চিঠিপত্র (দশম খণ্ড, ১৯৬৭)/দীনেশচন্দ্র সেনকে লিখিত/৩৫

৩৫

[অক্টোবর ১৯০৬]

ওঁ

বোলপুর

প্রিয়বরেষু

 সাময়িক সমস্ত প্রসঙ্গ বর্জ্জন করিলেও এবং গল্প উপন্যাস বাদ দিলেও গদ্য গ্রন্থাবলী নিতান্ত ছোট হইবে না। বোধ হয় ষোলো পেজি ফর্ম্মার অন্ততঃ ১০০ ফর্ম্মা হইবে। সমালোচকের সুতীক্ষ্ণ কুঠার হাতে লইয়া সংগ্রহ কার্য্যে প্রবৃত্ত আছি— বোধ হয় জঙ্গল আগাছা অধিক দেখিতে পাইবেন না— প্রত্যেক লেখাটিই পাঠ্য হইবে এইরূপ আশা করি।

 প্রাচীন কবিতাসংগ্রহের যে প্রস্তাব আপনার নিকট করিয়াছি তাহা নিতান্তই প্রয়োজনীয় এবং আপনি ছাড়া আর কাহারো দ্বারা সাধ্য নহে। স্থির করিয়াছিলাম কয়েকমাস আমিই আপনাকে সাহায্য করিব— কিন্তু এখানে নূতন ছাত্র ও রোগীদের জন্য ইমারত ঘর তৈরি করিতে হইতেছে— তাহাতে বিস্তর খরচ পড়িবে— অতএব এখন কিছুকাল আমার সম্বল কিছুই থাকিবেনা— তাহার উপরে বহু ব্যয়ে বই ছাপাই এমন শক্তি আমার নাই। ত্রিপুরা হইতে অর্থসাহায্য সম্প্রতি কোনোমতেই প্রত্যাশা করা যায় না— নাটোরকে টাকার কথা বলিতে আমি কুণ্ঠিত। যদি গগনরা এই ভার লইতেন ত বড় সুখের বিষয় হইত। আমার মত অক্ষমের কেবলমাত্র সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নাই।

 আমার কাব্য সম্বন্ধে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় মহাশয় যে সকল অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন তাহা লইয়া বাদ প্রতিবাদ করিবার কোনোই প্রয়োজন নাই। আমরা বৃথা সকল জিনিষকে বাড়াইয়া দেখিয়া নিজের মনের মধ্যে অশান্তি ও বিরোধ সৃষ্টি করি। জগতে আমার রচনা খুব একটা গুরুতর ব্যাপার নহে তাহার সমালোচনাও তথৈবচ। তা ছাড়া, সাহিত্য সম্বন্ধে যাঁহার যেরূপ মত থাকে থাক্ না সেই তুচ্ছ বিষয় লইয়া কলহের সৃষ্টি করিতে হইবে না কি? আমার লেখা দ্বিজেন্দ্রবাবুর ভাল লাগেনা কিন্তু তাঁহার লেখা আমার ভাল লাগে, অতএব আমিই ত জিতিয়াছি— আমি তাঁহাকে আঘাত করিতে চাই না।

 অরুণ কিঞ্চিৎ অসুস্থভাবেই এখানে আসিয়াছে— সৌভাগ্যক্রমে জ্বর দেখা দেয় নাই। আজ সকাল হইতে বৃষ্টির সহিত ঝোড়ো হাওয়া দিতেছে— আশা করি এই বাদলায় অরুণের অনিষ্ট করিবেনা। কলিকাতাতেও নিশ্চয় এইরূপ দুর্যোগ চলিতেছে।

 ভূপেন্দ্রবাবু অত্যন্ত পীড়িত অবস্থায় বর্দ্ধমানে পড়িয়া আছেন— কাল তাঁহাকে দেখিতে গিয়াছিলাম। তাঁহার অবস্থা একান্ত উদ্বেগজনক।

 আমি অগ্রহায়ণে বিদ্যালয় [...] দিন পনেরে। কাজকর্ম্ম চালাইয়া দিয়া বোটে যাইবার সংকল্প করিতেছি— আমার শরীর মন্দ নাই কিন্তু মনের ভিতরটা নির্জনবাস ও বিশ্রামের জন্য ব্যাকুল হইয়াছে। ইতি ১৩ই কার্তিক ১৩১৩

ভবদীয়
শ্রীরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর