দিল্লী চলো/ভারতের অবস্থা

ভারতের অবস্থা

 গত কয়েক দিন ধরে ভারতের অবস্থা সম্বন্ধে যা বলে আসছি, আজকে তার সংক্ষিপ্তসার দেব, আর আমাদের ভবিষ্যৎ কার্য্যক্রমের পুনরুল্লেখ করব। আমাদের লক্ষ্যের দিকে আমরা এতদূর এগিয়েছি যে চূড়ান্ত বিজয় সম্বন্ধে আর আমাদের কোন দ্বিধা নেই। এক একটা সময় আসে, যখন পরিকল্পনা গোপন রাখায় নিপুণ সমর-কৌশল প্রকাশ পায় না; হাতের সমস্ত তাস টেবিলের উপর ছড়িয়ে দেওয়াই কর্ত্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। আজকে সেই সময় এসেছে।

 ভারতে তিন প্রকারের লোক দেখা যায়। এক প্রকারের আছেন, স্বপ্নেও যাঁরা কোনদিন স্বাধীনতার কথা ভাবতে পারেন না। এঁদের সংখ্যা অতি সামান্য—নগণ্য বললেও চলে, যদিও এঁদের মধ্যে কেউ কেউ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান। এঁদের আমরা স্বচ্ছন্দে অবহেলা করে যেতে পারি। দ্বিতীয় দলে পড়েন, যাঁরা স্বাধীনতা চান এবং অন্তরে অন্তরে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ঘৃণা করেন। কিন্তু মানবসুলভ দুর্ব্বলতার দরুণ, তাঁরা স্বাধীনতার জন্যে বিশেষ কিছু করেন না—সময় সময় আমাদের কেবল নিষ্ক্রিয় সাহায্য দিয়ে থাকেন। এঁদের বেশীর ভাগ দেখতে পাওয়া যায় সরকারী কর্ম্মচারী ও অন্যান্য চাকুরীজীবীদের মধ্যে। সর্ব্বত্র—স্থূলদৃষ্টি সর্ব্বসাধারণের কাছেও যখন আমাদের বিজয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে, তখনই এঁরা খোলাখুলি ভাবে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। বৈপ্লবিক পরিবর্ত্তনের পর এই ধরণের লোক কি ভাবে এগিয়ে এসে নব-বিধানকে সমর্থন করেন, আমি তা স্বচক্ষে ইউরোপে দেখেছি। ক্রোসিয়া, শ্লোভাকির মতো নতুন স্বাধীন দেশে এবং জার্ম্মানীর সঙ্গে সংযুক্ত হবার পর অষ্ট্রিয়ায় আমি এ দৃশ্য দেখেছি। ব্রহ্মদেশেও আমি ভূতপূর্ব্ব আই. সি. এস. ভূতপূর্ব্ব হাইকোর্টের জজ এবং সকল বিভাগের ভূতপূর্ব্ব রাজকর্মচারীরা স্বাধীন-ব্রহ্ম গবর্নমেণ্টের নতুন শাসন-ব্যবস্থায় যোগ দিয়েছেন, এ সব আমি দেখেছি। আমরা প্রত্যাশা করি, ভারতেও এই ধরণের লোকেরা আজাদ-হিন্দ গবর্নমেণ্টকে সমর্থন করবেন। আমরাও তাঁদের গ্রহণ করবো—যদি অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ না থাকে যে বৃটিশ শাসনাধীনে তাঁরা অন্তরে অন্তরে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সমর্থক ছিলেন। বস্তুতঃ, আমি এই মর্ম্মে ঘোষণা করতে পারি যে, যারা কর্ম্মনিপুণ ও বর্ত্তমানে বৃটিশ গবর্নমেণ্টের চাকুরী করছেন— তাঁদের আজাদ-হিন্দ গবর্নমেণ্টও গ্রহণ করবেন—অবশ্য যদি তারা অন্তরে অন্তরে বৃটিশ সমর্থক না হন এবং বৃটিশের অধীনে চাকুরী করার সময় বিপথে গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলনের ক্ষতি না করে থাকেন। আর বৃটিশ-ভারতীয় বাহিনীর যাঁরা এই স্বাধীনতা-সংগ্রামের সময় আমাদের পক্ষে এসেছেন কিংবা ভবিষ্যতে আসবেন আজাদ-হিন্দ গবর্নমেণ্ট তাঁদের সম্বন্ধে ইতিপূর্ব্বেই ঘোষণা করেছেন যে আজাদ-হিন্দ ফৌজের অন্যান্য সদস্যদের মতোই তাঁদের প্রতি ব্যবহার করা হবে; অবসর-গ্রহণের সময় তাঁরা বৃটিশ-ভারতীয় বাহিনীতে যতদিন কাজ করেছিলেন তার সঙ্গে আজাদ-হিন্দ ফৌজে তাদের চাকুরী-কাল যোগ দিয়ে—তারই ভিত্তিতে তাঁরা বৃত্তি পাবেন।

