সাধনা।

দেবি! অনেক ভক্ত এসেছে তোমার চরণ তলে
অনেক অর্ঘ্য আনি;
আমি অভাগ্য এনেছি বহিয়া নয়ন জলে
ব্যর্থ সাধন খানি।
তুমি জান মোর মনের বাসনা,
যত সাধ ছিল সাধ্য ছিল না,
তবু বহিয়াছি কঠিন কামনা
দিবস নিশি।
মনে যাহা ছিল হয়ে গেল আর,
গড়িতে ভাঙ্গিয়া গেল বার বার,
ভালর মন্দে আলোয় আঁধার
গিয়েছে মিশি।
তবু ওগো, দেবি, নিশিদিন করি পরাণপণ,
চরণে দিতেছি আনি
মোর জীবনের সকল শ্রেষ্ঠ সাধনের ধন
ব্যর্থ সাধন খানি।
ওগো ব্যর্থ সাধন খানি

দেখিয়া হাসিছে সার্থকফল
সকল ভক্ত প্রাণী।
তুমি যদি দেবি পলকে কেবল
কর কটাক্ষ স্নেহ-সুকোমল,
একটি বিন্দু ফেল আঁখি জল
করুণা মানি’
সব হতে তবে সার্থক হবে
ব্যর্থ সাধন খানি।


দেবি! আজি আসিয়াছে অনেক যন্ত্রী শুনাতে গান
অনেক যন্ত্র আনি।
আমি আনিয়াছি ছিন্নতন্ত্রী নীরব ম্লান
এই দীন বীণা খানি।
তুমি জান ওগো করি নাই হেলা,
পথে প্রান্তরে করি নাই খেলা,
শুধু সাধিয়াছি বসি সারাবেলা
শতেক বার।
মনে যে গানের আছিল আভাস,
যে তান সাধিতে করেছিনু আশ,


সহিল না সেই কঠিন প্রয়াস,
ছিঁড়িল তার।
স্তবহীন তাই রয়েছি দাঁড়ায়ে সারাটি ক্ষণ,
আনিয়াছি গীতহীনা
আমার প্রাণের একটি যন্ত্র বুকের ধন
ছিন্নতন্ত্রী বীণা!
ওগো ছিন্নতন্ত্রী বীণা
দেখিয়া তোমার গুণীজন সবে
হাসিছে করিয়া ঘৃণা।
তুমি যদি এরে লহ কোলে তুলি,
তোমার শ্রবণে উঠিবে আকুলি
সকল অগীত সঙ্গীত গুলি,
হৃদয়াসীনা!
ছিল যা আশায় ফুটাবে ভাষায়
ছিন্নতন্ত্রী বীণা।


দেবি! এ জীবনে আমি গাহিয়াছি বসি অনেক গান,
পেয়েছি অনেক ফল;
সে আমি সবারে বিশ্বজনারে করেছি দান,
ভরেছি ধরণীতল।

যার ভাল লাগে সেই নিয়ে যাক,
যত দিন থাকে ততদিন থাক্‌,
যশ অপযশ কুড়ায়ে বেড়াক্‌
ধূলার মাঝে।
বলেছি যে কথা করেছি যে কাজ
আমার সে নয়, সবার সে আজ,
ফিরিছে ভ্রমিয়া সংসার মাঝ
বিবিধ সাজে!
যা কিছু আমার আছে আপনার শ্রেষ্ঠধন
দিতেছি চরণে আসি-
অকৃত কার্য্য, অকথিত বাণী, অগীত গান,
বিফল বাসনা রাশি।
ওগো বিফল বাসনা রাশি
হেরিয়া আজিকে ঘরে পরে সবে
হাসিছে হেলার হাসি।
তুমি যদি দেবি লহ কর পাতি,
আপনার হাতে রাখ মালা গাঁথি,
নিত্য নবীন রবে দিনরাতি
সুবাসে ভাসি,

সফল করিবে জীবন আমার
বিফল বাসনা রাশি!

৪ কার্ত্তিক,
১৩০১।