নেপালে বঙ্গনারী/নেপালের আদর্শ সতী স্বর্গীয়া বড় মহারাণী

নেপালের আদর্শ সতী স্বর্গীয়

বড় মহারাণী।

(মহারাজ চন্দ্র শামসের জঙ্গরাণ বাহাদুরের স্বর্গীয় পত্নী)

 পূর্ব্ব পরিচ্ছেদে বর্ণিত হইয়াছে নেপাল রাজ্যের ভাগ্যচক্র ইহার প্রধান মন্ত্রীই নিয়মিত করিয়া থাকেন। এক সময়ে মারাঠা প্রধান মন্ত্রী পেশোয়াগণ যেরূপ ক্ষমতা ধারণ করিতেন, বর্ত্তমান নেপালরাজমন্ত্রীদিগের ঠিক সেই গৌরব এবং সেইরূপ ক্ষমতা। রাজমন্ত্রী চন্দ্র শামসের জঙ্গরাণা বাহাদুর বর্ত্তমান সময়ে নেপালের ভাগ্যচক্র বিবর্ত্তন করিতেছেন। এই পদের গৌরব ও দায়িত্ব অনেক। পার্থিব দিক হইতে ইনি অতি ভাগ্যবান ক্ষণজন্মা পুরুষ সন্দেহ নাই, কিন্তু সুলভ হইলেও একদিকে দুর্লভ গার্হস্থ্য সৌভাগ্যেও ইনি ভাগ্যবান। বিধাতা ইহাকে অশেষ গুণ সম্পন্না লক্ষ্মীস্বরূপিণী ভাগ্যবতী পত্নীদানে কৃতার্থ করিয়াছিলেন। যদিও ইনি অসময়ে তাঁহাকে হারাইয়াছেন, তথাপি তিনি যে সৌভাগ্যের অধিকারী হইয়াছিলেন তাহা কে অস্বীকার করিবে? ভারতেশ্বরী স্বর্গীয়া সম্রাজ্ঞী ভিক্টোরিয়ার অমৃতময় দাম্পত্য জীবনের বর্ণনা করিতে করিতে লেখক এক স্থলে বলিয়াছেন এইরূপ গুণসম্পন্ন পত্নী দীন দরিদ্রে লাভ করিলেও ভাগ্যবান হয়, ভিক্টোরিয়ার পতি এলবার্ট কি ভাগ্যবান পুরুষ যে এমন পত্নী-রত্ন তিনি লাভ করিয়াছিলেন। আমরা মহারাজ চন্দ্র শামসের রাণ বাহাদুরের গুণবতী পত্নীরত্ন সম্বন্ধেও সেই কথা বলিতে পারি। এইরূপ পতিপ্রাণ নারী দরিদ্রের কুটীরে অতুল শোভা বিস্তার করে, রাজগৃহে কি কথা? এই মহীয়সী সৌভাগ্যশালিনী অশেষ গুণসম্পন্না মহিলার জীবন রমণীকুলের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলিয়া আমরা সাধারণের নিকট এই মোহন চিত্র উপস্থিত করিতেছি। হিন্দু রমণীর ধমনীতে আজও সীতা সাবিত্রীর পবিত্র শোণিত কিরূপে প্রবাহিত হইতেছে তাহা পাঠক পাঠিকা একবার দর্শন করুন।