 তৃতীয় এক প্রকারের লোক আছেন, তাঁরা শুধু স্বাধীনতাকামী নন, স্বাধীনতা-লাভের জন্যে তাঁরা সক্রিয়। প্রধানতঃ তাঁদেরই উদ্দেশ্যে আমি এই বক্তৃতা দিচ্ছি।

 স্বাধীনতাকামী ভারতীয়ের পক্ষে স্বাধীনতার পথ কি কি? প্রথম পথ হচ্ছে, প্রার্থনা ও আবেদনের পথ। এ পথে মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে যুদ্ধশেষে বৃটিশরা দানস্বরূপ আমাদের স্বাধীনতা দেবে। আমার মনে হয়, এ ধরণের কোন সম্ভাবনাই নেই—আত্মসম্মান জ্ঞানসম্পন্ন কোন ভারতবাসীই একথা আজ আর বিশ্বাস করে না।

 দ্বিতীয় পথ হচ্ছে “অপেক্ষা করা এবং দেখা”র নীতি। এ পথেও মনে বিশ্বাস রাখতে হবে যে, ভবিষ্যতে বৃটিশের অবস্থা এত বেশী সঙ্কটজনক হয়ে উঠবে যে তারা যুদ্ধ পরিস্থিতির দরুণ আমাদের স্বাধীনতার দাবী পূরণ করতে বাধ্য হবে। এই পথে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের মতানুসারে সময় পূর্ণ হলে স্বাধীনতা পাকা ফলের মতো আমাদের কোলে এসে পড়বে—তার জন্যে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই। আমার মতে এপথও বর্জ্জনীয়। আমি বহুবার আমার দেশবাসীদের বলেছি, যা-ই ঘটুক না কেন, বৃটিশরা শেষ পর্য্যন্ত ভারতকে আঁকড়ে থাকবে এই সিদ্ধান্ত তারা পাকাপাকি করে রেখেছে। অন্যত্র তাদের অবস্থা যত খারাপ হবে, ভারতকে ততই তারা জোরে আঁকড়ে ধরবে এই জন্য যে ভারতের সাম্রাজ্য যদি কোনমতে বাঁচাতে পারে তবেই বৃটিশ-সাম্রাজ্য বাঁচবে।

