নীল-দৰ্পণ নাটক
নীল-দর্পণ নাটক
নীলকর-বিষধর-দংশিন কাতর-প্রজানিকর-
ক্ষেমঙ্করেণ কেনচিৎ পথিকেনাভিপ্রণীতং।
শ্রী জয়কৃষ্ণ সেন কর্ত্তৃক প্রকাশিত।
কলিকাতা।
দুষ্পাঠ্য যন্ত্রে
দুষ্পাঠ্যশশীধর মুখোপাধ্যায় দ্বারা
পুনর্মুদ্রিত।
দুষ্পাঠ্য
ভূমিকা।
নীলকরনিকরকরে নীল-দর্পণ অর্পণ করিলাম। এক্ষণে তাঁহারা নিজ নিজ মুখ সন্দর্শন পূর্ব্বক তাঁহাদিগের ললাটে বিরাজমান স্বার্থপরতা কলঙ্ক-তিলক বিমোচন করিয়া তৎপরিবর্ত্তে পরোপকার শ্বেতচন্দন ধারণ করুন, তাহা হইলেই আমার পরিশ্রমের সাফল্য, নিরাশ্রয় প্রজাব্রজের মঙ্গল এবং বিলাতের মুখ রক্ষা। হে নীলকরগণ! তোমাদিগের নৃশংস ব্যবহারে প্রাতঃস্মরণীয় সিড্নি, হাউয়ার্ড, হল প্রভৃতি মহানুভব দ্বারা অলঙ্কৃত ইংরাজকুলে কলঙ্ক রটিয়াছে। তোমাদিগের ধনলিপ্সা কি এতই বলবতী যে তোমরা অকিঞ্চিৎকর ধনানুরোধে ইংরাজ জাতির বহুকালার্জিত বিমল যশস্তামরসে কীটস্বরূপে ছিদ্র করিতে প্রবৃত্ত হইয়াছ। এক্ষণে তোমরা যে সাতিশয় অত্যাচার দ্বারা বিপুল অর্থ লাভ করিতেছ তাহা পরিহার কর, তাহা হইলে অনাথ প্রজারা সপরিবারে অনায়াসে কালাতিপাত করিতে পারিবে। তোমরা এক্ষণে দশ মুদ্রা ব্যয়ে শত মুদ্রার দ্রব্য গ্রহণ করিতেছ, তাহাতে প্রজাপুঞ্জের যে ক্লেশ হইতেছে তাহা তোমরা বিশেষ জ্ঞাত আছ; কেবল ধনলাভপরতন্ত্র হইয়া প্রকাশ করণে অনিচ্ছুক। তোমরা কহিয়া থাক যে তোমাদের মধ্যে কেহ কেহ বিদ্যাদানে অর্থ বিতরণ করিয়া থাকেন এবং সুযোগ ক্রমে ঔষধ দেন; এ কথা যদিও সত্য হয়, কিন্তু তাহাদের বিদ্যাদান পয়স্বিনী ধেনুবধে পাদুকা দানাপেক্ষাও ঘৃণিত এবং ঔষধ বিতরণ কালকূটকুম্ভে ক্ষীর ব্যবধান মাত্র। শ্যামচাঁদ আঘাত উপরে কিঞ্চিৎ টারপিন তৈল দিলেই যদি ডিস্পেন্সারি করা হয়, তবে তোমাদের প্রত্যেক কুটিতে ঔষধালয় আছে বলিতে হইবে। দৈনিক সংবাদপত্র সম্পাদকদ্বয় তোমাদের প্রশংসায় তাহাদের পত্র পরিপূর্ণ করিতেছে, তাহাতে অপর লোক যেমত বিবেচন৷ করুক, তোমাদের মনে কখনই ত আনন্দ জন্মিতে পারে না, যেহেতু তোমরা তাহাদের এরূপ করণের কারণ বিলক্ষণ অবগত আছ। রজতের কি আশ্চর্য্য আকর্ষণ শক্তি। ত্রিংশৎ মুদ্রালোভে অবজ্ঞাস্পদ জুডাস, খৃষ্ট-ধর্ম্ম-প্রচারক