জওহরলাল/একুশ
একুশ
নির্ব্বাচনের ফলে কংগ্রেস প্রধান প্রধান প্রদেশে মন্ত্রিমণ্ডল গঠন করিয়া শাসনকার্য্য চালাইতে লাগিলেন। তাঁহাদের কর্ম্ম-ব্যবস্থায় এবং যোগ্যতায় দেশের শাসনতন্ত্রের মধ্যে একটা স্বাদেশিক কল্যাণের রূপ ফুটিয়া উঠিল। জওহরলাল কিন্তু এই মন্ত্রিমণ্ডলীর আবেষ্টন হইতে নিজেকে দূরে রাখিলেন—
কিছুকাল যাইতে না যাইতে জওহরলাল যাহা আশঙ্কা করিয়াছিলেন, তাহাই ঘটিতে লাগিল। কংগ্রেসী মন্ত্রীদের সহিত বৃটিশ-শাসন-যন্ত্রের যাহারা মূল ভিত্তি, সেই সিভিলসার্ভিস এবং পুলিশের সঙ্গে দ্বন্দ্ব দেখা দিল—এবং এই দ্বন্দ্বের মধ্যে নূতন স্বায়ত্ত শাসনের ফাঁকি স্পষ্টত ধরা পড়িল। তাহা ছাড়া জওহরলাল দেখিলেন, মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করার ফলে তাঁহার সহকর্ম্মী কংগ্রেস নেতারা ক্রমশ কংগ্রেসকর্ম্মপন্থা এবং দেশের স্বাধীনতা আন্দোলন হইতে দূরে সরিয়া যাইতেছেন।
কোনও দিন তিনি অন্তরের বিশ্বাসকে চাপিয়া রাখিয়া দলগত ঐক্যের পিছনে সায় দিয়া যাইতে শিখেন নাই। তাই কংগ্রেস ওয়ারকিং কমিটীর সহিত তাঁহার ঘোরতর বিরোধ দেখা দিল। তিনি মনে মনে স্থির করিলেন যে তিনি ওয়ারকিং কমিটী হইতে বিদায় গ্রহণ করিবেন। কিন্তু তাঁহাকেই পুনরায় কংগ্রেসের সভাপতি করিবার আয়োজন চলিতে লাগিল।
এই সময় জওহরলাল গোপনে “মডার্ণ রিভিউ” পত্রিকায় এক প্রবন্ধ লিখিয়া পাঠাইলেন। এই প্রবন্ধে তিনি নিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা করিয়া প্রমাণ করিলেন যে তৃতীয় বারের জন্য জওহরলালকে সভাপতি নির্ব্বাচিত করা অন্যায়। অবশ্য এই প্রবন্ধ তিনি ছদ্মনামে পাঠাইয়াছিলেন—এমন কি, সম্পাদক রামানন্দ বাবুও জানিতেন না, এই প্রবন্ধলেখক কে!
পরের বৎসর সুভাষচন্দ্র কংগ্রেসের সভাপতি নির্ব্বাচিত হওয়ায়, জওহরলাল স্থির করিলেন যে, তিনি য়ুরোপ পরিভ্রমণে বাহির হইবেন। অবশ্য এই য়ুরোপ-যাত্রার প্রত্যক্ষ কারণ হইল, তাহার কন্যা ইন্দিরার সহিত সাক্ষাৎ করা। কিন্তু এই প্রত্যক্ষ কারণের আড়ালে ছিল তাঁহার অন্তরের আসল কারণ, য়ুরোপের সহিত সংস্পর্শে নিজের ব্যথিত চিত্তকে আবার নূতন অভিজ্ঞতায় সঞ্জীবিত করিয়া তোলা এবং জগৎ-আন্দোলনের কেন্দ্রে উপস্থিত থাকিয়া তাহার স্বরূপ উপলব্ধি করা—
কিন্তু য়ুরোপে গিয়া তিনি যাহা দেখিলেন, তাহাতে আশার কোন লক্ষণই দেখিতে পাইলেন না। ফিরিবার সময় মিশর হইয়া ফিরিলেন। মিশরের জাতীয় দল, ওয়াফদ পার্টী তাহাকে এক বিরাট অভিনন্দন দিল—তিনিও কংগ্রেসের পক্ষ হইতে ওয়াফদ দলকে কংগ্রেসের পরবর্ত্তী অধিবেশনে যোগদান করিবার নিমন্ত্রণ করিয়া আসিলেন।