 তৃতীয় পথ হচ্ছে সত্যাগ্রহ বা আইন-অমান্যের পথে। ১৯২১ থেকে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এই পথ অনুসরণ করে আসছে। এপথে আমাদের স্বাধীনতা আসবে কি? আমার সুস্পষ্ট অভিমত হচ্ছে, আসবে না। গত কুড়ি বৎসরের ইতিহাস আমাদের এই শিক্ষাই দেয়। আমি জানি, ১৯২১ অব্দে কংগ্রেসের অনেকেই বিশ্বাস করতেন, সত্যাগ্রহ কিংবা আইন-অমান্যের পথেই আমাদের স্বরাজ আসবে। দুটি কারণের উপর ভিত্তি করে এই বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল; পরে এ দুটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমতঃ ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, বৃটিশ গবর্নমেণ্টের হৃদয়ের পরিবর্তন সম্ভব। দ্বিতীয়তঃ ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, সত্যাগ্রহের চাপে পড়ে বৃটিশরা নিজেদের ভুল দেখতে পাবে—বুঝবে যে, শক্তির দ্বারা পুরাণো বিধানকে চালু রাখা যাবে না। এবং সেই জন্যে কানাডা ও দক্ষিণআফ্রিকায় তারা যেমন করেছিল, তেমনই প্রকৃত রাজনীতিবিদের মতো কাজ করবে। এখন বুঝতে পেরেছি, গবর্নমেণ্টের হৃদয় বলে কোন পদার্থ থাকে না; এবং যেখানে হৃদয়ই নেই সেখানে হৃদয়ের পরিবর্তনও সম্ভব নয়। আমরা আরও বুঝেছি যে, অশ্বেত জাতির প্রতি বৃটেনের যে নীতি তার সঙ্গে শ্বেত জাতির প্রতি তার অনুসৃত নীতির বিভিন্নতা আছে। তা ছাড়া বৃটিশরা অনুভব করে, ভারত যদি সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে সাম্রাজ্যের ভিত্তিও ধ্বসে যাবে; সাম্রাজ্যের অস্তিত্বই থাকবে না। এমন কি ডোমিনিয়ন ষ্ট্যাটাস দিলেও ভারত শেষ পর্য্যন্ত সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যাবে। কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো ভারতকে সাম্রাজ্যের মধ্যে বেঁধে রাখার জোর নেই; একবার ডোমিনিয়ন ষ্ট্যাটাস পেলেই ভারত সাম্রাজ্যের বাইরে চলে যাবার চেষ্টা করবেই। এ প্রসঙ্গে আয়ার্ল্যাণ্ডের সাম্প্রতিক ইতিহাস বৃটিশ মনোভাব ও মনোবৃত্তির উপর সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে—ভারতের অনেকেই এখনও তা অনুধাবন করেন নি। সর্ব্বদলীয় বৃটিশ রাজনীতিবিদরা যখন ১৯২১-এ ইঙ্গ-আইরিশ সন্ধি সমর্থন করেছিলেন, তখন তাঁরা ভেবেছিলেন, চিরদিনের মতো আইরিশ সমস্যা মিটে গেল। কিন্তু ১৯৩২ অব্দে প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরা যখন আইরিশ রাজনীতিক্ষেত্রে আবির্ভূত হলেন, তখন আইরিশ সমস্যারও পুনরাবির্ভাব হল এবং নতুন করে সাধারণতন্ত্রের দাবি উঠল। প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরার ক্ষমতা-প্রাপ্তির পর থেকে বৃটিশরা তাঁকে ক্ষমতাহীন ও শক্তিচ্যুত করবার জন্যে প্রাণপণ প্রয়াস পেয়েছে, কিন্তু তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডোমিনিয় গবর্নমেণ্টের শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে প্রেসিডেণ্ট ডি-ভ্যালেরা এ পর্য্যন্ত বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছেন এবং ১৯১৬-২১ পর্য্যন্ত বিপ্লবী হিসেবে তিনি যে যুদ্ধ করেছিলেন, তার চেয়ে এ যুদ্ধ হয়েছে বেশী কার্য্যকর। বৃটিশরা তাই মনে মনে বোঝে যে ভারত আয়র্ল্যাণ্ডের পথই অনুমোদন করবে এবং ভারতকে যা-কিছু সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে ভবিষ্যতে সে তা আরও ভালভাবে বৃটিশদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্যে নিয়োগ করবে। কাজেই যতদিন সম্ভব ভারতের স্বাধীনতা-আন্দোলন দমন করাই বৃটিশদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ। সত্যাগ্রহ দৈহিক দিক থেকে ভারতে বৃটিশ-শাসনের অবসান ঘটাতে পারে না, কিংবা বৃটিশদের ভারত থেকে বিতাড়িত করতেও পারে না। সত্যাগ্রহ শুধু শান্তির পথে বৃটিশের সঙ্গে সম্মানজনক অপোষ রফার মারফৎ স্বাধীনতা আনতে পারে। কিন্তু বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ পশুশক্তির সাহায্যে সত্যাগ্রহ-আন্দোলন দমন করতে কৃতসংকল্প হওয়ায় তা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজেই ভারতের মুক্তিকামীর পক্ষে সংগ্রামের ঐতিহাসিক-পদ্ধতি অবলম্বন ছাড়া গত্যন্তর নাই। এই ভাবে আমরা চতুর্থ এবং শেষ অপরিহার্য পথে এসে পড়লাম— স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে অস্ত্র-গ্রহণ।

 ভারতীয় জনগণের একটা বৃহৎ অংশ—বিশেষ করে ভারতীয় যুবসমাজ—এ সম্বন্ধে সজাগ। এই জন্যেই গত চল্লিশ বৎসর ধরে দেশের মধ্যে নানা উত্থান-পতনের ভিতর দিয়ে গুপ্ত বিপ্লবী আন্দোলন চলেছে। এই আন্দোলন উপলক্ষে অস্ত্রাদি সংগৃহীত হয়েছে, এবং বোমা ও অন্যান্য বিস্ফোরক দ্রব্য গোপনে প্রস্তুত করা হয়েছে।

