পাতা:অচলায়তন - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অচলায়তন

 মহাপঞ্চক। পারি! ভারি অহংকার। গান তো পাখিও গাইতে পারে। সেই যে বজ্রবিদারণ মন্ত্রটা আজ সাত দিন ধরে তোমার মুখস্থ হল না আজ তার কী করলে?

 পঞ্চক। সাত দিন যেমন হয়েছে অষ্টম দিনেও অনেকটা সেইরকম। বরঞ্চ একটু খারাপ।

 মহাপঞ্চক। খারাপ! তার মানে কী হল।

 পঞ্চক। জিনিসটা যতই পুরোনো হচ্ছে মন ততই লাগছে না, ভুল ততই করছি—ভুল যতই বেশিবার করছি ততই সেইটেই পাকা হয়ে যাচ্ছে। তাই, গোড়ায় তোমরা যেটা বলে দিয়েছিলে আর আজ আমি যেটা আওড়াচ্ছি দুটোর মধ্যে অনেকটা তফাত হয়ে গেছে। চেনা শক্ত।

 মহাপঞ্চক। সেই তফাতটা ঘোচাতে হবে, নির্বোধ।

 পঞ্চক। সহজেই ঘোচে, যদি তোমাদেরটাকেই আমার মতো করে নাও! নইলে, আমি তো পারব না।

 মহাপঞ্চক। পারবে না কী। পারতেই হবে।

 পঞ্চক। তাহলে আর-একবার সেই গোড়া থেকে চেষ্টা করে দেখি—একবার মন্ত্রটা আউড়ে দিয়ে যাও।

 মহাপঞ্চক। আচ্ছা, বেশ, আমার সঙ্গে আবৃত্তি করে যাও। ওঁঁ তট তট তোতয় তোতয় স্ফট স্ফট স্ফোটয় স্ফোটয় ঘুণ ঘুণ ঘুণাপয় ঘুণাপয় স্বর বসত্ত্বানি। চুপ করে রইলে যে!

 পঞ্চক। ওঁ তট তট তোতয় তোতয়—আচ্ছা দাদা।

 মহাপঞ্চক। আবার দাদা! মন্ত্রটা শেষ করো বলছি।

 পঞ্চক। একটা কথা জিজ্ঞাসা করি—এ মন্ত্রটার ফল কী।

 মহাপঞ্চক। এ মন্ত্র প্রত্যহ সূর্যোদয়-সূর্যাস্তে উনসত্তর বার করে জপ করলে নব্বই বৎসর পরমায়ু হয়।