পাতা:অথৈজল - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অথৈ জল
১০০

ছেলে বিধু, তাকে ওরা মদে মেয়েমানুষে সর্ব্বস্বান্ত করে ছেড়ে দিল।

 —ও সব কিছু নয় নেপাল। নিজের ইচ্ছে না থাকলে কেউ কখনো কোথাও যায় না। ওসব ভুল কথা। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ আমার খারাপ করতে পারে না জেনো। আমি যখন ওপথে নামবো, তখন নিজের ইচ্ছেতেই যাবো। লোকে বললেও যাবো, না বললেও যাবো।

 —না, আমি এমনি কথার কথা বলচি–মশারি দিয়ে যাই?

 —আনতে পারো।

 নেপাল চলে যাবার আধঘণ্টা পরে আবার কে দোর ঠেলচে দেখে খিল খুলে দিতে গেলাম। গিয়ে দেখি পান্না দাঁড়িয়ে বাইরে। আসরের সাজ পরনে। ঝলমল করচে রূপ, মুখে পাউডার, জরি পাড় চাঁপা রঙের শাড়ি পরনে, এক গোছা সোনার চুড়ি হাতে, ছোট্ট একটা মেয়েলি হাত ঘড়ি চুড়ির গোছার আগায়, চোখে সুর্ম্মা। সঙ্গে কেউ নেই।

 অবাক হয়ে বললাম–কি?

 ও কিছু না বলে ঘরে ঢুকলো! বসলো একখানা চেয়ার নিজেই টেনে। আমার বুকের ভেতর তখন কিরকম করচে। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টে চেয়েই আছি। পান্নাও কোন কথা বলে না। আমি একবার বাইরে মুখ বাড়িয়ে চারদিকে চেয়ে দেখলাম কেউ কোথাও নেই।

 একটু কড়াসুরে বললাম—কি মনে করে?

 পান্না আমার মুখের দিকে চোখ তুলে খানিক্ষণ চেয়ে রইল।