 বিপ্লবী আন্দোলনের মারফৎ সত্যাগ্রহ-অন্দোলনের সাহায্যে কিংবা সাহায্য ছাড়া স্বাধীনতা পাবার কি আশা আছে? অতীত ইতিহাসেই এ প্রশ্নের উত্তর মেলে। অসংহত একদল লোক সামান্য অস্ত্রের দ্বারা পশুশক্তির ভিত্তিতে গঠিত এবং পশুশক্তি ব্যবহারে কৃতসংকল্প একটি বিদেশী গবর্নমেণ্টকে উচ্ছেদ করতে পারে না। স্বাধীনতা লাভের জন্যে শুধু অস্ত্রের ব্যবহারই যথেষ্ট নয়। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন এবং সেই অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহারের জন্যে প্রয়োজন আধুনিক বাহিনীর।

 ভারতের মধ্যেই যদি আধুনিক বাহিনী গঠন এবং ভারতের মধ্য থেকেই সে বাহিনীর জন্যে অস্ত্রশস্ত্রাদি সংগ্রহ সম্ভব হত, তবে বাইরে থেকে কোন সাহায্যের প্রয়োজন হত না এবং ভারতীয় জনগণের পক্ষে তাই হত প্রকৃষ্টতম ব্যবস্থা। কিন্তু ১৮৫৭ অব্দের পরে ভারতীয় জনগণকে যেভাবে নিরস্ত্র করা হয়েছে—তাতে ভারতের মধ্যে কোন বৈপ্লবিক বাহিনী সংগঠন কিংবা তার জন্যে অস্ত্রাদি সংগ্রহ করা অসম্ভব। এর জন্যে হতাশ হয়ে সংগ্রাম পরিত্যাগ করার কোন কারণ নেই। রোগ যত কঠিনই হোক, তার প্রতিষেধক আছে। প্রত্যেক সমস্যারই সমাধান আছে—শুধু আমাদের আবিষ্কারেয় প্রতীক্ষা। এক্ষেত্রে প্রতিষেধক হচ্ছে ভারতের বাইরে বাহিনী সংগঠন, সেই বাহিনীর জন্যে অস্ত্রাদি সংগ্রহ করা এবং তারপর দেশের বুকে অভিযান চালানো। পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা বর্ত্তমানে তা-ই করছে।

 পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়রা যা করছে, ইতিহাসে তার নজির আছে। গত যুদ্ধে আইরিশ সিনফিনদলের বিপ্লবীরা মার্কিণ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অর্থ এবং অস্ত্র সাহায্য পেয়েছিল; তা ছাড়া জার্ম্মাণীর কাছ থেকেও অস্ত্রাদি পেয়েছিল। ১৮৫৯ অব্দে ইটালীর স্বাধীনতা-সংগ্রামে ইটালীদখলকারী অষ্ট্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে তৃতীয় নেপোলিয়ঁর ফরাসী-বাহিনী আহূত হয়েছিল। তুরস্কের শাসন-মুক্তির জন্যে বল্কান যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর সাহায্যে বুলগেরিয়া মুক্তি পেয়েছিল। বস্তুতঃ পৃথিবীর বিপ্লবের ইতিহাসে এমন কোন উদাহরণ নেই, যে ক্ষেত্রে কোন না কোন প্রকারে বাইরের সাহায্য ছাড়া স্বাধীনতা অর্জ্জন সম্ভব হয়েছে।

 আমি উপরে মন্তব্য করেছি যে, অহিংস সংগ্রামের দ্বারা ভারতের স্বাধীনতা অর্জ্জন কখনও সম্ভব হবে না। যদি সেই অলৌকিক ব্যাপার সম্ভবই হয় এবং শুধু সত্যাগ্রহের দ্বারা আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, তবে আমার চেয়ে বেশী সুখী কেউ হবে না। সেক্ষেত্রে পূর্ব্ব-এশিয়ায় বর্ত্তমানে আমরা যে সুবৃহৎ প্রচেষ্টায় আত্মনিয়োগ করেছি, তার আর কোন প্রয়োজনই থাকবে না।

 এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই, প্রকৃত স্বাধীনতা কামনা করে যাঁরা এত দিন পর্য্যন্ত অহিংস উপায়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে আসছেন, সর্ব্বপ্রকার উপায় ব্যর্থ হওয়ায় তাঁদের এই বর্ত্তমান সশস্ত্র সংগ্রামই সমর্থন করা উচিত। আমি জানি, আমাদের যুবক-সমাজের এ বিষয়ে সমর্থন আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আমাদের প্রবীণ নেতারা কি বলেন? তাঁদেরও এই পথ অবলম্বন করা উচিত। আমাদের প্রধান কংগ্রেস-নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ নেহাৎ হতাশ হয়ে ইতিপূর্ব্বে পরিত্যক্ত মধ্যপন্থী ও উদারনৈতিকদের নীতিতে ও পথে ফিরে যাবার প্রবণতা দেখাচ্ছেন। এটা পরম পরিতাপের বিষয়।

 এইবার আমি আমাদের আন্দোলনের কৌশল অতি সংক্ষেপে পুনরুল্লেখ করব। ভারতের বৃটিশ-বাহিনী বাইরে থেকে আক্রান্ত না হওয়া পর্য্যন্ত, তারা দেশের বিপ্লবী আন্দোলনকে দমন করতে সক্ষম হবে। অজাদ-হিন্দ ফৌজ সেই হিসাবে ভারতের মুক্তিসংগ্রামে “দ্বিতীয় রণাঙ্গন” সৃষ্টি করেছে। আমরা যখন ভারতের মধ্যে আরও এগিয়ে যাব এবং ভারতের জনগণ নিজেদের চোখে বৃটিশদের পশ্চাদপসরণ করতে দেখবে, তখন তাদের মনে বিশ্বাস জন্মাবে যে, বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের পতন সন্নিকটবর্ত্তী। শুধু তখনই তারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে এগিয়ে আসবে এবং স্বদেশের মুক্তির জন্যে আমাদের অগ্রসরমান সেনাদলের সঙ্গে হাত মেলাবে। একসঙ্গে আমরা তখন বৃটিশদের পশ্চাদ্ধাবন করব এবং তাদের ভারতের মাটি থেকে বিতাড়িত করব।

 রাজনৈতিক কিংবা সামরিক—যে কোন কৌশল অনুসারেই কাজ করতে গেলে জনগণের মনস্তত্ত্ব সর্ব্বদাই বুঝতে হয়। যে-কোন সংগ্রামের পক্ষে এটা মূলীভূত প্রয়োজন। পূর্ব্ব-এশিয়ায় ভারতবাসীরা তাদের চোখের সামনে কয়েক মাসের মধ্যে হংকং থেকে চিন্দুইন নদী পর্য্যন্ত একটা বিরাট সাম্রাজ্যকে উবে যেতে দেখেছে। সেই জন্যেই তারা ভারতে বৃটিশদের পরাজয় এবং উচ্ছেদ সম্বন্ধে এত বেশী আস্থাশীল। ভারতস্থিত আমাদের দেশবাসীর এ অভিজ্ঞতা হয়নি। সেইজন্যেই তাদের মনের কোণে ভীতি আছে যে, ভারতে বৃটিশশক্তি হয়তো এখনও এত বেশী যে তাকে কিছুতে পরাজিত করা যাবে না। বিপ্লব আরম্ভের পূর্ব্বে তাদের মন থেকে আমাদের এই ভ্রান্তি দূর করতে হবে। সেই ভ্রান্তি দূর করার জন্যে এবং ভীতিগ্রস্ত ভারতীয়দের মনে আত্মবিশ্বাস সঞ্চারের জন্যে, আজাদ-হিন্দ ফৌজকে যুদ্ধ করতে হবে এবং রক্তপাত করতে হবে। মালয় এবং ব্রহ্মে যেমন ঘটেছিল তেমনভাবে বৃটিশদের পালাতে বাধ্য করতে পারলে, তবেই আজাদ-হিন্দ ফৌজের প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা কঠিন কাজ সমাপ্ত হবে।

 আজাদ-হিন্দ ফৌজের ঐতিহাসিক ভূমিকায় এটি এক স্মরণযোগ্য ঘটনা—বৃটিশ-সাম্রাজ্যের এক সমাধিভূমিতে—একদা দুর্ভেদ্য দুর্গ সিঙ্গাপুরে এই বাহিনীর সংগঠন হয়েছে। আজাদ-হিন্দ ফৌজ এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে যে, নিয়তি ইতিপূর্ব্বেই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন; আজাদ-হিন্দ ফৌজ সেই দণ্ডদানের ব্যাপারে নিমিত্ত মাত্র।

