পাতা:অক্ষয়কুমার বড়াল গ্রন্থাবলী.djvu/১৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
সম্পাদকীয় ভূমিকা

উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বাংলা দেশের কবি-সম্প্রদায় যে খাতে কাব্যধারা প্রবাহিত করিয়াছিলেন তাহা প্রধানত বহিঃকেন্দ্রিক— অবজেক্‌টিব। যাহা আশেপাশে দৃশ্যমান ও প্রকট-প্রকৃতির বিচিত্র সৌন্দর্য, মানুষের বিরাট কীর্তি হইতে আরম্ভ করিয়া “এণ্ডা-ভরা” তপসে মাছ, মায় পাঁঠাকে পর্যন্ত তাঁহারা কাব্যের বিষয় করিয়াছিলেন। আর একটি ধারার উৎসমুখ খুলিয়া দিলেন কবি বিহারিলাল চক্রবর্তী। সে ধারা আত্মকেন্দ্রিক- সাবজেক্‌টিব। মানব-মনের গহনে ভাবের যে লীলা অহরহ হইতেছে, বিহারিলালের কাব্যে তাহারই পরিচয় মেলে। তাঁহার জীবন-দেবতাকে সম্বোধন করিয়া তিনি বলেন:

"বিচিত্র এ মত্তদশা
ভাবভরে যোগে বসা-
হৃদয়ে উদার জ্যোতি কি বিচিত্র জলে!
কি বিচিত্র সুরতান
ভরপূর করে প্রাণ-
কে তুমি গাহিছ গান আকাশমণ্ডলে!”

রবীন্দ্রনাথ বিহারিলালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করিয়া এই ধারারই চরম পুষ্টি সাধন করিয়া গিয়াছেন। তাঁহার মত অক্ষয়কুমারও বিহারিলালেরই মন্ত্রশিষ্য; রবীন্দ্রনাথ অপেক্ষাও একটু বেশী বিহারিলাল। বিহারিলালের ভাষা ভঙ্গি ও ভাব অক্ষয়কুমারেই সর্বাধিক পরিণতি লাভ করিয়াছিল। অক্ষয়কুমাররের সর্বপ্রথম কাব্য 'প্রদীপে' ইহার প্রচুর নিদর্শন মিলিবে।

১২৯০ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে (ইংরেজী ১৮৮৪ এপ্রিল) কবির চব্বিশ বৎসর বয়সে 'প্রদীপ'- “গীতি-কবিতাবলী” প্রথম আত্মপ্রকাশ করে। পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৬৮। সঞ্জীবচন্দ্র-সম্পাদিত 'বঙ্গদর্শনে' (অগ্রহায়ণ, ১২৮৯) অক্ষয়কুমারের যে কবিতাটি সর্বপ্রথম মুদ্রিত হয় সেই “রজনীর মৃত্যূ” 'প্রদীপে' সন্নিবিষ্ট হয়। 'প্রদীপ' বাহির হইবার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলার কাব্যরসিক শিক্ষিত সমাজ কর্তৃক আদৃত হয়। কিন্তু প্রথম কাব্যগ্রন্থের উৎকর্ষ সন্মন্ধে অক্ষয়কুমার স্বয়ং কিঞ্চিৎ সংশয়াচ্ছন্ন ছিলেন। তাই দেখিতে পাই ১৩০০ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে ইহার দ্বিতীয় সংস্করণ