মহাত্মা যীজস্কে করাল পাইলেট করে অর্পণ করিয়াছিল; সম্পাদকযুগল সহস্র মুদ্রা লাভ পরবশ হইয়া উপায়হীন দীন প্রজাগণকে তোমাদের করাল কবলে নিক্ষেপ করিবে আশ্চর্য্য কি? কিন্তু “চক্রবৎ পরিবর্ত্তন্তে দুঃখানি চ সুখানি চ।” প্রজাবৃন্দের সুখসূর্য্যোদয়ের সম্ভাবনা দেখা যাইতেছে। দাসী দ্বারা সন্তানকে স্তনদুগ্ধ দেওয়া অবৈধ বিবেচনায় দয়াশীল প্রজাজননী মহারাণী ভিক্টোরিয়া প্রজাদিগকে স্বক্রোড়ে লইয়া স্তনপান করাইতেছেন। সুধীর সুবিজ্ঞ সাহসী উদারচরিত্র ক্যানিং মহোদয় গবর্ণর জেনেরল হইয়াছেন। প্রজার দুঃখে দুঃখী, প্রজার সুখে সুখী দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন, ন্যায়পর গ্রাণ্ট মহামতি লেফ্টেনেণ্ট গবর্ণর হইয়াছেন এবং ক্রমশঃ সত্যপরায়ণ, বিচক্ষণ, নিরপেক্ষ ইডেন্, হারসেল্ প্রভৃতি রাজকার্য্যপরিচারকগণ শতদল স্বরূপে সিবিল্ সরভিস সরোবরে বিকসিত হইতেছেন। অতএব ইহা দ্বারা স্পষ্ট প্রতীয়মান হইতেছে, নীলকর দুষ্টরাহুগ্রস্ত প্রজাবৃন্দের অসহ্য কষ্ট নিবারণার্থ উক্ত মহানুভবগণ যে অচিরাৎ সদ্বিচাররূপ সুদর্শনচক্র হস্তে গ্রহণ করিবেন, তাহার সূচনা হইয়াছে।
নিম্নে মুদ্রিত কয়েকটি সংগীত সাদরে নীলকরদিগকে
উপহার প্রদত্ত হইল।
রাগীণী আড়ান বাহার-তাল তেহট।
হে নিরদয় নীলকরগণ।
আর সহে না প্রাণে এ নীল দহন॥
কৃষকের ধনে প্রাণে, দহিলে নীল আগুনে,
গুণরাশি কি কুদিনে, কল্লে হেতা পদার্পণ।
দাদনের সুকৌশলে, শ্বেত সমাজের বলে,
লুঠেছ সকল তো হে কি আর আছে এখন॥
দীন জনে দুঃখ দিতে কাহার না লাগে চিতে,
কেবল নীলের হেরি পাষাণ সমান মন।
বৃটন স্বভাবে শেষে, কালী দিলে বঙ্গে এসে,
তরিলে জলধিজল, পোড়াতে স্বর্ণভবন॥
কবির সুর।
নীল বানরে সোণার বাংলা কল্লে এবার ছারেখার।
অসময়ে হরিশ মলো লংয়ের হলো কারাগার॥
প্রজার আর প্রাণ বাঁচানো ভার।
রাম সীতার কারণে, সুগ্রীবে মিতালী করে বধে রাবণে,
যত সওদাগররা সহায় এদের, ## দুটো এডিটার।
এখন স্পষ্ট লেখা ঘুচে গ্যালো, জজ সাহেব এক অবতার।
যত #### রাজত্ব হলো, সাধুর পক্ষে গঙ্গাপার॥
[সোমপ্রকাশ হইতে উদ্ধৃত]
রাগ সুরটমল্লার — তাল আড়াঠেকা।
নীল-দর্পনে লং সাহেব যথার্থ যা তাই লিখেচে।