 প্রশ্ন ওঠে,—আমাদের এ সংগ্রামে জাপানের সাহায্য প্রয়োজনীয় কেন। আয়ার্ল্যাণ্ডে বৃটিশদের পঞ্চাশ হাজার সুশিক্ষিত সৈন্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে আইরিশ সিনফিন দলের খুব বেশী হলে মাত্র পাঁচ হাজার অনিয়মিত সৈন্য ছিল। ইটালীতে গ্যারিবল্ডী তাঁর সামরিক অভিযান সুরু করেছিলেন মাত্র এক হাজার অসজ্জিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে। তবে আমাদের জাপানের সাহায্য প্রয়োজন হয়েছে কেন?

 এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট। যদি ভারতের যুদ্ধপূর্ব্ব বৃটিশ-বাহিনীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হত, তবে আমাদের কোন বিদেশী সাহায্যের প্রয়োজন হত না। কিন্তু এই যুদ্ধ উপলক্ষে বৃটিশ আমাদের দেশে এক বিরাট সেনাবাহিনী তৈরী করেছে। তাছাড়া, তারা সারা পৃথিবী থেকে অতিরিক্ত সেনাবাহিনী, অস্ত্রশস্ত্র এবং সমর-সজ্জা এনেছে—ইংল্যাণ্ড থেকে, আমেরিকা থেকে, বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চল থেকে এবং নেপাল থেকে। একদা সর্ব্বশক্তিমান বৃটিশরা ভিক্ষাপাত্র হাতে নিয়ে সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়িয়েছে। সেই জন্যে আমাদেরও জাপানের সাহায্য নিতে হয়েছে। ভারতের বৃটিশ বাহিনী তার যুদ্ধ-পূর্ব্ব অবস্থায় ফিরে যাক; আমিও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, জাপানের সশস্ত্র বাহিনীর সাহায্য ছাড়াও আমরা ভারতে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের উচ্ছেদ সাধন করতে পারব। আর বৃটিশরা যদি মহাত্মা গান্ধীর “ভারত ছাড়ো” প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি যে, একটি জাপানী সৈন্যও ভবিষ্যতে ভারতের মাটিতে পদার্পণ করবে না, এবং যে সব জাপানী সৈন্য ইতিমধ্যেই ভারতে পৌঁছেচে তারা সানন্দে এখনই ভারত ছেড়ে চলে আসবে।

 আমাদের সমগ্র অভিযান কৌশলের বর্ণনা দিয়ে, এবার আমি প্রকাশ করব, চূড়ান্ত বিজয় সম্বন্ধে আমি কেন এত আস্থাশীল—

 ১। আমি দেখছি ইতিহাসের বিধান অনুসারে বৃটিশ সাম্রাজ্য এখন ক্ষয়িষ্ণু। কোন প্রকার কৃত্রিম উত্তেজক দ্রব্যের দ্বারা—যেমন আমেরিকান সাহায্যের দ্বারা—তাকে আর পূর্ব্বেকার যৌবন এবং গৌরবের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না।

 কিন্তু ক্ষয়িষ্ণু সাম্রাজ্য অকস্মাৎ মরে না। মৃত্যু যখন এগিয়ে আসে, তখনও সংগ্রাম চলে—মৃত্যুর কাছে শেষ আত্মসমর্পণের পূর্ব্ব পর্য্যন্ত সময় সময় সে সংগ্রাম অতি কঠিনও হয়। এই জন্যেই বৃটিশরা এখনও যুদ্ধ করছে এবং ভবিষ্যতে পতনের পূর্বে তারা কঠিন সংগ্রাম করবে।

 ২। ভারতীয় জনগণ এখন যথেষ্ট এগিয়ে গেছে; তারা নিজেদের ব্যাপারে কর্ত্তৃত্ব গ্রহণে সম্পূর্ণ সক্ষম। এজন্যে তারা যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছে।

 ৩। আমি দেখছি, দেশব্যাপী জাতীয় জাগরণ হয়েছে এবং স্বাধীনতা লাভের জন্যে যে নিগ্রহ ও আত্মত্যাগ প্রয়োজন তার জন্যেও জনগণ প্রস্তুত। তাছাড়া, রাজনৈতিক দিক থেকে দেশবাসী সঙ্ঘবদ্ধ এবং নিয়মানুবর্ত্তী।

