চিত্রে জয়দেব ও গীতগোবিন্দ/দ্বিতীয় খণ্ড/দ্বাদশ সর্গ
দ্বাদশ সর্গ
সুপ্রীত-পীতাম্বর
এই সর্গ হলো গীতগোবিন্দের শেষ সর্গ। এতক্ষণ ধরে চলেছিল যে দুর্জ্জয় প্রণয়-পরীক্ষা, এখন এসেছে তার সুমধুর পরিসমাপ্তির লগ্ন। বাসকশয্যার সামনে দাঁড়িয়ে পীতাম্বর চেয়ে দেখেন মানিনী শ্রীমতীর কমল-আননের দিকে, দেখেন সে-আননে আর নেই অভিমানের চিহ্ন, তার পরিবর্ত্তে ফুটে উঠেছে সলজ্জ হাসি, ক্ষমার নিদর্শন, মিলন-শয্যার আমন্ত্রণ। শুরু হয় বহু-আকাঙ্ক্ষিত প্রেমসম্ভোগলীলা। কবি জয়দেব সেই মধুর-মিলনে পাঠকদের পৌঁছে দিয়ে বিদায় নিচ্ছেন। আমরাও এখান থেকে বিদায় নিচ্ছি, এই প্রার্থনায়, প্রত্যেক মানুষের অন্তরে যেখানে চলেছে রাধাকৃষ্ণের নিত্য রাস-লীলা, প্রত্যেক মানুষ যেন হতে পারে সেই নিত্যলীলার সঙ্গী। যে-আনন্দে প্রীত আজ পীতাম্বর সে-আনন্দে কদম্বের মত ফুটে উঠুক প্রত্যেক নর-নারীর অন্তর।
গতবতি সখীবৃন্দে মন্দত্রপাভরনির্ভর-
স্মরশরবশাকূতস্ফীতস্মিতস্নপিতাধরাম্।
সরসমনসং দৃষ্ট্বা রাধাং মুহুর্নবপল্লব-
প্রসবশয়নে নিক্ষিপ্তাক্ষীমুবাচ হরিঃ প্রিয়াম্॥ ১ ॥
সখীরা কুঞ্জভবনের বাইরে চ’লে গেলে,
অধরে স্নিগ্ধ হাসি
রসে ঢল ঢল অন্তর
প্রেমের আবেশে শ্রীমতী
বারবার চেয়ে দেখেন সলজ্জদৃষ্টিতে
সামনেই অপেক্ষা করে রয়েছে কুসুমে রচিত বাসরশয্যা।
তাই দেখে আনন্দে বলেন শ্রীকৃষ্ণ॥ ১ ॥
বিভাসরাগৈকতালীতালাভ্যাং গীয়তে
কিশলয়শয়নতলে কুরু কামিনি চরণনলিনবিনিবেশম্।
তব পদপল্লববৈরি পরাভবমিদমনুভবতু সুবেশম্।
ক্ষণমধুনা নারায়ণমনুগতমনুভজ রাধিকে॥ ২ ॥
হে রাধিকে,
এই কুসুমশয্যায় রাখ তোমার চরণ-কমল,
তোমার চরণ-কমলের সৌন্দর্য্যে
দূর হোক্ এই কুসুম-শয়নের গর্ব্ব।
(আর কেন বিলম্ব সখি,)
এই তো নারায়ণ স্বীকার করছে তোমার আনুগত্য,
প্রতিদানে তুমি তাকে কর স্বীকার॥ ২ ॥
করকমলেন করোমি চরণমহমাগমিতাসি বিদূরম্।
ক্ষণমুপকুরু শয়নোপরি মামিব নূপুরমনুগতিশূরম্॥ ৩ ॥
ওগো সখি,
অনেক দূরপথ অতিক্রম ক’রে তুমি এসেছ,
দাও তোমার ক্লান্ত চরণ দুটী
