক্ষত্রমণ্ডলকে দেখিয়াছ কি? সমস্ত আকাশে এমন সুন্দর মণ্ডল বোধ হয় আর নাই। এখানে তাহার একটা ছবি দিলাম। রেখা টানিয়া নক্ষত্রের যোগ করিয়া দিয়াছি,—ঠিক

কালপুরুষ

যেন একটা মানুষের চেহারা হইয়াছে। তাহার হাতে ধনুক মত আছে, কোমরে কোমর-বন্ধ আছে; কোমর-বন্ধে তলোয়ার ঝুলানো আছে। ইহাই কাল-পুরুষ। ইহার ইংরাজি নাম ওরায়েন্ (Orion)।

 অগ্রহায়ণ মাসের শেষাশেষি সন্ধ্যার পরে, পূর্ব্ব-আকাশে তাকাইলেই তোমরা কাল-পুরুষকে দেখিতে পাইবে। মাঘ মাসের সন্ধ্যায় তাহাকে প্রায় মাথার উপরে দেখিবে। তার পরে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের সন্ধ্যাকালে তাহাকে পশ্চিমে অস্ত যাইতে দেখা যাইবে। আগে আমরা কাল-পুরুষের যে একটি নীহারিকার ছবি দিয়াছি, তাহা ইহারি কোমরবন্ধের নীচে তলোয়ার খানির মধ্যে আছে। যদি দূরবীণ দিয়া কখনো নক্ষত্র দেখার সুবিধা হয়, ঐ নীহারিকাটিকে একবার দেখিয়া লইয়ো।

 “সাতভাই” সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনা যায়। “সাতভাই”কে আমাদের দেশের কোনো কোনো জ্যোতিষী “মাতৃমণ্ডল” নাম দিয়াছেন। সাধারণ লোকের বিশ্বাস ছিল, মাতৃমণ্ডলের ছয়টি তারা সপ্তর্ষি-মণ্ডলের ছয়জন ঋষির স্ত্রী। “কালপুরুষকে” লইয়া যে গল্প আছে, তাহা আবার অন্য রকম। প্রজাপতি ও ঊষা নামে দুইটি দেবতার কথা আমাদের অতি প্রাচীন ধর্ম্মগ্রন্থ বেদে লেখা আছে। গল্পে শুনা যায়, প্রজাপতি ও ঊষা হরিণের আকৃতি লইয়া নাকি কালপুরুষদের তারার মধ্যে লুকাইয়া আছে।

 ঐ দুই নক্ষত্রমণ্ডল-সম্বন্ধে ইংরাজিতে যে গল্প আছে, তাহা বড় মজার।

 আমাদের সরস্বতী যেমন বিদ্যার দেবতা, গ্রীকদের ডিয়ানা নামে সেই রকম এক দেবী ছিলেন। তাঁহাকে সকলে চন্দ্র-সূর্য্যের আলোর দেবতা বলিয়াও মানিত। ডিয়ানার ছয় জন সখী ছিল। তাহাদের কাজকর্ম্ম বেশি ছিল না; এইজন্য ডিয়ানা দেবী রাত্রিতে ঘুমাইয়া পড়িলে তাহারা জ্যোৎস্নার আলোতে পাহাড়-পর্ব্বতে বেড়াইয়া গান করিত ও নাচিত।

 এই সময়ে গ্রীস দেশে ওরায়েন্ নামে একজন ব্যাধ ছিল। সে পাহাড়-পর্ব্বতে শিকার করিয়া বেড়াইত। একদিন ঐ ছয় সখীদের সঙ্গে ওরায়নের দেখা হইয়া গেল। তাহার হাতে ধনুক-বাণ ঢাল-তলোয়ার ছিল, তার উপরে চেহারাটাও যমদূতের মত ভয়ানক ছিল। এই সব দেখিয়া শুনিয়া সখীরা ভয় পাইয়া পলাইতে লাগিল। ওরায়েন্ ভাবিল এ কি কাণ্ড! উহারা দৌড়ায় কেন? সে মজা দেখিবার জন্য সখীদের পিছনে দৌড়িতে লাগিল কিন্তু তাহাদের ধরিতে পারিল না। ধরা পড়িবার আগেই ছয় সখী ছয়টি পায়রার মূর্ত্তি গ্রহণ করিয়া আকাশে উড়িতে লাগিল এবং দেখিতে দেথিতে অনেক উপরে উঠিয়া ছয়টি নক্ষত্রের আকারে আকাশে ভাসিয়া রহিল। গ্রীস্ দেশের লোকেরা বলে, ঐ ছয়টি নক্ষত্রই একত্র হইয়া আজও আকাশে রহিয়াছে। ইহারাই আমাদের “সাতভাই” অর্থাং কৃত্তিকা-রাশি। আর সেই ব্যাধটিই কালপুরুষ। এইজন্যই ইংরাজিতে কালপুরুষকে আজও ওরায়েন্ বলা হয়।

 কালপুরুষ আকাশে উঠিয়া বাস করিতে আরম্ভ করিলে, তাহার পোষা শিকারী কুকুরটাকে ছাড়িতে পারে নাই। ইহাও এখন একটা নক্ষত্র-মণ্ডল হইয়া আকাশে আছে। ছবিতে কুকুর-মণ্ডল তোমরা দেখিতে পাইবে। ইহার মাঝে যে উজ্জ্বল তারাটি রহিয়াছে, তাহাকে চিনিতে তোমাদের কষ্ট হইবে না। এই নক্ষত্রকে ইংরাজিতে সিরিয়স্ (Sirius) বা ডগ্-ষ্টার অর্থাৎ কুকুর-নক্ষত্র বলা হয়। আমাদের দেশের প্রাচীন জ্যোতিষীরা ইহার নাম দিয়াছেন “লুব্ধক”। লুব্ধকের চেয়ে উজ্জ্বল তারা সমস্ত আকাশেও খুঁজিয়া মিলে না। কিন্তু ইহা অনেক দুরের নক্ষত্র,—ইহার আলো পৃথিবীতে পৌঁছিতে পথের মাঝে সাত আট বৎসর কাটাইয়া দেয়। ভাবিয়া দেখ লুব্ধক কত দূরে আছে। আগে তোমাদিগকে যে রোহিণী (Aldebern) নক্ষত্রের কথা বলিয়াছি, তাহা আরো দূরে আছে। ইহার আলো বত্রিশ বৎসরে পৃথিবীতে পৌঁছায়!

 যাহা হউক আমরা যে ছবি দিলাম, তাহার সহিত আকাশের নক্ষত্রদের মিলাইয়া তোমরা লুব্ধককে চিনিয়া লইতে পারিবে।

 অনেক নক্ষত্র-মণ্ডলের কথা বলা হইল। ইহা বুঝিয়া ও ছবি দেখিয়া তোমরা উত্তর আকাশের নক্ষত্রমণ্ডলগুলিকে চিনিতে পারিবে। এই রকম চেনা-পরিচয় হইলে তোমরা যদি নক্ষত্রদের একখানা ভাল মানচিত্র হাতে পাও, তাহা হইলে আকাশের অপর অংশের মণ্ডলগুলিকে চিনিতে তোমাদের একটুও কষ্ট হইবে না।