 ৪। এপর্য্যন্ত আমাদের যে একটি জিনিসের অভাব ছিল—একটি মুক্তি-ফৌজ—তারও জন্ম হয়েছে।

 ৫। ভারতের মুক্তির জন্যে বাইরের যে সামরিক সাহায্য অপরিহার্য্য, ভারতের পূর্ব্বদ্বার খুলে যাওয়ায় এবং পূর্ব্ব-এশিয়ার ভারতীয়দের প্রবল প্রচেষ্টার ফলে—সেটা পাওয়াও আজ সম্ভব হয়েছে।

 ৬। যুদ্ধ পরিস্থিতির দরুণ বৃটিশ শক্তির উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ভারত-রক্ষার অয়োজন পণ্ড হয়ে গেছে। ভৌগোলিক এবং রাজনৈতিককারণে পূর্ব্বদিক থেকে ভারতে অভিযান করা আমাদের পক্ষে সুবিধাজনক, কিন্তু বৃটেনের পক্ষে অত্যন্ত অসুবিধাজনক।

 ৭। ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের অভিযান চালানোর জন্যে আমরা পূর্ব্ব-এশিয়ায় একটি শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলতে পেরেছি। লোকবল, ধনবল এবং দ্রব্যবলের দিক থেকে সামগ্রিক সমর-প্রস্তুতির মারফৎ পূর্ব্ব-এশিয়ার ত্রিশ লক্ষ ভারতবাসীকে সঙ্ঘবদ্ধ করে একটা ভয়ঙ্কর শক্তিতে পরিণত করা হয়েছে। যতদিন প্রয়োজন ততদিন তারা ভারতের অভ্যন্তরে আমাদের অভিযান পরিচালনায় কার্য্যকরী সাহায্য করতে পারবে।

 ৮। সঙ্কট উপস্থিত হলে জাপানের মতো একটি প্রথম শ্রেণীর আধুনিক শক্তির সাহায্য আমরা পেতে পারি—বিশেষ করে যদি ভারতের সম্মিলিত মিত্রশক্তি আমাদের পক্ষে খুব বেশী শক্তিশালী বলে প্রমাণিত হয়।

 ৯। আমরা যখন ব্রহ্ম থেকে ভারতে অগ্রসর হব, তখন পিছন থেকে চুংকিং আমাদের আঘাত করতে পারবে—এরূপ কোন আশঙ্কা নেই।

 ১০। আমাদের নেতৃত্বভার নিজেদের এমন একটি গবর্নমেণ্টের উপর, যার পিছনে নয়টি মিত্রশক্তির স্বীকৃতি ও সমর্থন আছে।

 ১১। সাধারণ যুদ্ধ-পরিস্থিতি আমাদের অনুকূল; আমরা ইউরোপীয় যুদ্ধের উপর নির্ভরশীল নই। ভবিষ্যতে ইউরোপে যাই ঘটুক না কেন, আমরা জয়লাভ করবই।

 সর্ব্বশেষ হলেও এটা কোন অংশে কম গুরুত্বপূর্ণ নয় যে, আমরা বিপক্ষীয়দের এবং নিজেদের শক্তির তারতম্য জানি। আমরা ন্যায় সত্য এবং জন্মস্বত্ব স্বাধীনতার জন্যে সংগ্রাম করছি—এ চেতনা আমাদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। মিত্রশক্তির মনে সেরূপ কোন প্রেরণা নেই। কাজেই শেষ পর্য্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য যে সঙ্কল্প আমরা করেছি, তা অনমনীয়। তা ছাড়া, আমরা নিজেদের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার পূর্ণ মূল্য দিতে প্রস্তুত।

 বক্তৃতা শেষ করার পূর্ব্বে বর্ত্তমানে ইন্দোব্রহ্ম-সীমান্তে এবং ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে সে সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলব। এই অভিযান সম্বন্ধে সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এর ফলে বৃটিশরা ব্রহ্ম পুনরুদ্ধারের সমস্ত পরিকল্পনা চিরদিনের মতো শিকেয় তুলতে বাধ্য হয়েছে। নিজেদের মুখ রক্ষার জন্যে বৃটিশরা এখন বলছে যে, আমরা দিল্লী পৌঁছুতে পারি নি। তারা আমাদের দিল্লী প্রবেশের কাল্পনিক তারিখ পর্য্যন্ত নির্দ্দেশ করছে।