সেবা করি আমার করপদ্ম দিয়ে।
ক্ষণকালের জন্যে হলেও
তোমার ঐ চরণলগ্ন নূপুরের মত
শয্যাপ্রান্তে তোমার চরণে দাও স্থান॥ ৩ ॥
বদনসুধানিধি গলিতমমৃতমিব রচয় বচনমনুকূলম্।
বিরহমিবাপনয়ামি পয়োধররোধকমুরসি দুকূলম্॥ ৪ ॥
ওগো সখি,
তোমার ঐ আননের সুধানিধি থেকে
বর্ষণ কর মধুবচনের ধারা,
করুক আনন্দে আমাকে তা অভিষিক্ত।
(অনুমতি দাও)
বিরহ-বাধার মতন ঐ তোমার বক্ষবাস,
যা দিয়ে রুদ্ধ ক’রে রেখেছ তোমার পয়োধরকে,
নিজের হাতে দিই অপসারিত ক’রে॥ ৪ ॥
প্রিয়পরিরম্ভণরভসবলিতমিব পুলকিতমতিদুরবাপম্।
মদুরসি কুচকলসং বিনিবেশয় শোষয় মনসিজতাপম্॥ ৫ ॥
অধরসুধারসমুপনয় ভামিনি জীবয় মৃতমিব দাসম্।
ত্বয়ি বিনিহিতমনসং বিরহানলদগ্ধবপুষমবিলাসম্॥ ৬ ॥
প্রিয়স্পর্শের আশায় অতি-
দুর্লভ তোমার ঐ কুচকলস,
ওগো সখি,
রাখ আমার বুকে,—
স্নিগ্ধ হোক্ অন্তরের প্রেমদাহ॥ ৫ ॥
ওগো ভামিনি,
তোমাতে অর্পিত যার মনপ্রাণ,
সুখবিলাসের অভাবে আর বিরহের অনলে
দগ্ধ মৃতপ্রায় যে দাস,
তোমার ঐ অধরের সুধা দিয়ে
তাকে করে তোল সঞ্জীবিত॥ ৬ ॥
শশিমুখি মুখরয় মণিরসনাগুণমনুগুণকণ্ঠনিনাদম্।
শ্রুতিপুটযুগলে পিকরুতবিকলে শময় চিরাদবসাদম্॥ ৭ ॥
ওগো শশিমুখি,
আকুল পিকরব করেছে বিকল আমার শ্রবণকে।
তোমার কণ্ঠকে যে করে অনুকরণ
সেই তোমার মণিময় কাঞ্চীর ঝংকারে
দূর কর তার অবসাদ॥ ৭ ॥
মামতিবিফলরুষা বিকলীকৃতমবলোকিতুমধুনেদম্।
মীলতি লজ্জিতমিব নয়নং তব বিরম বিসৃজ রতিখেদম্॥ ৮ ॥
তোমার অকারণ ক্রোধ
আমাকে করেছিল বিহ্বল বিকল;
তাই বুঝি আমাকে দেখে
লজ্জায় মুদে আসছে তোমার নয়ন?
আমার কথা শোন,
সে সব কথা ভুলে গিয়ে আমার প্রতি প্রসন্ন হও,
পরিত্যাগ কর এই প্রেমবৈরী ভাব॥ ৮ ॥
শ্রীজয়দেব ভণিতমিদমনুপদনিগদিতমধুরিপুমোদম্।
জনয়তু রসিকজনেষু মনোরমরতিরসভাববিনোদম্॥ ৯ ॥
প্রত্যূহঃ পুলকাঙ্কুরেণ নিবিড়াশ্লেষেষ নিমেষেণ চ
ক্রীড়াকূতবিলোকিতেঽধরসুধাপানে কথানর্ম্মভিঃ।
আনন্দাধিগমেন মন্মথকলাযুদ্ধেঽপি যস্মিন্নভূ-
দুদ্ভূতঃ স তয়োর্ব্বভূব সুরতারম্ভঃ প্রিয়ম্ভাবুকঃ॥ ১০ ॥
গেয়ে চলে মাধবের প্রেম-উল্লাস!
