উইঙ্কিলমন

প্রসিয়ার অন্তঃপাতী ষ্টেণ্ডল নগরে উইঙ্কিলমনের জন্ম হয়। ইনি অতি দুঃখীর সন্তান। ইহার পিতা, চর্ম্মপাদুকা নির্মাণ ও বিক্রয় করিয়া, সংসারনির্বাহ করিতেন। উইঙ্কিলমনকে ভাল করিয়া লেখা পড়া শিখাইবার নিমিত্ত, তাঁহার অত্যন্ত অভিলাষ ও যত্ন ছিল। এজন্য, নানা কষ্ট স্বীকার করিয়াও, তিনি তাঁহাকে এক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিতে দিয়াছিলেন। কিন্তু, বৃদ্ধ ও রুগ্ন হইয়া, তাঁহাকে হাঁসপাতালে গিয়া থাকিতে হইল। সুতরাং, পুত্ত্রর লেখা পড়ার ব্যয়নির্বাহ করিতে পারা দূরে থাকুক, আপনার চলাই ভার হইয়া উঠিল।

 অতঃপর, উইঙ্কিলমন কিছু কিছু উপার্জ্জন করিতে না পারিলে, তাঁহার পিতার চলা ভার। বিদ্যালয় পরিত্যাগ করিয়া, উপার্জ্জনের চেষ্টা দেখা তাঁহার পক্ষে নিতান্ত আবশ্যক হইয়া উঠিল। কিন্তু, তাঁহার একান্ত অভিলাষ, ভাল করিয়া লেখা পড়া শিখেন। সুতরাং, তিনি কোন মতেই বিদ্যালয় পরিত্যাগ করিতে সম্মত ছিলেন না। তিনি সুশীল, পরিশ্রমী ও লেখা পড়ায় অতিশয় যত্নবান্ ছিলেন; এজন্য, তাঁহার অধ্যাপকেরা তাঁহাকে অতিশয় স্নেহ করিতেন। এই সময়ে তাঁহারা অনুগ্রহ করিয়া কিছু কিছু আনুকুল্য করিতে লাগিলেন। আর তিনি নিজেও, অল্পপাঠী বালকদিগকে শিক্ষা দিয়া, কিছু কিছু পাইতে লাগিলেন।

 এই রূপে যাহা লাভ হইতে লাগিল, তদ্দ্বারা পিতার ও নিজের সমুদয় ব্যয় নির্বাহ হইয়া উঠে না। সুতরাং, আর কিছু লাভ না হইলে চলে না। কিন্তু, আর কিছু লাভেরও কোন সহজ উপায় দেখিতে পাইলেন না। পরিশেষে, অনেক ভাবিয়া, রাত্রিতে পথে পথে গান করিয়া ভিক্ষা করিতে আরম্ভ করিলেন। তাহাতে কিছু কিছু লাভ হইতে লাগিল এবং দিনের বেলায় বিদ্যালয়ে থাকিয়া নির্বিঘ্নে পড়া শুনাও চলিতে লাগিল। এই রূপে অধ্যাপকদিগের আনুকুল্য পাইয়া, ও স্বয়ং কিছু কিছু উপার্জ্জন করিয়া, আপনার ও পিতার ভরণপোষণনির্বাহ করিতে লাগিলেন। বোধ হয়, বিদ্যালয়ের বালকের পক্ষে ইহা অপেক্ষা অধিক কষ্টকর আর কিছুই হইতে পারে না। দেখ, বিদ্যাশিক্ষাবিষয়ে উইঙ্কিলমনের কেমন যত্ন! এত কষ্ট পাইয়াছিলেন, তথাপি লেখা পড়া ছাড়েন নাই। অবিশ্রান্ত ষত্ব ও পরিশ্রম করিয়া, পরিশেষে তিনি এক জন অতি প্রসিদ্ধ প্রধান পণ্ডিত হইয়াছিলেন।