 বন্ধুগণ! শত্রুর শক্তি যে কম করে দেখবে সে মূর্খ। আরাকানে, কালাদন ও হাকা অঞ্চলে, টিড্ডিম অঞ্চলে, মণিপুর এবং আসামে বিপক্ষীয়দের বহু বিমিশ্র বাহিনী আমরা দেখেছি। আমরা বহু আগেই যা ভেবে রেখেছি তাই সত্যি। আমাদের চেয়ে তাদের রেশন বেশী, সমরসজ্জা উন্নত ধরণের; কেন না তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে ভারতবর্ষের সম্পদ জড় করছে। তা সত্ত্বেও আমরা সর্ব্বত্র তাদের পরাজিত করেছি। পৃথিবীর সর্ব্বত্র বিপ্লবীবাহিনীকে আমাদের মতো অবস্থাতেই যুদ্ধ করতে হয়—কিন্তু তারা শেষ পর্য্যন্ত বিজয়ী হয়। বিয়ার এবং রাম, টিনজাত শূকর-মাংস এবং গো-মাংস থেকে তাদের শক্তি আসে না, তাদের শক্তি আসে বিশ্বাস এবং আত্মত্যাগ থেকে—সাহস এবং সহিষ্ণুতা থেকে। আজাদ-হিন্দ ফৌজ বৃটিশ-বাহিনীর মতো নয়। চূড়ান্ত রকমের কষ্ট এবং অসুবিধার মধ্যে যুদ্ধ করার জন্যে আজাদ-হিন্দ ফৌজকে গড়ে তোলা হয়েছে। যাদের মুক্তির জন্যে তারা সংগ্রাম করছে, সেই বিশ কোটি আশি লক্ষ লোকের স্বার্থকে তারা কখনও ডুবিয়ে দেবে না।

 মণিপুর এবং উত্তর-পূর্ব্ব আসামের সামরিক গুরুত্ব এত বেশী যে, বৃটিশরা সেখানে স্বাভাবিক ভাবেই দৃঢ় প্রতিরোধ করবে। উভয় পক্ষই জানে যে, মণিপুর মুক্ত হলেই বৃটিশদের একটা বিরাট অঞ্চল ছেড়ে বহু দূর পশ্চাদপসরণ করতে হবে। কিন্তু আমরা ভারতের অভ্যন্তরে অভিযান-পরিচালনায় অভিজ্ঞতার পূর্ণতম ব্যবহার করছি। দীর্ঘস্থায়ী কঠিন সংগ্রাম আমাদের উদ্দেশ্যের পক্ষে মঙ্গলজনক—কেন না একমাত্র এই পথেই নতুন বিপ্লবী বাহিনী এবং তার অফিসারদের শিক্ষা লাভ সম্পূর্ণ হতে পারে। আমরা শুধু এখন ভারতকে মুক্ত করলেই কাজ ফুরিয়ে যাবে না,—আমাদের সেনাবাহিনী, অফিসার এবং সেনাপতি তৈরী করতে হবে—যারা ভবিষ্যতে সব সময়ের জন্যে ভারতের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে। কাজেই, এখন মণিপুরে এবং আসামে যা ঘটছে তা আমাদের মঙ্গলের জন্যেই।

 ভারতের মধ্যে যে যুদ্ধ চলছে, সে যুদ্ধ বৃটেন ও আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ নয়—এ ভারতের নিজেরই মুক্তি-সংগ্রাম। সেই জন্যেই অমরা অধৈর্য্য কিংবা দুর্ব্বল হয়ে পড়িনি। মণিপুর থেকে দিল্লী অনেক দূর। কাজেই রাজধানীতে ত্রিবর্ণ-রঞ্জিত পতাকা উত্তোলন করতে পারার পূর্ব্বে আমরা পুরো দুটি বৎসর যুদ্ধ করতে প্রস্তুত। আমরা জানি, সংগ্রাম যত দীর্ঘ স্থায়ী এবং কঠিনই হোক, শেষ পর্য্যন্ত আমাদের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। ইত্যবসরে যে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ ১৯৪২-এ ভারত ছেড়ে চলে যাবার জন্যে প্রস্তুত হয়েছিল, তারা আরও কিছুদিন সুখভোগ করে নিক। চরম দিনে নয়া দিল্লীর বড়লাটের প্রাসাদ-শীর্য থেকে ঘণ্টা বাজিয়ে বৃটিশ সাম্রাজ্যের মৃত্যু ঘোষণা করা হবে।

 বেতার বক্ত‌ৃতা: ১০ই জুলাই, ১৯৪৪