ছবি/সপ্তম পরিচ্ছেদ
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
অভিনেত্রী প্রস্থান করিলে আমিও বাসায় আগমন করিলাম। গাড়োয়ানকে প্রতিশ্রুত পুরষ্কার দিয়া আমি আমার বৈঠকখানায় আসিলাম। দেখিলাম, বিদ্যুৎপ্রকাশ আমার অপেক্ষায় বসিয়া আছেন? আমাকে দেখিয়াই জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি খবর মহাশয়! বিলম্বে কার্য্য সিদ্ধি হইয়াছে ত?”
আ। হাঁ, এক প্রকার সেইরূপই বটে।
বি। তবে দি’ন, ছবিখানির জন্য রাত্রে আমার ঘুম নাই, দিনে ক্ষুধা নাই, উহা না পাইলে আমায় পাগল হইতে হইবে।
আ। ছবিখানি আনা হয় নাই।
বি। কোথায় আছে?
আ। সেই অভিনেত্রীর বাড়ীতেই।
বি। কোথায় আছে দেখিয়াছেন?
আ। আজ্ঞা হাঁ।
বি। তবে সঙ্গে আনিলেন না কেন?
আ। তখন সুবিধা পাই নাই।
বি। কখন আনিবেন?
আ। বলেন ত আজই যাওয়া যায়।
বি। তবে তাই যান, আমি এখানে অপেক্ষা করিব।
আ। আপনাকেও যাইতে হইবে।
বি। সে কি! আমায় দেখিলে অভিনেত্রী কখনই ছবি দিবে না।
আ। সে আপনাকে দেখিতে পাইবে না।
বি। কেন? সে কোথায়?
আ। সে আর সেখানে নাই।
বি। কোথায় গিয়াছে?
আ। বৈদ্যনাথ।
বি। কবে?
আ। আজ—এই মাত্র।
বি। কেন? তাঁহার এরূপ মতি কেন হইল?
আ। তাহার স্বামীর কথায়।
বিদ্যুৎপ্রকাশ আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া চীৎকার করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তাহার স্বামী!”
আ। আজ্ঞা হাঁ। সে অপরের পরিণীতা।
বি। সেকি! বিশ্বাস হয় না।
আ। আমি স্বচক্ষে দেখিয়াছি।
বি। কোথায়, কবে বিবাহ হইল?
আ। ব্রাহ্ম সমাজে—আজই বিবাহ হইয়া গিয়াছে।
বি। বিবাহ তবে ব্রাহ্মমতে হইয়াছে?
আ। নতুবা আর কিসে হইতে পারে?
বি। সে আমার প্রতি অত্যন্ত অনুরক্তা ছিল। সে অপরকে কিরূপে ভালবাসিবে বলিতে পারি না।
আ। তাহার কথায় বোধ হইল, সে আপনাকে গ্রাহ্য করে না। যাহার সহিত তাহার বিবাহ হইয়াছে, সে তাহাকেই ভালবাসে।
বি। যদি তাহাই হয়, তবে সে ছবিখানি লইয়াই পলায়ন করিয়াছে।
আ। না, সে সেরূপ নির্ব্বোধ নয়।
বি। কেন?
আ। যদি কখনও সেই ছবি তাহার স্বামীর দৃষ্টিগোচর হয়, তাহা হইলে তাহারই অনিষ্ট হইবে।
বি। সত্য বলিয়াছেন। ছবিখানি তবে সে রাখিয়া গিয়াছে?
আ। আজ্ঞা হাঁ।
বি। আপনি জানিলেন কিসে?
আ। তাহার মুখে শুনিয়াছি।
বি। তাহার সহিত আবার কোথায় দেখা হইল? সকল কথা আমায় বুঝাইয়া বলুন, আমার মন অত্যন্ত অস্থির হইয়াছে।
আমি বিদ্যুতের কথায় হাস্য করিয়া সমস্ত আদ্যোপান্ত প্রকাশ করিলাম।