নীলে নীলে সব নিলে প্রজার বল ভাই কি রেখেচে॥ ১
কারো ## কার, তাদের উপর অত্যাচার,
তাই নিয়ে বার বার, লিখে লিখে হরিশ মরেছে॥ ২
ইডন্, গ্রান্ট মহামতি, ন্যায়বান্ উভয়ে অতি,
করিতে প্রজার গতি, কত চেষ্টা পাইতেছে॥ ৩
ইণ্ডিগো রিপোর্ট পোড়ে, কে না অন্তরে পোড়ে,
তবু নীলিরা নোড়ে চোড়ে, পোড়ার মুখ দেখাতেছে॥ ৪
বল্তে দুখে বুক বিদরে, ওয়েল্স অবিচার কোরে,
নির্দ্দোষী লংকে ধোরে, একটি মাস ম্যাদ দিয়েছে॥ ৫
ওয়েল্স, পিকক, জাকসনে, বসিয়া বিচারাসনে,
$$$$$$$$$ হাজার টাকা ফাইন কোরেছে॥ ৬
নিদারুণ সেন্টেন্স শুনে, সিংহ বাবু দয়াগুণে,
হাজার টাকা দিলেন গুণে, ওয়াল্টারব্রেট তায় তাকে হয়েছে॥ ৭
ইংলণ্ডেশ্বরী শুন, পিউনির সকল গুণ,
আইনে যে সুনিপুণ এবার তা বেরিয়ে পোড়েছে॥ ৮
যে অবধি কলিকাতা, পাইয়াছে এই বিধাতা,
সেই অবধি দেখি মাতা, রেস্ হেট্রে ড খুব চেগেছে॥ ৯
বেঞ্চে বাতুলের মত লম্প ঝম্প করে কত,
আবার বলে আমার মত, কে বা জজ হেথা এসেছে॥ ১০
কিন্তু পীল, সিটন আদি, এক এক বুদ্ধির কাঁদি,
তাদের লাগি আজো কাঁদি, হায় কি বিচার কোরে গেছে॥ ১১
মহারাণী তোমা প্রতি, এই ক্ষণে এই মিনতি,
ওয়েল্স পাপে দেও মুকতি, ধীরাজ এই বলিতেছে॥ ১২
(ধীরাজকৃত)
নাট্যোল্লিখিত ব্যক্তিগণ। | ||
পুরুষগণ। | ||
গোলোকচন্দ্র বসু | ||
নবীনমাধব ও বিন্দুমাধব |
গোলোকচন্দ্র বসুর পুত্রদ্বয়। | |
সাধুচরণ | প্রতিবাসী রাইয়ত। | |
রাইচরণ | সাধুর ভ্রাতা। | |
গোপীনাথ দাস | দেওয়ান। | |
আই, আই, উড পি, পি, রোগ |
নীলকর। | |
আমিন। | ||
খালাসী। | ||
তাইদ্গীর। | ||
মাজিষ্ট্রেট, আম্লা, মোক্তার, ডেপুটি ইনস্পেক্টর,
পণ্ডিত, জেলদারোগা, ডাক্তার, গোপ, কবিরাজ, চারি জন শিশু, লাটিয়াল, রাখাল। | ||
কামীনীগণ। | ||
সাবিত্রী | গোলোকের স্ত্রী। | |
সৈরিন্ধ্রী | নবীনের স্ত্রী। | |
সরলতা | বিন্দুমাধবের স্ত্রী। | |
রেবতী | সাধুচরণের স্ত্রী। | |
ক্ষেত্রমণি | সাধুর কন্যা। | |
আদুরী | গোলোক বসুর বাড়ীর দাসী। | |
পদী ময়রাণী। | ||

এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৬ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।