যে রতিরসের আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠেছে
কৃষ্ণের বক্ষ,
সে-আনন্দে নেচে উঠুক রসিকজনের
চিত্ত॥ ৯ ॥
সুরু হলো শ্যামের বিচিত্র রতি-রঙ্গ-লীলা
গাঢ় আলিঙ্গনের সময়,
দেহে জেগে ওঠে পুলকের রোমাঞ্চ,
সে-রোমাঞ্চ সৃজন করে মিলনের সূক্ষ্ম বাধা;
প্রিয়তমার মুখ দর্শনে বাধা হয় চোখের পলক;
মুখচুম্বনের কালে বাধা হয় মুখের বচন;
রতি-রণে বাধা জাগায় অন্তরের ঘন-আনন্দ।
তবু কৃষ্ণ-রতির সব বাধাই
পরিণামে এনে দেয় মহাহর্ষ॥ ১০ ॥
দোর্ভ্যাং সংযমিত পয়োধরভরেণাপীড়িতঃ পাণিজৈ-
রাবিদ্ধো দশনৈঃ ক্ষতাধরপুটঃ শ্রোণীতটেনাহতঃ।
হস্তেনানমিতঃ কচেঽধরসুধাপানেন সম্মোহিতঃ
কান্তঃ কামপি তৃপ্তিমাপ তদহো কামস্য বামা গতিঃ॥ ১১ ॥
অধরে সুধার স্পর্শে,—
কি মধুর সে-মূর্চ্ছা, কি অপরূপ সে পরাভব!
বিচিত্র কামের গতি॥ ১১ ॥
মারাঙ্কে রতিকেলিসঙ্কুলরণারম্ভে তয়া সাহস-
প্রায়ং কান্তজয়ায় কিঞ্চিদুপরি প্রারম্ভি যৎ সম্ভ্রমাৎ।
নিস্পন্দা জঘনস্থলী শিথিলতা দোর্ব্বল্লিরুৎকম্পিতম্
বক্ষো মীলিতমক্ষি পৌরুষরসং স্ত্রীণাং কুতঃ সিধ্যতি॥ ১২ ॥
কিন্তু হায় নারী!
বিপরীত সেই চেষ্টায়
নিস্পন্দ হয়ে আসে ঘনজঘন,
শিথিল হয়ে আসে বাহুলতা,
মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে বুক,
মুদে আসে চোখের পাতা……
কোথা পাবে নারী পৌরুষ-রস?॥ ১২ ॥
মীলদ্দৃষ্টিমিলৎকপোলপুলকং শীৎকারধারাবশা-
দব্যক্তাকুলকেলিকাকুবিকসদ্দন্তাংশুধৌতাধরম্।
শ্বাসোন্নদ্ধপয়োধরোপরিপরিষ্বঙ্গী কুরঙ্গীদৃশো
হর্ষোৎকর্ষবিমুক্তিনিঃসহতনোর্ধন্যো ধয়ত্যাননম্॥ ১৩ ॥
আনন্দের আতিশয্যে অবসন্না
শ্রীমতীর শ্বাসস্ফীত কুচযুগল মর্দ্দন ক’রে
শ্রীকৃষ্ণ রত হন অধর সুধাপানে।
তখন মুদে আসে রাধার দুনয়ন,
পুলকে রক্তিম হয়ে ওঠে কপোল,
অধর থেকে উঠতে থাকে অবিচ্ছিন্ন শীৎকার,
উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে মুখ শুভ্রদশনের নীরব কিরণে॥ ১৩ ॥
তস্যাঃ পাটলপাণিজাঙ্কিতমুরো নিদ্রাকষায়ে দৃশৌ
