চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ/তৃতীয় খণ্ড/নায়িকার লক্ষণ

নায়িকার
লক্ষণ

 বৈষ্ণব রসশাস্ত্র অনুযায়ী নায়িকা দু’শ্রেণীর, স্বকীয়া ও পরকীয়া। শাস্ত্রমতে বিবাহের পর যে স্ত্রী পতির ইচ্ছানুসারিণী, পতির আনন্দ ও রতির জন্যে যে স্ত্রী সর্ব্বদাই ব্যস্ত, তিনি হলেন স্বকীয়া। দ্বারকার রাজপ্রাসাদে সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দী প্রভৃতি রমণীরা কৃষ্ণের স্বকীয়া মহিষী। যে নারী তাঁর পরম-বাঞ্ছিতের সঙ্গে কোন আনুষ্ঠানিক বিবাহ-বন্ধনে বদ্ধ নন, অন্তরের প্রেমের ঐকান্তিকতায় যিনি নিয়ম-অনিয়ম সমস্তই বিসর্জ্জন দিয়ে একচিত্ত হয়ে বাঞ্ছিতের নিকট পরিপূর্ণ-ভাবে আত্মসমর্পণ করেছেন, তিনি হলেন পরকীয়া।

 রতির বিভিন্নতা হেতু আবার নায়িকার প্রকার-ভেদ হয়। রতি তিন প্রকারের, সাধারণী, সমঞ্জসা ও সমর্থা এবং সেই জন্যে নায়িকারও তিনটী শ্রেণী, সাধারণী নায়িকা, সমঞ্জসা নায়িকা, আর সমর্থা নায়িকা।

 কুব্জা মথুরার সাধারণ নারী। কংসের রাজপ্রাসাদে সে মালা যোগায়। এবং তার জন্যে রাজপ্রাসাদের ভেতরই বন্দিনীর মতন থাকে। একদিন হঠাৎ সেই বন্দীশালার বাইরে রাজপথে কুব্জা শ্রীকৃষ্ণকে দেখেছিল এবং দেখে মুগ্ধ হয়েছিল। সর্ব্বভয় থেকে নিজেকে মুক্ত করে কুব্জা শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজেকে নিবেদিতা করে বলে আমি তোমার, তুমি আমাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও গ্রহণ কর। কুব্জা হলো সাধারণী নায়িকা।

 রুক্মিণী, সত্যভামা প্রভৃতি শ্রীকৃষ্ণের মহিষীরা হলেন সমঞ্জসা রতির নায়িকা। তাঁদের আদর্শ হলো, শাস্ত্র, সমাজ ও সংসারের সমস্ত নিয়মের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের চরণে নিজেদের অর্পণ করেছিলেন। তাই তাঁরা সমঞ্জসা রতির নায়িকা।

 একমাত্র শ্রীরাধা হলেন শ্রীকৃষ্ণের সমর্থা নায়িকা। জগতে যা কিছু নিয়ম আছে, যা কিছু ধর্ম্ম আছে, গৃহ-ধর্ম্ম, সমাজ-ধর্ম্ম, দেশ-ধর্ম্ম, দেহধর্ম্ম, সমস্ত বিসর্জ্জন দিয়ে শ্রীমতী একমাত্র কৃষ্ণকেই চেয়েছিলেন। তাই তিনি সর্ব্বশ্রেষ্ঠা নায়িকা। মহাভাবময়ী রস-রাসেশ্বরী।