 মহারাজ চন্দ শামসের রাণা বাহাদুর সুবিখ্যাত জঙ্গরাণা বাহাদুরের ভ্রাতুষ্পুত্র—তিব্বতের যুদ্ধে প্রসিদ্ধ বীর ধীরশমসেরের পুত্র। বর্ত্তমান সময়ে এই রাণা বংশই নেপালের সর্ব্বোচ্চ স্থান অধিকার করিয়া আছেন। আমরা যাঁহার কথা বলিতে যাইতেছি তিনি মহারাজ চন্দ্র শামসের রাণা বাহাদুরের একমাত্র মহিষী ছিলেন। নেপালে বহু পত্নী গ্রহনের রীতি প্রচলিত আছে কিন্তু মহারাজ চন্দ্র শামসের রাণা বাহাদুর বোধ হয় ইহার এক মাত্র ব্যতিক্রম স্থল। তাঁহার গুণবতী পত্নী সম্পূর্ণরূপে তাঁহার পতির হৃদয় অধিকার করিয়াছিলেন, যে দিন তাঁহাকে সমুদয় নেপালের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা ভাগ্যবতী রমণী বলিয়া দর্শন করিতে যাই সে দিন তাঁহার মুখেই শুনিয়াছি—“আমি সমুদয় নেপালের মধ্যে সৌভাগ্যবতী রমণী সন্দেহ নাই, কারণ বিধাতা যে শুধু আমাকে এমন পতি দিয়াছেন তাহা নহে, আমি আমার পতির একমাত্র মহিষী,—এ সৌভাগ্য আমার অন্য স্বদেশীয়া ভগিনীগণের নাই,— কন্যা অপেক্ষা পুত্রেরই এদেশে অধিক সমাদর, বিধাতা আমাকে পাঁচটী পুত্র ও একটীমাত্র কন্যা দিয়াছেন। শোক তাপ আমি কিছুই পাই নাই, দেহ ভগ্ন হইয়াছে বটে কিন্তু পূর্ণ সুখ বিধাতা নরভাগ্যে রাখেন নাই, আমি ইহাতেই অত্যন্ত সুখী।” কি সুন্দর কথা! কেমন পূর্ণ সন্তোষ!

 এই ভাগ্যবতী রমণী কাঠমুণ্ড সহরের ১৬০ ক্রোশ দূরে পাটান নামক স্থানে ১৮৬৭ খৃষ্টাব্দে ১০ই মার্চ্চ রবিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি অতি সদ্বংশজাত, শৈশবেই ইঁহার বিবাহ হয়।১৮৮২ খৃষ্টাব্দে ৩১শে জুলাই ইঁহার প্রথমা কন্যা বজঙ্গী মহারাণী ভূমিষ্ঠ হন। জ্যেষ্ঠ পুত্র মোহন শামসের জঙ্গ রাণ বাহাদুর ১৮৮৩ খৃষ্টাব্দে ২৬শে ডিসেম্বর শনিবার ভূমিষ্ঠ হন। তৎপরে ক্রমে তাঁহার আরও চারিটী পুত্র জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০০ খৃষ্টাব্দে কনিষ্ঠ পুত্রের জন্মের পর হইতেই তিনি নিদারুণ যক্ষারোগে শয্যাগত হন এবং প্রায় ৩ বৎসর ধীরতা এবং সহিষ্ণুতার সহিত অশেষ রোগযন্ত্রণা ভোগ করিয়া ১৯০৫ খৃষ্টাব্দে দেহ ত্যাগ করিয়াছেন। হিন্দু রমণীর জীবনে বর্ণনীয়, বিশেষঘটনা প্রায় থাকেনা; ইঁহার জীবনেও উল্লেখযোগ্য বিশেষ ঘটনা তেমন কিছু নাই। ইনি অতি ধর্ম্মপ্রাণা নিষ্ঠাবতী স্ত্রীলোক ছিলেন। রাজপতির সমভিব্যাহারে হরিদ্বার, বদরিকা, মথুরা, কুরুক্ষেত্র প্রয়াগ প্রভৃতি বহু তীর্থ ভ্রমণ করিয়াছিলেন। অনেক যাগ-যজ্ঞ, লক্ষ হোম, কোটী-হোম প্রভৃতির অনুষ্ঠান করিয়াছিলেন। দৈনিক জীবনে, অতি নিষ্ঠার সহিত ধর্ম্মাচরণ করিতেন। রোগ শয্যায় পড়িয়াও এক দিনের তরে তাহার ব্যতিক্রম হয় নাই। জীবনের শেষ দিন পর্য্যন্ত প্রত্যুষে চারিটার সময় উঠিয়া প্রাতঃকৃত ও পূজা সমাপন করিয়া তবে ঔষধ সেবন করিতেন।