নির্ধৌতোঽধরশোণিমা বিলুলিতাঃ স্রস্তস্রজো মূর্দ্ধজাঃ।
কাঞ্চীদাম দরশ্লথাঞ্চলমিতি প্রাতর্নিখাতৈর্দৃশো-
রেভিঃ কামশরৈস্তদদ্ভুতমভূৎ পত্যুর্মনঃ কীলিতম্॥ ১৪ ॥
এলিয়ে পড়েছে কেশপাশ,
শিথিল পড়ে আছে মেখলা,
রাধার সর্ব্ব-অঙ্গ মদনের শরে বিদ্ধ।
কিন্তু কি আশ্চর্য্য,
সেই শরে আবার বিদ্ধ হয় শ্রীকৃষ্ণের অন্তর॥ ১৪ ॥
ব্যালোলঃ কেশপাশস্তরলিতমলকৈঃ স্বেদলোলৌ কপোলৌ
ক্লিষ্টা দষ্টাধরশ্রীঃ কুচকলসরুচাহারিতা হারযষ্টিঃ।
কাঞ্চী কাঞ্চিদ্গতাশাং স্তনজঘনপদং পাণিনাচ্ছাদ্য সদ্যঃ
পশ্যন্তী সত্রপং মাং তদপি বিলুলিতস্রগ্ধরেয়ং ধিনোতি॥ ১৫ ॥
মনে মনে ভাবেন শ্রীকৃষ্ণ,
শ্রীমতীর কেশপাশ আলুলায়িত,
বিপর্য্যস্ত অলক, ঘর্ম্মাক্ত কপোলদেশ,
অধরে দশনাঘাতচিহ্ন,
কণ্ঠ থেকে ছিঁড়ে পড়ে গিয়েছে ফুলহার,
মেখলা গিয়েছে স্থানচ্যুত হয়ে,
মর্দ্দিত কুচকলসের গায় তিরস্কৃত পড়ে আছে ছিন্ন হার।
তবু সেই অবস্থায়,
হাত দিয়ে ঢেকে আহত-স্থান
আনন্দে চেয়ে আছেন শ্রীমতী আমারি দিকে॥ ১৫ ॥
ইতি মনসা নিগদন্তং সুরতান্তে সা নিতান্তখিন্নাঙ্গী
রাধা জগাদ সাদরমিদমানন্দেন গোবিন্দম্॥ ১৬ ॥
(রামকিরীরাগযতিতালাভ্যাং গীয়তে)
কুরু যদুনন্দন চন্দনশিশিরতরেণ করেণ পয়োধরে
মৃগমদপত্রকমত্র মনোভবমঙ্গলকলসসহোদরে।
নিজগাদ সা যদুনন্দনে ক্রীড়তি হৃদয়ানন্দনে॥ ১৭ ॥
প্রেমকেলি অবসানে খিন্নদেহা শ্রীমতী
গোবিন্দকে দেখেন চিন্তাকুল।
তাই আদরে বলেন সুমধুর বচন॥ ১৬ ॥
রাধার হৃদয়বনবিহারী ওগো চিরানন্দময়,
হে যদুনন্দন, চন্দনের চেয়ে শীতল
তোমার ঐ শ্রীকর দিয়ে,
মদনের মঙ্গলকলস আমার এই কুচযুগলে
এঁকে দাও মৃগমদের স্নিগ্ধ পত্রলেখা॥ ১৭ ॥
অলিকুলগঞ্জনসঞ্জনকং রতিনায়কশায়কমোচনে
তদধরচুম্বনলম্বিতকজ্জমুলজ্জ্বলয় প্রিয়লোচনে॥ ১৮ ॥
নয়নকুরঙ্গতরঙ্গবিকাশনিরাসকরে শ্রুতিমণ্ডলে।
মনসিজপাশবিলাসধরে-শুভবেশ নিবেশয় কুণ্ডলে॥ ১৯ ॥
মদনের পুষ্পবাণকে ঢেকে রাখবার জন্যে
যে-নয়নে দিয়েছিলাম কাজল,
তোমার চুম্বনে চুম্বনে
মুছে গিয়েছে সে কাজলের রেখা,
ওগো প্রিয়তম, তোমার নিজের হাতে আবার
