একাদশ সর্গ—জরাবর্গ।

দ্বেষাদি অনলে দগ্ধ সংসারেতে হেন
হাস্য বা আনন্দ-রশ্মি বিচ্ছুরিত কেন?
অজ্ঞান-আঁধারে কেন হ’য়ে অন্তর্ধান
জ্ঞানের প্রদীপ নাহি করিছ সন্ধান?॥১॥১৪৬॥
বস্ত্র আর অলঙ্কারে সজ্জিত সুন্দর
ক্ষতের সমষ্টি মাত্র যে দেহ-পঞ্জর,

নানাবিধ রোগ শোকে সদা জর্জ্জরিত
বিবিধ সংকল্পপূর্ণ[১] যে দেহ নিয়ত,
বারেক সে দেহ-যষ্টি কর বিলোকন,
স্থিতি তা'র কভু নাহি হবে সনাতন॥২॥
রোগপূর্ণ জীর্ণ এই মানব-শরীর
ভঙ্গুর বলিয়া মনে জানিবেক স্থির;
পুরীষ-সমষ্টি দেহ পাইবে বিলয়,
জীবনের অবসান মরণে নিশ্চয়[২]॥৩॥
শরৎ কালের শুভ্র অলাবুর প্রায়
শুভ অস্থিরাশি প্রতি কা'র আস্থা হয়?॥৪॥

অস্থিদ্বারা পুরী এক হ’য়েছে নির্ম্মিত
রক্তমাংস প্রলেপেতে আছে অবস্থিত;
দিবানিশি বাস করে ভিতরে তাহার
জরা, মৃত্যু, অভিমান, কপটতা আর॥ ৫॥ ১৫০॥
সুচিত্রিত রাজপথ জীর্ণ হ’য়ে যায়,
জীর্ণ হবে নর-দেহ কি আছে বিস্ময়?
সাধুর স্বধর্ম্ম কভু নাহি হয় ক্ষয়,
সজ্জন সতের কাছে এই কথা কয়॥ ৬॥
অল্লজ্ঞান নর বাড়ে বলীবর্দ্দ প্রায়,
প্রজ্ঞা না বাড়িয়া তা’র মাংস বৃদ্ধি পায়॥ ৭॥
দেহ-গৃহ-নির্ম্মাতার করি অন্বেষণ
কতবার করিলাম জনম গ্রহণ
করিনু সংসার পথে ভ্রমণ সতত
পুনঃ পুনঃ জন্মলাভ দুঃখকর কত!
হে গৃহকারক! আজ দেখিনু তোমারে,
দিবনা তোমাকে আর গৃহ নির্ম্মিবারে;

কাষ্ঠদণ্ড সব তব হ’য়েছে ভগন
নষ্ট হ'য়ে গেছে যত গৃহাবলম্বন
অবশেষে চিত্ত মম পেয়েছে নির্ব্বাণ
হইয়াছে ভবতৃষ্ণা সব অবসান॥৮—৯॥[৩]
ব্রহ্মচর্য্য আচরণ না করে যেজন,
যৌবনে না করে যেই ধন উপার্জ্জন,
সত্বর বিনাশপ্রাপ্ত হয় সেইজন
মৎস্যহীন জলাশয়ে ক্রৌঞ্চের মতন॥১০॥
ব্রহ্মচর্য্য আচরণ না করে যেজন
যৌবনে না করে যেই ধন উপার্জ্জন
পুরাতন কাহিনী সে করিয়া শ্রবণ
প’ড়ে থাকে জীর্ণ শীর্ণ ধনুর মতন॥১১॥


  1. “বহুসঙ্কল্পং”―“Filled with crowded thoughts’―S. Beal.
  2. Cf:—“মরণান্তং হি জীবিতম্‌"।
    এই শ্লোকে মূলে “পূতি-সন্দোহ” আছে, উহাকে “পুরীষ সমষ্টি” বলিয়া অনুবাদিত হইল, এস্থলে পুরীষ শব্দের অর্থ পাপকার্য্য হইতে পারে। মোক্ষমুলর এইরূপে অনুবাদ করেন,―“This body―A heap of corruption―breaks to pieces. Life indeed ends in death.”
  3. সমগ্র বৌদ্ধ ধর্ম্মশাস্ত্রে এই দুইটী শ্লোক সুবিখ্যাত ও সমাদৃত।