 মহারাণী সকল বিষয়ে আদর্শ পত্নী ছিলেন। তিনি কিরূপ প্রাণ মন দিয়া একান্ত চিত্তে পতির হিত সাধন ও সেবা শুশ্রূষা করিতেন, যাঁহারা তাহা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন তাঁহারাই মুগ্ধ হইয়াছেন। নেপালের রমণীগণ স্বামীর পদোদক পান না করিয়া জলগ্রহণ করেন না, তাহাত তাঁহার নিত্যকর্ম্ম ছিল, যতদিন তাঁহার স্বাস্থ্য ভাল ছিল, ততদিন নিয়ত স্বামীর সেবা করিয়াছেন। রোগশয্যায় পড়িয়াও তিনি যে ভাবে স্বামীর সেবা শুশ্রূষার ব্যবস্থা করিতেন, তাহা শুনিলে বিস্মিত হইতে হয়। তাঁহার আহার নিদ্রার কোন অনিয়ম ও কোন ব্যাঘাত যাহাতে না হয় সর্ব্বদা সে বিষয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিতেন। স্বামী যথাসময়ে নিদ্রিত হইয়াছেন কিনা দাসীকে পাঠাইয়া তাহার তত্ত্ব লইতেন। অসুস্থ শরীরে শুইয়াও স্বামীর আহারের তত্ত্বাবধান করিতেন। পতির আরাম, পতির কল্যাণ তাঁহার হৃদয়ের নিত্য চিন্তার বিষয় ছিল। হিন্দু রমণী সাধারণতঃ পতিপ্রাণা, কিন্তু তিনি এ সম্বন্ধে পরাকাষ্ঠা দেখাইতে সক্ষম হইয়াছিলেন।

 মহারাণী যেরূপ সাধ্বী ও পতিপ্রাণা ছিলেন, তাঁহার সুযোগ্য রাজপতিও তেমনি সর্ব্বতোভাবে তাঁহার প্রেমের গৌরব রক্ষা করিয়াছিলেন। তিনি পত্নীর জন্য যাহা করিয়াছেন, সেরূপ দৃষ্টান্তও অতি বিরল। বিধাতা তাঁহার গুণবতী পত্নীকে অতি উচ্চ প্রকৃতি ও প্রখর মেধা দিয়া এ জগতে পাঠাইয়াছিলেন সত্য, কিন্তু মহারাজ তাঁহাকে যত্নপূর্ব্বক সুশিক্ষা দিয়া তাঁহার প্রকৃতি ও চরিত্রের সৌন্দর্য্য আরো ফুটাইয়া তুলিয়াছিলেন। মহারাজ তিন বৎসরকাল যেরূপ ভাবে মহারাণীর সেবা এবং চিকিৎসা করিয়াছেন তাহাতে তাঁহার পত্নীর প্রতি গভীর প্রেম সুন্দররূপে প্রকাশ পাইয়াছে। তিনি পত্নীর জন্য এই দীর্ঘকাল সকল প্রকার সুখ হইতে বঞ্চিত হইয়া নিয়ত মানসিক দুশ্চিন্তায় কালযাপন করিতেন। দুরারোগ্য ব্যাধি তাঁহার কোমল দেহকে ক্ষীণ করিতেছে দেখিয়া মহারাজ আকুল হইয়া পড়িতেন। মানবের সাধ্যে যাহা কিছু আছে পত্নীর জীবনের জন্য তাহার কিছুই অচেষ্টিত রাখেন নাই। যেদিন মহারাণীর রোগের কোনরূপ বৃদ্ধি হইত, চিকিৎসকদিগের প্রাণ ভয়ে শুকাইয়া যাইত, মহারাজ হয়ত ভাবিবেন কোন ত্রুটি, কোন অনিয়ম হইয়াছে। স্ত্রীর রোগ যন্ত্রনা ও শীর্ণ দেহলতা দেখিয়া মহারাজ শোকে কাতর হইতেন। যে প্রাণ বিশাল রাজ্যের ভার বহন করিতে পারে, যাহা বিপদে অচল অটল, তাহা পত্নীর রোগশয্যা পার্শ্বে স্থির থাকিতে পারি না।

 ইঁহাদের দাম্পত্য জীবন অত্যন্ত সুখের ছিল, উভয়ের প্রতি উভয়ের গভীর প্রেম ছিল। কিন্তু বিধাতার ইচ্ছা কে প্রতিহত করিতে পারে? এই সুদৃঢ় প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করিয়া মৃত্যু রাজভবনকে শোকে আচ্ছন্ন করিল, মহারাজের সুখের সংসার অকালে অন্ধকার হইল। মৃত্যুর তিন দিন পূর্ব্বে তাঁহাকে পশুপতিনাথে লইয়া যাওয়া হয়। সেদিন রাত্রি দশটার সময় মহারাজকে অনুরোধ করিয়া গৃহে পাঠাইলেন, রাত্রি ১২টার সময় তাঁহার শেষ সময় উপস্থিত হইল। ভগিনীকে পতির প্রতিকৃতি আনিতে অনুরোধ করিলেন, একবার একদৃষ্টে তাহা নিরীক্ষণ করিয়া মস্তকে ধারণ করিলেন, তারপর চক্ষু মুদ্রিত করিয়া ইষ্টদেবতাকে স্মরণ করিতে করিতে এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করিয়া গেলেন। চিতাভস্ম বাঘমতীর জলে মিশ্রিত হইল, ধীর গম্ভীর নিনাদে কামান ধ্বনিত হইয়া এই নিদারুণ বার্ত্তা সহরবাসীকে জ্ঞাপন করিল, কত চক্ষে সেদিন বারিধারা বর্ষিত হইল কে গণনা করে?

 একটী ঘটনা বলিলে নারীগণ মহারাণীর পতিভক্তি বুঝিতে পারিবেন। মৃত্যুর পূর্ব্ব হইতেই মহারাণী পতিকে বিবাহ করিবার জন্য বার বার অনুরোধ করেন। “আপনি বিবাহ করুণ, আমি চক্ষে তাহাকে দেখিয়া যাই, আমি তাহাকে আপনার সেবার সকল ব্যবস্থা শিখাইয়া দিয়া যাই। আমি সকল বন্দোবস্ত করিয়া নিশ্চিন্ত মনে চলিয়া যাই।” শেষদিন পর্য্যন্ত তিনি বার বার পতিকে বিবাহ করিবার জন্য অনুরোধ করিয়াছিলেন। “আপনি যদি আমার জন্য শোকার্ত্ত হৃদয়ে কাল যাপন করেন, আমার আত্মা নরকগামী হইবে, আমি পরকালের সুখে বঞ্চিত হইব। ইহকালে আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম, মৃত্যুর পরে যেন আর কষ্ট না দিই”। এই উক্তি নারীর পক্ষে কি কঠিন, কত গভীর প্রেম হৃদয়ে থাকিলে পত্নী পতিকে এরূপ অনুরোধ করিতে পারেন? কত স্ত্রীলোেক সপত্নী ভয়ে কাতর হইয়া মৃত্যুশয্যায় পতিকে আবার বিবাহ করিতে নিষেধ করে! কয়জন নারী, আছেন যিনি প্রাণ খুলিয়া স্বামীকে এইরূপ অনুরোধ করিতে পারেন? মৃত্যুর পূর্ব্বে একদিন তিনি কন্যাকে বলিয়াছিলেন, “আমি তোমার পিতাকে কেবল কষ্টই দিলাম। যদি তোমার পিতা আবার বিবাহ করেন, তাঁহাকে সম্মান করিও, আদর করিও। তিনি তোমার গুণবতী মাতা হইবেন, তিনি তোমাদের শূন্য গৃহ পূর্ণ করিবেন, তোমার শোকার্ত্ত পিতার অন্তরে শান্তি দিবেন।”—আমরা কখন শুনি নাই কোন মাতা এরূপভাবে কন্যাকে কখনো উপদেশ দিয়াছেন।

 মহারাণী আদর্শ মাতা ছিলেন, সন্তানদিগের সুশিক্ষার প্রতি নিয়ত দৃষ্টি রাখিতেন। একদিন শিশু পুত্রটী কি অন্যায় করিয়াছিল, তিনি শুনিয়া চক্ষের জলে ভাসিয়া বলিয়াছিলেন, “আমি কি পাপিনী, আমার গর্ভের সন্তান কেন এরূপ করিল?” শিশুর অপরাধ সকলেই তুচ্ছ করে কিন্তু তাঁহার নিকট শিশুর অপরাধ গুরুতর বোধ হইত। সন্তানেরা তাঁহাকে যেমন শ্রদ্ধা ভক্তি করিত, তেমনি ভয় করিত, এমনি তাঁহার সুদৃঢ় শাসন ছিল। এই চরিত্রবতী রমণীর প্রাণে অতি আশ্চর্য্য সৎসাহস ও তেজস্বিতা ছিল। কোন প্রকার অন্যায়ের প্রশ্রয় তিনি দিতেন না।