কজ্জলে তাদের করে দাও সমুজ্জ্বল॥ ১৮ ॥
ওগো সুন্দর, শুভবেশ নয়নের দৃষ্টির তরঙ্গ
পাছে সীমা ছড়িয়ে চলে যায়,
তাই শ্রবণের তটে তা বাঁধা।
তোমার নিজের হাতে সেই শ্রবণের তটে
বেঁধে দাও কুণ্ডল,
দুলুক তা মদনের পাশের মতন॥ ১৯ ॥
ভ্রমরচয়ং রচয়ন্তমুপরি রুচিরং মম সম্মুখে
জিতকমলে বিমলে পরিকর্ম্ময় নর্ম্মজনকমলকং মুখে॥ ২০ ॥
মৃগমদরসবলিতং ললিতং কুরু তিলকমলিকরজনীকরে
বিহিতকলঙ্ককলং কমলানন বিশ্রমিতশ্রমশীকরে॥ ২১ ॥
জিতকমল আমার এই মুখের ওপর
এসে পড়েছে শিথিল এলোচুল;
তাই দেখে সখীরা করছে পরিহাস।
তুমি নিজের হাতে রচনা করে দাও
নতুন করে ভ্রমরকবেণী॥ ২০ ॥
ললাটে আমার মুছে দাও ঘর্ম্মবারি,
সেখানে রচনা করে দাও
শিশুচাঁদের মৃগমদ তিলক॥ ২১ ॥
মম রুচিরে চিকুরে কুরু মানদ মানসজধ্বজচামরে
রতিগলিতে ললিতে কুসুমানি শিখণ্ডিশিখণ্ডকডামরে॥ ২২ ॥
ওগো মানদ!
মদনের ধ্বজ-চামরের মতন
আমার এই কেশদাম,
ময়ূরপুচ্ছের গৌরবকে যা দেয় লজ্জা,
প্রেমরতির সময় তা থেকে ঝরে পড়ে গিয়েছে কুসুম,
তুমি নিজের হাতে আবার
নতুন কুসুমে সাজিয়ে দাও সে-কেশদাম॥ ২২ ॥
সরসঘনে জঘনে মম শম্বরদারণবারণকন্দরে।
মণিরসনাবসনাভরণানি শুভাশয় বাসয় সুন্দরে॥ ২৩ ॥
শ্রীজয়দেববচসি রুচিরে হৃদয়ং সদয়ং কুরু মণ্ডনে।
হরিচরণস্মরণামৃতনির্ম্মিতকলিকলুষজ্বরখণ্ডনে॥ ২৪ ॥
ওগো চিরমঙ্গল,
মদনমাতঙ্গের আশ্রয় আমার এই ঘনজঘন,
তুমি নিজের হাতে আবার ভূষিত করে দাও
মণিময় ভূষণে আর পীতবসনে॥ ২৩ ॥
কলির পাপতাপ-বিমোচনকারী
শ্রীহরির চরণস্মরণরূপ অমৃতে,
জয়দেবকবি অভিষিক্ত করলো তার সঙ্গীতকে।
প্রার্থনা করি ভক্ত-হৃদয়ে তা বিরাজ করুক
অক্ষয় অলংকারের মতন॥ ২৪ ॥
রচয় কুচয়োঃ পত্রং চিত্রং কুরুষ্ব কপোলয়ো-
র্ধটয় জঘনে কাঞ্চীমঞ্চ স্রজা কবরীভরম্।
কলয় বলয়শ্রেণীং পাণৌ পদে কুরু নূপুরা-
বিতি নিগদিতঃ প্রীতঃ পীতাম্বরোঽপি তথাকরোৎ॥ ২৫ ॥
করেতে পরাও স্বর্ণবলয়, চরণে দাও নূপুর।
শ্রীমতীর এই আদেশ
আনন্দিতচিত্তে যথাযথ পালন করেন পীতাম্বর॥ ২৫ ॥
