পক্ষী মানব

যন্ত্র দানব, মানবে করিলে পাখি।
স্থল জল যত তার পদানত
আকাশ আছিল বাকি॥
বিধাতার দান পাখিদের ডানা দুটি।
রঙের রেখায় চিত্রলেখায়
আনন্দ উঠে ফুটি;
তারা যে রঙিন পান্থ মেঘের সাথী।
নীল গগনের মহা পবনের
যেন তারা এক জাতি।
তাহাদের লীলা বায়ুর ছন্দে বাঁধা,
তাহাদের প্রাণ, তাহাদের গান
আকাশের সুরে সাধা;
তাই প্রতিদিন ধরণীর বনে বনে
আলোক জাগিলে এক তানে মিলে
তাহাদের জাগরণে।
মহাকাশ তলে যে মহাশান্তি আছে
তাহাতে লহরী কাঁপে থরথরি
তাদের পাখার নাচে।

যুগে যুগে তারা গগনের পথে পথে
জীবনের বাণী দিয়েছিল আনি
অরণ্যে পর্বতে;
আজি এ কী হোলো, অর্থ কে তার জানে।
স্পর্ধা পতাকা মেলিয়াছে পাখা
শক্তির অভিমানে।
তারে প্রাণদেব করেনি আশীর্বাদ।
তাহারে আপন করেনি তপন
মানেনি তাহারে চাঁদ।
আকাশের সাথে অমিল প্রচার করি’
কর্কশস্বরে গর্জন করে
বাতাসেরে জর্জরি’।
আজি মানুষের কলুষিত ইতিহাসে
উঠি মেঘলোকে স্বর্গ আলোকে
হানিছে অট্টহাসে।
যুগান্ত এল বুঝিলাম অনুমানে
অশান্তি আজ উদ্যত বাজ
কোথাও না বাধা মানে;
ঈর্ষা হিংসা জ্বালি মৃত্যুর শিখা
আকাশে আকাশে বিরাট বিনাশে
জাগাইল বিভীষিকা।

দেবতা যেথায় পাতিবে আসনখানি
যদি তার ঠাঁই কোনোখানে নাই
তবে, হে বজ্রপাণি,
এ ইতিহাসের শেষ অধ্যায়তলে
রুদ্রের বাণী দিক দাঁড়ি টানি
প্রলয়ের রোষানলে॥
আর্তধরার এই প্রার্থনা শুন
শ্যামবনবীথি পাখিদের গীতি
সার্থক হোক পুন॥

২৫শে ফাল্গুন, ১৩৩৮