 মহারাণী প্রচুর, দান ধ্যান করিয়া গিয়াছেন, তাহার পরিমাণ নির্ণয় করা অসাধ্য। তুলা-দান, সহস্র সহস্র গাভী দান, সুসজ্জিত গৃহ ও উদ্যান ব্রাহ্মণকে দান করিয়া গিয়াছেন। পতির নামে দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করিয়া কত লােকের আশীর্ব্বাদভাজন হইয়াছেন, কত অপরাধীর কারাবাস-দুঃখ মোচন করিয়াছেন। দেশের অর্থ অপহরণের অপরাধে দণ্ডিত জনৈক সুবাকে পঁচিশ হাজার টাকা দিয়া জল্লাদের হস্ত হইতে রক্ষা করেন। হিন্দু শাস্ত্রে যে সকল ক্রিয়াকর্ম্মে পুণ্যসঞ্চয় হয় বলিয়া নির্দিষ্ট আছে, তাহার কিছুই তিনি অননুষ্ঠিত রাখেন নাই। রােগশয্যায় পড়িয়া শাস্ত্রকথা শ্রবণে তিনি কত সময় অতিবাহিত করিতেন। তাঁহার মত নারী পৃথিবীতে অতি অল্পই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এই বিশাল নেপাল রাজ্যের প্রধান রমণী ছিলেন; কিন্তু তাঁহার আত্মীয় স্বজন ও দূরাগত বিদেশী যাহারা তাঁহার সংস্পর্শে আসিত, তাঁহারাই তাঁহার সৌজন্য, দয়া, মিষ্টভাষিতা প্রভৃতি গুণে মােহিত হইত। তিনি অতিশয় দূরদর্শিনী বুদ্ধিমতী রমণী ছিলেন; তাঁহার প্রত্যেক কার্য্য সুবুদ্ধি এবং সদ্বিবেচনার পরিচয় দিত। মহৎ প্রকৃতিই স্বীয় মহত্ত্ব উপলব্ধি করিতে পারে। তিনি সম্পূর্ণরূপে আপনার উচ্চ পদের গৌরব রক্ষা করিয়া গিয়াছেন। শুধু পদের গৌরব রক্ষা কেন, তিনি স্বীয় পদের গৌরব বৃদ্ধিও করিয়া গিয়াছেন। এরূপ নারীরত্ন শুধূ এদেশের কেন, সমস্ত হিন্দুরমণীর গৌরবস্থল। সমগ্র নারীমণ্ডলী তাঁহার দৃষ্টান্তে পতিভক্তি, পতিসেবা, গুরুভক্তি, সন্তানের শিক্ষা, প্রজাপালন প্রভৃতি সকল গুণই শিক্ষা করিতে পারে।

 এই দুর্ভেদ্য গিরি প্রদেশে, রাজান্তঃপুরে, নরচক্ষুর অগােচরে
নেপালরাজ মহারাজাধিরাজ পৃথ্বীবীর বিক্রমশাহ
ও তৎপুত্র
বর্ত্তমান নরপতি মহারাজাধিরাজ ত্রিভূবন বিক্রমশাহ।
এমন রমণী-রত্ন আবির্ভূত হইয়াছিলেন, যাঁহার নাম স্মরণ করিলে হৃদয় শ্রদ্ধা ও ভয়ে অবনত হয়! মহারাজ চন্দ্র শামসের জঙ্গ রাণা বাহাদুর ভাগ্যবান পুরুষসিংহ, যিনি এমন রমণীরত্ন লাভ করিয়াছিলেন। তিনি ত অমর ধামে গমন করিয়াছেন, তাঁহার পুণ্যচরিত অমর হউক, তাঁহার পুণ্য সকলকে রক্ষা করুক।