পর্য্যঙ্কীকৃতনাগনায়কফণাশ্রেণীমণীনাং গণে
সংক্রান্তপ্রতিবিম্বসংবলনয়া বিভ্রদ্বিভুপ্রক্রিয়াম্।
পাদাম্ভোরুহধারিবারিধিসুতামক্ষ্ণাং দিদৃক্ষুঃ শতৈঃ
কায়ব্যূহমিবাচরন্নুপচিতীভূতো হরিঃ পাতু বঃ॥ ২৬ ॥
শুয়ে আছেন যিনি শতশির শেষনাগের আসনে,
শতশির থেকে যার ঝলসে পড়ছে শত মণির আলো,
সেই শত মণির আলোয় যিনি রচনা করে আছেন
শতমূর্ত্তির প্রতিবিম্ব
শত শত নয়নে দেখবার জন্যে
চরণসেবারতা সমুদ্রসূতা লক্ষ্মীকে,
সেই শ্রীহরি রক্ষা করুন আপনাদের সকলকে॥ ২৬ ॥
যদ্গান্ধর্ব্বকলাসু কৌশলমনুধ্যানঞ্চ যদ্বৈষ্ণবং
যচ্ছৃঙ্গারবিবেকতত্ত্বমপি যৎ কাব্যেষু লীলায়িতম্
তৎ সর্ব্বং জয়দেবপণ্ডিতকবেঃ কৃষ্ণৈকতানাত্মনঃ
সানন্দাঃ পরিশোধয়ন্তু সুধিয়ঃ শ্রীগীতগোবিন্দতঃ॥ ২৭ ॥
হে সুধী!
যদি সঙ্গীতশাস্ত্রের রাগরাগিণীতে থাকে তোমার প্রীতি,
সর্ব্বব্যাপী বিষ্ণুর ধ্যানে যদি থাকে তোমার আগ্রহ,
বিবেকতত্ত্ব আর শৃঙ্গাররসকাব্যে নিপুণতালাভের
যদি থাকে বাসনা,
তাহলে আনন্দের সঙ্গে কর পাঠ
কৃষ্ণগতপ্রাণ কবিপণ্ডিত জয়দেবের রচনা
এই শ্রীগীতগোবিন্দ॥ ২৭ ॥
সাধ্বী মাধ্বীকচিন্তা ন ভবতি ভবতঃ শর্করে কর্করাসি
দ্রাক্ষে দক্ষ্যন্তি কে ত্বামমৃত মৃতমসি ক্ষীর নীরং রসস্তে।
মাকন্দ ক্রন্দ কান্তাধর ধরণিতলং গচ্ছ যচ্ছন্তি যাব-
দ্ভাবং শৃঙ্গারসারস্বতমিহ জয়দেবস্য বিষ্বগ্বচাংসি॥ ২৮ ॥
শ্রীভোজদেবপ্রভবস্য বামাদেবীসুতশ্রীজয়দেবকস্য
পরাশরাদিপ্রিয়বন্ধুকণ্ঠে শ্রীগীতগোবিন্দকবিত্বমস্তু॥ ২৯ ॥
যতদিন পৃথিবীতে থাকবে
জয়দেবকবির এই শৃঙ্গারকাব্য,
হে মধু, মধুর বলে আর কেউ তোমাকে চাইবে না।
শর্করা, হবে কর্কশতাময়……
দ্রাক্ষা, কেউ দেখবে না আর তোমাকে,
অমৃত, মৃত হয়ে থাকবে তুমি,
ক্ষীরের আস্বাদ মনে হবে নীরের মতন,
মধুর আম্রফল শোকে করবে ক্রন্দন,
কান্তাধর যাবে রসাতলে॥ ২৮ ॥
পিতা শ্রীভোজদেব,
জননী বামাদেবী,
তাঁদের সন্তান জয়দেবকবি
এই শ্রীগীতগোবিন্দকাব্য রচনা করে
উপহার দিল
প্রিয়বন্ধু পরাশর আর অন্য সব সুহৃদের কণ্ঠে॥ ২৯ ॥